![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ছোটবেলায় কৃমির সমস্যা ছিলো। ছোটবেলায় এতো বেয়াড়া ছিলামনা,মায়ের কথামতন কৃমির ওষুধ খেতাম। কিন্তু মাতৃসত্যও বিদঘুটে স্বাদের এত্তোবড় কিরমির ওষুধ চুষে চুষে খেয়ে ফেলার পক্ষে যথেষ্ঠ ছিলো না। কাজেই মাতৃসত্যের সাথে ফ্লেভার যোগ করা লাগলো-কমলা ফ্লেভার। কমলা ফ্লেভারের কৃমির অষুধ কিনে আমার পরে আমি সারাদিন ইচ্ছামতো কৃমির ওষুধ খেতাম-তখন আমাকে কৃমির ওষুধ খাওয়া বন্ধ করানো ছিলো আরেক কঠিন কাজ।
যদি আপনি আমার কৃমির ওষুধ খাবার সাথে মুনীর চৌধুরীর কালজয়ী নাটক রক্তাক্ত প্রান্তরের মিল খুঁজে না পান-তাহলে আমার এখন আপনাকে একজন লেখকের পরোক্ষ একটা দায়িত্ব বুঝাতে হবে। লেখকের প্রত্যক্ষ দায়িত্ব অবশ্যই আনন্দ দান কিন্তু একজন লেখক যখন মুনীর চৌধূরী পর্যায়ে সামাজিক প্রভাববিস্তারের মতন ক্ষমতা রেখে ফেলেন তখন তার আরেকটা প্রচ্ছন্ন দায়িত্ব থেকে যায়-সেটি হলো গোটা জাতিকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো।
যখন এই নাটকটি রচিত আর মঞ্চায়িত হয়েছিলো তখন ১৯৬২ সাল। তখন বাঙালি ছিলো পূর্ব পাকিস্তানি। জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতিতত্ত্ব-অর্থাৎ হিন্দু মুসলিম আলাদা জাতি এই লেলিহান ধারণায় সবাই মোটামুটি বিশ্বাসী আর এই দ্বিজাতিতত্ত্বের কৃমির আক্রমণে বাঙ্গালির শতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য মোটামোটি মৃতপ্রায়। এরকম একটা পরিস্থিতিতে মুনীর চৌধুরীর মতো মানুষতো আর বাঙ্গালিকে কৃমির ওষুধ না খাওয়ায়ে থাকতে পারেনা-তাইনা?
কিন্তু বাঙালি কি আর কৃমির ওষুধ খাইতে চায়? সেই পরিস্থিতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সরাসরি বললে মুনীর চৌধুরী সাথে সাথে ধর্মদ্রোহী ট্যাগ খাবে। তাতে অবশ্য মুনীর ভাইয়ের কিছু আসে যায়না সেইটা প্রমাণ করেছে কিন্তু ফর দ্য মিনটাইম বাঙ্গালিকে কৃমি দূরীকরণ ঘোলাজলে পড়ে যায়। কাজেই মুনীর চৌধুরী ঠিক করলেন-ঠিকাস! আমি ওরা যায় ওদের তাই দিবো! ওরা ঘৃণা চাইলে ঘৃণাই পাবে কিন্তুক আমি ঘৃণায় মোড়ায়ে কৃমির ওষুধটা ঠিকই খাওয়ায় দেবো।
রক্তাক্ত প্রান্তর উপন্যাসটি এই কৃমির ওষুধটা ঘৃণায় মোড়ায়ে খাওয়ায় দেয়ার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না। কারণ দেখেন-শুরু হচ্ছে বশির আর রহিম নামের দুই প্রহরীর কথা দিয়ে যাদের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে হিন্দু মারাঠারা কতো বড় কুত্তার বাচ্চা!হিন্দু মারাঠাদের সাথে হাত মিলানো ইব্রাহিম কার্দি আরো কত বড় কুত্তার বাচ্চা আর সব মারাঠা মরে গেলেও কেমনে তার জন্যে অপেক্ষা করে তারে কোপায়ে দেয়া দরকার।
যেই প্রহরীরা এই কথাগুলো বললো-বাঙ্গালি বললো-ঠিকই তো! হক কথা কইসে। ল দেহিতো-এর পরে কি কয়!
এইযে মুনীর ভায়া পায়া গেলেন বাঙ্গালির এটেনশন-লে এন্ট্রি দ্য গ্রেট আতা খাঁ ওরফে অমরেন্দ্রণাথ বাপপাজি। যে যত যাই বলুক-রক্তাক্ত প্রান্তর উপন্যাসের জেমস বন্ড কিন্তু আতা খাঁ। শুধু যে দুইজনই স্পাই সেইজন্যেই না পুরা গেটাপ-সেটাপ সব জেমস বন্ড!
দ্বিতীয় অংকের প্রথম দৃশ্যে সুজাউদদ্দৌলা যখন জিজ্ঞেস করে-
তুমি কে?
আতা খাঁর উত্তর-জ্বি! চর-আমি গুপ্তচর!
পুরাই The name is Bond.James Bond.
আমার মনে হইসে পুরা নাটকে সবচেয়ে বেশি ডেভেলপড ক্যারেক্টার হলো আতা খাঁ আর মোটামোটি আতা খাঁয়ের চরিত্রই পুরা নাটকের লুকানো ছুপানো কৃমির বড়িকে আস্তে আস্তে গেলানো শুরু করে।
দেখেন ভাই-সে এক ছদ্মবেশী-একবার হিন্দুর ছদ্মবেশ ধারণ করে-একবার মুসলমানের ছদ্মবেশ ধারণ করে। তার এই ছদ্মবেশ ধরা ছাড়ার দিকে একটু খেয়াল করলেই বুঝে ফেলা যায় তার এই চরিত্রের কালিক পরিবর্তনটা দেশভাগ পরবর্তী বাঙ্গালির হিন্দুস্তান-পাকিস্তান দ্বন্দের সাথে যথেষ্ট সাযুজ্যপূর্ণ।
সে জন্মগতভাবে মুসলমান-সংস্কৃতির শিক্ষা সে নিয়েছে বিন্ধ্যগিরির গুরুদেবের আশ্রমে। সে মুসলমান বিজয়ের জন্যে মুসলিম শিবিরে সংবাদ বয়ে আনে-মারাঠা শিবিরে গিয়ে ভালোবাসে মারাঠাকন্যা হিরণকে। হিরণও আবার জানে যে আতা খাঁ আসলে অমরেন্দ্র না-তবু সে বলেঃ
আমি তোমাকে ভালোবাসি আতা খাঁ!
কেউ কি বুঝতে পারছে-যে কি সূক্ষ্মভাবে মুনীর ভাই আন্তধর্ম প্রেমের মতন একটা স্পর্শকাতর বিষয়কে পুরো হিরোয়িক পর্যায়ে তুলে দিল আর আমাদের শিক্ষাবোর্ড সেটাকে পাঠ্যও করলো কারণ শিক্ষাবোর্ডের লোকজন তখন দিলীপের মাতলামি নিয়ে হাসাহাসি করতে ব্যস্ত।
এইদিকে মুনীর ভাই যে তাদের আরেক ঘোল খাওয়ায় দিসে-তারা তো টের পায়নাই।
আচ্ছা, আরেকটু পরিস্কার করার জন্যে মুনীর চৌধুরীর ধর্মসংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে ভয়াবহ চাতুর্যের একটা ছোট্ট উদ্ধৃতি দেই।
হিরণ। তুমি পশু,সে দেবতা
দিলীপ। আমি হিন্দু, সে যবন
এখানে আগে মানবিক গুণটা তুলে ধরে সেটার থেকে আলাদা করে ধর্মের বৈশিষ্ট্যটা তুলে ধরে দেখায়ে দেয়া হল যে মানবিক গুণটা ধর্ম থেকে আলাদা।
এখানে যদি আগে দিলীপ বলতো আমি হিন্দু সে যবন আর হিরণ তারপর বলতো তুমি পশু সে দেবতা-তাইলেই হইসিলো! মনে হইতো যে হিন্দু হইলেই দেবতা হয় আর মুসলমান হইলেই পশু হয়-লাইগে যাইতো এইটা নিয়ে আরেকটা দাঙ্গা।
ভাই বুঝতেসেন-কোন সময়ে ব্যাটা কি নিয়া লিখসে? অথচ সরল পাঠক এইগুলা খেয়ালই করবেনা! তারা তো ছেলেরূপী মন্নুবেগকে চেক আউট করতে ব্যস্ত!
আর করবে না-ই বা কেন? যেই প্রহরী বশির আর রহিম তখনও জানেই না যে মন্নু আসলে মেয়ে-তারা ওরে ছেলে ভাইবাও চেকআউট করতে বাদ রাখেনাই। কইরে দিসে চেক আউট!
-বেশি কচি! বেশি টুকটুকে! চোখ মুখ ভুরু একেবারে আওরতের বাড়া। আমি একবার তাকালে আর নজর ফেরাতে পারিনা!
খাইছে আমারে! এই ডায়ালগ দিয়ে তো রীতিমতো ইভটিজিং করে ফেলা যায়।
আসলে মুনীর চৌধুরীর মুন্সিয়ানাটা এই জায়গাতেই-তিনি যখন দেখলেন-মেয়ে দেখলে চেকআউট হবেই-তখন নিজেই ধইরে মেয়েটার চেক আউট করায়ে দিলেন কিন্তু পরক্ষণেই একটা রোল মডেলও বানায়ে দিলেন। নারীর ক্ষমতায়নও করে দিলেন।
-আর বিউলির প্রান্তরে যারা মন্নু বেগকে লড়াই করতে দেখেছে তারাও ভুলতে পারবে না।যেসব মারাঠার মাথা তলোয়ারের এক খোচায় মন্নু বেগ মাটিতে লুটিয়ে দিয়েছে তাদের মরা চোখও মন্নু বেগের রূপকে ভুলবে না।
আমি জানি এখানে তাও ঠিকঠাক নারীর ক্ষমতায়ন হয়নাই-পুরুষ সেজে কেন নারীর যুদ্ধ করতে হবে হ্যানোত্যানো। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করা দরকার-আবাদলী থেকে শুরু করে সুজা,নজীব সবাই কিন্তু আসলে জানতো যে মন্নু আসলে মেয়ে।তবু তাকে যথাযোগ্য সম্মান করা হচ্ছিল।
আর নজীব লুইচ্চার কথাতো বাদই দিলাম।ওই হালা তো মন্নু বেগের উপর ক্রাশ খায়া বয়া আছে!
কিন্তু মন্নু বেগের উপর কে ক্রাশ খাবেনা ভাই? মন্নু বেগের উপর ক্রাশ খাওয়া আমাদের জাতীয় কর্তব্য। আসলে মন্নু বেগ নামক আসমানী চরিত্রে মুনীর চৌধুরী সেটাই করতে চাইসিলেন। আদর্শ নারীর একটা নিজের মতন চিত্র আঁকতে চাইসিলেন। প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে যখন ইব্রাহিম কার্দি জোহরার ছবি দেখে হর্নি হচ্ছিলো সেখানের দুইটা ছবিতেই জোহরা ওরফে মন্নুর আসল রূপ ফুটে ওঠে। একদিকে মায়াময়ী নারী যে কিনা বলে-'আমি নারী! আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্বজয় করবো'-আবার বিশ্বজয় করার জন্য প্রয়োজনে পিতৃসত্যের কসমে তরবারী হাতে রুদ্রপ্রখর সংহারী মূর্তি তার আরেকটা রূপ। আসলে মুনীর চৌধূরী এখানে এটাই দেখাতে চাইসেন যে আদর্শ নারী-ধুরু-কিয়ের আদর্শ নারী? আদর্শ মানুষই এরকম। একদিকে কোমল-একদিকে কঠোর। ভালোবাসায় কোমল-নিষ্ঠায় কঠোর। রক্তাক্ত প্রান্তরের কোন পুরুষ চরিত্রকে আমরা এতো অসাম হইতে দেখিনাই। তারা খালি কঠোরই হইতে পারে-কোমল হইতে গেলে তাদের পুরুষদন্ডে ব্যাথা হয়।
আর মন্নুবেগ তো অসাম বটেই-মন্নুবেগের ভালোবাসার স্টাইলও অসাম। এইযে সে ইব্রাহীম কার্দিকে ভালোবাসে-কারণটা কিন্তু ইব্রাহীম কার্দির কুলনেস। এইযে সে কুলনেস দেখায়ে দায়িত্ব ছেড়ে স্বজাত্যবোধের জন্যে বিশ্বাসঘাতকতা করেনাই-এইটা তার হটনেস আরো বাড়ায়ে দিসে।
কিন্তুক বেচারা জোহরা করবে কি? সে যেমন মেহেদী বেগের মেয়ে-সে ইব্রাহীম কার্দিরও বউ। সে এক ভয়াবহ দোটানা। সে কি মারাঠা কোপায়ে বাপের শোধ নিবে নাকি মুসলিম কোপায়ে হাবির সাথে থাকবে। নারী মন্নু তৃতীয় উপায় খোজে। বলে,এই ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে চলো পলায়ে যাই-মেহেদী বেগের সম্পত্তিতে গিয়ে খেতখামার করি। কিন্তু তাই কি আর হয়রে পাগলা?
তাইতেই তো মানুষ মন্নুবেগ পত্নী জোহরা বেগমকে ফেলে চলে আসে। এটাই সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার-একটা নারী তার পত্নীত্ব নামক দাসত্বকে ফেলে নিজের ইন্ডিভিজুয়ালিটি রক্ষার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দাঁড়ায়ে গেলো। বাহ মন্নু বাহ!
এই যেমন মন্নু আছে-মন্নুর সাইড নায়িকা হিসেবে হীরণও আছে মোটামোটি নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারা নারী হিসেবে। এদের পুরা বিপরীত চরিত্র হইলো জরিনা। বেসিকালি নাটকের কাহিনীতে জরিনার কোন দরকার ছিলোনা কিন্তু কৃমির বড়ি হিসেবে জরিনার খুব দরকার ছিলো।মুনীর ভাই দেখাইতে চাইসেন যে আসলে বাঙ্গালি নারী কিরকম আর তাদের কিরকম হওয়া উচিত। তবে তবুও বোধহয় ভাইজান জরিনারে একটু বেশিই বিম্বো বানায়ে দিসে। ওইদিকে যুদ্ধের মাঠ গরম-জরিনা বলে আমার খাট গরম করো! এরকম ছাগলামি তো সত্যিকারের ছাগলও করেনা।
মুনীর ভাই বোধহয় বউয়ের সাথে ঝগড়া করে জরিনারে লিখতে বসছিলেন কারণ জরিনার বেকুবগিরি শেষ না। বেকুবগিরির সাথে বদগিরিও আছে। কথা নাই বার্তা নাই ধুপধাপ নজীবরে লুইচ্চা টুইচ্চা ডেকে জোহরা নজীবকে নিয়ে পুরা স্ক্যান্ডাল বানায়ে ফেলসে।
নজীবও আরেক জিনিস! বউয়ের সাথে চ্যাতাচেতি করে আসছে ঠিক-এখানে এসে ঠিকই আবার পুরুষ মন্নু বেগের সাথে ফ্লার্ট মারে!তখনও তবু মন্নুর মাঝে জোহরা জাগ্রত-তার মনে থাকে যে সে বিবাহিত। সুযোগ পাইয়েই সে কার্দির সাথে গোপনে ডেট করতে যায়। যুদ্ধের পরে তার নিজের জানের খোঁজ নাই আগে কার্দিরে খোঁজ! বাহ জোহরা বাহ!
কিন্তু রক্তাক্ত প্রান্তরের ট্র্যাজেডিগত সার্থকতা এইখানেই যে এই নাটকে কোন সুখী চরিত্র নাই। বীর আছে,প্রেমিক আছে-কিন্তু সুখী কেউ নাই।
অনেক অনেক কাহিনী আছে যেগুলা পড়ে মনে হবে বাহ-কার্দি বাহ! কিন্তু কার্দি সুখী না।
অনেককিছু পড়ে মনে হবে বাহ হীরণ বাহ! কিন্তু হীরণ সুখী না!
দিনশেষে কেউই সুখী না।
খালি সুজা দি দার্শনিক সুখী। কারণ তার তো কিছুতে কিছু আসে যায়না। সে তো মরে গেলে পচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়। আবার বলে কারণে অকারনে বদলায় আর সকালে বিকালেও বদলায়। কাজেই সে যুদ্ধের মধ্যে দাবা খেলায় জিতে পার্টে উঠে। জোহরা মরে কার্দি বাইচা আছে নাকি সেই টেনশনে-এই হালার পুত তখন জ্ঞান মারে যে মরে গেলেই ভালো হইতো। জোহরা মাত্র টের পাইসে যে কার্দি মরসে-এই হালা উপরের ফরমান নিচের ফরমান নিয়ে দার্শনিক উক্তি মারে। আমার খালি মনে হয় কেউ হারামিরে কোপায়না ক্যারে? সব মরে-তাও শালা বুদ্ধিজীবীগুলা মরে না!
তবে যত জ্ঞানই ঝাড়ুক না কেন-আমার মতে নাটকের সবচেয়ে অসাম ডায়লগ সুজা মারতে পারেনাই। মারসে মন্নুবেগ- ছদ্মবেশ!সব ছদ্মবেশ! বিশ্বাস করো-সব ছদ্মবেশ!
এই উক্তিটা ভয়াবহ। পুরো নাটকের ঐতিহাসিক তাৎপর্য-রোমান্টিক তাৎপর্য-ট্রাজিক তাৎপর্যের উপরেও এই একটা উক্তি উঠে যায় শুধু ফিলসফির তাৎপর্যে। কে ছদ্মবেশ ধরেনা? আতা খাঁ আর জোহরারটা নয় দেখা যায়-কার্দির টা? কার্দিও কি ছদ্মবেশ ধরেনা?
মারাঠার সেনাপতি কার্দি কি আসলে অন্তরে মারাঠার সেবক নাকি-ভালোবাসার দাস? হিরণ কি সত্যিই বলেনি-পুরুষেরা বড়ই প্রবঞ্চক।অন্যের সাথে তো করই,নিজেকেও প্রবঞ্চনা করো।
এইযে কার্দির ম্যানলিনেসের মিথ্যা একটা পর্দা-একটা ইলিউশন এইটাতে তার কি লাভ হলো? সে যে কুঞ্জরপুরের দূর্গ জয় করে আনন্দে বিহ্বল হয়ে উদযাপন করবে তখনও তার মনে জোহরা। জোহরার উপরে জেদই যেন তার ঝরে পড়ে কন্ঠে। ত্রিশূল বাহিনী যখন চূড়ান্ত আক্রমণের জন্যে আগাচ্ছে তখন ত্রিশূলের এক শূলপতি আসছেন ডেট করতে। এইটা কি নিষ্ঠাবান মারাঠা সেনাপতি-নাকি আরেক ছদ্মবেশ?
সুজা বলে-মুখোশ কে না পরে?মন উদোম করে চলে এমন বীর ক'জন আছে?
সত্যিই তো।যারা মন উদোম করে চলে তাদের জন্যে শেষে কিইবা পড়ে থাকে। অমরেন্দ্রর মুখোশ খুলে আতা খাঁ টেনে আনে মৃত হীরণের লাশ।
মন্নু বেগ জোহরা বেগম হয়ে স্বামীকে খুঁজে পায় মৃত্যুর কোলে।
এরচেয়ে বোধহয় মুখোশই ভালো ছিলো।এরচেয়ে হয়তো ছদ্মবেশই ভালো ছিলো।
কাজেই রক্তাক্ত প্রান্তরের শিক্ষা আর কিছু নয়-রক্তাক্ত হৃদয় না চাইলে- জীবন নামক ল্যাবরেটরীতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
©somewhere in net ltd.