নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভিক্ষাবৃত্তি যতটা না প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি অভ্যাসের তারণায় ঘটে। আমি এমন অনেক ভিক্ষুকদের চিনি যারা ভিক্ষা করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারা নিয়মিত ভিক্ষা করেন।
ঢাকায় এক মহিলা ভিক্ষুকের সাথে আমার প্রায় সময় দেখা হয়। তিনি প্রথমে আমার নজরে আসেন আজ থেকে বছর দুই আগে। তার স্বামীর হাপানী রোগ, তার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ যোগাতে তাকে ভিক্ষায় নামতে হয়। টানা একই জায়গাতে দেখা হওয়ায় একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম বলে তার সম্পর্কে জানি। মাঝে মাঝেই তার কোলের ছোট্ট বাচ্চাটাকে দেখেই মূলত সাধ্যমত সাহায্য করতাম।
এভাবে অনেক দিন পার হলে এই মহিলার সাথে আমার দেখা হওয়া একটা নিত্য ঘটনায় পরিনত হয়। সন্দেহ হওয়ায় একদিন আমি বললাম আপনার স্বামীকে আমি দেখতে যাবো চলেন। যদি দেখাতে পারেন তাহলে আমি চিকিতসার ব্যাবস্থা করবো। কিন্তু মহিলা আমার কথাকে এড়িয়ে গিয়ে “স্বামীর হাফানী, একটু সাহায্য করবেন?” যপতে যপতে চলে যায়। আমিও আর বাগড়া দেইনা। মহিলা ওয়্যারলেস গেটের মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায় আর আমি ভাবছি হয়তো তার কোলের এই বাচ্চার প্রথম বুলি মা কিংবা বাবা হবেনা বরং “আব্বার হাফানি একটু সাহায্য করবেন?” হবার সম্ভাবনা বেশি। সে দিনের পরে টানা কয়েকদিন মহিলাকে আর দেখিনি। হঠাত কিছুদিন পর দেখলাম সেই চীরচেনা ভংগিতে “স্বামীর হাফানি, একটু সাহায্য করবেন?” দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে মহিলার কন্ঠের জোড় কমতে থাকে। আর তার ভিক্ষার আকুতি আস্তে আস্তে বির বির এ রূপ নিলো। মহিলা একটু ইতস্তত হয়ে যান। কিন্তু আমাকে দেখে তিনি হেসে ফেললেন। আমিও হালকা হাসলাম। কিন্তু আমি কোন ভিক্ষুকের সাথে তাল মিলিয়ে হাসছি এই দৃশ্য কেউ দেখার আগেই আমি কেটে পরি।
বুঝলাম মহিলা অভ্যাসের কাছে জিম্মি। তাই প্রতি সন্ধায় কোলে নিষ্পাপ শিশুকে নিয়ে নেমে পরেন রাস্তায়। যেখানে হাত পাতলে প্রতি শতকে খুব ভালো একটা অংশের মানুষ তাকে খালি হাতে ফিরায়না।
আমাদের এলাকার এক মহিলা ভিক্ষুককে চিনতাম। তার বাড়ি যে গ্রামে আমার বড় বোনেরা কোন একটা প্রয়োজনে সেদিকে একবার যান। পথে এই মহিলাকে দেখে কুশল বিনিময় করেন। মহিলা তাদেরকে তার বাড়ি যেতে বলেন। আপু মানা করলেও মহিলা নাছোর বান্দী। তিনি যাদের কাছ থেকে একটু সাহায্য পান, কখনো চাল, কখনো ভাত-ছালুন তাদেরকে তার বাসায় একটু আপ্যায়ন করার ইচ্ছে হয়তো তার বহুদিনের। তার পিরাপিরি দেখে একটু বিব্রত হলেও আমার আপু রাজি হলেন। বাসায় যেয়ে যা দেখলেন তা দেখার জন্য হয়তো তারা প্রস্তুত ছিলেন না। সোফা, আলমাড়ি, দামী খাট, টিভি-ফ্রিজ, একটা উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরে যা থাকে তার সবই আছে তার ঘরে। আপু চোখ আকাশে তুলে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছিলেন “আপনি ভিক্ষা করেন কেন?” মহিলার অকপট উত্তর “পোলায় কয় ছাইড়া দিতাম, কিন্তুক বিষুধ বার আইলে গরো তাকতাম ফারিনা, গুইরা গাইরা যাই ঐ”
তিনি আপুদের কি দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন জানা হয়নি কিন্তু মহিলার ভিক্ষা করার কারণ সম্মন্ধে আর তিল মাত্র সন্দেহ নেই।
তিনিও অভ্যাসের কাছে বন্দী।
আরেক শ্রেণীর ভিক্ষুক আছে। তারা কতটা ভিক্ষুক তা জানিনা। তারা আমাদের মাঝেই ভাই, বন্ধু, সন্তান, প্রতিবেশী কিংবা চেনা জানা, মানুষের মধ্যে থাকে। তারা যখন চায় তখন পায়। এই চাওয়া মাত্র পাওয়ার কারনে তাদের মধ্যে একটা পরজীবি সত্বার বসত গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে এটা হয়ে উঠে চরম তম নেশা। একের পর এক জনের কাছ থেকে ধার দেনা করে করে চলে তারা। উপরের দুই মহিলা ভিক্ষুকদের থেকে তারা চেহারা, বেশ ভুশায় উচ্চমার্গীয় ও সমাজে তাদের যারা ভালো করে চিনেনা তাদের কাছে তাদের অবস্থা আহামরি কিছু।
কিন্তু তাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ হলো উপরে উল্যেখিত দুই মহিলা ভিক্ষুকের বিপরীত। আর তা হচ্ছে তাদের দরজা একদিন বন্ধ হয়ে যায় সব দিক থেকে। কিন্তু উপরের অভ্যাসের দাসদের দরজা বন্ধ হয়না কোন দিন। তারা কারো না কারো দয়া পেয়ে যায়। আর স্নিকার শু পড়া ভিক্ষুকদের চিনে ফেললে মানুষেরা দ্বিতীয় বার একই ভুল করেনা।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
আমি মিহু বলেছেন: আমার লেখার মূল উদ্যেশ্য ভিক্ষুক দের দুর্নীতি না। শেষ অংশে যে আরেক প্রকৃতির ভিক্ষুকদের কথা বলেছি তারা।
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: এসব কারনে এখন আর ভিক্ষা দিতেও ইচ্ছা।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
আমি মিহু বলেছেন: আমার লেখার মূল উদ্যেশ্য ভিক্ষুক দের দুর্নীতি না। শেষ অংশে যে আরেক প্রকৃতির ভিক্ষুকদের কথা বলেছি তারা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ভিক্ষাবৃত্তিতেও দুর্নীতি ঢুকে গেছে। বাংলাদেশের কোন জায়গায় দুর্নীতি নেই বলেন? এইটা তো খুবই স্বাভাবিক।
অবশ্য এই ঐতিহ্যটা ভিক্ষুকদের মাঝে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে।