নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমেদফাইয়াজ

আহমেদফাইয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ক্ষুধার মৃত্যু......

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭



-এই শোন এই বার ঈদ এ কিন্তু আমাকে ঐ দুই লাখ টাকা দামের নেকলেসটা দিতে হবে।

-আচ্ছা দিব।তুমি আমার একটা মাত্র বউ,তোমাকে দেব না তো কাকে দেব।এখন চল ঐ রেস্টুরেন্টটায় গিয়ে বসি।খুব খিদে লেগেছে।



-আফা দুইটা টেকা দেন আফা।কিছু খামু,আফা খুব খিদা পাইছে।

-এই যা সর এইখান থেকে।এদের জ্বালায় রাস্তায় চলা মুশকিল।



নিউমার্কেটের সামনে দাড়িয়ে আছি।এই দৃশ্য টা চোখে পড়ল।স্বামী-স্ত্রী যাচ্ছিল।একটা বাচ্চা এসে তাদের কাছে দুটো টাকা চাওয়ায় মহিলাটা বাচ্চা টাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।খুব অবাক হলাম যে দুই লাখ টাকা দামের নেকলেস কিনতে পারে সে দু টাকা দান করতে পারে না।আসলে এরাই পৃথিবীর সব থেকে গরীব মানুষ।ঈশ্বর এদের অর্থের দিক থেকে ধনী করেছে ঠিকই,কিন্তু মনের দিক থেকে এরা সব থেকে গরীব।আমি বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গেলাম।কি নাম তোমার?জিজ্ঞেস করলাম আমি।“সাব্বির”সে উত্তর দিল।থাকো কোথায়?জিজ্ঞেস করলাম।সে জায়গার নাম বলল।আমি জিজ্ঞেস করলাম“তুমি আমার সাথে খাবে?”সে খুব অবাক হল,তারপর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।আমি বললাম“একটু দাড়াও আরেকজনের আসার কথা আছে,সে আসলে আমরা একসাথে খাব”।৫ টার সময় স্রিতির আসার কথা ।৪:৩০ বাজে।এই ফাকে আমি তার কাছ থেকে আরও কিছু জেনে নিলাম।সে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে।মায়ের সাথে থাকে।তার মা বাসায় বাসায় কাজ করে।বাবা আরেকটা বিয়ে করে এদের ছেড়ে চলে গেছে।

আমার আর স্মৃতির

মাসে তিন-চার বার দেখা হয়। এর মধ্যে একদিন খাওয়ার সময় আমরা একটা রাস্তার ছেলে বা মেয়েকে সাথে নেই।এই প্রস্তাবটা আমি স্মৃতিকে দিয়েছিলাম,ভেবেছিলাম হয়ত সে রাজী হবে না।কিন্তু সে এক কথায় রাজি হয়।সে রাজি হওয়ায় খুব অবাক হয়েছিলাম।মেয়েটাকে আমি এখনও ঠিক সেইভাবে চিনতে পারলাম না।



আজ সেইরকম একটা দিন।আমি আগে এসে একজনকে খুজে বের করি,তারপর সে আসে।আজকে এসে এই ছেলেটাকে পেয়ে গেলাম।বন্ধুরা অবশ্য আমাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে কানাঘুষা করে।কেউ বলে আমরা লোক দেখাচ্ছি,কেউ বলে এমন রোমান্টিক সময় কাউকে পাশে রাখতে হয়?এগুলো শুনে আমি মনে মনে হাসি।কে কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি জানি আমি খারাপ কিছু করছিনা।একটা দিন না হয় তার চোখে চোখ রাখলাম না,একটা দিন না হয় ভালোবাসার কথাগুলো বললাম না।আমাদের এই ছোট্ট ত্যাগের বিনিময়ে যদি একটা শিশুর পেট ভরে তাহলে সেটাই ভাল।



৫টার কিছু আগেই স্মৃতি চলে আসল।আমরা তিনজন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।আমাদের সাথে বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে রেস্টুরেন্টের লোকগুলো বেশ অবাক হল।তাদের চোখেমুখে বিরক্তি।আমরা একটা খালি টেবিল দেখে বসে পড়লাম।বাচ্চাটার দিকে তাকালাম,দেখলাম সে বেশ অবাক হয়ে এদিক ওদিক দেখছে।তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ।খাবার অর্ডার দিলাম,একটু পরে ওয়েটার খাবার এনে আমাদের সামনে দিল।খাবারের সাথে কাটা চামচ,ছুরি দেখে ছেলেটা অসহায় চোখে আমার দিকে তাকাল।আমি বললাম“তুমি হাত দিয়ে খাও”।সে খাওয়া শুরু করল।আমি তার খাওয়া দেখছিলাম।মানুষ যে কোন কিছু এতো তৃপ্তির সাথে খেতে পারে তা এদের না দেখলে বোঝা যায় না।আমি আড় চোখে স্মৃতির দিকে তাকালাম।দেখলাম সেও ছেলেটার খাওয়া দেখছে।



খাওয়া শেষ হলে বের হলাম।ছেলেটা চলে গেল।আমরা একটা রিকশায় উঠলাম।রিকশায় যাচ্ছি।কারো মুখে কোন কথা নেই।এই দিনটাতে আমাদের কথা যেন কেমন কমে যায়।হটাত স্মৃতি বলে উঠল



-মানুষ কত কষ্টে আছে তাই না?

-হুম।কত মানুষ আছে দিনে ২০ হাজার টাকা খরচ করলেও তাদের কিছু যায় আসে না,আবার কত মানুষ আছে দিনে ২০ টাকা খরচ করতে হিমসিম খেয়ে যায়।দুনিয়াটা বড়ই আজব।

-এই ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে দেখলে খারাপ লাগে।সৃষ্টিকর্তা এমন করল কেন।ঈদ আসলে বাজারে ৫ লাখ,৭লাখ টাকা দামের শাড়ি ওঠে।আর সেই সব শাড়ি মানুষ কিনেও নিয়ে যাচ্ছে।আর কত মানুষ আছে ঈদের দিন সেমাই টুকু কিনে খাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই।

-অথচ দেখ এই যারা এতো টাকা দিয়ে ঈদের মার্কেটিং করছে এদের কাছে যখন কোন অসহায় মানুষ এসে বলে যে দুটো টাকা দেন,তখন এদের পকেট থেকে দুটো টাকা বের হয় না,একটু আগেই সেটা দেখলাম।বড়ই আজব মানুষ!!!

সামনে থেকে রিকশাআলা বলে উঠল “ভাই আপনাদের মতো যদি সবাই ভাবত তাহলে গরীবদের এতো কষ্ট থাকত না”।আমি মনে মনে চিন্তা করলাম হ্যাঁ কয়জনেই বা এই ভাবে চিন্তা করে।সবাই নিজেকে নিয়ে বেস্ত।হটাত স্মৃতি বলে উঠল“এই তুমি কি আমার বাড়ির সামনে পর্যন্ত যাবা নাকি?কেউ দেখলে কিন্তু আজকেই কাট আপ হয়ে যাবে”।আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম।মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলে আর এমন ভঙ্গিতে বলে যে হাসি চেপে রাখা যায় না।“জী না ম্যাডাম আমি চাই না আপনার সাথে আমার কাট আপ হয়ে যাক,কারন আপনার সাথে কাট আপ হলে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না”।বেশ রসিক ভাবে বললাম আমি।“তাহলে এখন রিকশা থেকে নামেন,আমার বাসা আসতে আর বেশি বাকি নেই”মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল স্মৃতি।“জো হুকুম ম্যাডাম”বলে রিকশা থেকে নেমে গেলাম।স্মৃতি বলল“রাতে ফোন দিব,দয়া করে ফোনটা কাছে রেখো।তোমাকে তো একবার ফোন দিলে পাওয়া যায় না”।“আচ্ছা”বলে আমি হাটা শুরু করলাম।



নিউমার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।হটাত দেখলাম রাস্তার একপাশে বেশ ভিড়।এগিয়ে গেলাম,ভিড় ঠেলে ভিতরের দিকে এগোলাম।দেখলাম একটা বাচ্চা ছেলে পড়ে আছে,তার সারা গায়ে রক্ত।ছেলেটার পাশে বসে এক মহিলা চিৎকার করে কাঁদছে।ছেলেটার মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু মুখে রক্ত লেগে আছে বলে ভাল মতো বোঝা যাচ্ছে না।হটাত বুকটা ধক করে উঠল।এতো সেই ছেলেটা যাকে নিয়ে আমি আর স্মৃতি দুইদিন আগে রেস্টুরেন্ট এ বসে খেলাম।পাশের থেকে শুনলাম একটা ট্রাক নাকি ধাক্কা মেরে চলে গেছে।ছেলেটা ছিটকে পড়ে জায়গায় মারা যায়।আমি সেখানে আর দাঁড়ালাম না।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।ঈশ্বর এমন কেন করেন?যাকে দেন তাঁকে ভরিয়ে দেন আর যাকে দেন না তাঁকে কিছুই দেন না,দিলেও তা কেড়ে নেন।তার লীলাখেলা বোঝা বড় দায়......।



[গল্পটা কাল্পনিক হলেও বাস্তবের উপর ভিত্তি করে লেখা।]



“কেউ লাখ টাকার বিছানায় ঘুমায়,কেউ ঘুমায় মাটির বিছানায়” সৃষ্টিকর্তা এমন কেন করেন!!!!!!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৩

পে পোঁ কইরেন না, যান। বলেছেন: ঘটনাটা সত্যি,কিন্তু খুবই মারাত্মক।



ঘটনাটা পড়ে খুব খারাপ লাগল। /:) /:) /:) কান্না এসে পড়ল |-) |-) |-)

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৮

বোকামন বলেছেন: স্বার্থপরের মত ঘটনাগুলো পড়ে আমাদের খারাপ লাগে, আপসোস হয়........।
কিন্তু নিজেকে দোষী মনে হয় না........।

কোথাও না কোথাও আমাদেরও দোষ আছে..........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.