![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ লিলির মৃত্যুদিবস।
লিলি আমার মেয়ে। আমার আর শাহানার মেয়ে।
বেঁচে থাকলে আজ লিলির বয়স আঠারো বছর হতো।
বিশ্বাসই হতে চায়না। মনে হয়,এইতো সেইদিন ডাক্তারের চেম্বারে সাদাকালো মনিটরে লিলির ছোট্ট দুই হাত পা দেখলাম। ধীরে ধীরে নড়ছে চড়ছে শাহানার গর্ভের উষ্ণ আরামে। শাহানার চোখও সেইদিন চকচক করছিলো। কি দারুণ আনন্দ! কাউকে বোঝানো যাবেনা কখনও।
শাহানা সবসময়ই একটা মেয়ে চেয়েছিলো। আমি চাইতাম না। মেয়ের কথা ভাবলেই মনে হতো মেয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকা হাজার লোলুপ দৃষ্টির কথা। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসতো।
এখন মনে হয়,আহা! বেঁচে থাকতো মেয়েটা আমার। কাটা কম্পাস পকেটে নিয়ে ঘুরতাম। আমার মেয়ের দিকে যে-ই চোখ দেবে,তার চোখ কম্পাস দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে উখড়ে নিতাম। প্রয়োজনে পুরো দুনিয়াকে অন্ধ করে দিতাম আমি।
লিলি বেঁচে থাকলে ভয়াবহ সুন্দরী হতো,তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমি দেখতে খারাপ নই,ভালোই। বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়লেও একসময় আমার সুঠাম শরীর আর সুগঠিত চেহারা ছিলো। আর শাহানা তো সাক্ষাৎ হুরপরী!
এই বিদেশ বিভূঁইতে শাহানার মতন বাঙালি চেহারার মেয়ে পাবো তা,ভাবতেও পারিনি। অনেক দেশের মেয়ে দেখেছি জীবনে। ফরাসি,রুশ,জার্মান,ইরানী,কানাডিয়ান। অনেকের সাথে সময়ও কাটিয়েছি। কিন্তু কারও চেহারায় একটা ব্যাপার খুঁজে পাইনি যেটা শুধু বাঙ্গালিদের চেহারার জন্যে প্যান্টেন্ট করা।মায়া। মায়ায় ভরা চোখ। এ তিন পেগ হুইস্কির নটি নয়,দুই সার্ভিং ওয়াইনের গর্জিয়াস নয় অথবা এক মগ বিয়ারের সেক্সিও নয়-এ হলো মায়া। এক অদ্ভুত টান যেটা নিউ জার্সির একটা বারের বেঞ্চি থেকে তোমাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে পদ্মানদীর টালমাটাল নৌকায়। কি ভয়াবহ মায়াময় দুটো টানা চোখ ছিলো শাহানার! পুরো মুখ জোড়া চোখ,আর সেই চোখ জোড়া মায়া আর সেই মায়া জোড়া মাটির গন্ধ।
অথচ শাহানা পুরোপুরি বাঙ্গালিও না। আধা ককেশীয়। ওর মা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। তাতে লাভ হয়েছে আমার। বাঙ্গালির বাঙ্গালিত্ব পেয়েছিলো সে,আর আমেরিকান খোলামেলা ভাবনাচিন্তা। নইলে আমি কখনও ওকে পেতামই না। বাঙালি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তো আমি বিবাহের অনুপোযোগী ব্যক্তি। সদ্য ছ্যাকা খাওয়া ডিভোর্সি লেখক। স্ট্যাবল ইনকাম নেই। সারাদিন মদ খাই,পোকার খেলি। বাঙালি কেন,আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডেও আমি ডেট করার অযোগ্য।
বাঙালি মেয়েদের এই ধরণের বখা ছেলেদের প্রতি একটা আলাদা টান থাকে। একটা মায়া থাকে। এই মায়াই গোটা একটা জাতিকে খেলো! সেই মায়াকে বাঙালি মেয়েরা বাস্তবতা দিয়ে ঢেকে দিতে শেখে। কিন্তু ককেশীয়দের কাছে বাস্তব-অবাস্তব বলে কোনকিছু নেই,ভুলঠিক আর সত্যিমিথ্যা বলে কোনকিছু নেই। তাই শাহানা তার মায়াকে প্রকাশ করেছিলো-আমাকে বললো-মে আই হেল্প ইউ?
আমি কাঠবাঙ্গালের মতন বলেছিলাম-আমি বাড়ি যাবো।
আমাকে বেকুব করে দিয়ে শাহানা শুদ্ধ বাংলায় বললো-বাড়ি কোথায়?
আমেরিকায় বসে হঠাৎ বেফাঁস বাংলা কথার উত্তরে বাংলা কথা পাওয়া একটা কঠিন ব্যাপার।ভাগ্য ভালো আমি গালিটালি দেইনি-সাধারণত তাই দিয়ে থাকতাম আমি।
আমি নেশা সামলে বললাম-নোয়াখালি। আপনার?
আমার বাড়ি নাই। বাসা আছে। যেতে চাও?
হ্যাঁ। ইট ওয়াজ দ্যাট ইজি। শাহানার সাথে প্রথম সময় কাটানো আমার জন্য এতোটাই সহজ ছিলো। তাই হয়তো শাহানার সাথে আমার মিশে যাওয়াটাও ঠিক এতোটাই সহজ ছিলো। আমি ছিলাম খারাপ ছেলে-শাহানা খারাপ মেয়ে। নিজেদের জন্য পারফেক্ট। পার্টি করে বেড়ানোর বয়স নেই তখন আমাদের। দুইজনের বয়েসই তিরিশের কোটায়। কাজেই আমরা দুইজনে মিলে একটু বুড়োদের মতন বদামি করা শুরু করলাম।
সারাদিন বিয়ার,পিৎজা আর সিনেমা দেখতাম।দুইজনই আমরা সিনেমা খুব ভালোবাসতাম। অলস সিনেমাপ্রেমী খাদক কাপল!
নো স্ট্রিংস এটাচড। কেউ কারো অতীত নিয়ে প্রশ্ন করিনি। ভবিষ্যতের কথা কেউ ভাবিনি।একসাথে থাকা। প্রয়োজনে অন্যদের সাথে সময় কাটাও-সমস্যা নেই।ইচ্ছে হলে এসো-নয় নেই। সহজ সরল।
বেশ কয়দিন চললো এমন স্বেচ্ছাচারিতা। এদিকে স্বেচ্ছাচারিতা করতে করতে আমার ওইদিকের স্বেচ্ছাচারিতা কমে এলো। বারে সময় কাটাতাম না। রেড ইন্ডিয়ান ক্যাসিনোতেও যাওয়া হতো না। দিনের পর দিন নোংরা চ্যাটচেটে বিছানায় পিজ্জা খেয়ে আর মুভি দেখে কাটিয়ে দিয়েছি। আর যখন প্রয়োজন শারিরীক চাহিদা মেটানোর ফ্রী সাপ্লাই! এই জীবনে আর কি চাই?
সব ভালো ছিলো। কিন্তু মাঝে একটু সমস্যা হলো। আমার প্রাক্তন স্ত্রী রোক্সানার উকিলের চিঠি এলো। তার একটি সন্তান হয়েছে এবং সে মনে করছে যে সেই সন্তানের পিতা আমি। আমার প্রতি অনুরোধ হলো এই যে,আমি যাতে ডিএনএ টেস্ট দেই এবং পিতা প্রমাণিত হলে যাতে সন্তানের ভরণপোষণের জন্য রোক্সানাকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করি।
আমি টেস্ট করালাম। টেস্টের ফলাফল এলো নেগেটিভ।আমি পিতা নই। অর্থাৎ পিতা অন্য কেউ। অথচ রোক্সানার সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ তখনও এক মাসও হয়নি। অর্থাৎ বিবাহিত থাকার সময়ই সে অন্যত্র ব্যস্ত থাকতো! অথচ ঠিক এই অভিযোগ থেকেই আমাদের মধ্যে সকল বিপত্তির সূত্রপাত। তার সন্দেহ ছিল আমার অন্য এফেয়ার আছে। আসলে সে নিজে প্রেম করে বেড়াতো-আর তাই ঢাকার জন্যেই সে আমাকে উলটো সন্দেহ করতো।
আস্তে আস্তে আমার কাছে সব পরিস্কার হতে শুরু করল। আমি এতোদিন ধরে নিজেকে দোষী করেছি। নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছিছি করেছি নিজের প্রেমিক সত্ত্বাকে।কেমন প্রেমিক হলাম-যে প্রেমিকার বিশ্বাস পর্যন্ত অর্জন করতে পারিনি!
আর সেখানে রোক্সানা নিজেই কিনা অন্যত্র প্রেম করে বেড়াতো!
আমার সামনে আজীবন রোক্সানা ছিলো দেবীর মতন পুতপবিত্র। আমি সবসময় লাখো শোকর করতাম শুধু তার সাথে সংসার করতে পারছি এই আনন্দে। তাকে ঘিরে আমার জীবন বানিয়েছিলাম আমি। তাই যখন আমার দোষে আমাদের সাজানো সংসারটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো তখন আমি নিজে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেছি বেশ কয়বার। পারিনি-সাহসে কুলায়নি। আমি ভীতু মানুষ।
কাজেই রোক্সানার সাথে ডিভোর্সের সময়টা আমাকে জীবিত অবস্থাতেই কাটাতে হয়েছে। অনুভব করতে হয়েছে জীবন্ত অবস্থায় মানুষের গলা দিয়ে ড্রপার দিয়ে একফোটা একফোঁটা করে এসিড ঢেলে দিলে ঠিক কেমন যন্ত্রণা হয়।
অথচ এর সবটা রোক্সানারই দোষ। আমার নয়!
এমন মেয়ের সাথে কি করা উচিত?
জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলা উচিত। নখের নিচে জ্বলন্ত চিমটা দিয়ে খুচিয়ে রক্তনালী চেপে ধরে টেনে বের করে আনা উচিত। চামড়ায় বেল্ট দিয়ে পশুর মতন পিটিয়ে সারা শরীরে দগদগে ঘা করে দেয়া উচিত।
তবু আমি রোক্সানাকে কিছুই করিনি।কিছুই বলিনি। শান্ত থেকেছি। সহ্য করেছি।দিনরাত শাহানাকে নিয়ে ভুলে থেকেছি। উন্মত্ত হয়েছি। পাগলামি করেছি। সব সীমা অতিক্রম করেছি।শাহানার প্রেমে পড়েছি।
শাহানা কোনদিন কিছু জিজ্ঞাসা করতো না। সব সহ্য করে যেতো। কেমন বাঙালি বধূ হয়ে গিয়েছিলো সে। হুজুর হুজুর করতো আমাকে। দিন শেষে স্বামী ঘরে এসে উন্মত্ত জানোয়ারের মতন করবে-একটা কথাও বলবে না-এই স্বাভাবিক। আমার এই ভালো লাগতে শুরু করলো।নিজেকে প্রভু ভাবতে শুরু করলাম। আমার ঘরে আমি রাজা আর শাহানা আমার দাসী।ভালো স্বামী হবার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।এখন আমি খারাপ হবো।যতো খারাপ হওয়া সম্ভব-ততো খারাপ।
শাহানারও কোন আপত্তি ছিল না। তার হয়তো এই প্রভুর মতন ব্যবহারই পছন্দ ছিলো।তাকে তো আমি বেঁধে রাখিনি কখনও।সে চাইলেই চলে যেতে পারতো। আসলে সে চাইলেই তার ঘর থেকে আমাকে বের করে দিতে পারতো।সে দেয়নি।
সে সহ্য করেছে।সে বুঝতে পেরেছিলো যে আমি উত্তপ্ত লোহা হয়ে আছি,আমাকে এখন আদর দিয়ে ছুঁয়ে লাভ নেই।পুড়ে যাবে!
একসময় আমি ঠান্ডা হলাম।শাহানাকে হারাবো বলে ভয় পেলাম।শাহানা আমাকে অভয় দিলো। এতো সহজে হারাবো না আমি। আমি রোক্সানা নই,শাহানা। আমি তোমাকে বুঝি।
আমাকে শাহানা বোঝে! আমি কুকুরের মতন ব্যবহার করলেও আমাকে বোঝে। আমি পাগলের মতন ব্যবহার করলেও আমাকে বোঝে। আমার ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেকে ব্যখ্যা করতে হবেনা। বেফাঁস একটা কথা বলে ফেলে সেইটার জন্য দিনের পর দিন ক্ষমা চাইতে হবেনা। এক একটি ভুলের জন্য ক্ষমা না পেয়ে পুষে থাকা রাগ সহ্য করতে হবেনা। শাহানা আমাকে বোঝে। আমি খারাপ হলেই আমাকে বোঝে,ভালো হলে তো কথাই নেই! আমি ভালো হয়ে গেলে শাহানা আর আমিই হবো সবচেয়ে সুখি কাপল!
আমি ভালো হবার চেষ্টা করলাম আবার।শাহানাকে বোঝার চেষ্টা করলাম।শাহানার অতীত জানার চেষ্টা করলাম,বর্তমান জানার চেষ্টা করলাম,ভবিষ্যত বোঝার চেষ্টা করলাম। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা শুনলাম ওর। ওর ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলাম।
কথা বলার সময় শাহানা প্রচন্ড ভুরু নাচাতো। শাহানার ভুরু ছিলো ঘন কালো। টানা টানা। শাহানার ঠোঁটের নিচে একটা তিল ছিলো। কথা বলার সময় শাহানার সেই তিলটা পাগল হরিণীর মতন ছোটাছুটি করতো। তিলটা নাচার ভঙ্গিমা লক্ষ্য করে দেখেছি আমি।অবিকল পলায়নরত হরিনীর মতন ভঙ্গি। শাহানার গলার কাছে খাঁজ হয়ে যেত কথা বলার সময়। মাঝে মাঝে খাঁজটা এতো গভীর হতো যে মনে হতো আমার ঠোঁটজোড়া এটে যাবে ওখানে। তার একটু নিচেই ছিলো একটা গভীর ভাঁজ। সেই ভাঁজ থেকে শুরু হতো দুনিয়ার যত রহস্যময়তা।শাহানার কথা শুনতে শুনতে আমি অজান্তেই সেই ভাজে হারিয়ে যেতাম।
শাহানা বলতো,কই,তুমি তো কিছুই শুনছো না।আমি কাকে কি বলছি?
আমি বলতাম,আহা! শোনা মানেই কি আর প্রতি সেকেন্ডে হু হা করা নাকি?আমি শুনছি।মনোযোগ দিয়ে শুনছি।
তুমি কিছুই শুনছো না।
আমি অবশ্যই শুনছি। আমি প্রত্যেকটা অক্ষর মুখস্ত বলে দিতে পারবো।
আচ্ছা। বলো দেখি আমি এখন কার কথা বলছিলাম?
তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ক্যাথরিনের কথা?
না। আমার প্রথম স্বামীর কথা। আমার জীবন নিয়ে যদি তোমার কোন আগ্রহই না থাকে তাহলে জানতে চাইছো কেন?
আহা! আগ্রহ মানেই কি প্রত্যেকটা কথা মুখস্ত করে বসে থাকা নাকি?তুমি না আমাকে বোঝো?
শাহানা আর কিছু বলতো না।উঠে চলে যেতো। আমার মনে হতো সে অবুঝের মতন করছে। সে চাইলেই আমাকে বুঝতে পারে,কিন্তু সে আমাকে বুঝতে চাইছিলো না। এরকম আমার সাথে আগেও হয়েছে।এরকম হলে আমার প্রচন্ড হতাশ অনুভব হয়।
হতাশ অনুভব হলে আমি ঘরে বসে থাকতে পারিনা।আমাকে বারে যেতে হয়। বারে আমার কিছু মেয়েদের দিকে চোখ পড়ে। তাদের একজন রোমানীয় একজন থাকে চেক।আমার বিভিন্ন দেশের মেয়েদের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। আমি তাই দুইজনের সাথে একসাথে সময় কাটাই।সেই রাতে ঘরে ফেরা হয়না।
পরদিন ঘরে ফিরলে শাহানা আমার সাথে কথা বলেনা। আমি বললাম স্যরি,আর হবেনা।
সে বললো,ইটস ওকে।তারপর মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো।
আমার মনে হলো ইটস নট ওকে।শাহানা এখনো রাগ করে আছে। আমি স্যরি বলার পরও মনের ভেতরে রাগ পুষে রেখেছে।অথচ এখানে রাগ করার কিছুই নেই। সে আগেই জানতো আমি এরকম। আমার এই স্বভাবগুলো দেখেই সে আমার প্রেমে পড়েছে।এখন সে অবুঝের মতন করছে কেন?
আমার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। আমি টিভি ছেড়ে সিনেমা দেখা শুরু করি। সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাই আমি। মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙ্গায় শাহানা। কাচা ঘুম ভেঙ্গে আমি প্রচন্ড বিরক্ত হই। তবু কোনমতে শাহানাকে বলি-কি হয়েছে?
শাহানা বললো,আমি তোমাকে কয়দিন ধরে একটা কথা বলতে চাচ্ছি।তোমার শোনারই সময় হচ্ছে না
আমি বললাম,কি?
শাহানা বললো,আমি প্রেগনেন্ট।
আমি বললাম,বাহ! গ্রেট নিউজ।বাবা কে?
শাহানা বললো, অবশ্যই তুমি। তোমার কি মনে হয়,আমি তোমার মতন দশজনের সাথে সময় কাটিয়ে বেড়াই?
আমি বললাম,দেখো শাহানা,এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি মোটেই দশজনের সাথে সময় কাটিয়ে বেড়াই না। আর যদি বেড়াইও তাতে দোষের কি আছে?আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।হু দ্য হেল আর ইউ টু ডিকটেট মি?
শাহানা বললো, আই এম দ্যা মাদার অফ ইওর চাইল্ড। প্লিজ ফর গডস সেক,অন্তত লিলির জন্য তুমি একটু নিজেকে শুধরাও।
আমি বললাম,লিলি কে?
শাহানা বললো,আমাদের মেয়ের নাম লিলি রেখেছি।তোমার মায়ের নামে নাম।
আমি বললাম,বাহ!নাম চমৎকার হয়েছে। আমি কি তোমার পেটে হাত রাখলে এখন ওর নড়াচড়া অনুভব করতে পারবো?
শাহানা বললো,না,পারবে না। কারণ আমি তোমাকে হাত দিতে দেবনা। তুমি তোমার মদে ভেজা দুর্গন্ধময় শরীর নিয়ে আমার মেয়েকে ধরবে না। সকালে গোসল করবে,তারপর ধরবে।
আমি বুঝলাম যে আমার এখন ভালো স্বামী হবার চেষ্টা করা উচিত। তাই আমি সহ্য করে নিলাম। বললাম,ঠিক আছে।
শাহানা আমার সন্তান হবার প্রথম দিন আমাকে আমার সন্তান ধরতে দেয়নি। আমি একজন বাবা হয়ে এই স্যাক্রিফাইসটুকু করেছি আমাদের জন্য। লিলির জন্য। লিলির বড় হবার জন্যে আমাদের একসাথে থাকা খুব দরকার।
আমি চেষ্টা করলাম ভালো থাকতে।শাহানার কথা মেনে চলতাম। আমি জানতাম শাহানা আমার সাথে খুব ভালো নেই। যে যে কারণে শাহানা আমাকে ভালোবাসতো ঠিক সেই কারণে আমাকে ঘৃণা করা শুরু করলো। আমিও শাহানার সাথে খুব ভালো ছিলাম না। যে মানুষটা আপনাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করেন তাকে হাজার ভালোবেসেও লাভ হয়না।
তবু আমি ভালোবাসতে রাজি ছিলাম। আমাদের জন্য সবটুকুই করতে রাজি ছিলাম।যতটুকু প্রয়োজন। আমি জানতাম যে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো প্রেমিক ছিলাম না। আমার অনেক শোধরানোর জায়গা ছিল।আমি শুধরাতে প্রস্তুতও ছিলাম। পৃথিবীর কেউ জন্মগতভাবে প্রেম করার উপযোগী হয়ে জন্মায়না।কিছুটা সবাইকেই বদলাতে হয়।আমিও বদলাতে রাজি ছিলাম।শাহানার জন্য আমি বদলাচ্ছিলাম।লিলির জন্যেও বদলাচ্ছিলাম।
লাভ হয়নি। শাহানা মরে গেলো। ডাক্তার বললো আত্মহত্যা। গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যান থেকে ঝুলে মৃত্যু।
আজকে লিলি বেঁচে থাকলে তার মায়ের মতন অসম্ভব রূপবতী হতো। নীলরঙ্গের চোখ হতো,কালো দীঘল চুল হতো। ঠোঁটের নিচে হয়তো একটা তিলও থাকতো। হয়তো কথা বলার সময় সেই তিলটা চঞ্চলা হরিণীর দৌড়ানোর মতন করে নাচতো।
আমি অনেকদিন কেঁদেছি। আমি আজও কাদি।আমি সারাজীবন কাঁদবো। পুরোটাই আমার দোষ। আমি বদলাতে রাজি ছিলাম না। আমি নিজের মতন বাঁচতে চেয়েছিলাম বলেই সব এরকম হয়ে গেলো। নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই এর কিছুই হতো না।
শাহানা র মৃত্যুর পর আমি আর কোন নারীর শরীর স্পর্শ করিনি। একবারও মদের গ্লাস হাতে নেইনি। নিজেকে শুদ্ধাচারী স্বামী বানিয়ে ফেলেছি। আজ আমাকে শাহানা দেখলে খুব খুশি হতো। শাহানা র স্মৃতি তাই করে ছেড়েছে যা সে নিজে কোনদিন করতে পারেনি। শাহানা র স্মৃতিই আজ আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।
এই স্মৃতি রোমন্থন করেই আমি চল্লিশ বছর কাটিয়ে দিলাম।কয়েকটা সুন্দর অসাধারণ স্মৃতি। কয়েকটা হাসি,কয়েকটা কান্না আর একগাদা ভালোবাসার স্মৃতি। শাহানা র সাথে আমার প্রথম দিনগুলোর স্মৃতি।
এই স্মৃতির জন্য আমি জীবন দিতেও পারি নিতেও পারি।অনেক কষ্টে বাচিয়ে রেখেছি এই স্মৃতিগুলো।
এই স্মৃতিগুলোর জন্যই আমি আজও বেঁচে আছি। এই স্মৃতিগুলোর জন্য আমি জীবন দিতেও পারি,নিতেও পারি।
নিয়েছিও।স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজ হাতে গলা টিপে আমিই মেরে ফেলেছি শাহানাকে।
আমার আর কোন উপায় ছিলো না।শেষের দিকে এসে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। সব! মনে হচ্ছিলো আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশ্রী হয়ে যাচ্ছিলো সব। প্রতিরাতে ঝগড়া,চ্যাঁচামেচি,অশান্তি! কিচ্ছু ভালো লাগত না।মনে হচ্ছিলো আবার রোক্সানার দিনগুলোতে ফিরে গেছি। আস্তে আস্তে সব বিষিয়ে যাচ্ছলো-সব সুন্দর স্মৃতি নষ্ট হয়ে বিশ্রী নোংরা হয়ে যাচ্ছিলো।
আমার স্মৃতিগুলো বাঁচাতেই হতো। ওগুলোই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। তাই শাহানা কে মেরে ফেলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো না। প্রত্যেকটা দিনে ও আরও বিষিয়ে দিচ্ছিলো সবকিছু। লিলির আসার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো-সেই উপায়ও রাখেনি সে। আমার মেয়েটাকে,আমার ছোট্ট মেয়েটাকে শাহানা র গর্ভে রেখেই ওকে মেরে ফেলতে হলো।
বেঁচে থাকলে আজ লিলির বয়স আঠারো বছর হতো।
অনেক সুন্দর হতো আমার লিলি! ডাগর ডাগর চোখ-আর চোখজোড়া দুনিয়ার মায়া আর সেই মায়াজোড়া মাটির গন্ধ।
মেয়েটা বেঁচে থাকলে আজ বড় সুন্দর হতো। হতে দিলোনা ওর মা। মেরে ফেললো ওকে। বেঁচে থাকতে দিলো না।
ওরা মরে গেছে।তবু ওদের স্মৃতিগুলো রয়ে গেছে আমার সাথে।কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারবে না-নষ্ট করে দিতে পারবে না। সেই স্মৃতিগুলো আগলে ধরে আমি বেঁচে আছি। সেই স্মৃতিগুলোই আমার সবচেয়ে বড় সম্পত্তি। আজও সেই স্মৃতিগুলোর জন্য আমি জীবন দিতেও পারি-নিতেও।
আজকাল স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।অনেকদিন হয়ে গেলো।স্মৃতিগুলো পুরোনো হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।মগজ বুড়ো হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি দেবোনা। দেবোনা দেবোনা দেবোনা। কোনভাবেই স্মৃতিগুলোকে নষ্ট হতে দেবোনা।
প্রয়োজনে আমি আবার জীবন নেবো-জীবন দেবো।
তবু স্মৃতিগুলোকে এক ফোটা নষ্ট হতে দেবোনা।
আর কেউ বেঁচে থাকুক-আর না থাকুক-আমার মরে যাওয়া মেয়েটার স্মৃতিটুকু বেঁচে থাকবে।
২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৪
অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: শেষের ইমোটিকন দেখে মনে হচ্ছে মন দিয়ে পড়ে নিরাশ হয়েছেন!
তাই বুঝি? @শায়মা
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪২
জেন রসি বলেছেন: এ তিন পেগ হুইস্কির নটি নয়,দুই সার্ভিং ওয়াইনের গর্জিয়াস নয় অথবা এক মগ বিয়ারের সেক্সিও নয়-এ হলো মায়া।
মেটাফোর ভালো লেগেছে।
যদিও মায়া জিনিসটা অনেকটা মদের মতই।
ভালো থাকবেন।
২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৫
অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: মায়া তো ভাই হুইস্কি,ওয়াইনের নেশা না।
মায়া হলো শীতের ভোরে খেজুর রসের নেশা।
দেখে মনে হয় নিষ্পাপ-খাওয়া শুরু করলে তিন গ্লাস পরে মাতাল!
৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৬
তরুক মকতো বলেছেন: কাহিনীটার টান মারাত্মক। মায়ার খেলা!!!
২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৬
অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: ধন্যবাদ!
ভালো লাগলো..
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
শায়মা বলেছেন: না নিরাশ হইনি।
৩০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: ধন্যবাদ।ভালো লাগলো।
৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
ইলুসন বলেছেন: ভাবছিলাম খুব বোরিং একটা প্রেমের ঘেন-ঘেনানি পড়ছি! পড়ার পরে ধারণা বদলে গেল। অনেক ভাল হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০১
শায়মা বলেছেন: অনেক মন দিয়ে পড়লাম !