নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় স্বাধীনতা-ব্যক্তিস্বাধীনতা-গরুর মাংস নিষিদ্ধ

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩২

মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গোমাংস ভক্ষণ আর বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানা ঘোষণা করেছে বিজেপি সরকার।



আমি অনুপম দেবাশীষ রায়,একজন ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বাংলাদেশী হিসেবে,গোমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করার মতন ফ্যাসিস্ট ধর্মান্ধ সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে ভারত গণরাজ্যের প্রতি আমার স্বীকৃতি রহিত করছি।

যতদিন ভারত নিজেকে হিন্দুস্তান মনে করবে ততদিন আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অঞ্চলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পথে ফিরে যাবার জন্য অঞ্চলটির সরকারকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে এই আইনের বিরুদ্ধে দাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।



এইবার ব্যখ্যা দেই,কেনো এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা আর কেনইবা তার কারণে স্বীকৃতি প্রত্যাহার।



প্রথম লেয়ারের ব্যখ্যাঃ ধর্মতত্ত্ব।

গোহত্যা বন্ধ করার কোন ধর্মীয় এসপেক্ট নাই। ধর্মীয় এসপেক্ট আছে নিজের অবস্থান থেকে যত কম সংখ্যক সম্ভব তত কম সংখ্যক জীবহত্যা করার কারণ গরু যদি ঈশ্বর হয়,ছাগলও অবশ্যই ঈশ্বর।কাজেই গোহত্যা যতটা পাপ,ছাগল হত্যাও ততটাই পাপ।

গোহত্যা বন্ধ করার ইস্যু আছে মনুসংহিতা নামক একটা 'ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থে'।আপনি হিন্দুধর্ম বিষয়ে কথা বলতে গেলে আপনাকে ধর্মগ্রন্থ আর ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থের মাঝে তফাত বুঝতে হবে। পুরাণ,মনুসংহিতা-এগুলা ধর্মগ্রন্থ না-এগুলা ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ। এগুলার শুরুতেই বলা আছে যে এগুলা মনুষ্যরচিত ধর্মনির্ভর গ্রন্থ-এইগুলা মানতে কেউ বাধ্য না। কাজেই পুরাণের সব কথা বা মনুসংহিতার সব কথা যদি আমি বাদও দিয়া দেই-ধর্ম পালনে আমার খুব একটা সমস্যা নাই।

ধর্মগ্রন্থ কোনগুলা? ধর্মগন্থ হচ্ছে বেদ আর শ্রীমদভগবত গীতা 'যথাযথ' কারণ এই দুইটা হচ্ছে ঈশ্বরের আর ঈশ্বরের অবতারের বানী। উপনিষদ হচ্ছে বেদের আর গীতার ইন্টারপ্রেটেশন-মোর লাইক হাদিস। বেদান্ত,বেদাঙ্গ-এগুলাও ইন্টারপ্রেটেশন। এবার ভায়া, আমারে একটু বেদ আর গীতার মধ্যে 'এক্সক্লুসিভলি' বাকি সব পশু বাদে শুধু গোহত্যা নিষেধ,সতীদাহ,জাত-পাত এইসব বালছাল দেখাও দেখি...নাইলে মোদী সাহেবরে ডাক দাও।

ধরে নিলাম গোহত্যা ধর্মে নিষিদ্ধ-তারপরেও আর কাউকে ধর্মপালনে বাধ্য করা যায়না...আর কেউ যদি এইটা নাও মানে,তাইলেও সে আর হিন্দু না-আর তার ইররেপারেবল ক্ষতি হয়ে গেলো,ঘটনা সেইটাও না...গীতার স্পষ্ট শ্লোক

সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ

অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্য মোক্ষয়িষ্যামি-মা শুচ।।

অর্থাৎ সব ধর্ম(ধর্মাচার-ধর্মের নিয়ম সঅঅঅব) ত্যাগ করে তুমি খালি 'এক আমার প্রতি(একেশ্বরবাদ)' সমর্পিত হও। তোমার সব পাপ আমি ক্ষয় করে দিবো-চিন্তা করো না।

আবার গীতা বলতেসে-

যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে-তাংস্তথৈব ভজাম্যহম

মম বর্ত্বানু বর্ত্বন্তে মনুষ্যা পার্থ স্বর্বশ।।

অর্থাৎঃ যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে-তাকে আমি সেভাবেই কৃপা করি।

আমার পথেই মানুষ নানান উপায়ে হেঁটে চলেছে।(শ্রীরামকৃষ্ণ সাহেবের যত মত তত পথ উল্লেখ্য)। অর্থাৎ হিন্দুধর্ম মতে যে মুসলমান,সেও আসলে ঈশ্বরের পথেই চলছে। আসলে হিন্দুধর্মমতে যে আস্তিক-সেই আসলে ঈশ্বরের পথে চলছে।অর্থাৎ পৃথিবীর প্রত্যেকটা আস্তিক মানুষই হিন্দুধর্মমতে হিন্দু...

তার মানে,তুমি যখন মুসলমানদেরকে আলাদা মনে করে হিন্দুধর্মকে তাদের থেকে আলাদা করে দিচ্ছো-তুমি বাই ডিফল্ট একটা ধর্মবিরোধী কাজ করতেসো।কারণ তুমি তো ভাই বলেই দিচ্ছো তুমি ঈশ্বর মানলেই তুমি আমার দল! তাইলে অর ধর্ম কি,তাতে কি আসে যায়?অয় ঈশ্বর একটা মানলেই হইলো-অয় আমার দল।কাজেই হিন্দুধর্ম অনুয়ায়ী দলাদলির জায়গাই নাই। এখানে আবার আমরা গরু খামুনা,তরা কেমনে খাস দেখি!-মার্কা কথাবার্তা কেমনে আসে ভাই। আমরা আর তোমরা ব্যাপারটাই তো নাইরে ভা!



দ্বিতীয় লেয়ারের ব্যখ্যাঃরাজনীতিবিদ্যা

ধর্মতত্ত্ব বুঝলা ভা? এবার রাজনীতিবিদ্যা বুঝাই। ধরে নিলাম হিন্দুইজম খুব স্ট্রিক্টলি বলতেসে যে গরু খাইলে সব শ্যাষ।তারপরেও,ভারতীয় গণরাজ্য নামের রাষ্ট্রটার নামের আগায় একটা শব্দ আছে সেইটা হলো ধর্মনিরপেক্ষতা।এবং এই ধর্মনিরপেক্ষতার কোন পিছলানি মার্কা ব্যাখ্যা তারা দেননাই(বাংলাদেশ ধর্মীয় সুবিচার নামক একটা পিছলানি মারসে)। তাদের রাষ্ট্রের পলিসি হলো সরাসরি,রাষ্ট্রের সকল জনসাধারণের জন্য যে আইন হবে-সেই আইন হবে ধর্মের প্রভাবমুক্ত।গান্ধীসাহেব আর নেহেরুসাহেব এই নীতি আদর্শের উপর দাঁড়াইয়া দেশটা স্বাধীন করসেন আর এই নীতিআদর্শের উপর দাঁড়াইয়া বহুবার নিজেদের পাকিস্তানের চেয়ে বেশি জোস রাষ্ট্র প্রমাণের চেষ্টা চালাইসে।ধর্মনিরপেক্ষতা একটা রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড!এখন যখন সে দেশের একটা সরকার দাঁড়ায়া একটা আইন করে যে গরু খাইলে রেপিস্টের চেয়ে বড় শাস্তি হবে কারণ তার বানানো হিন্দুধর্মে বলা আছে যে গরু খাইলে বিরাট প্যাড়া-ভেড়া খাইলে প্যাড়া নাই-তখন তার ধর্ম কোনটা আই ডোন্ট কেয়ার-সে সাথে সাথে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গা থেকে সরে আসলো ভা। কাজেই সে আর ভারতীয় গণরাজ্য থাকলো না-সে তখন হিন্দুস্তান হয়া গেলো-পাকিস্তানের সমকক্ষ বা পাকিস্তানের চেয়ে বেশি ফাও একটা রাষ্ট্র হয়া গেলো। এই ঘটনা অবশ্যই গান্ধীর চেতনাবিরোধী। এখন গান্ধী যদি এইটার কন্ট্রাডিক্টরি কোন কথা কোন জায়গায় বলে বলে থাকে যে সে গরু খাওন ব্যান করা দরকার(যেটা অতি সম্ভবত সে বলেনাই) তাইলে গান্ধী নিজেই গান্ধীবিরোধী। গান্ধীর ওই কথারে আমি মানিনা,গান্ধীর মারেও আমি আর সম্মানিত সম্ভাষণে ডাকিনা।



তৃতীয় লেয়ারের ব্যখ্যাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান

রাজনীতি বুঝছো?আচ্ছা,গেলো।এবার ধরো রাষ্ট্রবিদ্যা। ধরে নিলাম ভারত একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র না এবং হিন্দুধর্মে গোহত্যা নিষিদ্ধ।তাও ক্যাচাল আছে। ইন্ডিয়া তো তারপরেও একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভা!

এইবার তো সমস্যা।বৃহত্তম গণতন্ত্র কয়া তো পইড়া গেসো ক্যাচালে। গণতন্ত্র মানেই তুমি জনগণ থেকে ট্যাক্স নেয়ার মাধ্যমে জনগণের সাথে একটা সোশ্যাল কন্ট্রাক্টে আবধ্য। জনগণ সরকারকে ট্যাক্স কেন দেয় জানো? সোজা কথা,মাস্তানরে প্রটেকশন মানি দেওনের মতন। আমি তোমারে ট্যাকা দিমু, তুমি আমারে যা খুশি তাই করতে দিবা,আর যাতে আমারে এইডার জন্যে আর কেউ না কোপায় সেই ব্যবস্থা করবা। ভাই এখন,তাইলে আমি আরেকটারে কোপাই-গভমেন্ট কেমনে আটকাইবো! আমি তো ট্যাকা দিসি।

নাহ! হইলো না তো খেলা।

তুমি নিজেরে কোপাও-আমার খুব একটা প্যাড়া নাই।(যদিনা তোমার কোন পোষ্য থাকে যে তোমার স্বকোপানিতে ঝামেলায় পড়তেসে)

কিন্তু আরেকটারে কোপাইলে তুমি তার নিরাপত্তারে খাল করলা-সেও তো সরকাররে প্রটেকশন মানি দিসে। কাজেই ইউ ক্যাননট ডু দ্যাট।এটারে বলে থার্ড পার্টি হার্ম ডক্ট্রিন। তুমি ততক্ষণ নিজের অধিকার ভোগ করতে পারবা যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি অন্যের অধিকার খর্ব না করো।

তুমি যখন গাঞ্জা খাও-তুমি তখন আরেকটা গাঞ্জুট্টির থেইকা গাঞ্জা কিনো-তারে আরো গাঞ্জার ব্যবসা করার টাকা দাও,সে তখন সেই টাকা দিয়া আরো গাঞ্জা কিনে-কিন্যা পিচ্চিকাচ্চার কাছে বেচে-দেশের ভবিষ্যত মারা খায়।কাজেই তোমারে গাঞ্জা খাইতে দেওন যায়না। থার্ড পার্টি হার্ম।

এখন ভায়া আমি গরু খামু-আমি মোটা হমু।তর বাপের কি? থার্ড পার্টি হার্ম আছে?

দেখা যায় টাইপের থার্ড পার্টি হার্ম না থাকলে তো রাষ্ট্র কিছু নিষেধ করতে পারেনা।কাজেই বাথরুমে গিয়া মরো...



চতুর্থ লেয়ারের ব্যখ্যাঃ অর্থনীতি

কি কি বুঝলা? ধর্মতত্ত্ব,রাষ্ট্রবিদ্যা,রাজনীতিবিদ্যা।এবার আসো অর্থনীতি।ধরে নিলাম যে ভারত একটা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না আর হিন্দুধর্মে গোহত্যা খুব স্ট্রিক্ট একটা আইন।ধরে নিলাম ভারত একটা থিওক্রেটিক দেশ যেটার সোল পারপাস হলো হিন্দুধর্মের একটা প্রপার রাষ্ট্র সৃষ্টি করা।

এখন খেলা হচ্ছে-ধর্মীয় যে স্ট্রিক্টনেস,সেইটার বাজার অলরেডি হচ্ছে অন্যান্য ধর্ম খায়া দিসে এবং সেটা নিয়ে অনেকেরই অনেক প্যাড়া-তাইতো? এখন যদি তোমার ধর্মের প্রসার লাগে,মানে সোজা কথায় ধর্মীয় বাজার ধরতে হয়,তাইলে তোমার ওই ধর্মগুলার একটা অল্টারনেট স্ট্যান্স নিতে হবে-যে দেখেন ভাই,আমরার ধর্ম উদার,আমরার ধর্মে আসেন। এখন তুমি যদি বখিলের মতন কয়া দাও যে না-আমরাও দেহেন জিনিসপত্র ব্যান কইরা দেই-আমরাও দেহেন ব্যান করা মার্কা কাজ করার জন্য জেলে ঢুকাই-তাইলে লোকে আইবো ক্যারে? অয় তো কইবো ঠিক্যাস,তাইলে তোর ব্যানের মায়েরে সালাম-আমার এইখানে ব্যান আরো বেশি আছে-আমি বয়া থাকি। তাইলে তো তোমার বাশ,তাইনা? এইবার উলটা কেইস ধরো-তোমার এইসব গরু নিয়ে গরুগিরি দেইখা যদি কেউ এখন ধর্ম ছাইড়া দেয়-তখন খাইলা ডাবল বাশ।এখন দুইটা বাঁশ হাতে নিয়া বয়া গাড়বা নাচ নাচো।



সব লেয়ারের বাপ লেয়ারঃ ফিলসফি

এখন আসো সব কথার বাপ কথা! ফিলসফি বা দর্শন। ধরে নিলাম ভারত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না-গোহত্যা কঠিন আইন-আর ভারত থিওক্রেটিক হিন্দুধর্মপ্রচারক দেশও না। সব বাদ। সোজা হিসাব,গরু খাওয়া কি আসলে বন্ধ করা উচিত কি না।

উচিত না,কারণ স্বাদের দর্শন অনুযায়ী গরুর টেস্ট ফাটাফাটি। কেন খাওন নিষিদ্ধ করুম?তর বাপের ঠেকা? মহারাষ্ট্রে নিষেধ করসে,তোর মায়েরে-আমি অন্ধ্র প্রদেশে গিয়া খামু।

কারো যদি খাইতে ইচ্ছা না করে-খাইস না।খাইতে ইচ্ছা করসে-খা! মনে হইসে খাইলে ধর্ম নষ্ট-খাইস না।মনে হইসে ধর্ম সবুজ টিকিট-খা!

অটো ব্যালেন্স।



খেলা শেষ-ইচ্ছা হইলে খা,নাইলে না খা...খাওনের স্বাধীনতা জিন্দাবাদ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.