নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩০ দিনের ইংরেজি আর ১০০% কমনের নিশ্চয়তা

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

ধরেন কেউ একজন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে আমেরিকায় গিয়েছেন কোন জটিল কূটনৈতিক ব্যাপারে আলাপ করবার জন্যে।

আমেরিকান কূটনৈতিক জটিল কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমস্যার কথা বলতেই বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত বললেন-ভাই থামেন! আপনার কথা আমি কিছু বুঝতেসিনা।দয়া করে এই কাগজটাতে লিখে দেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত তখন কথাবার্তাগুলো একটি কাগজে লিখে দিলেন আর তাই দেখে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত নাক কুঁচকে বলবেন, উফ! আপনি এইখানে রাইট ফর্ম অব ভার্ব ব্যবহার করেননাই-এইখানে টেন্সে সমস্যা আর এইখানে একটা ট্যাগ কোয়েশ্চেন ব্যবহার করলে ভালো করতেন।

আপনারা যারা মনে করছেন যে আমি বরাবরের মতোই অতিনাটকীয়তা করছি-তাদের বলে রাখি যে এরকমটাই হবার কথা কেননা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যে বারো বছর ধরে ইংরেজি পড়ে সে আসলে ইংরেজির কঠিন কঠিন ব্যকরণ শিখে ফেলে যার অধিকাংশই কিনা এখন খোদ ইংরেজরাই মেনে চলেনা-কিন্তু আমাদের মোটেই একবর্ণ ইংরেজি বলতে বা শুনে বুঝতে শিখায় না।ইংরেজী শিক্ষা নিয়ে যে-ই একটু নাড়াচাড়া করেছেন,সে-ই জানেন যে ইংরেজী শিক্ষার চারটি অংশ-রিডিং,রাইটিং,স্পিকিং আর লিসেনিং। আমরা সবাই মিলে বিপুল বিক্রমে রিডিং আর রাইটিং তো সেই ছোটবেলা থেকে বিপুল বিক্রমে শিখে ফেলেছি-কিন্তু কেউ স্পিকিং আর লিসেনিং নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কাজেই দ্রুতগতিতে ইংরেজি শুনে আমাদের মাথা ঘুরে যায় আর কথা বলতে গেলে আমরা গ্রামার আর টেন্স ভুল করার ভয়ে পুরাই টেন্স হয়ে যাই।

তবু যারা মনে করছেন যে সমস্যা নাই-আমার মতন উল্লুককে কেউ রাষ্ট্রদূতের চাকরি দেবেনা এবং যাকে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দেয়া হবে সে হবে যথাযথ ইংরেজি বুঝতে এবং বলতে পারা একজন মানুষ।কিন্তু মজার প্রশ্নটি হচ্ছে-এই মানুষটি আসবে কোথা থেকে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তো এরকম মানুষ সৃষ্টির কোন সুযোগ দেখিনা। এমনকি ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি ভার্শনেও আমি কোনদিন স্পিকিং আর লিসেনিং এর চর্চা হতে দেখিনি। তাহলে হয় এই মানুষগুলো সবাই এ লেভেল-ও লেভেল পড়েছে অথবা আমার মতন পড়াশুনা না করে দিনরাত ইংরেজি সিনেমা দেখেছে।

তাহলে কি কেউ বুঝতে পারছেন যে চাকরির সময়ে যখন ইংরেজি বলতে ও বুঝতে পারার একটা পরীক্ষা নেয়া হয়-তখন কি অসম একটা প্রতিযোগিতার মাঝে পরীক্ষার্থীদের ফেলে দেয়া হয়? যে নিম্নবিত্ত ঘরের মানুষটি বাংলা মিডিয়ামের খুব অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো এবং যার কিনা পড়ালেখায় অতিমনোযোগী হবার জন্যে হোক আর সুযোগের অভাবে হোক-খুব একটা ইংরেজি সিনেমা দেখা হয়নি-তার এই পরীক্ষাগুলোতে ভালো করার উপায় কি? আপনারা তো খুব সহজে তাকে গাইয়া এবং খ্যাত বলে বাতিল করে দেবেন-কিন্তু সেই অদম্য মেধাবী তো হার মানবে না।তাকে তো চাকরিটা পেতেই হবে।

তখনই সে বাজারে গিয়ে ৩০ দিনে ইংরেজি শিক্ষার প্যাকেজ নামের কোন একটা কোচিং সেন্টারের খোঁজ করে এবং আশাহত হয়না কারণ শত শত কোচিং এই অফারের ঝাপি খুলে বসে আছে। আর শুনেছি এবং দেখেছি যে এর অনেকগুলোতে নাকি কাজও হয়। মানুষ নাকি এখান থেকে সত্যি সত্যি স্পোকেন ইংরেজি শিখে ফেলে চাকরি টাকরিও পেয়ে ফেলে। পাচ হাজার জনের যে বিরাট লিস্টি কোচিংগুলা ফলাও করে প্রচার করছে তাদের মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার তো সত্যি!

কিন্তু আমরা সবাই মিলে এই কোচিংগুলার ওপর মহাখাপ্পা। তার প্রথম কারণ হলো এই যে তারা খুব দারুণ একটা ব্যবসা করছে এবং তাদের পণ্যটি হলো শিক্ষা। আমরা সেবক জাতি-তাই শিক্ষা ব্যাপারটি আমাদের কাছে একটি সেবা। কেউ এই শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করলে সেটি আমাদের জন্য ভয়াবহ আপমানের ব্যাপার।

কিন্তু যখন একটা সেবার একটি আর্থিক বাজারমূল্য থাকে এবং সেই বাজারমূল্যটির চাহিদা সেবাটি সেবার গুণগত মান বজায় রেখে পূরণ করতে পারে না-তখন সেবাটি পণ্য হয়ে যেতে বাধ্য।

একটা জিনিস পণ্য হবে আর পুঁজিবাদে সেটা নিয়ে ব্যবসা হবে না-এটা খুবই আজাইরা চিন্তাভাবনা।কাজেই যদি শিক্ষা পণ্য হয়ে গিয়ে থাকে-তার জন্য সেই পণ্য নিয়ে ব্যবসাকারীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই-দোষটি শিক্ষাগত সেবার অপূর্ণতায়।

আমাদের দেশের সেবামূলক শিক্ষাখাত হচ্ছে সরকারী জাতীয় শিক্ষাক্রম-সেই জাতীয় শিক্ষাক্রমে ইংরেজি শিক্ষার ক্লিয়ার কাট অপূর্ণতা রয়েছে। সেই অপূর্ণতা যখন বাণিজ্যিক শিক্ষাখাত বা এ লেভেল-ও লেভেল থেকে সেবামূলক শিক্ষাখাতকে পিছায়ে দেয়-তখন জাতীয় শিক্ষাক্রমের সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কোচিং সেন্টারের আবির্ভাব হওয়া স্বাভাবিক।

আমি বুঝতে পারিনা কেন স্বাধীনতার চার দশকের মাঝেও কোন সরকার কেন ইংরেজী স্পিকিং আর লিসেনিং নিয়ে কাজ করেন নাই। অথচ এই ব্যাপারটির সমাধান কিন্তু খুবই সহজ। আপনি ইংরেজিতে অন্যান্য বিষয়ের মতন একটি ব্যবহারিক অংশ নিয়ে আসেন যেখানে কিনা তাদের লিসেনিং আর স্পিকিং পরীক্ষাটি হবে। একশো মার্কের ইংরেজি পরীক্ষাকে পচাত্তরে নিয়ে আসেন-বাকি সব সাবজেক্টের মতন। যখন স্পিকিং আর লিসেনিং এর পরীক্ষাটি হবে তখন অটোমেটিকালি এগুলো শিখানোও হবে।

কিন্তু আমরা তো সেটা করবো না! আমরা বরং কোচিংওয়ালা আর কোচিংযাত্রীদের নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে সেমিনারে লেকচার দিবো! ভাই-নৈতিক অবক্ষয় কারো সাধে হয়না। কারো নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে গাল না পেড়ে বরং সেই নৈতিক অবক্ষয়টার কারণের দিকে লক্ষ্য দেয়া বেশি দরকার।

প্রশ্ন হলো-কোচিংয়ে কারা যায় আর কারা যায়না?

উত্তর হলো সবাই যায়। জাতীয় শিক্ষাক্রমে পড়াশুনা করে এমন সবাই কখনো না কখনো কোচিং করেছে এবং যারা কোচিং করেছে কারণ সবাই করে। তবে আমি এমন অনেককেই চিনি যারা এর পরেও গোঁ ধরে কোচিং করেনা এবং তারা সাঁতার কেটে স্পিডবোটের সাথে প্রতিযোগিতা করার সাহস রাখে আর অনেক সময় জিতেও ফেলে এবং তাদের সাধুবাদ।

তবে আমি আবার এমন এক গ্রুপকে চিনি যারা কোচিং করেনা কারণ তারা কোচিং করার মতন সময়ই পায়না। তারা সারাদিন স্কুল কলেজেই এতো পড়াশুনা করে যে বাকি সময়টা তারা অন্যান্য কাজ করে এবং আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমনই হওয়া উচিত যাতে কারো কোচিংয়ে যাওয়াই না লাগে-পড়াশোনাগুলা পড়াশুনা করার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেই হয়ে যায়।

কোচিং যখন সেবামূলক শিক্ষাকে হারায়ে দেয়-তখন আমাদের মাঝে যদি কোচিং বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়-তাহলে সেটা ভুল সমাধান কারণ আপনি এতো চমৎকার একটা মূলধনবিহীন ব্যবসাকে চাইলেই বন্ধ করে দিতে পারবেন না। তারচেয়ে বরং আমাদের উচিত স্কুল কলেজের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে কোচিংয়ের চেয়ে বেশি মানসম্মত পড়াশোনা স্কুল কলেজে করানোর চেষ্টা করা দরকার। কোচিংবিরোধীদের ভাষায় কোচিংয়ের 'চ্যাংড়া প্যাংড়া' পোলাপান কি এমন পড়ায়ে ফেলে যে আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষকরা তার চেয়ে ভালো পড়াতে পারবে না?

আসলে তারা পারবে এবং তাদের সেই পারাটাকেও তারা পণ্য হিসেবে বিক্রি করার চেষ্টা করেন এবং নিজেরাও কোচিং খুলে ফেলেন। কাজেই প্রতিযোগিতাটা হয় পোলাপানের কোচিং বনাম স্যারদের কোচিং। কাজেই যেই জিতুক-কোচিং ই জেতে। প্রতিযোগিতাটা হয়ে যায় পণ্য বনাম পণ্য-কাজেই পণ্য জয়যুক্ত হয়। শিক্ষা আর সেবামূলক থাকে না।

এখন আমি যদি বলি কোচিং বন্ধ করানোর উপায় হলো শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করে শিক্ষকদের বেতন বাড়ায়ে দিয়ে তাদের এই ইন্সেন্টিভ দেয়া-যে তারা স্কুল কলেজেই ভালো করে পড়াবেন-কোচিং করাবেন না-তাহলে আমার কথা কেউ শুনবে না কারণ আমি ছোটমানুষ আর এইসব বিষয়ে কথা বলার মতন জ্ঞান আমার নেই। আর আমি যদি বলি যে আমরা এতো গরীব না যে আমাদের জিডিপির ছয় শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারব না(যেটা আসলে সরকার একসময় প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে তারা করবে) তাহলে আবার সবাই বলবে যে আমি অতি আশাবাদী। আর আমি যদি বলি যে এই পলিসি চেঞ্জ না করে কোচিংয়ের বিরুদ্ধে চিল্লাচিল্লি করে লাভ নাই-তাহলে সবাই আমাকে বলবে যে আমি নৈরাশ্যবাদী।

কিন্তু সব মিলায়ে কোচিং থাকলে সমস্যাটা কোথায়? আসলে কোচিং থাকলে খুব একটা সমস্যা নেই-যার ইচ্ছা আছে-সামর্থ্য আছে সে একটা বিলাস হিসেবে কোচিং করতেই পারে। কিন্তু কোচিং যাতে কখনো মৌলিক চাহিদা না হয়ে যায়-বা সেবামূলক শিক্ষার বিকল্প হয়ে না যায়।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও কোচিং সেন্টার আছে। স্যাট পরীক্ষার জন্য অনেক বিরাট বিরাট এডুকেশন করপোরেশন কোচিং করায় এবং সেই কোচিং থেকে প্রচুর টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু আমেরিকা আর আমাদের মাঝে শিক্ষাগত ফিলসফির তফাতটা হলো এই জায়গায় যে আমেরিকানদের কাছে শিক্ষা একটি বাণিজ্যিক পণ্য। ওদের দেশে চারদিকে টাকার খেলা-শিক্ষাও অনেকটাই বেসরকারী।ওদের দেশে একটা সরকারী ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেলে যে পরিমাণ খরচ করতে হয় সেইটার জন্যেও একজন সাধারণ নাগরিকের সারা জীবনের সঞ্চয় খরচ হয়ে যায় আর আমাদের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বেতন ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক চা বিস্কুটের খরচের থেকে কম। সেই হিসেবে আমরা গর্ব করে বলতেই পারি যে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সেবামূলক আর সেই দিক থেকে আমরা আমেরিকার থেকে অনেক এগিয়ে।

কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে আগে সেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে ভয়াবহ রকমের বাণিজ্য হয়ে যায় সেইটা আমাদের সাধের সেবামূলক শিক্ষার স্বপ্নকে মাঠে মেরে দেয়।

আমি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক বেশি কথাবার্তা বলে ফেলেছি বলে আর কিছু বললাম না-কিন্তু শুধু বলছি যে যখন একটা পরীক্ষার উপর একটা মানুষের সারাজীবন নির্ভর করে এবং সেইটার প্রস্তুতির জন্যে সরকারী কোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থাকেনা তখন সেটা নিয়ে ব্যবসা হবেই। সেখানে কোচিংগুলোকে দোষ না দিয়ে বরং আমাদের এই বাছাইপ্রক্রিয়াটি নিয়ে আরেকবার ভাবনাচিন্তা করা উচিত।

আমাদের শিক্ষা আজকে পণ্য হয়ে গেছে-কিন্তু সেইটার দোষটা আমরা বাণিজ্যকারীদের দিয়েই ভুলটা করছি। সরকার যখন শিক্ষাকে একটা পণ্য বানায়ে দিয়ে একটা অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে তখন শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা হতে বাধ্য এবং বরং এই ব্যবসাটিই একটি আপাত সমতার সৃষ্টি করছে।

তাই আমরা বরং কোচিং নামক বুদোর ঘাটে শিক্ষানীতি নামক উদোর পিন্ডি চাপানোর শতবর্ষী বদভ্যাস থেকে বের হয়ে আমাদের সত্যিকারের সমস্যাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। সেবামূলক শিক্ষা আমাদেরকে সারা দুনিয়ার থেকে বেশি চমৎকার করে রেখেছে-সেইটাকে আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করি।

নাহলে আমরা শুধু টেন্সের ভুলই ধরতে শিখবো-বিশ্বদরবারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরা কখনই শিখে উঠবো না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.