।। অনুভূতির খোলা চিঠি ।।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:০৮

আজ সবাই তোমাকে দোষ দেয় , তোমাকে দায়ী করে ।

আমার পরিবার , তোমার বন্ধুবান্ধব , সবাই ।

সবাই বলে আজ আমি যে সময়টা পার করছি তার সব দায় তোমার । একমাত্র তোমার জন্য আমার জীবন নাকি উল্টে গেছে ।



কিন্তু আমি জানি তুমি দোষী নও । আমার বর্তমান অবস্থার পেছনে তোমার একটু ও দায় নেই ।



তাহলে দায় টা কার ? কে দোষী ?

আমি নিজে !



নিজের সীমা না বুঝে তোমাকে ভালবেসেছিলাম । বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম । কিন্তু জানতাম না , এই চাঁদ , আরও আগেই বামনের হাতে ধরা দিয়ে বসে আছে । সেই চাঁদ কে হাতে পেয়েও হারানোর একটা ভয় আমার মনে সব সময় ছিল । কে জানতো , এটিই একদিন হওয়ার ছিল ।



তুমি আমার জীবনে এমন একটা সময়ে এসেছিলে যখন আমি অনেক একা ছিলাম । পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না । তুমি আমার জীবনে এসে আমার সেই একাকীত্ব টা দূর করলে । আমার কোন বন্ধু ছিল না , তুমি সেই অভাব টা পূর্ণ করলে ।

আমার মধ্যে কিছুই ছিল না , তারপর ও তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে ।

তোমার প্রতি আমি কোন দিন প্রেমিক সুলভ কিছু করি নি । তারপর ও তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে ।

তুমি নামে আমার প্রেমিকা ছিলে , কিন্তু বাস্তবে একজন বন্ধু , একজন গাইড হিসেবে ছিলে । যার কাছে আমার ভালোলাগা , আমার সুখটাই প্রাধান্য পেত ।

তুমি আমার ছন্নছাড়া , অগোছালো জীবনটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলে । আমার অন্ধকার জীবনে আলোকবর্তিকা হাতে এসেছিলে তুমি ।!



আজ আমার সব আছে । অনেক বন্ধুবান্ধব আছে । পাশে দাঁড়ানোর মতো অনেকেই আছে এখন । শুধু তুমি ই নেই । হাজারো প্রাপ্তির মধ্যে এক তুমি নেই বলে সব কিছুকে তুচ্ছ মনে হয় । নিজেকে এখন খুব একা লাগে ।



আজ তুমি আমার পাশে না থাকলেও আমি জানি তুমি আসবে । সময় হলে ঠিক ই ফিরে আসবে । বেশি দিন আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না ।



তোমাকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালবেসেছিলাম , ভালোবাসি , ভালোবেসে যাবো ।

তুমি আমার থেকে যত দুরেই থাকো না কেন , আমার ভালোবাসা এক রত্তি ও কমবে না । বরং প্রতিটি অপেক্ষার প্রহর এর সাথে বাড়তেই থাকবে ।



তোমার কথা আমার প্রতিটা মুহূর্তে মনে পড়ে । না , ভুল বললাম , তোমাকে তো আমি এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারি না , মনে পড়বে কি করে । এমন রাত খুব কম গিয়েছে যে রাতে আমি তোমার কথা ভেবে অশ্রু বিসর্জন দেই নি । তোমার কথা ভেবে ভেবে চোখে পাতা এক করতে পারি না রাতে ।



তোমার একটা কথা আমার প্রায় ই মনে পড়ে , ‘’এই শোন , তুমি কাঁদবে না , ছেলেরা কাঁদে না ‘’

কিন্তু আমি তা শুনি নি । আমি কেঁদেছি , আমি কাঁদি । তোমার এই একটি কথা ই আমি রাখতে পারি নি !



তোমার থেকে দূরে বলে আমি কাঁদি না , তোমার হাতে হাত রেখে হাটতে পারি না বলে আমি কাঁদি না , তোমার মুখে ভালোবাসি শোনার জন্য আমি কাঁদি না ।

আমি কাঁদি তোমার মুখের সেই ঝলমলে হাসি দেখার জন্য , আমি কাঁদি তোমাকে তোমার প্রাপ্য ভালোবাসা দিতে পারি নি বলে । তোমার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারি নি বলে আমি কাঁদি ।



তুমি আমাকে যতটুকু ভালবেসেছিলে , আমি হয়তো তোমাকে তার ছিটে ফোঁটা ও বাসিনি । আমি তোমার জন্য , তোমার ভালোর জন্য কিছুই করতে পারি নি ।

কিন্তু তুমি আমার জন্য যা করার করেছ । আমার ভালোর জন্য নিজের সুখ ও বিসর্জন দিয়েছ ।

তারপর ও আমি কি করে তোমাকে দোষ দেই ?? কি করে তোমাকে দায়ী করি ?



নিজের মা – বাবা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলে । আমাকে ভালোবাসার শাস্তিস্বরূপ তুমি বারবার তাদের অত্যাচার সহ্য করে গেছো , নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছ । তারপর ও আমাকে তুমি কোনদিন এসবের কথা মুখফুটে বল নি । কোন দিন তুমি আমাকে এসবের জন্য দায়ী করো নি । হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছিলে ।

আর বলতে ‘ আরে , এখন একটু কষ্ট করি , পড়ে অনেক অনেক সুখ পাবো ‘’

‘’ এসব তো কিছুই না রে , আমি তো তোমার জন্য কিছুই করি নি । বরং তুমি যা করেছ আমার জন্য , আমি তো ভেবেই পাই না আমি এসবের ঋণ কিভাবে শোধ করবো ‘’



তোমার শেষ কথাটা আমার কাছে আগেও দুর্বোধ্য ঠেকত , এখনো ঠেকে । আমি এমন কি করেছি তোমার জন্য ।



তোমাকে ভালোবাসি । আমি আমার আমার লজ্জাবতী টুনটুনি পাখিটাকে আজও ভালোবাসি । আমি জানি তুমিও তোমার ফাজিল ছেলেটাকে ভালোবাসো , শুধু মুখ ফুটে বলতে পারো না , এই যা !



আমি অপেক্ষায় আছি সে দিনটার , যে দিন তুমি আবারো আগের মত করে আমার কানে কানে বলবে ‘ এই ফাজিল , আমি তোমাকে ভালোবাসি , আমার দুষ্ট বাবুটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি ‘’ এই কয়েকটি লাইন শোনার জন্যই আমি বেঁচে থাকবো , অপেক্ষার প্রহর গুণে যাবো । আমি জানি , একদিন গোনা শেষ হবেই । তুমি ফিরে আসবেই ।



আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিতাশা । অনেক বেশি ভালোবাসি ।

৬ টি +৩/-০