নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাপুরুষ হবার সহজ উপায়

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

-মহাপুরুষ হবার সহজ উপায় নামের কোন বই পাওয়া যাবে আপনাদের কাছে?
-জ্বে?
দোকানের লোকটি এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন আমি তার কাছে সোয়া ডজন হাতির শিং চেয়েছি।
নীলক্ষেত বাংলাদেশের বই ভাগাড়।আমার জানামতে এখানে সব বিষয়ের ওপর কোন না কোন বই পাওয়া যায়।চাইনিজ রান্নার থেকে ফরাসি মৃৎশিল্প,সবই এখানে কিছু না কিছু আছে।যে দোকানের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই দোকানেই ‘কঠিন রোগের সহজ হালাল হার্বাল সমাধান’ নামক একটা বই দেখা যাচ্ছে।কৌতূহলবশত আমি কিছুক্ষণ আগে বইটি খুলে আমি ক্যান্সারের মহৌষধ হিসেবে মাকড়শার ডিমের তেলের উল্লেখ পেয়েছি।
-মহাপুরুষ হবার সহজ উপায় নামের কোন বই কি আপনাদের কাছে আছে?
-জ্বে আছে।
প্রথমবার যেবইয়ের নাম শুনে প্রথমবার চোখ ছানাবড়া করে বসে ছিলো,এইবারে সেইটার নাম শুনতেই এক লাফে ছুটে গেলো চ্যাংড়া দোকানদার।এইটা কি নীলক্ষেতের দোকানদারদের মার্কেটিং পলিসি নাকি কে জানে!আমি এর আগে কখনো নীলক্ষেতে আসি নাই।বিস্ময়কর মনে হলেও এটা সত্যি।তিন বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমি অন্যের বই এবং চোথা ফটোকপি করে কাটিয়ে দিয়েছি।আস্ত বই কেনার টাকা হয়নি কখনো।
যাই হোক,আমি আশ্বস্ত হলাম।মঈন কথা ভুল বলেনাই।সে সাধারণত কখনই ঠিক কথা বলেনা।এইবার বোধহয় ভুল করে ঠিক বলে ফেলেছে।সেই আমাকে মহাপুরুষ হবার উপায় সংক্রান্ত কোন বই পাওয়া যায় কিনা,দেখার জন্যে নীলক্ষেতে যেতে বললো।তার উপদেশ আমি কানে তুলতাম না।কিন্তু আর কেউ উপদেশ দিতেই রাজি হলো না।আমি আমাদের ডিপার্টোমেন্টের যতজন জ্ঞানীগুণী মানুষ ছিলো সবাই আমার দিকে হাতির শিং চাহনেওয়ালা হিসেবেই চিহ্নিত করলো এবং এবং উপদেশ দেবার বদলে উপহাস করে ক্ষান্ত হলো।এমনকি দাড়িচুলের জঙ্গল মার্কা আর্টিস্ট,কবি মার্কা ছেলেপুলেরা,যাদের কাছে কুকুরের বর্জ্য সারাগায়ে মেখে রাস্তায় শুয়ে থেকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করার আইডিয়াকে চমৎকার মনে হয়,তারা পর্যন্ত আমাকে পাগল বলে হাসাহাসি করলো।
অবশ্য যে যা-ই বলুক,মহাপুরুষ আমাকে হতেই হবে।
কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় ছাগল মঈনের উপদেশে আমি,বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় ঢ্যাঁড়স(আমি একটু সাদামাটা,বিরক্তিকর,একঘেয়ে,বেকুব টাইপের তো,এইজন্যে আমাকে এই ডাকনাম দেয়া হয়েছে) নীলক্ষেতে মহাপুরুষ হবার ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়েল কিনতে এসেছি।
-এই যে ভাই আপনের বই
দোকানদার আমার সামনে যে বইটা রাখলো সেটি হলো,পৃথিবীর ১০০ মহাপুরুষের জীবনী।
আমি যথেষ্টই বিরক্ত হলাম।এই লোক কি ঠসা নাকি?প্রথমবারে প্রশ্ন বুঝলো না,দ্বিতীয়বারে উলটো বুঝে উলটো বই নিয়ে এলো।ফাজলামো পেয়েছে নাকি?
আমি রাগারাগি করে বইটা ফেরত দিয়ে গজগজ করতে করতে হাঁটা দিতাম,কিন্তু তার আগেই মনে হলো,একদম সরাসরি ম্যানুয়েল বোধহয় পাওয়া যাবে না।তারচেয়ে বরং কেইস স্টাডি করে মহাপুরুষরা যা যা করতো তাই তাই করে মহাপুরুষ হবার চেষ্টা করা যেতে পারে।প্রিয় পদরেখা অনুসরণের মতন মহাপদরেখা অনুসরণ।
সত্তর টাকা দিয়ে বইটা কিনলাম।
-জী ভাই,তাহলে আজ আসি
-জ্বে?
লোকটা বোধহয় আসলেই ঠসা।আবার আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি হাতির শিং চেয়েছি।আমি মহাবিরক্ত হয়ে বললাম, কিছু না।ভাই,আপনাদের কাছে হাতির শিং হবে?
-জ্বে হবে?
-কি?
-জ্বে,নিবেন
আমি অসীম কৌতূহলের সাথে বললাম,কই,দেখান দেখি!
দেখা গেলো দোকানদার আদিভৌতিক ছবিওয়ালা প্রচ্ছদসমৃদ্ধ একটি বই বের করেছে।বইয়ের লেখক অতিবিখ্যাত।কারণ আমার মতন অগাছগাও তার নাম জানে।আমার বয়েসীরা সব নিস্বাস নেবার আগে একবার তার নাম নেয়,পরে একবার।বইয়ের নাম,হাতির শিং।
আমি বইটা উল্টেপাল্টে দেখার চেষ্টা করলাম।আমার বইটই পড়ার অভ্যাস নেই।তবে মোটামোটি যতটুকু বোঝা গেলো তা হলো জনৈক অতিদরিদ্র বিজ্ঞানপ্রেমী স্থুলকায় প্রাইমারী শিক্ষক কোন এক কারণে হাঠাৎ করে সবার মাথায় শিং দেখতে পাচ্ছেন।এবং তিনি কোন এক উপায়ে নিশ্চিত যে এগুলো হাতিরই শিং।এই শিং দিয়ে তারা নাকি একজন আরেকজনকে সর্বক্ষণ গুতাচ্ছে এবং গুঁতাগুঁতির প্রক্রিয়াটি নাকি তারা নিজেরাও টের পাচ্ছেনা।
মহা পরাবাস্তব ব্যাপারস্যাপার।আমার মাথায় ঢুকবেনা।কাজেই আমি বই রেখে হাঁটা দেবার জোগাড় করতেই দোকানদার ডাক দিলো, ‘এ,ভাই!কই জান’
-এইতো যাই মেসের দিকে
-আরে ভাই আপনি কই যান সেইটা দিয়ে আমি কি করবো?
-এইমাত্রই না জিজ্ঞেস করলেন
-আরে ভাই,আমি কইতাসি বইয়ের টাকা না দিয়া কই যান?
-বইয়ের টাকা দেবো মানে?আমি তো বই কিনিনাই!
-ভুগিচুগি করেন ভাই?দোকানে দাঁড়াইয়া পুরা বইডি পইড়া অহন কিনুম না,তাইনা!ভুগিচুগি করবেন না একদম,টাকা বাইর করেন।
আমি এরকম ঝামেলার মাঝে প্রায়ই পড়ি।আমার সামনে আসলে সবচেয়ে দূর্বল নিরীহ মানুষও এডলফ হিটলার হয়ে ওঠে।আমি বোধহয় জন্মকাঙ্গাল।সবার কাছে অত্যাচারিত হওয়াই আমার কর্তব্য।
কাজেই আমি হাতির শিং এবং একশত মনিষীর জীবনী ব্যাগের মাঝে পুরে মেসে পৌছালাম।তবে ১০০ মহাপুরুষের জীবনী পড়তে গিয়ে আমি কনফিউজ হয়ে গেলাম।প্রথম দিকেই এমন এমন সব মহাপুরুষের নাম উল্লেখ করা,যাদের অনুসরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।খালি তাদের মহাপুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলাই আমার মতন অগাছগার কর্তব্য।কাজেই আমি প্রশ্ন তুললাম,এডলফ হিটলার আর নেপোলিয়ান বোনাপার্টের মতন অত্যাচারী একনায়কেরা মহাপুরুষ কিভাবে হয়।
প্রথম যে অনুসরণীয় মহাপুরুষ পাওয়া গেলো,তিনি হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।চমৎকার মানুষ।হ্যাংলা পাতলা লোকটা ফিনিফিনে একটা লাঠি দিয়ে গুতিয়ে ব্রিটিশরাজ খেদিয়ে দিলো।একে অনুসরণ করলে মহাপুরুষত্বের রাস্তা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
কাজেই আমি খাতার মাঝে গান্ধীজীর কর্মকান্ড নোট করা শুরু করলাম।এগুলো ফলো করলেই ইনশাল্লাহ নিশ্চিত মহাপুরুষঃ
১)সামান্য আর্থিক সম্বল।জাগতিক সম্পদের ওপর মায়া ত্যাগ
২)নিজের বস্ত্র নিয়ে বয়ন করে সামান্য বস্ত্র পরিধান।লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র,আভিজাত্য প্রকাশের জন্য নয়।
৩)দীর্ঘ হন্টণক্রিয়া।দিনে তিন চার মাইল করে হাঁটা। এতে দেহ নিরোগ থাকে।
৪)মানুষের কটূ কথার দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের নীতি ও আদর্শে স্থির থাকা।প্রথমে তারা তোমাকে উপেক্ষা করবে,তারপর উপহাস করবে,তারপর তোমার সাথে লড়াই করবে,তারপর তুমি জিতবে।
৫) প্রতিশোধস্পৃহাহীনতা।চোখের বদলে চোখ গোটা পৃথিবীকে অন্ধ করে দেয়।
আমি কাজে লেগে পড়লাম।আর্থিক সম্বল আমার এমনিতেই সামান্য।গান্ধীজী লেভেলের সামান্যই বটে।নিজের সম্বল বলতে কয়েকটা শার্ট প্যান্ট,আরেকটা মোবাইল ফোন।এই!
নিজের বস্ত্র নিজে বয়ন করা নিয়ে ঝামে;লায় পড়ে গেলাম।এখন আমি গান্ধিজী স্টাইলের চরকা কোথায় পাই?ছোটবেলায় গ্রামে মায়ের কাছে ছেড়া কাপড় রিফু করতে শিখেছিলাম।আমার বয়নবিদ্যার দৌড় এতটুকুই।গভীর টেনশনে আমার সারাগায়ের ঘাম বের হয়ে গেলো।দুপুরের খাওয়া উপোস দিয়ে তিন ঘন্টার মতন ভেবে আমি চমৎকার বুদ্ধি বের করলাম।
পাশের রুমের বোর্ডার মূসা সাহেবের একটা ইয়াবড় শার্ট চুরি করে আনলাম।বিবেকে বাধলো,তবু কি আর করা।প্রেমে ও যুদ্ধে সকলই ন্যায্য।
সেলাই জানতাম।ঢোলা শার্ট কেটে সেলাই করে লুঙ্গির মতন বানালাম।নিজের খুব সাধের একটা প্যান্টের মাথা সেলাই করে হাতের কাছে কাঁচি দিয়ে কেটে শার্টের মতন বানালাম।পুরোপুরি নিজের হাতে বোনা না হলেও নিজের হাতে বানানো তো!আমাকে তো আর পুরোপুরি গান্ধীজী হতে হবে না।সোয়া গান্ধী অথবা পৌনে গান্ধী হলেও চলবে।
শার্ট দিয়ে বানানো প্যান্ট আর প্যান্ট দিয়ে বানানো শার্ট পরে যখন আমি রাস্তায় দীর্ঘ হন্টনক্রিয়ার জন্যে বের হলাম তখন রাস্তার লোকজন আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেনতারা হাতির শিং উপন্যাসের মতন করে আমার মাথায় শিং দেখতে পাচ্ছেন।আমি পাত্তা দিলাম না।কারণ গান্ধীজীর শিক্ষা হলো কটু কথায় দমে না গিয়ে নিজের নীতিতে অটল থাকা।কিন্তু রাস্তার টোকাইগুলো যখন পাগল বলে ধাওয়া করে করে পাথর ছুঁড়ে মারতে শুরু করলো তখন আমার ইচ্ছা করলো বিচ্ছুগুলোর ঘাড়ে চেপে ঘাড়টা কট করে মটকে দেই।তবু নিজেকে আটকালাম।প্রতিশোধস্পৃহাহীনতা।ইটের বদলে পাটকেল ছুঁড়ে মারা যেমন নিষিদ্ধ,পাটকাঠির মতো করে ঘাড় মটকে দেয়া নিষিদ্ধ।
তবে রাস্তার পুলিশগুলো বড় বেরসিক। তারা প্রতিশোধস্পৃহাহীনতাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখলো না।আমাকে পাগলে ঠাউরে আমাকে থানায় নিয়ে গেলো।আমি খালি এটুকু বুঝে পেলাম না,পাগলকে ধরে থানায় নেবার কি আছে?পাবনায় পাঠিয়ে দিলে তাও নাহয় মানা যেত-কিন্তু থানা কেন?
আমার কোন কথা না শুনেই যখন আমাকে লকআপে ঢুকিয়ে দিলো,তখন আমি খুব একটা যে মন খারাপ করলাম তা নয়।আসলে ১০০ মহাপুরুষের জীবনীতে দেখেছি,সব মহাপুরুষই জীবনে অন্তত একবার জেলে গেছেন।কাজেই মহাপুরুষত্বের দিকে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে।আনন্দময় ব্যাপার।
আমার লকআপে আমার সাথে আরো একজন মানুষ ছিলো।লোকটি যুবক ধরণের চুল দাঁড়ির জঙ্গল।গায়ে কটকটে হলুদ পাঞ্জাবি।পাঞ্জাবির কোন পকেট নাই।তার পা খালি।সেই লোকই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই,আপনার নাম কি?
আমার নাম সদরুদ্দীন শেখ
সদরুদ্দিন ভাই,আপনাকে আটক কেন করেছে?দাঁড়ান,উত্তর দেবেন না।আমি আমার ইন্ট্যুশন পাওয়ার দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।আপনি কি মহাপুরুষ হবার চেষ্টা করছেন?
আমি হলুদবাবার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হলাম।
আমি বাঙ্গালি।কাজেই হলুদবাবার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে মুহুর্তের মাঝে গান্ধীজীকে ত্যাগ করে হলুদবাবার মুরিদ হয়ে গেলাম।বাঙালি মুরিদ হতে খুব পছন্দ করে।ইতিহাসের আদিকাল হতে আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে মুরিদ হয়ে আসছি।
নিজের বাঙ্গালিত্ব নিয়ে অতিসন্তুষ্ট অবস্থায় আমি হলুদবাবার কাছ থেক জানতে পারলাম যে তিনি আসলে একজন হিমু।আমি যদি আমার লেভেলের অগাছগা না হতাম,তাহলে জানতে পারতাম যে সকল মহাপুরুষদের মাঝে সবচেয়ে মহত্তর মহাপুরুষ হলেন হিমু।কেননা একমাত্র তিনিই মহাপুরুষ হবার স্কুলের থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভকারী।এবং জনৈক লেখক তার যাবতীয় কীর্তিকারখানা একটা ধর্মগ্রন্থের মাঝে লিখেছেন ।সেই ধর্মগ্রন্থসমূহ ফলো করলে হিমু হওয়া সম্ভব ।
মহাপুরুষ হবার এহেন চমৎকার উপায় দেখে আমি হলুদবাবার উপর পুনরায় মুগ্ধ হলাম।একমাত্র হলুদবাবার পক্ষেই এহেন অমূল্য ধর্মগ্রন্থের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।আমার মতন অগাছগারা তো আর এই ধর্মগ্রন্থের খোঁজ পাবেনা।হলুদবাবারা পাবেন।
অবশ্য হলুদবাবার ওপর আমার প্রাথমিক মুগ্ধতা কেটে গেছে।কেননা আমি যে মহাপুরুষ হবার চেষ্টা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছি,সেটা তিনি ঠিক ইন্ট্যুশন থেকে টের পাননি ।তিনি সেটা পেয়েছেন অর্থবলে ।
তিনি অতিবড় বড়লোক ।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দশজন বড়লোকের লিস্ট করলে তিনি নাকি থাকবেন ছয় নম্বরে ।কাজেই তিনি তার ব্যক্তিগত সিকিওরিটি গার্ড বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীকে বলেছেন যাতে মাঝেমাঝে তাকে থানায় ধরে আনা হয়।থানায় রাত না কাটালে নাকি হিমু হওয়া যায়না ।সেই কারণেই এই ব্যবস্থা ।বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে এই দায়িত্ব পালন করছে।সপ্তাহের প্রতিদিন তাকে কোমলভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়,স্যার,আপনার কি আজ গ্রেফতার হবার মুড আছে?যদি তিনি বলেন আছে তবে তাঁকে হাঁটিয়ে থানায় নেয়া হয় ।তার পিছনে হাঁটার স্পিডে আসে পুলিশের গাড়ি। এই পুলিশকে তিনি আরো বলে দিয়েছেন,রাস্তায় যদি তারা এমন কোন মানুষ পান যাদের দেখে মনে হয় তারা মহাপুরুষত্বের সন্ধানে আছে,তাদেরকে যাতে লকআপে নিয়ে আসে এবং তাদেরকে আনার আগে যাতে তাঁকে নিয়ে আসা হয়।যেখান থেকে হোক।শুধুমাত্র এই দিনগুলোতে তিনি পুলিশের জীপে ওঠেন ।অধিকাংশ সময় এ পদ্ধতি কাজ করেনা।অথেনটিক পাগলের সাথে একই লকআপে সময় কাটিয়ে পাগল কামড় খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হলুদবাবার হয়েছে।এরপর থেকে হলুদবাবার মিটিংএর সময় সবসময় বাইরে ফায়ার সার্ভিসের কুইক টিম ও এম্বুলেন্স উপস্থিত থাকে।
তবে মাঝে মাঝে এই পদ্ধতি কাজে দেয় ।এই পদ্ধতিতে হলুদবাবা তারই মতন অনেকজন হিমু খুঁজে বের করেছেন।তাদেরকে নিয়ে গঠন করেছেন নিখিল বাংলাদেশ হিমু সমিতি(নিবা হিস)।
নিবা হিস বহুধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত। এর মাঝে রয়েছে দুস্থ হিমুদের হলুদ পাঞ্জাবি বিতরণ ,হিমু হবার নিয়মাবলি সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা,জোছনারাতে সকলে মিলে পল্টন থানার ছাদে পানির ড্রাম নিয়ে সেই ড্রামে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে জোছনা দেখা এবং আজীবন হিমু থাকার শপথ নেয়া।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড হলো পাখি ফিরে আয় কার্যক্রম।এই কার্যক্রমের আওতায় পথভ্রষ্ট সংসারী হিমুদের প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার গণহারে চিঠি লিখে পাঠানো হয়।চিঠিতে লেখা থাকে পাখি ফিরে আয় এবং হলুদ পাঞ্জাবি পরা একটি কাকের ছবি ।
আমিই সম্ভবত নিবা হিসের প্রথম অহিমু মেম্বার ।কারণ আমি অতি অগাছগা ।অগাছগা না হলে আমি হিমুকে চিনতাম এবং অতি অবশ্যই হিমু উপায়েই মহাপুরুষ হবার চেষ্টা করতাম।মহাত্মাগান্ধী পর্যন্ত কোনভাবেই যেতাম না ।মধূসূদন চমৎকার বলেছেন,দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া...
ভেড়ার পালে বাছুর হওয়া কোন কাজের কথা নয় ।হয় সে রাজা হয় অথবা বান্দী ।আমার রাজা হবার যোগ্যতা নেই।কাজেই আমি হিমু হবার চেষ্টাচরিত্র করতে লাগলাম ।হলুদবাবা আমাকে অত্যন্ত সাহায্য করলেন।হিমু হবার যাবতীয় খরচাখরচ তিনি দিলেন।আসলে নিবা হিসের কাছে সবসময় একটা করে আর্জেন্ট হিমু গেটআপ বানানো থাকে।আমি সেইটাই পেলাম ।
চমৎকার লাগতে লাগলো ।একরাতে বিজ্ঞ বিজ্ঞ মুখ করে নিশুতি রাতে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করলাম হলুদবাবার সাথে ।নিজেকে মহিমু লাগতে লাগলো।মহা+হিমু=মহিমু ।
সাধারণ অবস্থায় এই সময়ে চোর ছিনতাইকারীর ভয় ছিলো ।এখন নাই ।কেননা প্রথমত হিমুদের ভয় থাকতে নেই,দ্বিতীয়ত,আমাদের পিছন পিছন একটা পুলিশের জীপ আসছে।এটা আমি আমার ইন্ট্যুশন থেকে বলতে পারছি ।আমি হয়তো কিছুটা মহাপুরুষ হয়েই গেছি।
অবশ্য এইটুক ইন্ট্যুশন সব বাঙ্গালিরই আছে।সব বাঙ্গালিই জানে,গরীব চাইলেও পুলিশ আসেনা,ধনী না চাইলেও সবসময়ে তাদের আসেপাশে পুলিশ থাকে ।
এর রাতের মাঝে আমার জীবন বদলে গেলো।নিজেকে সাধুপুরুষ সাধুপুরুষ লাগতে লাগলো ।
আমার জীবন সফল।আমি অতি আনন্দিত।
কিন্তু হলুদবাবা মুখ ভার করে ঘুরতে লাগলেন ।আমি আদর্শ মুরিদের মতন পায়ের কাছে বসে গদগদ হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,কি হয়েছে ওস্তাদ,মন উদাস কেনো?
মন উদাস কারণ নিবা হিসের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও আমি এখনো পুরোপুরি হিমু হতে পারিনি।
ইয়াল্লা!মাবুদ!আস্তাগফিরুল্লান!আপনি কি বলেন ওস্তাদ!খোদ হিমুও আপনার মতন হিমু হতে পারেনাই।
হলুদবাবা আচমকা রেগে গেলেন, হোয়াট ইজ দিস বুলশিট!ইউ জোক এবাউট হিমু দ্য গ্রেট!হাউ ডেয়ার ইউ!নো জোকিং এবাউট হিমু!হিমুইং ইজ ভেরি সিরিয়াস ম্যাটার।নো ম্যাটার অফ জোক।
আমি আর্মির জওয়ানদের স্টাইলে বুটহীন খালি পা ঠুকে বিকট কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বললাম,ইয়েস স্যার।স্যরি স্যার।গোস্তাকি মাফ হয়,স্যার!
অতঃপর স্বাভাবিক কন্ঠ খাদে নামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম,বাবা,টেনশনটা কি বলেন।আমি কাউকে বলবোনা।
তোমাকে বলবোনা কেনো সদরুদ্দিন।তোমাকে অবশ্যই বলবো।সমস্যা মেয়েঘটিত।
এ সমস্যায় তো আমরা সকলেই ভুগি ওস্তাদ।
নাহ!হিমু হতে গেলে মেয়েঘটিত সমস্যা থকলে চলে না।মেয়েদের ছ্যাকা দেয়া যাবে।মেয়েদের মোহে ব্যাকা হলে চলবে না।সদরুদ্দিন।তুমি দাড়াও,আমি ঝামেলা মিটিয়ে আসি।
আমাকে ফার্মগেট মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখে হলুদবাবা গেলেন।আর এলেন না।তিনদিন পরে একটা ছোট্ট চিঠি এলো
প্রিয় সদরুদ্দিন,
আমি পিয়া নামক একজন নিশিকন্যাকে ভালোবাসি এবং তাকেই বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।চিন্তা করে দেখলাম,দুনিয়ার সামনে মহাপুরুষ হবার দরকার নাই।একজনের কাছে আজীবন মহাপুরুষ হয়ে থাকাটাই সত্যিকারের মহাপুরুষত্ব
ইতি
মেহেদী হোসাইন
(তোমার হলুদবাবা)
পুনশ্চঃ দয়া করে নিবা হিসের কোন সদস্যকে আমার বিয়ের খবর জানিও না ।তারা পাখি ফিরে আয় শুরু করবে ।নিজের সৃষ্ট যন্ত্রণার মাঝে নিজে পড়তে চাচ্ছি না।
ওইদিনই আমার টিএসসিতে মঈনের সাথে দেখা হলো।এতোদিন তাকে মোবাইলে এসএমএস করে সব জানাতাম।লেটেস্ট আপডেট দিলাম নিজ হাতে। চিঠি দেখালাম ।চিঠি দেখে বেচারা আমার কষ্টে রীতিমতো ভেঙ্গে পড়লো ।অন্যের দুঃখে কেউ এতো কষ্ট পায়?ছাগল একটা!
সদরুদ্দিন দোস্ত,এখন তুই কি করবি?হলুদবাবা তো পল্টি মারলো।তুই হিমু হবি কিভাবে?দোস্ত তোকে নিয়ে কতো আশা ছিলো,তুই হিমু হবি।আমি সবাইকে বলবো,জানস জানস,আমার বন্ধু না একজন হিমু!
আমি হিমু হবার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই বাদ দিয়েছি মঈন ।হিমু হলে মেয়েঘটিত সমস্যা থাকা যায় না।আমি তো যা কিছু করি সব মেয়েঘটিত সমস্যার কারণেই করি!কাজেই হিমু বাদ।
এক্কেবারে খাটি কথা।হিমু হবার কোন দরকার নাই।অতি বাজে জিনিস।কারণে অকারণে মানুষ হলুদ পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় কেন হাঁটবে?সে কি রাস্তা মাপার টেন্ডার পেয়েছে।পায়নি ।তবু সে রাস্তায় হাঁটে।ছিটগ্রস্থ মানুষ।ছিটগ্রস্থ হবার কোন দরকার নাই।
হু।
হু।দোস্ত,তুই কি মহাপুরুষ হবার অন্য কোন উপায় পেয়েছিস?
না
তোর এক সপ্তাহ তো শেষ।এখন কি করবি দোস্ত?
হু
দোস্ত,এখন কি করবি?
এক কথা দুইবার বলিস কেন?কি আর করা যাবে?যা হবার তাই হবে।
কিন্তু মিলা না বলেছিলো এক সপ্তাহের মাঝে ওর বাবার ঠিক করা ছেলে আসবে ডেনমার্ক থেকে ।এর মাঝে কোন মহাপুরুষ পেলে ও বিয়ে করবে,নইলে গলায় দড়ি দেবে ।
হ্যাঁ।
তুই না ঠিক করেছিলি তুই এর মাঝে মহাপুরুষ হয়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে বলবি তোকে বিয়ে করতে।
ছাগলের মতো আমার কথা আমাকে শোনাচ্ছিস কেন?আমি কি বলেছিলাম আমি জানি না নাকি?
ছাগল আমি না,ছাগল তুই।
কি বললি,ছাগলা মঈন!তুই কি বললি আমাকে?
বললাম তুই একটা ছাগল।শুধু ছাগল না,তুই একই সাথে একটা গর্ধভ আর একটা বিলাই।মোবাইলের ম্যাসেজ চেক কর ছাগল।
আমার মোবাইলের ইনবক্স ফুল হয়ে আছে।নতুন ম্যাসেজ আসতে পারছে না।আমি সেটা লক্ষ করিনাই।মঈন ছাগলের ম্যাসেজ ডিলিট করতেই নতুন ম্যাসেজ আসলো।আমার বুক ধ্বক করে উঠলো। মিলার ম্যাসেজ।
জনাব শেখ,
আপনি কি জানেন আপনি একটা ছাগল ।আপনি শুধু ছাগলই নন, ছাগল না,আপনি একই সাথে একটা গর্ধভ আর একটা বিলাই।আপনি একটা ছাগল আপনার নামে শেখ থাকতেও আপনি বলেন আমার নাম সদরুদ্দিন।আপনি গর্ধভ কারণ আপনি আমি মহাপুরুষ হতে বলামাত্র আধানেংটা হয়ে রাস্তার মাঝে মহাত্মা গান্ধী সেজে আর হলুদ পাঞ্জাবী পরে পুলিশের পাহারায় হিমু হয়ে মহাপুরুষ হবার চেষ্টা করেছেন ।আর আপনি বিলাই কারণ আপনি কোনদিন আমাকে বলতে পারতেন না যে আপনি আমার মহাপুরুষ হবার জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করেছেন। মঈন ভাই আমাকে না বললে আমি কিছু জানতামও না ।
অনেক গালিগালাজ করলাম।এবার একটু মধুর কথা বলি।আপনি মহাপুরুষ কেন জানেন?কারণ বাংলা একাডেমীর ডিকশনারীতে মহাপুরুষ মানে লেখা আছে শ্রেষ্ঠ পুরুষ।আপনি মহাপুরুষ কারণ আজকের পৃথিবীতে কোন মানুষ একইসাথে ছাগল,গর্ধভ আর বিলাই হতে জানে না ।আপনি সেটা জানেন।কাজেই আপনি শ্রেষ্ট পুরুষ।
বুঝতে পারছেন।পারার কথা না।এই কথাগুলো বুঝতে যে পরিমাণ বুদ্ধি লাগে আপনার সেই পরিমাণ বুদ্ধি নাই।
আমি আপনাকে ভালোবাসি ।আগামীকাল কাজী অফিসে আপনাকে বিয়ে করবো।
এইটুকু বুঝেছেন আশা করছি।
ইতি,
আপনার হবু বৌ।
সদরুদ্দিন থমকে বাংলা সিনেমা স্টাইলে ধপধপ করে দুইপা পিছালো।পিছাতে গিয়ে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলো ।সেই লোক তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকাতেই সে বললো,ভাই,জানেন,আমি না একটা ছাগল।আমি শুধু ছাগলই নই, আমি একই সাথে একটা গর্ধভ আর একটা বিলাই।
লোকটার বিস্ময় কাটতে না কাটতেই সদরুদ্দিন রাজু ভাস্কর্য বেয়ে উপরে উঠে গেলো ।ভাস্কর্যের ওপরে উঠে সে চিৎকার করে বলতে লাগলো।
হে দেশবাসী,আমি একটা ছাগল।আমি শুধু ছাগলই নই, আমি একই সাথে একটা গর্ধভ আর একটা বিলাই।
আমি একটা ছাগল,গর্ধভ ও বিলাই।
সদরুদ্দিনের চোখে জল চিকচিক করছে।
উপরের গল্পটি একটি সত্যি ঘটনা।খালি এর পরিণতিটা সত্যি নয় ।
সত্যিকারের মিলা এখন ডেনমার্কে থাকে।তার দুটো বাচ্চা হয়েছে।তারা এখন ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় আমার সোনার বাংলা বাক্যটা বলতে পারে।
সত্যিকারের সদরুদ্দিন পটিয়া সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভূগোল পড়ায় ।সে এখনো বিয়ে করেনি এবং এখনও সে মিলাকে মাঝেমাঝে চিঠি লেখে।সেই চিঠি তার পাঠানোর সাহস হয়না।সে তার আলমারির ড্রয়ারে চিঠিগুলো জমায়।
সে এখনো মহাপুরুষ হবার চেষ্টায় আছে।সফল হতে পারছে না। সে অগাছগা বলেই হয়তো পারছে না।বুদ্ধিমান বা অর্থবান হলে হয়তো পারতো ।অন্তত মিলার চোখে হতে পারতো ।অনেক ভেবে সে বের করেছে মহাপুরুষ হতে গেলে ডেনমার্ক যেতে হয়।কারণ মিলা যে ছাগলাকে বিয়ে করেছে সেই টাকলা জলহস্তির ডেনমার্কে থাকা ছাড়া আর কোন যোগ্যতা নাই।কাজেই সে ঠিক করেছে মহাপুরুষ হবার জন্যে সে ডেনমার্কে যাবে।তার কাছে মনে হয়েছে মহাপুরুষ হবার এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়।সে ডেনমার্কে যাবার জন্যে টাকা জমাচ্ছে।টাকা জমছে না।জমা টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।বলিরেখা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু জমানো অর্থের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
মঈন লেখক হয়েছে।সে এখন এই করুণ অর্থহীন গল্পটি শেষ করছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০২

জেন রসি বলেছেন: মজা পাইলাম।

প্রেমিক মহাপুরুষদের পরিণতি এমনটাই হয়ে থাকে।

আমি হিমু হবার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই বাদ দিয়েছি মঈন ।হিমু হলে মেয়েঘটিত সমস্যা থাকা যায় না।আমি তো যা কিছু করি সব মেয়েঘটিত সমস্যার কারণেই করি!কাজেই হিমু বাদ।

আমার মনে হয় যারা হিমু হওয়ার চেষ্টা করে তারা মেয়েঘটিত সমস্যার কারনেই তা করে!!!!!!!!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১০

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: মজা দিতে পেরে ভালো লাগলো। :)

মহাপুরুষদের নিয়ে ঠাট্টা করবো নাকি তাদের করুণা করবো বুঝে পাইনা!

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৩

সীমাবেস্ট বলেছেন: মজা পেলাম :)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২১

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: মজা দিতে পেরে মজা পেলাম। :)

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই লিখসেন।

০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ৯:০০

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: :) ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.