নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, কিছু নই।নৈশঃব্দের গান, বাতাসের কান্না।ঝরে যাওয়া ফুল। একমুঠো ধুলো।শেষ বিকেলের আলো...

অতঃপর শুভ্র

মন খারাপের একেকটা দিন। নিকষ কালো মেঘলা লাগে। কেউ বোঝেনা এই আমাকে, আমারও যে একলা লাগে......।।

অতঃপর শুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

কপালপোড়া বাঙালীরর ডিজিটাল প্রজন্ম

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৮

নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ছবি "গেরিলা"। মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত অন্যতম একটি সফল ছবির একটি।জয়া
আহসান অভিনিত এই ছবিটি প্রজন্ম দেখেছে দেশপ্রেমের তাগিদেই এবং গৌরবময় স্বাধীনতার সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে। কিন্তু ছবি দেখে জয়া আহসানের রূপের রহস্য খুঁজেছে তারা। ৪০ প্লাস বয়স হওয়ার পরেও ষোড়শী বালিকার মতো ফিগার ও নজরকাড়া ফিটনেসের কারণ খুঁজতে মাথা খাটানো প্রজন্ম ছবিটির পরিচালকের নাম জানার আগ্রহ দেখায়নি। কেউ কেউ নাম জানলেও তারা জানতে চায়নি কে এই নাসির উদ্দিন ইউসুফ! কি তার পরিচয়! এই মানুষটি সম্পর্কে ধারণা পেতেই এই পোষ্ট আর পোষ্টটি উৎসর্গ করা হলে প্রজন্মের ডুড অংশকে।
.
'গেরিলা' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় একাত্তরে। ঢাকার বুকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এমন একটি পত্রিকা প্রকাশ এবং বিদেশীদের কাছে এই পত্রিকাটি পৌঁছে দেওয়াটা ছিলো চরম দুঃসাহসের ও ভয়ঙ্কর। এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলো এই নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও তার সহযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঢাকার গেরিলা যুদ্ধ ছিলো ভয়ংকর এক অভিযানের নাম। " ক্র্যাক প্লাটুন" "মানিক গ্রুপ" "আফসার ব্যাটালিয়ন" ছিলো পাক বাহিনীর কাছে সাক্ষাৎ যমের নাম।
.
এই নাসির উদ্দিন ইউসুফ ছিলো একজন দুর্দান্ত গেরিলা। পাক বাহিনীর কাছে আজরাইলের অপর নাম ছিলো গেরিলারা।
.
নাসিরউদ্দিনের সাথে সর্ব প্রথমে ২৫ এপ্রিলে আগরতলায় সাক্ষাৎ হয় মেজর হায়দারের। মেজর তাকে কিছু ছেলে জোগাড় করতে বললে ঢাকা থেকে কিছু ছেলে সাথে নিয়ে ২২ মে মতিনগরে চলে যায়। সেখান থেকে দিনাজপুর ক্যাম্পে ট্রেনিং নেয়। সাথে ছিলো আরো ২৭ জন। ৪৫ দিন ট্রেনিং নেয় তারা। তারপর খালেদ মোশাররফ তাদের আরো ১৫ দিন ট্রেনিং দেয়। আরো ২৫ জন ছেলে সহ মোট ৫২ জনের একটি টিম গঠিত হয়। পাঠানো হয় ঢাকার উত্তরে।এগিয়ে যাচ্ছে গেরিলারা। মৃত্যভয়কে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাচ্ছে বিচ্ছু বাহিনী। চোখে আগুন ও স্বপ্ন দুটাই। আগুনে পুড়বে শত্রুরা আর মাতৃভুমিতে স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছে নাসিরউদ্দিনেরা। মা'কে রক্ষার সংকল্পে এগুচ্ছে গেরিলা। শত্রুকে ধ্বংস করতে চলছে গেরিলা ছবির পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। পথে পথে অনেক ঝড় ঝঞ্জা ডিঙ্গিয়ে রোহার একটি বাজারে আসে তারা। দালালেরা এই খবর জানিয়ে দেয় হানাদারদের। আক্রমণ হয় তাদের উপর। পাল্টা আক্রমণ করে নাসিরউদ্দিনের দল। ১৯ জন পাকসেনা খতম হয়। অাশরাফ নামে এক গেরিলা শহীদ হয়। এখান থেকে সরে পড়ে মুক্তিরা। চলে যায় সিঙ্গাইর থানার কাছে এক গ্রামে। এখানে একটি অপারেশন হয়। ১৪ জনের একটি রেশনিং কোরকে আক্রমণ করে সব কয়টাকে খতম করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। এখান থেকেও সরে যায় তারা। চলে যায় শিমুলিয়াতে। এবং এখান থেকে ২৩ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ প্রবেশ করে ঢাকা নগরীতে।
.
ঢাকায় ঢুকে প্রথমেই অপারেশন চালায় কাকরাইল মোড়ে। সেখানে একটি পেট্রল পাম্প উড়িয়ে দেয় গেরিলারা। এরপর আরো বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালায়। আরেকটি গ্রুপে চিত্রশিল্পী শাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকার দক্ষিনে গেরিলা আক্রমণ চালাতে থাকে।
.
এবার পরিকল্পনা হয় ডিআইটি ভবনে অবস্থিত টেলিভিশন কেন্দ্রটি উড়িয়ে দেয়ায়। মাহবুব আলী ডিআইটি ভবনে চাকুরী করতেন। সে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় অল্প অল্প করে বিস্ফোরক শরীরের সাথে লুকিয়ে সেখানে জড়ো করতেন। প্রথমে পরিকল্পনা ছিলো আট পাউন্ডের বিস্ফোরক দিয়ে সেটা উড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু পাঁচ পাউন্ড জমা হওয়ার পরেই শত্রুবাহিনী সন্দেহ করতে শুরু করে। তখন মাহবুব আলী তাড়াহুড়ো করে ছুটে আসে নাসিরউদ্দিনের কাছে। তখন পাঁচ পাউন্ডের সেই বিস্ফোরকই ফাটিয়ে দিতে বলা হয়। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে ডিআইটির চুড়ার নিচে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় মাহবুব আলী। বিস্ফোরকের মাত্রা কম হওয়াতে চুড়াটি পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও এতে ফাটল ধরে যায়। ঢাকার এই অপারেশনের খবর আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
.
অক্টোবরে আক্রমণ করা হয় মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে। মুনির একটি খেলনা পিস্তল দিয়ে এই ব্যাংকে অভিযান চালায়। এই ব্যাংক থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করে শিমুলিয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে দেওয়া হয়।
.
নভেম্বরে ঢাকায় পাক বাহিনীর উপর সরাসরি আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। দুএক দিন পরেই আরিফ, ফেরদৌস ও জন একটি গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে আসে। বায়তুল মোকারমে পাকবাহিনীর দুটি লরীর মাঝখানে গাড়িটি রেখে গাড়ির ভিতরের বিস্ফোরকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১০ মিনিট চলে যাওয়ার পরেও বিস্ফোরণ হচ্ছে না দেখে অাসাদ পুনরায় গাড়ির ভিতরে ঢুকে বিস্ফোরকে আগুন দেয়। অপারেশন সাকসেসফুল। ১৬ জন পাক সৈন্য নিহত হয়। অপারেশন হয় সাড়ে বারোটার দিকে আর বিবিসির ৩টার সংবাদের এ খবর প্রচারিত হয়। এছাড়া নভেম্বরে রেডিও বাংলাদেশ (শাহবাগ), মালিবাগ রেল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালানো হয়।
.
অক্টোবরের প্রথম দিকে সাভারের রেডিও ষ্টেশনের সামনে তিনটি পাক লরী আক্রমণ করে ৩৭ জন সেনা খতম করে। এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সাভার রেডিও ষ্টেশন থেকে মানিকগঞ্জ বড়াল ব্রিজ পর্যন্ত ৩০ মাইল এলাকাজুড়ে এক হাইওয়ে অপারেশন চালিয়ে ৩১৯ জন রাজাকারকে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করা হয়। ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেয়।
১৪ নভেম্বরে ভায়াডুবি ব্রিজ অপারেশন ও ১৬ ডিসেম্বরে মিত্র বাহিনীর সাথে বিজয়ী বেশে ঢাকায় প্রবেশ করে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
.
প্রজন্ম, তুমি এই গেরিলার পরিচালনায় নির্মিত চলচিত্র "গেরিলা"র নায়িকা জয়াকে চিনো অথচ এই দেশ এই স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজী রাখা সত্যিকারের গেরিলাকে চিনো না। ডুড প্রজন্মের জন্য একরাশ করুনা।
.
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্রের নবম খন্ডের ৪৯০ নাম্বার পৃষ্ঠা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১০

বিষন্ন পথিক বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ আপনার এই লেখার জন্য, জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বীরত্ব জানলাম, গর্ব হয় আমি বাংলাদেশী

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৯

ঋজুক বলেছেন: ডুড প্রজন্মের জন্য একরাশ করুনা X((

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২২

রাজিব হোসেন পানি বলেছেন: পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম ...ভালো লাগলো

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৯

নীল আকাশ ২০১৬ বলেছেন: কপাল পোড়া বাঙালি গেরিলা ছবি দেখেই প্রথম জানতে পারল যে মুক্তি্যোদ্ধারা পাকিদের দমনের কাজে সুন্দরী নারীদেরকে কাজে লাগিয়েছিল। এর আগে কোন ইতিহাস বা সিনেমায় এরকম কিছু জানা যায়নি।

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪১

ইলুসন বলেছেন: ভালো লাগছে লেখাটা।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২২

অতঃপর শুভ্র বলেছেন: শুভ কামনা সবার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.