নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি উন্মাদ আমি উন্মাদ আমি চিনেছি আমারে আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ

অনিক মাহফুজ

অনিক মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচার হবেনা??

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:১৩

বুকের মানিক সন্তানকে আঁকড়ে ধরে রাখে যে মা সে যখন চোখের সামনে দেখে সন্তান লাশ হয়ে শুয়ে আছে অপার স্নেহে সন্তানের জন্য তৈরি করা বিছানাটিতে তখন সেই মায়ের কি অবস্থা হয় তা হয়তো সেই বলতে পারবে কিন্তু কোন অপরাধে তাঁর সন্তানকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো এই প্রশ্নের জবাবে কবি বরাবরই নিরবে মাথা নত করে আড়ালে হাসে কেননা এতো কবির খেয়ালের কারণেই হয়েছে। নিজের লেখা ভয়ানক পদ্যকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সে যে শতভাগ সফল। ওই হৃদয়বিদারক হাহাকার তার কানে পৌছবে কেন?



হত্যা, খুন যখম আর অপহরণের অভয়ারণ্যে বাস করে এটুকু নিশ্চিত বুঝতে পেরে গেছেন যে, যে ঘটনাটা আজ আপনার প্রতিবেশীর সাথে হয়েছে সেটা কাল আপনার সাথেও ঘটতে পারে। দুর্মূল্যের বাজারে সবচেয়ে সস্তা যে আপনার জীবন। তাহলে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হওয়ার পরও কোথায় আমাদের জীবনের নিরাপত্তা?? এ কেমন স্বাধীন দেশ যে তার নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না??



গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সর্বময় শাসন ক্ষমতার অধীকারী হয় জনগণ যাতে থাকে সরকার গঠনকারী দলের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা। কিন্তু এ দেশের মানুষ নিজেদের অধিকার অপরের হাতে তুলে দিয়ে শান্তিতে টিভির সামনে বসে অন্যের ওপর আসা আঘাত দেখে আফসোসের মাধ্যমে সমব্যাথী হওয়ার চেষ্টা করে আর অকস্মাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠে যখন দেখে টিভিতে দেখা সিরিয়াল নিজের ওপর বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ সামনের দিকে অগ্রসর হয় আর আমরা তো দেয়ালটাকেই ভেঙে ফেলছি।



২৪ নভেম্বর ২০১২, ১১২ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে শেষে জায়গা করে নিল জুরাইন কবরস্থানের গণকবরের। যে ৪৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে কেবল তাদেরই কপালে জুটেছিল পরিবারের জানাজা বাকিরা কেবলই বেওয়ারিশ।

এই ঘটনার এক বছর পর আসামিদের বিরুদ্ধে তৈরি হয় চার্জশিট। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সত্যি। মিডিয়ার কয়েকদিনের তোলপাড়ের পর আঁধারে ডুবল সবকিছু। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ছোটা অসহায় স্বজনদের ভাগ্যে কি জুটল সে সম্বন্ধে রয়ে গেল অজ্ঞাত দেশবাসী।



২৪ শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসের নায়ক রানাকে নিয়ে প্রবল তোলপাড়ের পর আর কোন খবরই পাওয়া গেলনা। এখনো বিচারের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকার অপেক্ষার প্রহর কেবলই বাড়ছে কিন্তু বিচার পাওয়া যাচ্ছেন৷। ১১২৯ জন মারা গেল, ৯৯৬ জন নিখোঁজ হলো, ২৫০০ জনের বেশি আহত হলো অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করে অভিশপ্ত জীবনের পথে পা বাড়ালো কিন্তু ১ বছর পার হয়ে যাবার পরও কোন বিচার পেলনা।



প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পাতাটি দখল করে থাকে হত্যা, গুম আর অপহরণের খবর। খুন হয়, গুম হয় কিন্তু বিচার হয়না। মানুষের হাহাকার কেবল বাতাসে ভাসে প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছায় না আর এর মাঝেই চলে মৃত মানুষগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক নোংরামি।

এক সময়ের বিশুদ্ধ পানির প্রবাহমান নদী হিসেবে পরিচিত শীতলক্ষ্যা এখন কেবলই একটি মৃত্যুকুপ। যেখানে মাছের বদলে পাওয়া যায় লাশ আর নদীর পাড়ে দাঁড়ালে পাওয়া যায় লাশের গন্ধ। বাতাসে কান পাতলেই শোনা বৃদ্ধা মা কাঁদছে, সদ্য বিধবা হওয়া নববধূটি হাহাকার করছে, ভাইহারা বোন আর্তনাদ করছে।

বন্দর নগরীর নারায়ণগঞ্জ এখন মৃত্যু আর গুমের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সব জেনে না জানার ভান করা অভিনেতাদের অভিনয় সত্যিই প্রশংসার যোগ্য নয়তো সাতদিন পর আসামির বাড়ি তল্লাশীর নাটকটি করা সম্ভব হতো না। আমরা সবাইতো কেবল নির্বাক দর্শক।

মিডিয়ার প্রতিদিনকার খবর হচ্ছে খুন আর গুম নিয়ে কিন্তু এই অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছে এমন খবর মিডিয়াকে প্রকাশ করতে দেখা যায়না। আর কিইবা প্রকাশ করবে!! বিচার হলে তো প্রকাশ করবে। যেখানে হত্যাকাণ্ডের পর একবছর কিংবা তারও অধিক সময় লাগে আসামির চার্জশিট গঠন করতে সেখানে বিচার চাওয়াটা যে মূর্খের কাজ। তদন্তের পর কেবল তদন্ত চলতে থাকে বিচারকার্য শেষ হয়না।



এটা যে মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে তা স্পষ্ট দৃশ্যমান। হত্যা হয় বিচার হয়না, ধর্ষণ হয় বিচার হয়না, মায়ের বুক খালি হয় বিচার হয়না। শুধু হয় মামলার ওপর মামলা আর লোক দেখানো তদন্ত। দেশের বাতাস এখন ভারী মায়ের আহাজারীতে দেশের মাটি এখন সিক্ত মানুষের রক্তে। এতকিছুর পর এ মাটির ওপর দাঁড়ালে মনে কেবল একটি কথাই বারবার উঁকি দেয়

"এতগুলো লোক মারা গেল, মায়ের বুক খালি হলো। বিচার হবেনা??"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.