![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আফসার সাহেব এলাকার প্রভাবশালীদের একজন । সাদা পাঞ্জাবী , হাসিখুশি মুখ আর অমায়িক ব্যবহারের জন্য এলাকার সবাই তাকে ভালো জানে । সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যাস্ত থাকেন। গভীর রাতে বাড়ি যান । একমাত্র মেয়ে রুনু যখন বাড়ি থাকে তখন জেগে থাকে । অন্য সময় তিনি ফাকা বাড়িতে একাই থাকেন। মেয়ে হোস্টেলে থাকে , মাসে মাসে টাকা পাঠান । তিনি মেয়ের সাথে কথা তেমন বলেন না । মেয়ের বয়স কতো হলো আফসার সাহেব একবারে বলতে পারবেন না। রুনুর মা মারা যাবার সময় ও ক্লাস ৪ এ পড়তো। শান্ত স্বভাবের মেয়ে মায়ের মৃত্যুর পরেও নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে । বলেতে গেলে একাই বড়ো হয়েছে। লেখাপড়াতেও ভালো । হেড মাস্টার অনেক দিন ফোন করে বলেছে । ভাই সাহেব মেয়ে আপনার অনেক মেধাবী , প্রত্যেক পরীক্ষার প্রথম হচ্ছে। আফসার সাহেব তেমন গুরুত্ব দেন না। মেয়ে বেশ বড়ো হয়েছে , সারাদিন আফসার সাহেবের রুনুর কথা তেমন মনে পড়ে না। ছুটিতে বাড়ি আসলেও রুনু তেমন বাড়ির বাইরে যায় না । তাই এলাকার বিশেষ কেউ রুনুকে চেনে না ।
সাধারন আফসার সাহেব রাতের আধারে হয়ে ওঠেন অন্য মানুষ। অন্যের কুকর্মে সাহায্য করাই আফসার সাহেবের কাজ। রাত বাড়লেই তিনি অন্য মানুষ হয়ে যান। চালের গোডাউনে আড্ডা বসে। নানা ধরনের মানুষ আসে। শুরু হয় নিষিদ্ধ আড্ডা । জুয়া খেলা আর মদের আড্ডা । এক রাতে রফিক আসে আফসার সাহেবের কাছে। এলাকায় নতুন এসেছে রফিক। আফসার সাহেবের দুই দোকান পরে একটা মোবাইলের দোকান দিয়েছে। বেশ মালও তুলেছে । আফসার সাহেবের কর্মচারী মন্টু সব খবর রাখে। কাজের ফাকে ফাকে বলতে থাকে । রফিক বলল, চাচাজী সালাম। আফসার সাহেব মুখ তুলে চাইলেন , কিন্তু কিছু বললেন না। তিনি আবার তাস খেলায় মন দিলেন। রফিক দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন পরে আফসার সাহেব বললেন , কি ব্যাপার? কিছু না চাচাজী , নতুন দোকান দিলাম তাই আপনার দোয়া নিতে আসলাম। বলেই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো । আফসার সাহেব বাধা দিলেন না । আফসার সাহেব বললেন , মন দিয়ে ব্যবসা করবা। আর কোনো সমস্যা হলে আমারে বলবা। চাচাজী আপনার জন্য আনছিলাম , বলেই রফিক একটা ভোদকার বোতল এগিয়ে দিলো। আফসার সাহেব কিছু বললেন না। মন্টুর দিকে তাকেতেই মন্টু নিয়ে নিলো বোতলটা। একটু পরে আফসার সাহেব তার জুয়ার সঞ্জী রহমত মিয়ার সাথে কথা বলতে শুরু করলো, আড়চোখে দেখে নিলো রফিক মন্টুর হাতে ৫০০ টাকা গুজে দিচ্ছে । রহমত মিয়া বলে উঠল বুঝলা আফসার আজ চেয়ারম্যান আসছিল আমার দোকানে । ভালো মন্দো কইলো । পার্টির কিছু পোলার নাকি একটু শখ হইছে , তারা একটু ফুর্তি করতে চায়। আইজকের রাইতটা ওদের গোডাউনটা দিয়া দেও। সামনে ভোট পোলাপানের দিকেও নজর দিতে হইব ।সারাদিন পার্টির কাজ কর্ম করে ওদের আবদার না রাখলে কি চলে? আফসার সাহেব বলেলেন ,কি চায়? তেমন কিছু না । মেয়েছেলের কারবার আরকি। বলেই রহমত মিয়া বিচ্ছিরি ভাবে গাদুলিয়ে হাসতে থাকে ।
এককালে আফসার সাহেব কতো কিছুই না করেছেন। এখনো করেন তবে বেশি কিছু না ওই বাজারের শেষ মাথায় যান আর পার্টির ছেলেরা মাঝে মাঝে নিয়ে আসলে ক্ষুধা মিটে যায়। আফসার সাহেব বললেন , তা কি করোন লাগবো? এখন কি আর সেই বয়স আছে ? কিছু করা লাগবো না। বিচার শালিস হইলে একটু চুপ কইরা থাকবা।অবস্থা খারাপ হইলে গুম করোন লাগতে পারে। আর চেয়ারম্যান সাহেব কইছে সামনের মাসে চাল আইতাছে । ১০০ বস্তা প্রথমেই তোমার । তুমি সময় অসময় সাহায্য করো। আর চাবিটা দিয়া যাইবা। আজ রাইতে কাম হইবো। তুমি যদি চাও প্রথম থেইকাই থাকতে পারো। কথাটা বলে টিটকারি মারলো রহমত মিয়া। আফসার সাহেবের আগের কথা মনে করে অনুশোচনা হয় তাই খুব বেশি আগ্রহ দেখান না। কিন্তু আগে যেহেতু করেছেন সেহেতু এখন কাউকে না বলতে পারেন না। তার গোডাউনেই আজ কিছু পশু আদিম খেলায় মাতবে। রাত বাড়তেই রহমত মিয়া চলে গেল । সে এখন ছেলেগুলোকে জানাতে যাবে যে সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে । আফসার সাহেব মন্টু মিয়ার সাথে বাসায় যাবে। গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয় মন্টু মিয়া । তারপর সালাম দিয়ে তার নিজের বাড়িতে চলে যায়।পার্টির ছেলেগুলোকে খবর দিতেই তারা উল্লাস শুরু করলো। রহমত মিয়া চাবি দিতে দিতে পার্টির ছেলেগুলোর লিডারকে বলল , আমার কথা একটু শরনে রাইখো।লিডার বলল , কিযে কও রহমত মিয়া তুমি রাইত ২ টায় উপস্থিত থাকবা । তারা এখন খুব ব্যাস্তো নতুন খাবারের খোজে যেতে হবে সময় বেশি নেই। বাজারের খাবারগুলো সব চেখে দেখা তাই নতুন স্বাদের জন্য তারা শহরে যাবে। কে কে যাবে সেই পরিকল্পনা করে বের হয়ে পরলো।
৪ টা মটরসাইকেল ছুটে চলল শহরের দিকে। রেল স্টেশন পার হয়েই শহরে যাবার পাকা রাস্তা। ট্রেন স্টেশনে থেমেছে কিছুক্ষন আগে। যাত্রীরা নেমেই যে যার মতো নেমে চলে গেছে। সবার শেষে নামনো হালকা নীল শাড়ী পরা একটা মেয়ে । প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কিছু সময় এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কোনো ভ্যান দেখতে পেলো না। ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলো চার্জ নেই। তাই আর কিছু করার না দেখে এগিয়ে চলল। ছেলেগুলোও ওই সময় স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটাকে দেখে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো। নিজেদের মধ্যে কথা বলেতে শুরু করলো, কিরে চিনস নাকি?অন্য একজন বলল, না ওস্তাদ আগে দেহি নাই। নতুন কেউ।অন্য একজন বলল, কেডা না কেডা একটু খবর নিলে ভালো হইতো না? প্রথমজন বলল, আরে আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের লোক ,আফসার সাহেবও আমগো লগে আছে। চিন্তা নাই। তুইলা লই । বাড়তি খরচ হইবো না। এতোক্ষনেমেয়েটা অনেক খানি সামনে চলে আসলো। ফোনটাকে একবার অন করা যায় কিনা সেই চেস্টা করতে থাকলো। ছেলেগুলো যে তারদিকে আসছে সে দেখতে পেলো না। ছেলেগুলো মেয়েটার সামনে এসেই মটরসাইকেলের লাইট অফ করে দিলো। মেয়েটা ভয় পেয়ে গেলো, সে কিছু বলার আগেই ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমাল তার মুখের উপর চেপে ধরলো একজন। মটর সাইকেলে তুলে নিয়ে গোডাউনের দিকে রওনা হলো। পরের দিন সকালবেলা মন্টু মিয়া গেটের পাশে বসে আছে ।খুব ভয় পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মাটিতে বসে শুধু হাপাচ্ছে। আফসার সাহেব বলল, চাবি আনছো? মন্টু মিয়া কিছু বলল না। আফসার সাহেব আবার বলতে যাচ্ছিলেন , মন্টু মিয়া বলল, রহমত মিয়া শহরে গেছে নাকি ভোর রাইতে। আর নাও আইতে পারে। আফসার সাহেব কথাটা শুনলেন না।আফসার সাহেব মন্টু মিয়ার সাথে দোকানের উদ্দ্যেশে রওনা হলেন। দোকানে গোডাউনের আরেকটা চাবি আছে। পথে মন্টু মিয়া বারবার পিছনে পরে যাচ্ছিল। আফসার সাহেব কিছু বললেন না। দোকান থেকে চাবি নিয়ে চলে গেলেন গোডাউনে। তালা খুলতেই কেমন যেন একটা গন্ধ আসতে লাগলো রক্তের গন্ধ । একটু এগিয়ে গিয়েই তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো গোডাউনের কোনায় একটা খাট আছে। আফসার সাহেবের বিশ্রাম নেয়ার জায়গা । ফ্লোরে রক্তের দাগ ।এগুলো এখন মন্টু মিয়াকে দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে। একটা ব্লেডও পেলেন তিনি । রক্ত মাখা অবস্থায় । এই পদ্ধতি সেও এক সময় ব্যবহার করেছে। ব্লেডটা হাতে নিয়ে পুরানো কথা মনে পরতে লাগলো। দরজার পাশে এসে থমকে দাড়ালো আফসার সাহেব একটা মেয়ে পরনে কিছুই নেই হাত পিছনের দিকে বাধা ফর্সা পিঠে কয়েকটা ব্লেড বসানো।মুখ থুবড়ে পরে আছে । দরজার পাশে ছিল বলে ঢোকার সময় দেখতে পাননি । আফসার সাহেব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মণ্টুকে ডাক দিলেন। সাড়া দিলো না মন্টু। আফসার সাহেব এবার দেখতে এলেন বেচে আছে না মরে গেছে। বেচে
থাকলেও কিছু করার নেই। মেরে ফেলতে হবে । থানা পুলিশের চেয়ে লাশ গুম করা অনেক সহজ। বাম হাত দিয়ে উপুর হওয়া দেহটাকে ধাক্কা দিতেই গড়িয়ে পড়লো মেয়েটা। আফসার সাহেব ফ্লোরে বসে পড়লেন । আরো কয়েকটা ব্লেড গলায় চোখে বুকে বসানো। তার একমাত্র রুনু আজ তারই জন্য রক্তাক্ত।।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৭
অনন্ত গৌরব বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পরেরবার আরো ভালো করার চেষ্টা করবো।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ ব্লগিং
আফসার সাহেবের একমাত্র রুনু আজ তার জন্য রক্তাক্ত ! গল্প ভালো হয়েছে। তবে একটু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে প্যারা করে লিখলে ভালো হয়। সাথে একটু বেশি টাইপ হয়ে আছে।।
বাসন্তিক শুভেচ্ছা রইল।