![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কে আমাকে ফুলের মালায় বরণ করল, আর কে আমাকে জুতার মালায় বরণ করল ! তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি যেন সব সময় সত্য দ্বারা পক্ষপাত দুষ্ট হই। এটাই নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা।
দেশটা তো মগের মুল্লুক। চাইলেই প্রকাশ্যে যে কারো ফাঁসির দাবী তোলা যায়। চাইলেই যে কারো কল্লার দাম ঘোষণা করা যায়। দেশে আইন আদালত সব ভাগাড়ে গিয়েছে। আজ কাল আইন আদালত চলছে জনসমর্থন আর মিছিলের বহরের উপরে। যে মিছিলে জনগণ বেশি, সেই মিছিলে ভোটও বেশি। যেই মিছিলে ভোট বেশি তাদের জ্ঞান, বদ্ধিমত্তা ও বেশি। তারাই সঠিক। সুতরাং আইন আদালত চলছে ভোট ব্যাংকের দিকে নজর রেখে। তাতে সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়।
এর সিংহ ভাগ দোষ দেশের বুদ্ধিজীবী আর সাহাবাগিদের। কথাটা বুঝুন, তার পরে তর্কে আসুন। সাহাবাগের আন্দোলনের আগেও মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে, ফাঁসির দাবীতে পোস্টারিং হয়েছে, মাইকেও ঘোষণা দিয়ে ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু কারা করেছে? করেছে কিন্তু সংখ্যালঘু ভুইফোড় কিছু সংগঠন। বাংলার সাধারণ জনগণ, প্রগতিশীল মানুষ আর শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা ছিল এগুলো থেকে দূরে।
গত বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে সরকারের কাপড়হীন নির্লজ্জ দলবাজীর প্রতিবাদ করে কিছু পরীক্ষার্থী/ বানর একজাগায় জড় হয়ে স্লোগান দিয়েছিল - "মুক্তিযুদ্ধের গালে গালে, জুতা মার তালে তালে। " এই সাহস এই সকল জানোয়াররা কোথায় পেল? এই দায় কার? এটা কেন হল?
আমার বিচারে এটার দায় সাহাবাগীদের। সাহাবাগ+ সরকার আমাদের কক্ষু লজ্জার খোলস গুলো সব খুলে দিয়েছে। সরকার, বুদ্ধিজীবিরা যখন সাহাবাগে জড় হয়ে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করলো তখন সেটা প্রমান হল যে, আইন আদালত উপরে আমাদের আস্থা নাই। সেই যে অনাস্থা জ্ঞাপন শুরু হল সেটা চলতেই থাকবে।.....
সেদিন যে সাহাবাগের ময়দানে গগন ফাটিয়ে চিত্কার করে বলেছেন "ফাঁসি.......ফাঁসি........ ফাঁসি চাই......" তাতে লাভ কি হয়েছে? ক্ষতিই বা কি হয়েছে? একটু কি মিলিয়ে দেখেছেন? সেদিন যে ৫ বছরের শিশুকে ঐ ময়দানে ছেড়ে দিয়ে উত্সাহ দিয়েছেন- ফাঁসি।..... ফাঁসি বলে চিত্কার করতে, তাতে লাভ ক্ষতি টা কি মিলিয়ে দেখেছেন?
ঐ শিশু তার জীবনের প্রথম ভাগেই জেনে গেছে যে ফাঁসি ফাঁসি বলে চিত্কার করলে ফাঁসি হয়ে যায়। সুতরাং আইন আদালতের প্রয়োজন নাই। দেশের সাধারণ মানুষ এখন জানে, কিছু মানুষ জড় হয়ে চিত্কার করলে ফাঁসি হয়ে যায়। হিংসা প্রকাশের চরম এক পন্থা আমরা আবিষ্কার করে ফেলেছি...
দেশে এখন সুশীল আর কুশীলের মাঝে পার্থক্য কি আমি বুঝি না। যে কাজটি সততার সাথে করার কথা ছিল আদালতের, সেটা আদালত করলো না। যে সততার পরিচয় সরকারের দেওয়ার কথা ছিল সরকার তা দেয় নি। অগত্তা সঠিক বিচারের দাবী নিয়ে জনগণ মাঠে নেমে গেল। পরিনামে হয়তো কিছু পশুর স্বাস্থী হল, কিন্তু জাতিগত ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলাম। চরম ব্যাধী আমাদের মস্তিস্কে ঢুকে গেল। এখন জড় হয়ে চিত্কার করলেই ফাঁসি হয়ে যাবে.......
আর মুক্তিযোদ্ধার গালে যে জুতা মারা হল সেই সাহসও এসেছে এই সাহাবাগ থেকে। সাহাবাগই প্রথম দেখিয়েছে কি করে উশৃঙ্খল হতে হয়। যখন প্রকাশ্যে দাবী তোলা হয়- "একটা একটা শিবির ধর, ধৈরা ধইরা জবাই কর". তখন মানবতা কোথায় গিয়ে দাড়ায়? মানুষের জীবন কতোটা হুমকির মুখে এসে পড়ে? অবস্যই শিবির অপরাধী বা সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু তাই বলে বিচার বহির্ভূত অথবা জবাই কর শব্দটা ব্যবহারে যেমন আমাদের উশৃঙ্খলতা প্রকাশ পায়, তেমনি আমি নিজেই সেই হুমকির মুখে পতিত হই।
সকালে উঠেই জানলাম ‘নবী মুহাম্মাদের ২৩ বছর" নাম বই প্রকাশ করার জন্য বিক্ষোভে বইটির প্রকাশক রোদেলা প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী রিয়াজ খানকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানায় বিক্ষোভকারীরা। কি মজা তাই না? একজন লোক বই প্রকাশ করলো, তাতে কি লেখা আছে না-আছে পাঠক জানতেও পারল না। অমনি প্রকাশকের ফাঁসি হয়ে গেল?????? কি চমত্কার.........
ফাঁসি এখন ছেলের হাতের মোয়া। চাইলেই পাওয়া যায়... কাল হয়তবা দেখব প্রেমিকা দাবী তুলেছে প্রেমিক তাকে ভালোবাসেনি কেন? তার ফাঁসি চাই.... মা ছেলেকে সঠিক সময় খাবার দেয়নি, মায়ের ফাঁসি চাই... বাবা সঠিক সময়ে স্কুলের বেতন দেয়নি, বাবার ফাঁসি চাই....... সেই দিন আর বেশি দুরে না.....
©somewhere in net ltd.