![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কে আমাকে ফুলের মালায় বরণ করল, আর কে আমাকে জুতার মালায় বরণ করল ! তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি যেন সব সময় সত্য দ্বারা পক্ষপাত দুষ্ট হই। এটাই নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা।
"তুমি ভালো আছ?? সব ঠিক আছে তো??"
কালে ভদ্রে শত্রুকেও এমন প্রশ্ন করে চমকে দিতে হয়। এই চমকে দেওয়ার হিম্মত সবার থাকে না। আমরা ইগোর যুদ্ধে এতোটাই ক্লান্ত যে খুব কাছের মানুষটার খোঁজই নেওয়ার সময় পাই না। শত্রুর খোঁজ নেওয়া তো দূর কি বাত। আমরা একই চালার নিচে ঘুমাই, একই হাঁড়ির ভাত খাই। কিন্তু খুব কমই কাছের মানুষ গুলোর মনের খোঁজ রাখি। নাগরিক সভ্যতা বাড়ছে, মানুষের আবেগের দাম কমছে, আবেগ আজ কাল ব্যবসার নিয়ামক হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে আমরা একজন থেকে একজন ততোই দূরে সরে যাচ্ছি। একই মায়ের পেটে জন্ম নিয়েও ভাই বোনের মাঝে বোঝা পড়ার কত বিস্তর ফারাক। যদা দং হৃদয়ং তব, তদুস্তং হৃদয়ং মাম, কবুল কবুল বলেও আমরা একে অপরের সাথে শুধু স্রেফ ঘুমাই। কিন্তু একজন আরেক জনের মনের অলিগলি তো দূরের কথা, শরীরের ভাজ গুলোও ঠিকঠাক চিনি না। কিন্তু কেন????
সুমি আপু আত্মহত্যা করেছেন। শুনে কষ্ট পেলাম। তার থেকেও বেশি কষ্ট পেলাম তার আত্মহত্যার কারণ জানতে পেরে। জীবন কি এতোই সস্তা?? রোজ কত কত অপমৃত্যু হয়, কত কত মানুষ অপঘাতে মারা যায়। কেউ যুদ্ধের বলি হচ্ছে, কেউ বয়সের বলি হচ্ছে, কেউ হিংসার বলি হচ্ছে। এর মাঝে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাটাই তো ক্রেডিট। মৃত্যুর এই মিছিলে গা ভাসিয়ে দেওয়াটায় কৃতিত্ব কোথায় বোন??
*
জানি প্রশ্নটা খুব অবান্তর। তার পরেও যদি আমার বংশের কেউকে প্রশ্ন করা হয়-" আপনার পরিবারের বাইরে একজনের নাম বলেন যাকে আপনি সব থেকে বেশি ভালোবাসেন'। আমার বিশ্বাস প্রায় সবাই এক শব্দে বলবে "সুমন", আমার নাতী, আমার মামা, আমার ভাগ্নে, আমার চাচ্চু, আমার খালাতো ভাই, আমার বন্ধু, আমার দেবর, আমার শ্যালক। উত্তর গুলো প্রায় এই ধরনেরই হবে।
আমার বংশে আমাকে নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। যথা- বড়দের কথা মানে না, নিজের খেয়াল খুশি মত চলে, মুখে মুখে তর্ক করে, ঠোঁট কাটা স্বভাবের, খারাপ ছাত্র, অলস, বেশি বোঝে। এতো এতো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা আমাকেই বেশি ভালোবাসে। এটাই হল পরিবার বা আত্মীয়তার সম্পর্ক।
এই যে সবাই ভালোবাসে নিশ্চয়ই এর পেছনে কারণও আছে। যদিও পরিবারের ভালোবাসার জন্য কারণ লাগে না। শুনলে হয়তো একটু অবাকই হবেন যে, আমি আমার মায়ের নানু বাড়ির আত্মীয় থেকে শুরু করে আমার খালাতো বোনের মেয়ের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের খবর পর্যন্ত রাখি। আমাদের আত্মীয়দের মাঝে এখনো ছয় প্রজন্ম বেঁচে আছে। জাস্ট ভাবুন এই ছয় প্রজন্মের আত্মীয়ের ব্যাপ্তি কত বেশি হতে পারে। মায়ের চাচাত ভাইবোন, খালাতো ভাই বোন, নিজের কাজিন, কাজিনের মেয়েরে শ্বশুরবাড়ি, তাদের বাচ্চা কাচ্চা সবার খোঁজ আমি রাখি এবং এটাকে দায়িত্ব বলেই মনে করি।
আমার নিজের কাজিনরা তো বটেই এমন কি তাদের পরিবারের সবাই ও আমাকে পছন্দ করে। এর মূলে কারণ একটাই আমি সময় পেলেই সবার খোঁজ নেই। জাস্ট এতটুকু। যদিও আমি এই অভ্যাস আয়ত্ত করেছি আমার মায়ের কাছ থেকে। ঘর, সংসার, অফিস, পার্টি, ক্লাব, সোসাইটি এতো কিছু মেইন্টেইন করে কি করে সব থেকে গরীব আত্মীয় থকে সব থেকে ধনী আত্মীয়টির খোঁজ নিতে হয় তার উৎকৃষ্ট প্রমান আমার মা।
*
কি সমস্যা পাশের মানুষটিকে একটু বিশেষ ভাবে সময় দিলে?? কি এমন ক্ষতি হয়ে যায় সবাইকে নিয়ে একটু আমদ ফুর্তি করলে??? মানুষকে কি করে ভালবাসতে হয় সেটাও শিখতে হয়। আমি চাই না আমার ছোট ভাই, আমার সন্তান, আমার ভাগ্নে ভাগ্নিরা ভবিষ্যতে আমার নামে কমপ্লেইন করুক যে- আমি তাদের বিষয়ে উদাসীন। আশা করি সে সুযোগ তারা কখনোই পাবে না।
প্লিজ পাশের মানুষ গুলোর খোঁজ রাখুন। সভ্যতার এই ইতিহাস তো ব্যস্ততাত ইতিহাসই। এর মাঝে কয়জন মানুষ পারে বলুন বোহেমিয়ান হতে?? সেই ব্যস্ততার ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত করে তোলা খুব মামুলি ব্যাপার ভাই। কিন্তু এতো ব্যস্ততার মাঝে সবার খোঁজ খবর নেওয়াটাই অনন্যতা। এটা সবাই পারে না।
সুমি আপু আত্ম হত্যা করল, দীপন ভাই বসুন্ধরার সাত তলা থেকে লাফ দিয়ে মারা গেল, নোমান আত্মহত্যা করল বিষ খেয়ে। এগুলো কি স্রেফ আত্মহত্যা??? আমি কিন্তু বলব এগুলো হত্যা। আমি আপনি এতোটাই ব্যস্ত যে এদের প্রাপ্য ভালোবাসা না দিয়ে এদের মেরে ফেলেছি। প্লিজ নিজের কাছের মানুষ গুলোর খোঁজ নিন। এটা খুব কঠিন কাজ না। কিন্তু এর মূল্য অসীম। স্বর্গও যার কাছে কিছু না।
**** প্রতিটি হৃদয়ে প্রেম নেমে আসুক।
©somewhere in net ltd.