নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলি আশরাফ

আলি আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধন

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৪৪

জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে অমুসলিম ব্যক্তিরাও জামায়াতের “সহযোগী রুকন” হতে পারবেন। এটা জামায়াতের নীতির মস্ত বড় পরিবর্তন। মাওলানা মওদুদী মুসলমানদেরও কলেমা পড়িয়ে জামায়াতের রুকন করতেন। দেখা যাচ্ছে, মাওলানা মওদুদীর তুলনায় বর্তমান জামায়াত অনেকটা ধর্মনিরপেক্ষ-ঘেষা!

মাওলানা মওদুদীর জামায়াতকে অগণতান্ত্রিক দল বলার কারণ জামায়াত জনগণের কোন অধিকার বা ক্ষমতাকে স্বীকার করত না। জনগণের সার্বভৌমত্বের বদলে জামায়াত আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলত। মুসলমানরা আল্লাহকে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেন। তাঁরা আরও বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়। তিনি মানুষকে সব ধরনের চিন্তার স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার দিয়েছেন। মানুষের এই চিন্তার স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত বিস্তৃত। আল্লাহ মানুষকে তাঁকে না মানার অধিকার দান করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মুসলমান এবং অমুসলমান সব মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত নেবার আল্লাহ প্রদত্ত এ অধিকার হরণ করার কোন সুযোগ ইসলাম অনুসারে কারো নেই। কারো না থাকলেও মাওলানা মওদুদী জামায়াতের সে অধিকার আছে বলেই দাবি করতেন। সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে জামায়াত এবং জামায়াতের বাইরে কারো কোন রাজনৈতিক অধিকার থাকবে না- এমন ধরনের রাষ্ট্র গঠনই ছিল মাওলানা মওদুদীর লক্ষ্য।

যা হোক, দেখা যাচ্ছে এ সবই পুরাঘটিত অতীত- ইতিহাসের বিষয়। বর্তমান নিজামী-মোজাহিদের জামায়াতের বাস্তব কাজের সাথে এ সবের কোন সম্পর্ক নেই। তবু আমরা এখানে এ সব স্মরণ করছি, কারণ আমরা বুঝতে চাই কেন জামায়াতকে এমন একটি ঘাড়ভাঙ্গা ডিগবাজি মারতে হচ্ছে?

শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান, এরশাদের আমলে ইসলামের উচ্চ থেকে উচ্চতর শৃঙ্গে উত্থান দেখে অনেকে মনে করেছিলেন যে, বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক বাংলাদেশকে “ইসলামি প্রজাতন্ত্র” ঘোষণা করে এরশাদের রেকর্ড “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম”-কে ভেঙ্গে ফেলবেন। কিন্তু খালেদা-হাসিনা ইসলামের খেদমত করার জন্য নানান ইসলামি কাজ করলেও জেনারেল এরশাদের রেকর্ড তাঁরা ভাঙ্গতে পারেননি। খালেদা-হাসিনার দলীয় শাসনের ১৫ বছরে জেনারেল এরশাদের “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম”-রেকর্ড না ভাঙ্গা ঐ ব্যক্তিদের বিমূঢ় করেছিল। এখন জামায়াতে আস্তিক-নাস্তিক সবার রুকনাধিকার প্রাপ্তি এই বিমূঢ় ব্যক্তিদের মগজে যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।

খালেদা-হাসিনার ইসলামি বিশ্বাসে খাদ নেই। ধর্মের রাজনৈতিক উপকারিতায় বিশ্বাস খালেদা-হাসিনার কম নেই। কিন্তু জামানা বদলে গেছে। শেখ মুজিব, জেনারেল জিয়ার জামানা আর নেই। নেই জেনারেল এরশাদের জামানাও। তখন দ্বিশক্তির বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলা করার জন্য যেভাবে ইসলামকে ব্যবহার করার দরকার বোধ করতো, এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইসলামকে সেভাবে ব্যবহার করার দরকার বোধ করছে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দরবারে ইসলামি জেহাদিদের কদর ছিল, কদর ছিল দেশে দেশে ইসলামের খেদমত করা শাসকদের। সেই রাশিয়াও নেই, সেই কদরও নেই। এ ছাড়া বুশ এখন দিগম্বর হয়ে এমন এক “অনন্ত যুদ্ধে” নিযুক্ত আছে যার লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এশিয়ার মুসলমান দেশসমূহ লুট করা। বাংলাদেশও ১৫ কোটি মুসলমানের বসবাস। এ দেশও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এ দেশ দক্ষিণ এশিয়ার এমন একটি দেশ যে দেশের ঘাটি থেকে গোটা দক্ষিণ এশিয়া এবং দূর প্রাচ্যের দেশে সামরিক তদারকি করা সহজ। অতএব সব মিলিয়ে এ দেশকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার “অনন্ত যুদ্ধে”র সমর্থক মডারেট মুসলমানদের দেশে পরিণত করা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এখনকার দরকার। এই দরকার পূরণের প্রস্তুতি আমরা এখন সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে।

তাই জামায়াতের অসাম্প্রদায়িকীকরণে দেশপ্রেমিক জনগণের আশ্বস্ত হবার কোন কারণ নেই। ২১/১০/০৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.