![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বাস এবং অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- বিশ্বাসের প্রমাণ থাকে কিন্তু অন্ধবিশ্বাসের কোন তথ্য-প্রমাণ থাকে না। অন্ধবিশ্বাসী প্রমাণের বদলে বহুসংখ্যক অন্ধবিশ্বাসীকে সাক্ষী মানেন। পৃথিবীর সব মানুষ মনে করত যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে। কিন্তু সব মানুষের মনে করার কারণেই এই ধারণাটি সত্য হয় নি। বরং আধুনিক মানুষ বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মনে করে যে, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে।
সত্য কোন ভাবেই ব্যক্তির বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল নয়। সত্য কোন ভাবেই বিশ্বাসী ব্যক্তির সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না। সত্য কোন ভাবেই উচ্চ পদের ওপর নির্ভর করে না। অতএব কোন কিছুকে সত্য মনে করার জন্য বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বা পদ কোন ভাবেই যথেষ্ট হতে পারে না। সত্য হবার জন্য দরকার ঠিক তথ্য-প্রমাণ।
পৃথিবীতে বহু সংখ্যক মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে। বহু সংখ্যক মানুষ ভূত দেখেছে বলে দাবি করেন। কিন্তু ভূত নিজে দেখাটাই ভূতের অস্তিত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। ভূতে বিশ্বাসীদের অন্যকে ভূত দেখাতেও পারতে হবে। এখন পর্যন্ত তাজমহলের অবস্থানের মতো সুনিশ্চিতভাবে ভূতের ঠিকানা কেউ হাজির করতে পারে নি। তাই বহু সংখ্যক ব্যক্তির সমর্থন থাকা সত্ত্বেও ভূত ভূতই থেকে গেছে- সত্য হিসেবে গৃহীত হয় নি।
“মুসলিম লীগ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা”- এটা বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করে। তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে লাহোর প্রস্তাবকে দাখিল করে। লাহোর প্রস্তাব লিখিত আকারে দেখাতে না পারলে “মুসলিম লীগ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা”- এই বিশ্বাসকে শুধু মাত্র বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করে বলেই সত্য বলে গ্রহণ করা হত না। “লাহোর প্রস্তাব” না দেখাতে পারলে পৃথিবীর সব জাতীয় অধ্যাপকগণের সাক্ষ্যে পরও “ মুসলিম লীগ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা”-কে অন্ধ বিশ্বাসই বলা হত।
“কংগ্রেস স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতা”- এটা বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করে। তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে কংগ্রেসের “ভারত ছাড়” প্রস্তাবকে দাখিল করে। “ভারত ছাড়” প্রস্তাব লিখিত আকারে দেখাতে না পারলে - এই বিশ্বাসকে শুধু মাত্র বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করে বলেই সত্য বলে গ্রহণ করা হত না। “ভারত ছাড়” না দেখাতে পারলে পৃথিবীর সব জাতীয় অধ্যাপকগণের সাক্ষ্যের পরও “কংগ্রেস স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতা” -কে অন্ধ বিশ্বাসই বলা হত।
“আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা”- এটা বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগের কোন সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে?”- এ প্রশ্নের জবাবে লিখিত তথ্য দেখাতে না পারলে, “আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা” এই বিশ্বাসকে শুধু মাত্র বহু সংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বাস করতো বলেই ভবিষ্যতের মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগের স্বাধীনতার প্রস্তাব লিখিত আকারে দেখাতে না পারলে,“আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা” - এই বিশ্বাসকে পৃথিবীর বর্তমান সব জাতীয় অধ্যাপকগণের সাক্ষ্যের পরও অন্ধ বিশ্বাসই বলা হবে।
অন্ধবিশ্বাসের একটি বিপজ্জনক দিক আছে। অন্ধবিশ্বাসী অবিশ্বাসে রাগ করে। রাগটা অনেক সময় এতটা বেশি হয় যা অবিশ্বাসীর নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়। বিজ্ঞানে অন্ধবিশ্বাস থাকে না। বিজ্ঞানে বিশ্বাস থাকে। তাই বিজ্ঞানী তাঁর বিশ্বাসের বিপরীত কথা শুনলে রাগ করে না। অবিশ্বাসীকে মারার জন্য লঘি-বৈঠা হাতে তাড়াও করে না। বরং অবিশ্বাসীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করে-নিজের অথবা অবিশ্বাসীর।
প্রকৃতিনির্ভর দেশে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অন্ধ বিশ্বাস দেখা যায়। কায়েমী স্বার্থবাদীরা এই সব অন্ধবিশ্বাসকে মূলধন করে তাঁদের ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিল করে। স্বপ্নে প্রাপ্ত ঔষধ বিক্রি করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক কর্মীদের এ ধরনের সস্তা পথ পরিহার করা উচিত। মানুষের সত্য উপলব্ধি করার শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখতে হবে। মরহুম ১৪ দলের ২৩ দফায় বিবৃত নানা ভুতুড়ে অন্ধবিশ্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ করা হবে গণতন্ত্রের পথ বিসর্জন দেওয়া। এই সব অন্ধ বিশ্বাসগুলির অবলুপ্তির জন্য দরকার সাংস্কৃতিক কর্মীদের ধৈর্য ও সহনশীলতা। আমাদের ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান অন্ধবিশ্বাসের জায়গায় বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস গড়ে উঠার আশাবাদ বজায় রাখতে হবে। ২৩/৭/০৭
©somewhere in net ltd.