![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অর্নব এবং হিমা একই অফিসে চাকরি করে । বিয়ের আগে থেকেই একই অফিসে আছে । অনেক সময় তাদের শহরের বাইরে যেতে হয় এবং অনেকটা শেষ সময়েই তাদের বলা হয়। তাই প্রস্তুতি নেয়ার সময় থাকে না। তাদের এক সাথে কমই শহরে বাইরে যেতে হয়। তাই ছেলেকে নিয়ে তেমন চিন্তা হয় না। তাদের একটা মাত্র ছেলে , অদ্বিত । বাসায় অবশ্য ডাক নাম লাটুস । অদ্বিত ক্লাস সিক্স এ পড়ে। মা বাবার আদরে বড় হয়েছে ঠিকই তবে ননির পুতুল হয় নি। সাতার জানে , সাইকেল চালাতে জানে, একা একা স্কুলে যেতে পারে , টুকটাক রান্নাও পারে। কিন্তু একটা ভয় অর্নব কিছুতেই কাটাতে পারে না । ভূতের ভয়। অদ্বিতের খুব ভূতের ভয় । রাত হলেই অস্থির হয়ে যায়। আবার চোখ চেপে ধরে আঙুলের ফাকা দিয়ে ভূতের ছবি কিন্তু ঠিকই দেখে। আজ যখন আফিস থেকে বলা হলো দুজনকেই একসাথে রাঙামাটি যেতে হবে তখন তারা দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলো। বিজনেস ট্রিপ না হলে নিয়ে যাওয়া যেতো । শান্ত ছেলে তেমন সমস্যা হতো না। কিন্তু অদ্বিতের পরীক্ষা । আর তেমন কোনো আত্মীয় নেই ওদের এই শহরে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট । আর্নব এবং হিমেকে ১২ টার দিকে বাসায় গিয়ে গোছাতে বলা হলো। অদ্বিত বাসায় একাই ছিল । বেল বাজতেই অদ্বিত দরজা খুলে দিলো। হিমা মুখ গোমরা করে বলল, “তোমাকে না বলেছি আগে দেখে নিবে কে নক করল। এখনতো আমাদের আসার সময়ও না যে তুমি না দেখেই দরজা খুলে দিবে।”
অদ্বিত কিছু বলল না। হিমা অদ্বিতের সাথে সোফায় বসলো। হিমা ভাবছে কিভাবে বলা যায় ? একটা রাতের বেপার ।
হিমা অদ্বিতকে কোলের কাছে টেনে নিল।তার আদরের লাটুস।অনেক সময় একটু কঠোর হয়ে যায় সে ,কিন্তু তার একমাত্র ছেলেটাকে সে অনেক বেশিই ভালোবাসে।
তোমরা বাইরে যাচ্ছো?
হিমা চমকে উঠল। অদ্বিত আবার বলল , “বাবাও যাবে?”
হিমা কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “হ্যা বাবা। তুমি একটা রাত একটু একা থাকতে পারবে না?”
অদ্বিত বলল, “তা পারবো। কিন্তু ওই ভূতগুলো আবার না আসলেই হয়।” হিমার বুকটা কেপে উঠল। কিন্তু একটু হেসে বলল , “কিযে বলে না আমার লাটুসটা ভয় কিসের?” অর্নব বলল , “তোমরা তাহলে থাকো আমি কাজগুলো গুছিয়ে নেই।” হিমা সারাটা দিন অদ্বিতের সাথে থাকলো। বিকেলেই রওনা দিলো তারা । ঢাকার জ্যাম বলে কথা। আসার সময় অদ্বিতের মুখের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল হিমা। নাহ মন খারাপের চিহ্ন নেই। সব ব্যাবস্থা করে রেখেছে অর্নব ফ্রিজে খাবার আছে । দারোয়ানকে বলা আছে , পাশের ফ্লাটের কাউকে বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তারা নতুন বলে পরিচয় নেই। আবার কাল বিকেলের ফ্লাইটে চলে আসবে । অদ্বিত এখন একা। সন্ধ্যার পর থেকেই বই পড়তে বসলো। অনেক দিনের অভ্যাস । কেমন যেন একটা ভয় ভয় করতে থাকলো । একটু পরে অদ্বিতের ফোন বেজে উঠলো । মায়ের কল দেখে অদ্বিতের খুব ভালো লাগলো । রিসিভ করতেই হিমা বলল, “আমার লাটুসটা কি করে?”
কিছুনা মা ,বসে আছি। তোমরা কি করো?
এইতো বাবা কিছুক্ষন আগে হোটেলে আসলাম।
আচ্ছা মা তুমি চাকরিটা ছাড়তে পারো না?
হিমা কেদে ফেলল । আগে কখনো অদ্বিত এমন কথা বলেনি। আজ হয়ত খুবই মন খারাপ। জীবনের তাগিদে এসব করতে হয় । না হলে তার অমন ভালো ছেলেকে ছেড়ে কখনো সে আসতো না। অর্নব ব্যাগগুলো গোছাচ্ছিল । আড় চোখে দেখে নিল হিমাকে। খারাপ তারও লাগে কিন্তু কিছুই করার নেই। ছেলেটাকে একা একা রাখা ঠিক হয়নি। এবার বাসায় গিয়ে আদ্বিতের ভূতের ভয় তাড়ানোর ব্যাবস্থা নিতে হবে ।
অদ্বিত বলল, “মা তুমি কথা বলছো না যে?”
এইতো বাবা আছি আমি । তুমি খেয়েছো?
না মা পরে খাবো। এখন রাখি পরে কথা বলল।
ফোন রেখে বেশ কিছুক্ষন কাদলো অদ্বিত। এখন আর ভূতের ভয় লাগছে না । কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভেঙে অদ্বিত দেখলো রাত ২ টা বাজে এতো রাতে আগে কখনোই ঘুম ভাগেনি তার । খাটের উপর বসে অদ্বিত দেখলো পাশের বাসার দেয়ায় বেয়ে কিছু লোক উপরে ওঠার চেষ্টা করছে । অদ্বিতের হাসি পেয়ে গেলো। লোক গুলো কি বোকা ? সিড়ি দিয়ে উঠলেই হয়। লোকগুলো উপরে উঠে গেলো। একজন উপরে ওঠার পরে আরো দুইজন উঠল দড়ি বেয়ে । অদ্বিতের মনে হলো লোকগুলো খারাপ নয়তো। ওরা অমন কালো জামা পরে আছে কেনো । অদ্বিত খাঠ থেকে উঠে জানালার পর্দার আড়ালে লুকালো। ঘরের লাইট অফ করে দিল । লাইট অফ করতেই তিনজনের একজন তাকালো অদ্বিতের বাসার দিকে । অদ্বিতকে অবশ্য দেখলো না। পর্দার আড়াল থেকে অদ্বিত দেখলো লোক গুলো বারান্দার দরজা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।
অদ্বিত একটা দোতলা বাড়িতে থাকে তাদের পাশের বাড়িটাও দোতলা । লোকগুলো বারান্দার দরজা খোলার চেষ্টা করছে। ভয়ে কাপছে অদ্বিত । কেমন যেন অস্থির লাগছে তার । কি করা যায় ? কাউকে ডাক দিবে । দারোয়ান কাকাকে ডাক দেয়া যায় । কিন্তু এতোরাতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। লোকগুলো ঘরে ঢুকে গেলো । একটা চিৎকার শুলতে পেলো অদ্বিত । এখন একদম সবাই চুপ। ওবাসার কাউকেই অদ্বিত চেনে না। তবে দু এক দিন দেখেছে । এক আংকেল আর এক আন্টি থাকেন । তাদের কোনো বাবু নেই থাকলে অদ্বিত দেখতো । ওদের একজন বেধে ফেলল আংকেল আন্টিকে। অদ্বিতের এখন ভূতের ভয় একদমই লাগছে না । এখন অন্য এক অজানা ভয় ঘিরে ধরেছে তাকে। আগে কখনো এরকম ভয় পায়নি সে । লোকগুলো কি করবে আংকেল আন্টিকে? একজন ঘরের জিনিস পত্রের মধ্যে কি যেন খুজছে? বাকি দুইজনকে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো পাশের ঘরে গেছে। এই ঘরের লোকটা আংকেলের চুল ধরে কি যেন বলছে । আংকেল মুখ বাধা। আন্টি পড়ে আছে ফ্লোরে । লোকটা আবার খোজা শুরু করলো । বাকি দুইজনও এই ঘরে আসলো। তিন জন নিজেদের মধ্যে কি যেন বলছে। অদ্বিত জানালার গ্রিল ধরে বসে পড়লো । লোকগুলো কি করছে ? কেনো করছে ? এরপর কি তার ঘরে আসবে ? কি করবে এখন সে ? সারা গা ঘামতে থাকলো অদ্বিতের । প্রচন্ড পানির পিপাশা পেয়েছে । এই ঘরে যে লোকটা ছিল সে এবার কেনো জানি রেগে গেল আংকেলকে মারতে শুরু করলো। আরেক জন আন্টির গলায় ছুরি ধরলো। আংকেল এইবার মাথা ঝাকাতে থাকলো । লোকটা মনে হয় হাসছে । এইভাবে কাউকে হাসতে দেখেনি অদ্বিত । কেমন যেন অপরিচিত হাসি। লোকগুলো আবার খোজা শুরু করলো ।পেয়েও গেলো কিছু একটা । একটা কাগজ হাতে নিতে লোকটা হাসছে । অল্প শদ্ব আসছে । লোকটা আন্টির মুখের বাধন খুলে দিতেই অদ্বিত শুনতে পেলো , “আমাদের ছেড়ে দিন । আপনারা যা চেয়েছেন নিয়ে যান আমাদের ছেড়ে দিন । ”
লোকটা আরো জোরে হাসতে থাকলো । তিনজনই হাসছে । হাঠাত করেই একজন আংকেলের গলায় ছুরি দিয়ে কেটে দিলো। অদ্বিত চোখের পলক ফেলতে পারছে না । আন্টি অনেক জোরে একটা চিৎকার করে ফ্লোরে পড়ে গেলো । তারা আন্টির পেটেও ছুরি মারলো। শরিরটা কয়েকবার কেপে উঠল। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার । অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল অদ্বিত। পরের দিন সকালে অর্নব হিমা বারবার চেষ্টা করেও অদ্বিতকে ফোনে পায় নি । হিমা অস্থির হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো। সকালেই তারা ঢাকায় চলে আসলো। ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকলো তারা । পাশের বাসায় পুলিশ মিডিয়ার লোকজনে ভরের গেছে।জানালার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল অদ্বিত হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানায় ভয়ের কিছু নেই। অর্নব হিমার হাত ধরে বসে আছে হাসপাতালের বারান্দায় । অবিরত কাদছে হিমা।
তারপরে অনেক বছর কেটে গেছে অদ্বিত বড়ো হয়েছে। এখন আর ভূতের ভয় পায়না অদ্বিত । রাতের বেলার ভূতের ভয় সাকালে অদৃশ্য হয়ে যায় । কিন্তু মানুষের ভয় সবসময়ই থেকে যায় । ভূতকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই , অদ্বিত এখন মানুষকে ভয় পায় ।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৯
অনন্ত গৌরব বলেছেন: thanks a lot
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৩০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাহ ! বেশ ভালো লিখেছেন । অদ্বিত এখন মানুষকেই ভয় পায়। ঝর ঝর লেখনি ।
বাসন্তিক শুভেচ্ছা জানবেন ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১৪
অনন্ত গৌরব বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৭
রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: ভালো লেগেছে।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৫
অনন্ত গৌরব বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৫
সনেট কবি বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫২
অনন্ত গৌরব বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন । শুভ কামনা ।