নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যাযাবর

আমি মিহু

আনাড়ি হাতের আনকোরা লেখক

আমি মিহু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রান্সিস বেকনের প্রবন্ধ: পর্ব ১ (সত্য)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

সত্য
সত্য আবার কি? প্রশ্নটি ব্যাঙ্গার্থে উত্থাপন করেন জুডার (Judaea) রোমান গভর্নর পাইলেট। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। জোয়াবের জন্য তিনি মোটেই অপেক্ষা করলেন না। সোজা গোসলখানায় চলে গেলেন। বস্তুতঃ একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষন করা অনেকের অভ্যাস। কোন বিষয়ে নির্দিষ্ট মত পোষন করা তারা বন্ধনের সমতুল্য মনে করেন। তারা চিন্তায় ও কাজে দেখাতে চান যে তারা মূক্ত বুদ্ধির উপাসক। দল গত ভাবে এসব দার্শনিক যদিও আজ অবর্তমান তথাপি এই চিন্তাধারার প্রবণতা এখন ও রয়েছে । এ মতবাদের পক্ষে প্রাচীন কালের অকাট্য যুক্তি এখন আর দেখা যায়না। সত্যের উদ্ধার প্রকৃতই দুরূহ ও কষ্টসাধ্য। সত্য একবার প্রকাশ পেলে তা মানুষের চিন্তা ধারাকে অনিবার্য ভাবে প্রভাবিত করে। এই সব কারনে মানুষ মিথায়র পক্ষ অবলম্বন করে তা নয় বরং মিথ্যার জন্যে এক প্রকারের দুষ্টু দুর্বলতাই যেন মানুষকে সত্য এড়িয়ে চলতে উতসাহিত করে। পরবর্তী কালের অন্যতম গ্রীক চিন্তাবিদ বেকন মনে করেন ইনি লুসিয়ান এ বিষয়ে চিন্তা করে কোন সিদ্ধান্তেই পৌছাতে পারেন না।
মিথ্যাকে কেন মানুষ মিথ্যার খাতিরেই ভালোবাসে? কবিদের কথা পৃথক। আনন্দ সৃষ্টির জন্য সত্যকে তারা উপেক্ষার চোখে দেখেন। ব্যাবসায়ীদের কথা ও পৃথক। লাভের খাতিরে তারা মিথ্যা কথনে এমন কিছু দোষের দেখতে পান না। কিন্তু সাধারন মানুষ, তারাতো এইসব মানুষের কোন শ্রেণীতেই পরেন না। আমিও এ ব্যাপারে হতবুদ্ধি। এই সত্য যেন প্রকাশ্য দিবালোক। যে দিবালোকে মঞ্চের মুখোশ, ছদ্মবেশ এবং বিজয়মিছিল স্পষ্ট দেখা যায়না। রাতের আঁধারে মঞ্চের আলোতে এ সকল দৃশ্যকে যেমন রাজকীয় এবং চাকচিক্যময় দেখা যায় দিনের আলোতে তার অর্ধেক ও মনে হয়না। সত্যকে বোধ হয় মূক্তার মূল্য দেয়া চলে। হীরক অথবা তৎসদৃশ কোন মেকি জিনিসের ও মূল্য দেয়া চলেনা। দিনের আলোতে মূক্তা সুন্দরতম দেখায়। কিন্তু হীরক বা তৎসদৃশ অন্যকিছু মিশ্র আলোতে উজ্জ্বলতম দেখায়। খানিক মিথ্যার ছোঁয়াচ সব ক্ষেত্রে যেন খুশির কারণ। শূন্যগর্ভ সমর্থন, তোষামোদ মিশ্রিত মিথ্যা আশা, অসত্য মূল্যায়ন, খামখেয়ালী পরিকল্পনা এসব কিছু না হলে অনেক লোকেরই মন যেন ছোট হয়ে পরে এবং যাকে বলে ভালো লাগেনা। প্রাচীনকালের কোন এক উগ্রসাধক ধর্মযাজক কবিতাকে বলেছিলেন শয়তানের সোমরস। কারণ তার মতে কবিতা মানুষের ভাবালুতার খোরাক জোগালেও তাতে মিথ্যার ছায়া থাকে। যদিও সে মিথ্যাকে মানুষের মনে গভীরে প্রবেশ করেনা বা এমন মিথ্যা নয় যা আমাদের মনে নিজের স্থান নিয়ে আমাদের সত্যিকার কোন ক্ষতি করে। বস্তুতঃ সন্ধান ব্যাতিরেকে প্রকৃত সত্যের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। এক মাত্র সত্যসন্ধানীই সত্যকে পেয়ে থাকেন এবং সত্যের সৌন্দর্য দেখে অপূর্ব আনন্দ অনুভব করেন। শুধু তখুনই এই সত্য উপলব্ধ হয় যে মানব চরীত্রে সত্যের স্থান সবার উপরে। সত্য মানব চরীত্রের স্বর্ণমুকুট। স্রষ্টার প্রথম সৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের আলো এবং সর্বশেষ সৃষ্টি বিবেকের আলোঃ সেই আদীম সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর থেকে স্রষ্টা মানুষের মনকে নিজের আলোকে উদ্ভাসিত করার কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন। সর্ব প্রথম তিনি জড় জগত অন্য কথায় অসুন্দরের উপর আলো প্রদান করেন। অতঃপর তিনি আলো প্রদান করেন মানুষের মুখে এবং তার পরেও তিনি তার ভক্তদের নিজের আলোকে অনুপ্রানীত করে চলেছেন। যে কবি লিউক্রেটিয়াস নিকৃষ্ট নাস্তিকতাবাদীদের ভূষন ছিলেন তিনিও কি সুন্দর বলেছেন “তীরে দাঁড়িয়ে সাগরের বুকে দোদুল্যমান জাহাজকে লক্ষ করা আনন্দদায়ক। দুর্গের গবাক্ষপথে নিম্নভূমিতে যুদ্ধ এবং যোদ্ধাদের সাহস এবং শৌর্য অবলোকন করাও আনন্দদায়ক। কিন্তু সত্যের অনড় ভূমিতে দাঁড়িয়ে নিম্নভূমিতে ভ্রান্তি, বিভ্রান্ত কুহেলিকা এবং ঝড়ের উদ্দামতার দৃশ্যের সাথে আর কোন কিছুরই তুলনা হয়না। এই আনন্দের অনুধাবন বিগলিত চিত্ততার সাথে হয় এবং অহমিকা মূক্ত হয়। প্রকৃতই আমাদের হৃদয় যদি উদারতা সিঞ্চিত থাকে, তাহলে মর্ত্য স্বর্গে পরিনত হয়।
ধর্মের ক্ষেত্র এবং দর্শনের জগত ছেড়ে সাধারন নাগরিক জীবনেও যারা সত্যের ধর্ম মেনে চলেন না তারাও স্বিকার করে থাকেন যে যারা কর্ম সম্পাদনে পরিচ্ছনতা এবং হৃজুতা রক্ষা করে চলেন তারা সজ্জন বলে সম্মান লাভ করেন। সত্যের সাথে মিথ্যার সংমিশ্রন স্বর্ণ অথবা রৌপ্য মুদ্রাতে খাদের মতো। খাদের সাহায্যে ধাতু দিয়ে কোন কিছু তৈরি করার কাজ সহজ বটে কিন্তু ধাতু আর খাটি থাকেনা। একেবেকে বক্র পথে চলা সর্পের প্রকৃতি। সর্প কখন ও স্বাভাবিক ভাবে তার পায়ের সাহায্যে হাটেনা। পেটের উপর ভর করে চলে। মিথ্যা এবং চক্রান্ত মূলক আচরণ মানুষের জন্য যত লজ্জার কারণ আর কোন পাপ তত লজ্জার কারণ নয়। মতা (Montaigue) ভারি সুন্দর বলেছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মিথ্যা কথা বলাকে এত বড় অন্যায় এবং ঘৃনার কাজ মনে করা হয় কেন? তিনি জওয়াবে বলেছিলেন সুক্ষ্ম বিচারে দেখা যাবে যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলে ইশ্বরের উদ্যেশ্যে দুঃসাহসী আর যে বলে মানুষের উদ্যেশ্যে কাপুরুষ। কারণ মিথ্যাবাদী ইশ্বরের মুখোমুখি হয়ে অন্যায় করে আর লোক সমাজে কাপুরুষতার কারনে গোপন করে। মিথ্যাবাদী এবং বিশ্বাস ভংগকারীর জন্যে পৃথিবীতে ইশ্বরের বিচার নেমে আসবে। এ কথার নিহিতার্থ দুই প্রকার আচরণের জঘন্যতার প্রতি ইংগিত প্রদান। এ বিচার হবে মানুষের জন্যে সর্বশেষ বিচার। যখন যিসু আবার আসবেন প্রথিবীতে তিনি এখানে বিশ্বাস বলে কিছু পাবেন না।

১. জুডার (Judaea)ঃ তার সামনে ঈসা আঃ নের বিচার করা হয়েছিল।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
//দিনের আলোতে মূক্তা সুন্দরতম দেখায়। কিন্তু হীরক বা তৎসদৃশ অন্যকিছু মিশ্র আলোতে উজ্জ্বলতম দেখায়। খানিক মিথ্যার ছোঁয়াচ সব ক্ষেত্রে যেন খুশির কারণ।// :)

ভালো বলেছেন। ফ্রান্সিস বেকন একজন কট্টর খ্রিস্চান ছিলেন। এবং একজন চতুর রাজনীতিক।

লেখকের কাছে প্রশ্ন: সত্য কী ধর্মের বাণীতে আবদ্ধ?
নাকি ধর্মই সত্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে?

চমৎকার প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

আমি মিহু বলেছেন: আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জ্ঞানের বাইরে।

তবে আমার কাছে মনে হয় সব সত্য ধর্মের বাণিতে আবদ্ধ নয়। তবে ধর্ম ও অনেক সত্যের সমন্বয়।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

অনেক ধন্যবাদ। প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমারও জ্ঞানের বাইরে ;)

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: লেখাটা কি অনুবাদ?

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭

আমি মিহু বলেছেন: জ্বি ভাই। ফ্রান্সিস বেকনের প্রবন্ধের বই থেকে নেয়া। আমি অনুবাদ করিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.