![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কে আমাকে ফুলের মালায় বরণ করল, আর কে আমাকে জুতার মালায় বরণ করল ! তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি যেন সব সময় সত্য দ্বারা পক্ষপাত দুষ্ট হই। এটাই নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা।
বিশিষ্ট নাট্যগুরু প্রবীর গুহর একাটা কর্মশালা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অল্টারনেটিভ থিয়েটার ফর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি বেশ পরিচিত একটি নাম। একবার ভারতের প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছেন। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। ১৯৭১ সালে বাবা মায়ের সাথে শরণার্থী হয়ে দেশ ছাড়েন। আর ফিরে আসা হয়নি।
কর্মশালায় তিনি আমাদের ক্রিয়েটিভিটি যাচাই করার জন্য কিছু টপিক দিলেন। আমাদের কাজ হল সেই টপিক দিয়ে একটা ছোট নাটিকা তৈরি করে দেখাতে হবে। দেখা গেল আমরা যাই করছি তার মাঝে ঘুরে ফিরে মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১, মুক্তিযোদ্ধা ব্যাপার গুলো চলে আসছে। যেমন-
নদীঃ মুক্তিযোদ্ধারা নদীতে গোছল করছে।
পানিঃ বীরাঙ্গনা পানি খেতে চায়।
কাপড়ঃ বাংলাদেশের পতাকার কাপড় লাল সবুজ।
এক পর্যায়ে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। নিজের রাগ সামলে বলে উঠলেন- "তোরা আমাকে ভুল বিঝিস না। তোদের এই মুক্তি যুদ্ধের প্রতি আমার কোন অসম্মান নেই। এই যুদ্ধ আমার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আবার অনেক কিছু ফিরিয়েও দিয়েছে। তোদের কাছে অনুরধ তোরা মুক্তিযুদ্ধের বলয় থেকে বেরিয়ে আয়। তোদের সব কিছুই আটকে আছে ১৯৭১ সালে। কিন্তু পৃথিবীটা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।"
আপাত দৃষ্টিতে একজন ভারতীয় নাগরিকের মুখে একথা শুনলে মাথা তো গরম হবারই কথা। তাই না?
...
আমি লক্ষ করে দেখেছি আমি যতবারই আমার পাকিস্তানী কোন বন্ধু/পরিচিতর সাথে কথা বলতে গিয়েছি ততবারই ঘুরে ফিরে ১৯৭১ সাল চলে এসেছে। হয়েছে যুক্তি আর আবেগের জগাখিচুড়ী টাইপ কথা। না আমি তাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছি যে, তোমার পূর্ব পুরুষরা অমানুষ ছিল। না সে আমাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছে যে যুদ্ধটা ছিল ভারত-পাকিস্তানের খোলসে হিন্দু মুসলমানের। পরিনামে যা হবার তাই হল। আমি একদিকে, সে একদিকে।
এমন তর্ক যুদ্ধ আমি অনেক করেছি। ফলাফল শুন্য। একারনেই আমার পাকিস্তানী এক মেয়ে বন্ধু ইন্সাল্ট করে বলত-"দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী বাবু"
একবার এক পাকিস্তানী মেয়ে আমার সাথে একি টেবিলে খেতে বসেছিল বলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম-" তোমার সাথে এক টেবিলে বসে খেলে আমার পাপ হবে। কারন আমার জন্ম বাংলাদেশে"
এর প্রতিবাদ করে আমার অনেক বন্ধুই আমাকে বলেছে- এটা একধরনের রেসিজম। তোমার কাছে এটা আশাকরা যায় না। দেশ প্রেম মানেই রেসিজম না। তুমি ভুল করেছ" ।
...।।
প্রবীর গুগর সেই কথাটা আমার জীবনেও সত্য। আমিও সব কিছুর মাঝেই ১৯৭১ খুঁজি। এই খোঁজাটা অনেকটা ফোবিয়া টাইপের হয়ে গেছে। যার পরিনামে অনেকটা এমন যে যুক্তি মানি, তালগাছটা আমাকে দিয়ে দেও।
এবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে লাহড় বই মেলাতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার কবি সাদাফ সায সিদ্দিকী। সেখানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এক সেমিনারে। তিনি সেই সেমিনারের অভিজ্ঞতা সেয়ার করেছেন প্রথম আলোতে।
একটু দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম যে, ১৯৭১ সাল কেবল আওয়ামীলীগের এক তরফা ব্যাবসার পণ্য নয়। এটাকে পণ্য হিসেবে পাকিস্তানও ব্যাবহার করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে যেমন দেশ প্রেম মানেই হল- বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত ছবি, বীরাঙ্গনার বিবস্ত্র ছবি প্রদর্শন, মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে বড় বড় কথার ফুলঝুরি ফোটানো। আদতে কাজের কাজ কিছু না। তেমনি করে পাকিস্তানের কাজ একই রকম এই যুদ্ধকে স্রেফ ভারতের ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়া। যাতে মুসলিম রাষ্ট্র কায়েম করাটা সহজ হয়।
আওয়ামীলীগ যেমন খুব সুকৌশলে আমাদের দেশ প্রেম শেখানোর নামে মস্তিষ্কে গুঁজে দেয় আওয়ামী প্রেম ও অন্ধত্ব। ঠিক সেভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্র খুব সুকৌশলেই জেনারেশন বাই জেনারেশন সুকৌশলে মস্তিষ্কে গুঁজে দিচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্বেষ। কিন্তু সত্য কি আর চাঁপা থাকে?
এতদিন পাকিস্তানীদের ঘৃণা করতাম। আজ থেকে আর না। কারন এদের তো কোন দোষ নেই। না এরা সেই সময় জন্ম নিয়েছে, না আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। তবে নতুন প্রজন্ম কেন সেই দায়ভার কাঁধে নেবে। যেখানে তাদের জানতেই দেওয়া হয় না আসল সত্যটা কি...।।
মিঃ সিদ্দিকীর লেখা থেকে জানলাম যে তাঁর বক্তিতা শোনার পরে অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছে সেই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের জন্য। তারা আরও জানতে চায়। তাদের যে জানানোই হয়নি সেটা নিয়েও তাদের অনেক আক্ষেপ।
একটা জাতি, জাদের কৌশলে অন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সত্যটা জানতে দেওয়া হয়নি। আলো যাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাদের উপরে রাগ করে থাকার কোন মানে হয় না।
আমার এক বন্ধু একবার দেশ প্রেম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ করে গালি দিয়ে বলেছিলেন- "আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। দেখতেও চাই না। আমার আক্ষেপও নাই। আমার কাছে দেশ প্রেম মানে মধ্য রাতে ঢাকা শহরের ওভার ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে থেকে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়া। সাহাবাগে বসে চা খওয়া আর আড্ডা দেওয়া, রিক্সায় করে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ান। কারন আমি বিদেশে থাকলে এগুলকেই মিস করি। তবে শহীদদের প্রতি সম্মানের কোন কমতি নাই।"
সেদিন তাঁর কথার মর্ম বুঝিনি। আজ কিছুটা বুঝি। দেশ প্রেম বলতে যে বায়োনারী হিসাব আমাদের শেখানো হয় যে, এগুলো এগুলো করলেই তাকে দেশ প্রেম বোলবে। আর এগুলো এগুলো মানেই তা কোন দেশ প্রেম না। সেটা বড়ই হাস্যকর।
তাই আজ থেকে চিন্তা করেছি আর কোন পাকিস্তানির সাথে ঝগড়া বিবাদ করব না। পারলে এক কাপ কফি বেশি খাওয়াব। নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে নিয়ে যাব। সত্যটা বিনয়ের সাথে খুলে বলব।
আমার কাছে আজ থকে দেশ প্রেম হল যত বেশি মানুষকে আমার দেশ সম্পর্কে পজেটিভ করতে পারব আমি তত বড় দেশ প্রেমিক। এটাই আমার কাজ।
পাকিস্তানীরা সত্য জেনেও যখন আমাদের উপরে অত্যাচারকে সমর্থন করবে তখন না হয় ওদের ছুঁড়ে ফেলব। কিন্তু যতদিন সত্যটা ওদের জানাতে না পারছি, ততদিন পাকিস্তানীর সাথে প্রেম করব।
আমার বক্তব্য যাদের বোঝার তারা এমনিতেই বুঝবে। যারা বুঝবে না তাদের আর বুঝিয়ে লাভ নেই। শেষ কথাটি হল- পাকিস্তানী সাধারন জনগন আর পাকিস্তান রাষ্ট্র কিন্তু এক বিষয় না। সুতরাং আমার এই প্রেমেরও সীমাবদ্ধতা আছে।
কাল ভারতের দালালি করেছি, আজকের দালালিটা পাকিস্তানের পক্ষেই যাক... কি বলেন? সময় পেলে বাংলাদেশের দালালিও করব।
©somewhere in net ltd.