![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একবার আমার বোনদের সাথে আমার ঝামেলা যাচ্ছিল। ওদের ওপর আমি প্রচণ্ড রেগে গেছি। আমার অতিমাত্রায় রাগের বহিঃপ্রকাশ হল বাক স্থিতি অর্থাৎ কথা বলা বন্ধ। চুপচাপ থাকলে একসময় আমার রাগ কমে যায়। কিন্তু সেবার আমি বাক স্থিতি পদ্ধতিতেও রাগ কমাতে পারলাম না। আমার বদ বোনগুলি ক্রমাগত আমাকে উত্যক্ত করছে। ক্লাসে গিয়েও মন বসাতে পারছি না। সহজ অঙ্কগুলো গুবলেট হয়ে যাচ্ছে। সারের লেকচার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে আর আমি ভেতরে ভাবছি কি করে এই বদগুলিকে শায়েস্তা করা যায় ! রাতে বাসায় ঝড় তুললাম। কিন্তু অবাক কাণ্ড এরা মুখে মুখে তর্ক করছে ! এতো সাহস পেল কোথায় ? যখন দেখি মা এদের পক্ষ নিচ্ছে তখন রাগে দিক্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে গেলাম। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে না খেয়েই কোচিঙে গেলাম।
-
কোচিং থেকে ফিরে দরজায় দাঁড়িয়ে বেল দিচ্ছি। খুলছে না। দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট আর থাকতে পারছি না। আমি রাগে কাপছি এমন সময় দরজা খোলা হল, আমি কিছু বলার আগেই তিন বোন আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ল।
'' হ্যাপি বার্থ ডে টু ইয়ু বরাপু'' ঘর টর সাজিয়ে হুলুস্থুল অবস্থা। সেঝ জল রঙে এতো চমৎকার একটা ব্যানার করেছে দেখে আমার চোখে পানি এসে গেলো। তিনজনে মিলে কেকও জোগাড় করেছে একটা। ফ্যামিলি ক্লাউন মেঝ অনবরত হাসির কথা বলছে। মেঝ সেঝ যৌথভাবে একটা গিফট কিনেছে। ছোট ওদের সাথে যোগ দেয় নি। তার ধারনা যৌথ গিফটে তার প্রাধান্য ভালোভাবে প্রকাশ পাবে না। তাই সে তার টিফিনের পয়সা বাচিয়ে এবং আব্বুর কাছ থেকে ধার করে আমার জন্য আলাদা গিফট কিনেছে। মা এইসব পছন্দ করেন না। কিন্তু দুপুরে আমার পছন্দের খাবার রান্না হল। তিনি চেহারায় গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বললেন, এসব কিন্তু এমনিই রান্না হয়েছে। আব্বু জন্মদিন উপলক্ষে ছোটর ধার মওকুফ করার ঘোষণা দিলেন। যদিও প্রতিবারই করেন। ছোটর টাকা চাইতে অত্যন্ত লজ্জা লাগে বলে সে ধার হিসেবে নেয়। উল্লেখ্য ছোট ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সারা দিন মাইলসের জন্মদিন গানটা সহ আমার পছন্দের গানগুলি বাজল। আরও অনেক কাণ্ড।
ভালোবাসার তীব্রতায় কিছুক্ষন পরপর চোখে পানি আসে। আমার লৌহ কঠিন রাগ বাষ্প হয়ে উড়ে গেলো। পড়ে জেনেছি সারপ্রাইজটা মজবুত করার জন্য প্লানিং করেই আমাকে রাগানো। ছোটরও কি নিখুঁত অভিনয় ছিল, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি।
-
এতো গেলো একবারের কথা। প্রতি বছরই আমার জন্য একটা না একটা সারপ্রাইজ থাকে। এবং প্রত্যেকটাই ব্যতিক্রম। বন্ধু বান্ধব মহলও কিছু না কিছু করে। মোবাইলে বেশ কিছু এস এম এস আসে।ফেসবুকের কথা বাদ দিচ্ছি কারন সেখানে নোটিফিকেশন দিয়ে মনে করিয়ে দেয়ার একটা ব্যাপার থাকে। সারা বছরেও একদিন কথা হয় না এমন অনেকের কাছ থেকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাই। জীবনের প্রতি গভীর ভালোলাগা কাজ করে। নিখাদ ভালোবাসার সমুদ্রে হাবুডুবু খাই। পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করি।
-
কিন্তু গতকাল আমি কাউকে কোন সারপ্রাইজ দেয়ার সুযোগ দেই নি। দূরে থাকি বলে সম্ভব হয়েছে। কারো সাথে কোন যোগাযোগ করিনি। ফোন ফেসবুক সবকিছু বন্ধ। একা কাটিয়েছি। একটা ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করেছি, আমার প্রিয়জনরা কাছে না থাকলে আমার কেমন লাগবে ? কি বুঝেছি সেটা বোঝানোর জন্য একটা ডাঙ্গায় তোলা মাছের কথা বলতে পারি। যেটা প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একসময় স্থির হয়ে যায়। কিন্তু কোন শব্দ হয় না।
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
জসীম অসীম বলেছেন: একাকী
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৮
জসীম অসীম বলেছেন: লেখা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০২
খায়রুল আহসান বলেছেন: কি বুঝেছি সেটা বোঝানোর জন্য একটা ডাঙ্গায় তোলা মাছের কথা বলতে পারি। যেটা প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একসময় স্থির হয়ে যায়। কিন্তু কোন শব্দ হয় না -- সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন অনুভূতিটা। ভাল লেগেছে আপনার বোনদের আন্তরিক কার্যকলাপ।