![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্টেশনে তপু দাঁড়িয়ে আছে । কাধে ব্যাগ , ধবধবে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট। অপেক্ষা করছে রুপার জন্য। ট্রেন ছাড়তে এখনো অনেক সময়।প্লাটফর্মে তেমন লোকের ভিড় নেই। কিছু ফেরিওয়ালা , কুলি আর ঘর ছাড়া কিছু মানুষ। সকাল ৭ টা। রোদ উঠে গেছে। তপু সিগারেট ধরালো । রুপা বারন করেছিল , এখন লুকিয়ে লুকিয়ে খায়। ছাড়তে পারে নি। রুপা তপুর দিকে এগিয়ে আসছে। শত বছরের পুরানো এই স্টেশনে আজ পরী নেমেছে । শাড়ীতে এই প্রথমবার রুপাকে দেখল । সিগারেট ফেলে দিল তপু। মানুষের সব চেয়ে বড় অভিশাপ হচ্ছে মায়া। এই মায়া না থাকলে কেউ আর কষ্ট পেত না। এতো মায়া সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নেই। রুপা যখন পাশে এসে দাঁড়ায় নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় তপুর। এই দুই বছরের পুরটা সময় কেটেছে ঘোরের মধ্যে। এতো ভালোবাসা মানুষের জীবনে না আসাই ভালো । হারানোর ভয় যে অনেক কষ্টের।
ট্রেন ছাড়তে আর কত বাকি?
তপু বলল ,”কিছু খেয়েছ তুমি?”
না।
পাশের বেঞ্জে বসে পড়লো দুজন।কিছু সময় কোনো কথা হলো না।রুপা ব্যাগ থেকে পানির বোতল তুলে নিল।
আচ্ছা আমাদের পৌছাতে কত সময় লাগবে?
জানি না , হয়তো ৮ ঘন্টা। তুমি সব কিছু নিয়ে এসেছো?
রুপা বলল,”না । হারমোনিয়ামটা আনতে পারলাম না।”
দাদা দেয় নি বুঝি?
চুপ করে আছে রুপা । একভাবে কিছু সময় কেটে গেল।অনেক সংকোচ ,দ্বিধা ভীড় করতে লাগলো মনে। হয়তো রুপারও ঠিক তাই হচ্ছে। অনবরত পা দোলাচ্ছে রুপা।মুখটা কি শান্ত। দীঘির জলের মত,শরতের আকাশের মত। ডান পায়ে নুপর পরেছে আজ । প্রথম টিউশনির টাকায় কেনা নুপুর।
ট্রন চলে এসেছে। এই স্টেশন থেকে তেমন যাত্রী ওঠে না। পুরো বগিতে হাতেগোনা কিছু মানুষ। ব্যাগ রেখে জানালার পাশে বসলো রুপা। তপু পাশে বসতেই কাধে মাথা রাখলো রুপা। কোনো সংকোচ নেই, এ যেন অনেক দিনে চেনা চওড়া কাধ। লোকে দেখবে বলে রিকক্সার হুড তুলে দেয়া রুপা আজ অবলিলায় তপুর কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আস্তে আস্তে গতি বেড়ে যাচ্ছে, সব কিছু ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছে কিছু স্বপ্ন। হয়ত এই ট্রেনের অন্য কামরায় আরো কিছু স্বপ্ন চলে যাচ্ছে।বাতাসে রুপার চুল মুখে এসে পরছে। হাত দিয়ে সরিয়ে দিল তপু।রুপা আর একটু কাত হয়ে তপুর বা হাতটা জড়িয়ে ধরলো। সময় কেটে যাচ্ছে ,অসহ্য ভালোবাসায় পুড়ছে দুটি মানুষ।
একটা ছোট বাসা। সাদামাটা দেয়াল । রান্না ঘরে রুপা ,শাড়ীর আচল কোমরে গুজে রেখেছে। জানালা দিয়ে মায়াময় চাদের আলো মোমের আলোতে মিশে একাকার হয়েছে। চা নিয়ে পাশে বসল রুপা। কাপ এগিয়ে দিল তপুর দিকে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।সারাদিনের কান্তি একটু একটু করে কেটে যেতে শুরু করেছে। সিগারেট শেষ হতেই কাছে এগিয়ে এলো রুপা। কাধে মাথা রাখলো।মানুষের মনের কথা বোঝার ক্ষমতা নেই ঠিকই । তবুও মনে হলো দুজনেই নিচু স্বরে বলল ভালোবাসি। কোনো বাধা ছিল না দুজনার। বাধা হয়ে দাড়ালো একটা রাত ,কিছু পশুর মাতাল উন্মাদনা। যার হিংস্রতা থেকে বাচতে পারেনি রুপা। কিছু পশুর কামনার শিকার রুপা । দেহটাকে তারা হয়তো একবার ছিড়ে নিজেদের করে নিয়েছে। কিন্তু মনটাকে মেরে ফেলেছে চিরতরে। এতো দিনেও তপু ভোলাতে পারে নি। এই সমাজ রুপার মনটাকে বাচতে দেয় নি, অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে তপুর কাছ থেকে। হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ,রুপা আবার হাসবে। সকালের রোদ এসে ছুয়ে যাবে রুপার নরম গাল। ভালোবাসায় ভরে যাবে সারাঘর।
ট্রেন থেমেছে। স্টেশনের বাইরে এসে রিকক্সা ঠিক করল তপু। রাস্তার ওপারে কিছু বখাটে ছেলে বসে আছে। রুপার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।হেসে হেসে বলছে এই সেই ভিডিওর পরী। ভয়ে আতংকে কুকড়ে যাচ্ছে রুপা। আরো আকড়ে ধরেছে তপুকে। এই শহর তাকে বাচতে দেবে না।
২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৪৬
মাহের ইসলাম বলেছেন: সব ঠিক হয়ে যাবে।
শুভ কামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১২
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।