নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভর্তি পরীক্ষা নামক পাশাখেলা এবং আমার বাচালতা

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

'কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেই ভালো হতো'-শীর্ষক আমার লেখাটি সৌভাগ্যক্রমে অনেক মানুষের চোখে পড়েছে । তাদের মধ্যে অনেকে অনেক বিদগ্ধ এবং গুণীজন। এই বিদগ্ধ এবং গুণীজনদের তালিকায় ডঃমুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের মত মানুষও রয়েছে বলে এই বিষয়টি আনন্দজনক এবং একই সাথে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের সমালোচনা হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখার উপায় নেই। যেহেতু এতো মানুষ আমাকে শোকজ করেছেন-অতএব আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য।

বিদগ্ধ এবং গুণীজনেরা আমার উপর মারাত্মক বিরক্ত কেননা আমি জ্ঞানের অসম্ভব ঘাটতি নিয়ে কথা বলছি এবং একটিমাত্র পরীক্ষা খারাপ হবার কারণে সারা দুনিয়াকে শাপশাপান্ত করে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ফলাফলহীন বাচ্চাবিদ্রোহ করার চেষ্টা করছি কারণ এইসব লেখালেখি করে আদতে কোন লাভ নেই।

তাদের এই অভিযোগ নেহাত ফেলনা নয় কারণ আসলেই আমার জ্ঞানের অসম্ভব ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়না যে শিক্ষাপদ্ধতিতে যে গলদ রয়েছে সেটা বোঝার জন্য মহাজ্ঞানী কেউ একজন হতে হয়। সাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকতে হয়, চোখ আর কান থাকতে হয়। কারণ আমি আমার সেই সহপাঠীর কান্না শুনেছি যে বলছিলো যে বুয়েটে না টিকতে পারলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আমি আমার সেই ছোটবোনটিকে রঙ-তুলি-ক্যানভাস লুকিয়ে রাখতে দেখেছি যাকে সবাই মিলে বলেছিলো যে চারুকলা পড়া মেধার মহা অপচয় আর আমি সেই বড়ভাইটিকেও চিনি যিনি ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারার দুঃখে বিতর্ক করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমি এতোটুকু দেখতে পাই যে আমাদের সমাজে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি স্পষ্ট শ্রেণীবৈষম্য শুরু হয়েছে এবং এই শ্রেণীবৈষম্য আদিম ভারতীয় বর্ণপ্রথার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমি জানি যে চুয়েটের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টকেও লোকে বুয়েটের শেষ সারির ছাত্রের চেয়ে কম মর্যাদা দেয় কেননা বুয়েট তো বুয়েটই! আমি জানি যে বড় আপুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কূটনীতি বিগাগের তৃতীয় বর্ষে আছে তার জন্যে পাত্র দেখা হচ্ছে কারণ সে পাশের বাসার মিলির মতন মেডিকেলে পড়ে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারেনাই। আমি রোজ দেখতে পাচ্ছি আমার হাজার হাজার সমবয়েসী ছেলেপুলে মারাত্মক ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে কেননা তারা কেউই এখনো জানেনা তারা কোন মানুষ কিনা কারণ আমাদের সমাজে নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই মানুষ আর বাকি সকলে গাধা।

তাই মাথার উপর মানুষ সিল পড়বার জন্য তারা হাজার হাজার টাকা দিয়ে ভর্তিকোচিং এ ভর্তি হচ্ছে এবং সেই ভর্তি কোচিং এর দারোয়ানও কোচিং থেকে ঢুকতে বের হতে তাকে বলে-বুয়েটে টিকতে না পারলে কিন্তু পড়াশুনা করে লাভ নাই। এই বুয়েট বুয়েট-মেডিকেল মেডিকেল ডিলিরিয়ামে পড়ে ছেলেমেয়েগুলো এমন মানসিক চাপের বুলডোজারের নিচে পড়ে যে তাদের মধ্যে মানবিক মানুষের কোন ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট থাকেনা। আমি একজন ভর্তি টিচারকে এটাও বলতে শুনেছি যে এই তিন মাস জীবনটা অফ করে রাখো। ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়লে এরপর আবার অন করবে।

তারমানে দাঁড়ায় এই যে তথাকথিত ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে না পারলে জীবনটি আর অন করারই প্রয়োজন নেই আর তার বেঁচে থাকা আর না থাকা একই কথা।

তাই প্রতিবছর হাজার হাজার অর্ধোন্মাদ শিক্ষার্থী মাথার ওপর পাহাড় সমান বোঝা নিয়ে দুই ঘন্টার ভর্তি পরীক্ষা দেয় মানুষ হবার সার্টিফিকেট অর্জন করার জন্য। আমি এই প্রশ্ন তুলবোনা যে বুয়েট-মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা কতোটা মেধা যাচাইকারী কারণ আমার অতটা জ্ঞান নেই কিন্তু আমি অবশ্যই এই প্রশ্ন তুলবো যে-যে ছেলেটির এই ভর্তি পরীক্ষাটুকুর সময়ে প্রচন্ড পেটব্যাথা হয়েছিলো-সে আসলে সেই পরীক্ষায় খারাপ করার কারণে অমানুষ ট্যাগ পাবার মতন অপরাধ করেছে কিনা। আমি এই প্রশ্নটি এই কারণে করবো কারণ আমি এমন একজন বড় ভাইকে চিনি যার পরীক্ষার সময়ে প্রচন্ড পেটব্যথা হয়েছিলো বলে সে ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনাই এবং লজ্জায় সে এই কথাটা কাউকে বলেনা কারণ সবাই মনে করবে যে সে অজুহাত দিচ্ছে এবং আসলেই সবাই মনে করে যে সে অজুহাত দিচ্ছে।

আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন করবো কারণ এই বিষয়গুলো আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি দেখেছি যে কিভাবে করে আমার সারাদিন ট্যাং ট্যাং করে লাফিয়ে বেড়ানো আপন বড়বোন ভর্তি পরীক্ষায় মোটামোটি ভালো করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগে ভর্তি হবার পরেও সারাদিন কান্নাকাটি করে চোখ লাল করে ঘুরতো এবং আমি এও দেখেছি যে কিভাবে করে সারাদিন ইশ! আহারে! করে করে আমার বোনের মধ্য থেকে একটু একটু করে জীবনিশক্তি শুষে নেবার চেষ্টা করা হয়েছিলো।

আমি প্রশ্ন করবো কারণ আমি জানি যে আমার বোনটি জুলজিতে ভর্তি হবার পড়েও সারভিক্যাল ডেন্টাটা নামের একটা আকাশ কুসুম গবেষণা করার স্বপ্ন দেখতো এবং আমি এও জানি কিভাবে করে তার ভেতর থেকে এই গবেষণাগুলো করার ইচ্ছাটি নিংড়ে নেয়া হয়েছে।

গতকাল আমাকে বকা দিয়ে এবং স্থানভেদে অশ্রাব্য কিছু গালি দিয়ে যখন জ্ঞানী এবং বিদগ্ধ মানুষেরা কিছু কথাবার্তা লিখেছিলো তখন আমার অনেকজন বন্ধুবান্ধব তাকে রুখে দাঁড়িয়েছিলো। যার কথা বলছি তিনি অত্যন্ত সম্মানিত এবং ক্ষমতাধর মানুষ হলেও গালিগালাজ করার অধিকার তার নেই-এমন ছিলো তাদের বক্তব্য। আমি আমার বন্ধুদের এই দৃঢ় প্রতিবাদ দেখে আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এবং তাদের এই ভয়াবহ প্রাণের উচ্ছ্বাস পর্যবেক্ষণ করি বলেই আমি কিছু প্রশ্ন করি।

কারণ আমার ভয় হয় যে ভর্তি পরীক্ষা নামক ভয়াবহ যাঁতাকলের ভেতর দিয়ে যাবার পরে তাদের এই প্রাণোচ্ছাসটি আর থাকবে না এবং বাংলাদেশ খুব সাহসী কিছু কিশোর আর কিশোরী হারাবে। এইজন্যে আমি প্রশ্ন করি।

আসলে যারা মনে করছেন যে আমার বাংলা পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে আমি গোস্বা করে সবাইকে শাপশাপান্ত করে বেড়াচ্ছি তাদের ধারণা ঠিক নয় কারণ আমার পরীক্ষা খুব একটা খারাপ হয়নি আর খারাপ হলেও আমার খুব একটা এসে যায়না। আমি আসলে আমার বন্ধুদের জন্য,আমার বড়ভাই এবং ছোটভাইদের জন্য লিখি। কারণ প্রতিবছর তাদের উপর যে ভয়াবহ নিরম মানসিক অত্যাচার চলে যায়-সেটি আমি দেখতে পাই এবং এর শেষ পরিণতি হিসেবে যে অর্ধমৃত ছাত্রসমাজ বের হয়ে আসে আমি সেটাও দেখতে পাই।

আমি আমার 'কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেই ভালো হতো' লেখাটি আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক এবং বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ ডঃমুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কাছে ইমেইল করে পাঠিয়েছিলাম। তিনি লেখাটি পড়ে আমাকে আচ্ছামতো বকে দিয়েছেন আর আমি এই বয়সে জীবনকে নিয়ে আশাবাদী নই কেন সেটা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন যে,এখনই আমার এ অবস্থা হলে বড় হয়ে আমার কি হবে?

আমি স্যারের মন্তব্য পড়ে খুব দুঃখ পেয়েছি কেননা স্যারের কথা আর লেখার উপর ভিত্তি করেই আমি আমার সমগ্র চরিত্র গড়ে তুলেছি। কাজেই স্যারের বকুনি খেয়ে আমার নিজেকে খুবই ব্যর্থ আর অথর্ব মনে হচ্ছে কারণ আমি আসলেই নিজেকে অনেক আশাবাদী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম।তাই আর কারো কাছে না হোক,অন্তত নিজের কাছে আমার এই আপাত নৈরাশ্যবাদের কারণ ব্যখ্যা করছি।

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আমি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে ফুল স্কলারশীপে রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করবো। আমি হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তারা জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যথেষ্ট মানসম্মত বলে মনে করেনা এবং আমি এ লেভেল ও লেভেলের পড়াশুনা না করে ওদের ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করতে পারবোনা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাদের এহেন মন্তব্য দেখে আমার স্বভাবতই খুব খারাপ লেগেছে। তবে ওদের চামড়া সাদা বলে ওরা যা বলছে তা মেনে নিতে হবে-এমন চিন্তাধারার অনুসারী আমি নই। ওদের অনেক আগেই আমাদের ভূখন্ডে কণাদ,পাণিনী এসেছিলেন-নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ও আমাদের। তবু আমার পছন্দের বিষয়গুলো পড়ার জন্য আমার শেষপর্যন্ত ওদের দেশেই যেতে হচ্ছে।

কেননা আমাদের দেশে রাজনীতির ছাত্রের কোন মূল্য নেই। আমি ছোটবেলা থেকে 'ভালো ছাত্র' ছিলাম বলে আমার আশেপাশের মানুষ আমার রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ে আগ্রহটাকে একটা ব্যারাম হিসেবেই দেখতো আর এই ব্যারামের চিকিৎসা করানোর জন্য আমাকে জোর করে বিজ্ঞান পড়ানো হয়েছে এবং সারাক্ষণ কানের কাছে বুয়েট বুয়েট করে করে বুয়েট সংক্রান্ত একটা কঠিন ডিলিরিয়াম তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি যতবার সকলকে বলতে চেয়েছি যে আমি আসলে রাজনীতিবিদ্যা পড়তে চাই-তারা বলেছে-ইশ! মেধার কি নিদারুণ অপচয়।

আমি যদি এখন দেশের বাইরে পড়তে না গিয়ে আসলেই দেশে থেকে রাজনীতিবিদ্যা পড়তে চাইতাম তাহলে সকলে মিলে আমাকে সান্তনা দিতো,আহা! মন খারাপ করোনা-সবাই কি আর বুয়েট-মেডিকেলে চান্স পায়?

আমি নিশ্চিত যে আমি শত অনুনয় করেও কাউকে বুঝাতে পারতাম না যে আমি নিজের ইচ্ছাতেই রাজনীতিবিদ্যা পড়তে চাই।

কাজেই আমার লুকিয়ে লুকিয়ে কাউকে না জানিয়ে আমেরিকা যাবার জন্য স্যাট পরীক্ষা দিতে হয়েছে এবং চোরের মতন দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এপ্লাই করতে হয়েছে।

বিশ্বাস করুন-আমি একটিবারও বলতে চাইছিনা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কোন অংশে খারাপ। বরং আমার দৃষ্টিতে বিশ্বের যেকোন ইউনিভার্সিটির চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি ভালো আর আমি সারাজীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেয়েছি এবং যদি সবকিছু ঠিক থাকে একদিন আমি আমার পিএইচডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কমপ্লিট করার চেষ্টা করবো।

কিন্তু বর্তমানে আমার স্বপ্নটুক বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আমার বিদেশ চলে যাবার চোরা পথ অবলম্বন করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা। আমি জানি আমি যতই বলিনা কেন যে আমি একদিন ফিরে আসবো-আপনারা কেউ সেটা বিশ্বাস করবেননা এবং আমাকে বলবেন যে সবাই এরকম বলে আর আমার পিঠের পিছনে আমাকে আমেরিকার দালাল ডাকবেন। আমি কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না যে আমার মতন একজন পাগলা বাংলাদেশীর কাছে এই কথাগুলো কি পরিমাণ বেদনার সৃষ্টি করে-আর আমি আসলে কাউকে বলতেও চাইনা।কারণ,আমি নাহয় একজন চোর হিসেবে চোরাই পথে পিছলে বের হয়ে গেছি। কিন্তু যারা বের হতে পারেনি,তাদের কি হবে?

আমার খুব ভয় হয় যে আমি ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় বসে শুনবো যে আমার প্রিয় বন্ধুরা নিজেদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে না পেরে একেকজন আত্মহত্যা করে বসেছে। এবং আমার আরো ভয় হয় কারণ আমি জানি যে যারা আত্মহত্যা করেনি তারাও আসলে জীবন্ত নেই এবং তারা জিন্দা লাশের মতন জম্বিফাইড হয়ে ঘুরছে। অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে জীবন ব্যর্থ-এই আপ্তবাক্য বারবার শুনতে শুনতে তাদের আসলেই মনে হচ্ছে যে অমুকিয়ান হতে না পারলে বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই।তাদের জীবনে আর কোন আশা নেই,কোন স্বপ্ন নেই।

আমি যদি এখন বলি যে যারা অমুকিয়ান হয়ে গেছে,তারাও অমুকিয়ান হয়ে কোন লাভ করেনি কারণ তারাও দিনশেষে চাকরির জন্য ইতিউতি ঘুরবে আর চমৎকার চমৎকার সব প্রতিষ্ঠানের চমৎকার চমৎকার সব শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে চমৎকার চমৎকার উদ্ভাবনী কাজ করার বা গবেষণা করার সময় কারোই হবে না-তাহলে সবাই আমাকে নৈরাশ্যবাদী বলবে আর বলবে যে আমি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে দেশের সবকিছুকে খারাপ বলি।

কাজেই আমি এর কোনটাই বলছিনা।

আমি শুধু বলছি যে আমাদের শিক্ষার সংজ্ঞাটুকুকে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। শিক্ষিত ছেলেপুলেদের কাছ থেকে আমরা কি চাই সেটাও ভাববার সময় এসেছে। আমি ছোট মানুষ-কাজেই আমার কথার গুরুত্ব নেই।গুরুত্বপূর্ণ মানুষের এই বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতন ছিঁচকে বিষয় নিয়ে পড়ে না থেকে বরং শিক্ষাযন্ত্রের একেবারে গোড়ার বোধের দিকে তাকানোর সময় এসেছে।

আসলে না,আমি এতো কঠিন কথার কিছুই বলতে চাচ্ছিলাম না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছিলাম যে আগামী ছয় মাসের মধ্যে যে আমার অনেক অনেকগুলো কাছের বন্ধু বান্ধবী আত্মহত্যা করবে অথবা নিজের স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসকে গলা টিপে খুন করবে-সেটা ভাবতে গেলে আমার গা শিউরে উঠছে।

সবাই আমার নামে আরো একটি অপবাদ দেয় যে আমি নাকি খালি সমস্যার কথা বলি,সমাধানের কথা বলিনা। আসলে আমি সমস্যার কথা বলি কারণ আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করার জায়গাটিই প্রথমত মারাত্মক ভুল-তাই সেটা আগে ঠিক করার কথা বলি। তবু এবারে বলা সমস্যাগুলোর হালকা সমাধানের কিছু উপায় আমি জানি কারণ এই সমাধানের উপায়গুলো আমি অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে করতে দেখেছি।

আমি আসলে কখনই বলিনি যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে মেধা যাচাইয়ের মান খারাপ কারণ আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতন জ্ঞান নেই এবং জ্ঞানী লোকদের কাছে শুনেছি যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালই মানসম্মত। কিন্তু আমার দুঃখের জায়গাটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বর্ণভেদ। একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনমতে হেঁচড়ে পাঁচড়ে একবার ঢুকে পড়তে পারলেই তার মান অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রের চেয়েও ভালো-এখানে আমার সমস্যা। আমার জানামতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাঝে ক্রেডিট ট্রান্সফার বলে একটা ব্যাপার আছে যেখানে একটি ইউনিভার্সিটিতে অসাধারণ রেজাল্ট করে সেই রেজাল্টের উপর ভর করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যায়। এই উপায়টি যদি আমাদের দেশে থাকতো তাহলে হয়তো ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে পরিমাণ ভয়াবহ মানসিক অত্যাচার যজ্ঞ রয়েছে তার কিছু হলেও কমতো কারণ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না পেলেও পরে ট্রান্সফার নিয়ে আসা যাচ্ছে।

আমি আরও মনে করি যে আসলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার দিকে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত কেননা ইউনিভার্সিটির সংজ্ঞাই হল এমন একটি জায়গা যেখানে নতুন নতুন উদ্ভাবন আর গবেষণা হবে-আর সেটা না হলে সেটি হয় একটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না। আমার মনে হয় যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আদতেই আরো একটু বিশ্ববিদ্যালয়-ইশ হওয়া দরকার।গবেষণা খাতে অর্থবরাদ্দ বাড়ানো দরকার আর গবেষক এবং শিক্ষকদের সরকারী পর্যায়ে মর্যাদাবৃদ্দি দরকার।তাহলেই তথাকথিক অর্থকরী বিষয়াবলি বাদে অপরাপর বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ ট্যাবুটি রয়েছে-সেটি ভেঙ্গে যাবার একটি সম্ভাবনা থাকে।

আমি জানিনা আমি কথাগুলো ঠিক বললাম কিনা-কারণ আমি আসলেই অনেক কিছু জানিনা। যা কিছু বললাম,সবকিছুই সভয়ে,সবিনয়ে বললাম এবং এর কোনটাই বেদবাক্য নয়-কেবল আমার নিজের উপলব্ধি।

তবে যে কথাটিকে আমি বেদবাক্যের মতন ধ্রুব বলেই মনে করি সেটা হলো লেখালেখি করে আর বাচ্চাদের নিয়ে বাচ্চাবিদ্রোহ করে কিছু হয়না এটি একটা ডাহা মিথ্যে কথা আর যে-ই মনে করুক না কেন প্রশ্ন করে আর চিন্তা করে কেউ দুনিয়া উল্টাতে পারবে না সে অত্যন্ত বিপথগামী। কারণ পৃথিবীতে যতবার পরিবর্তন এসেছে-প্রশ্ন করা আর চিন্তা করা মার্কা বাচ্চাদের থেকেই এসেছে। আমি লিখে দিতে পারি যে যেসব বাচ্চারা এই বাচ্চাটির বাচ্চা বাচ্চা কথা পড়েছে-তারা একদিন এমন অবস্থায় যাবে যেখান থেকে আসলেই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করা যায় আর তখন দেখবেন এই বাচ্চাবিদ্রোহ থেকে আসলে কোন লাভ হয়েছে কি হয়নি।

আমি অনেক আশাবাদী। আমার বন্ধুরা আমাকে অতি আশাবাদী বলেও গাল দেয়। তাই আমি আসলেই আশা করি যে যারা আমার লেখাগুলি পড়েন তারা আসলেই একবার দুইবার সেগুল নিয়ে ভাবেন এবং আরো আশা করি যে ভেবে তারা আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো কিছু সমাধান বের করতে পারবেন। আমি এটাও জানি যে সেই সমাধান বের করে একদিন সেটা প্রয়োগ করে দেখাবে আর আমাকে বলবে-কই তুই না বলসিলি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কোন ভালো মানুষ বের হয়না,আমি তাহলে কোত্থেকে বের হলাম?

তখন আমি মিনমিন করে একটু প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে যাবো আর বলবো-আসলেই দোস্ত!আমি খুব ভুল কথা বলতাম।

কিন্তু এতো ভুল কথা বলে আমার থেকে সুখী বোধহয় এই জগতে কেউ কখনো হয়নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.