![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটি প্রধান অংশ আসে প্রবাসী আয় থেকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা প্রবাসীদের জীবন সম্পর্কে। আসুন জেনে নেই তাদের কাছ থেকেই কেমন আছেন তাঁরা। জাহাঙ্গির। গোছানো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে উড়ে গেছেন সুদূর আরব আমিরাতে। চার বছর ধরে ক্লিনারের কাজ করছেন। মাইনে পান আট শ দিরহাম (১৬,৮২২.৮৫ টাকা)। এর মধ্যে পাঁচ শ দিরহাম দেশে পাঠান। আর বাকি তিন শ তার খাওয়া ও থাকার খরচ। ২৭ বছর বয়সি জাহাঙ্গির থাকেন বিলাসবহুল শহর দুবাইতে। বাংলাদেশ ছাড়ার আগেও তিনি জানতেন সত্যি সত্যিই শহরটি বিলাসবহুল। তখনো তিনি জানতেন না সেখানে শ্রমিকদের জন্য সোনাপুর নামে একটি মানবেতর ক্যাম্প আছে। ক্যাম্পটির অস্তিত্ব দুবাইয়ের মানচিত্রে নেই। দুবাই কর্তৃপক্ষ এ ক্যাম্পটিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে চান না। চার বছর ধরে জাহাঙ্গির আছেন এ সোনাপুর কলোনিতেই। আছেন বঞ্চনা নিয়ে। সোনাপুর শব্দের অর্থ হলো সোনা দিয়ে মোড়ানো শহর। এ নামে আমাদের দেশের আনাচে কানাচে বেশ কিছু গ্রামও আছে। এগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো না হলেও গ্রামের বাসিন্দাদের স্বপ্নগুলো ঠিকই সোনার মতো চকচকে। কিন্তু দুবাইয়ের সোনাপুর কঠোরতা, দুঃখ ও বঞ্চনার ক্যাম্প। সোনাপুরের ছবি নিয়ে সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলে একটি ছবি ফিচার প্রকাশ হয়েছে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ছবিগুলো তুলেছেন ইরানি ফটোগ্রাফার ফরহাদ বেরাহমান। তিনি জানান, সোনাপুর এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকেরা থাকেন বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক আছেন। দুবাইতে পা রাখার পরই শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয় এখানে। বিমানবন্দর থেকেই তাদের পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেন নিয়োগ কর্তারা। এতে শ্রমিকেরা পুরোপুরি নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ সুযোগে তারা অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করেন শ্রমিকদের। বেতনেও ঠকান। যেমন খুশি তেমন করে ব্যবহার করেন। এমনকি দেশে আসার সময় ঠিকমতো পাসপোর্টও ফেরত দিতে পারছেন না। এতে অনেক শ্রমিককেই সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। জাহাঙ্গিরের মতো শ্রমিকরা কোনোরকম মাথা গুঁজে টিকে আছেন সোনাপুরে। বিচ্ছিন্ন এ এলাকা থেকে সময়ে সময়ে বাসে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিমের মূল শহরে। একেকটি বাসে পঞ্চাশ থেকে এক শ জন শ্রমিক বহন করা হয়। কাজ করেন দিনে রাতে। মরুর তীব্র গরমে বহুতল ভবনের ছাদে। যেখানে পশ্চিমা কোনো পর্যটক পাঁচ মিনিটের বেশি সময় টিকতে পারবেন না। অথচ এই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকেরা সেখানে ঘাম ঝড়িয়ে আমিরাতি এবং পশ্চিমাদের বিলাসিতার জন্য তৈরি করেন ইমারত, হোটেল ও বিপনী। কিন্তু তাদের কপালে বিলাসিতা নেই। কাজ শেষে আবার ফিরে আসতে হয় অন্ধকার শ্রমিক ক্যাম্প সোনাপুরে। সেনাপুরে তাদের থাকার কামরাটি ১২ ফুট বাই ১২ ফুট। একটি কামরায় ছয়টি বিছানা। এতে লোক থাকেন ছয়জন থেকে আটজন। বিপদের ঝুঁকি নিয়েই রান্না করেন গ্যাস সিলিন্ডারে। নিজেরাই কাটাকুটি করে রান্না চাপিয়ে দেন। একেকটি রান্না ঘরে ছোট ছোট খুপড়ি। একেকটি খুপড়িতে একেকটি চুলা বসানো। সারা দিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঝটপট করে কোনোরকম একটা কিছু সেদ্ধ করেন। কখনো নিজেরা কাজ ভাগাভাগি করে নেন। কেউ মাছ কাটেন, কেউ তরকারি তৈরি করেন। আবার কেউ রান্নার আয়োজন করেন। কোম্পানীর নির্দিস্ট কাজ শেষে শরীর কুলোতে চায় না। তবুও অতিরিক্ত সময়টুকুতে তারা অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করেন। ক্যাম্পের সামনে তরকারি, খাবারসহ এটা ওটার দোকান নিয়ে বসেন অনেকেই। বিক্রি করেন অন্য শ্রমিকদের কাছে। এর মধ্যে যতটুকু অবসর মেলে, সেটুকু গল্পগুজব করে আর ক্যারাম খেলে কাটিয়ে দেন। খেলতে খেলতে, বলতে বলতে চোখে ভেসে উঠে দেশের স্বপ্ন, পরিবারের স্বপ্ন। আবার কেউ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানান। কিন্তু নিয়োগকর্তাদের হাতে পাসপোর্ট জমা থাকায় এখানেই আকুলি বিকুলি করতে হয়। এক চীনা শ্রমিক এই ফটোগ্রাফারকে ঘরে ডেকে নিয়ে যান। তিনি একটি কাঠের বোর্ড তুলে দেখান তাকে। এতে নিজের হাতে কয়েকটি বাক্য লিখেছেন এই শ্রমিক- "প্রিয় বস, আমি এক বছর ধরে এ কোম্পানিতে কাজ করছি। এখন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সবসময়ই আমার বেতন চারমাস বাকি রাখা হচ্ছে। দয়া করে আমার পাওনা শোধ করে দিন।" ফরহাদ বলেন, তিরিশ বছর আগেও এ দুবাই নগরীর অনেকটাই মরু ছিলো। দিন যাচ্ছে আর উন্নত হয়ে উঠছে। এখন পৃথিবীর পর্যটন ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইরানি এ ফটোগ্রাফার বেশ কয়েকবার দুবাই ভ্রমণ করেছেন। সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এখানকার সমাজকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। প্রথম শ্রেণীতে আছেন স্থানীয় আমিরাতিরা। দ্বিতীয় শ্রেণীতে মধ্যসত্বভোগীরা এবং তৃতীয় শ্রেণীতে শ্রমিকেরা। অথচ এ শ্রমিকের ঘামেই গড়ে উঠেছে আজকের দুবাই। ফরহাদ বলেন, দুবাইতে বিদেশী এসব শ্রমিকদের জীবন যাপনকে গণমাধ্যমের আড়ালে রাখা হচ্ছে। তারা কোনো সাংবাদিক বা ফটোগ্রাফারকে সেখানে অনুমোদন দেয় না। তাই আমি অনুমোদন নেয়ার চেষ্টাও করি নি। ছবি সিরিজ তৈরি করার জন্য রাতের অন্ধকারে গোপনে চলে যাই শ্রমিক ক্যাম্পে। ওদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করি। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম শ্রমিকেরা আমাকে ভালো ভাবে নিতে চায়নি। এরা আমাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে যায়। ইংরেজী বলতে পারে এমন একজন জানালেন তারা ভাবছে আমি সরকারের পক্ষ থেকে এসেছি। ফরহাদ বলেন, ক্যাম্পে বেশিরভাগ সময়ই আমি আমার গাড়িতে ঘুমিয়েই কাটিয়েছি। রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করেছি। রাত নামলেই শ্রমিকদের সাথে কাজ শুরু করেছি। এতো সবধান থাকার পরও নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। তারা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। এমনকি পুলিশের হাতেও তুলে দিতে চান। কিন্তু নিজেকে দিকভ্রান্ত পর্যটক হিসাবে চালিয়ে দিয়েএবারকার মতো রক্ষা পেলেন ইরানি ফটোগ্রাফার ফরহাদ বেরাহমান।
(ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
©somewhere in net ltd.