![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার সমান একটা ছেলে স্ট্রোক করে মারা গেছে। ছেলেটার নাম আসিফ পান্থ। ছেলেটার মৃত্যুর আগের দিনে তার পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিলো। সেই পরীক্ষাটিতে এ প্লাস না পেলে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যায়না।
ছোটবেলা থেকে বড় হবার সময় প্রতিটা ধাপে ধাপে শুনতে পাচ্ছি-ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে-ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাসায় আসতে দেরী হয়ে গেলো-ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্কুলে ফার্স্ট না হয়ে ফোর্থ হলাম-ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পরে যেদিন কোথাও চান্স পাবেনা-সেদিন বুঝবে।
কোথাও চান্স না পাওয়ার এই জুজু যে কি ভয়াবহ-কি ভয়াবহ! আমি কাকে বোঝাবো! সবাই বোঝে,কিন্তু কেউ এইটা নিয়ে কিছু বলেনা কারণ এইটা নিয়ে কথা বলাটা সিস্টেমেটিকালি নিষিদ্ধ করে দেয়া আছে।
এইটা নিয়ে কথা বলবে তারাই যারা এইটার দ্বারা এফেক্টেড-মানে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে এরকম পরীক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষার পরে এদের থেকে দুইধারার ছেলেমেয়ে বের হবে।
এক,যারা 'ভালো' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স পাবে,দুই যারা পাবেনা।
যারা কোথাও চান্স পাবেনা তাদের কথার কোন দাম নেই,তারা মানুষই না,তারা কোন আওয়াজ তোলার যোগ্যতা হারিয়েছে। তাই তাদের কাছ থেকে কোন উচ্চবাচ্য উঠলেও কেউ সেটাকে পাত্তা দেয়না। এদের কেউ যদি একবারও বলে যে শুধু একটা পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবনকে বিচার করা ঠিক না-সবাই বলবে,ধুর! কোথাও চান্স না পাইলে তো মাইনষে কত কথাই বলবে।
দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হচ্ছে যারা এই ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে চান্স পাবে। তারা যদি এই বিষয়ে কিছু বলে,তাহলেই সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে। কিন্তু তারা এই বিষয়গুলো দেখবে,শুনবে,বুঝবে-কিন্তু কিছু বলবে না। কারণ যেই মুহুর্তে তারা বলবে যে এই পরীক্ষানির্ভর মেধাযাচাই-ওরফে মানুষের জীবনের গুরুত্বযাচাইটা একটা জুয়াখেলা-সেই মুহুর্তে তারা যে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনমতে ভর্তি হয়ে গিয়েই যে মহাপুরুষ পর্যায়ের গরিমায় উত্তীর্ণ হয়েছে,সেটায় আঘাত লাগে। কাজেই তারা চুপ থাকবে। সব দেখে শুনে চুপ থাকবে।
এরপর একসময় পরের বছরের এডমিশন সাইকেল আসবে। তখন আবার হাজার হাজার কোচিং সেন্টারের রংচঙ্গা লিফলেট বের হবে। সেইসব কোচিং সেন্টারের লিফলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মেধাবীদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি ছাপা হবে।
ছেলেটা হয়তো ভর্তির আগে তেমন কোন কোচিং করেনাই,কিন্তু ভালো একটা রেজাল্ট করার সাথেসাথেই কোত্থেকে দুনিয়ার সব কোচিং তাদের একসাথে নিজেদের স্টুডেন্ট বলে জাতীয় বীরের উপাধি দিয়ে দেবে। এই কোচিংগুলো সিস্টেমেটিকালি প্রত্যেক ছেলের মাথায় ভর্তি কোচিংয়ের সময়ই এমন ভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামে ব্রেনওয়াশ করে যে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে যে একজন মানুষের জীবন ব্যর্থ-এটাতে তারা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
তারপর তারা জীবন মরণ পণ করে পড়বে। সারা দিন রাত খাটবে।
একসময় পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। কিন্তু সবাই তো আর চান্স পাওয়া সম্ভব নয়। অনেকেই চান্স পাবেনা। তারা হতভম্ব হয়ে চোখের সামনে দেখবে একদিনের মাঝেই তাদের সারা বছরের সব পড়াশোনা সব অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। কোত্থেকে সবাই খুঁজে বের করেছে যে পরীক্ষার আগের দুই বছরে সে শুধু লাফাংগামি করে বেড়িয়েছে-কোন পড়াশোনা করেনাই।
এরকম করে বেড়ালে তো ভাগ্যে এ-ই জুটবে! বেশ হয়েছে!
মা-বাপ কি করেছে? তারা কি ঘাস কেটেছে? কিচ্ছু দেখে রাখেনি?
বাবা-মায়ের উপর ভয়াবহ অত্যাচার চলে যাবে। বাবা মা লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না। একে অপরের উপর দোষ চাপাতে চাপাতে ক্লান্ত হয়ে তারা একসময় সেই অভাগা ছাত্রটির উপর দোষ চাপানো শুরু করবে।
বেচারা ছোট্ট আঠারো বছরের মানুষটা দেখবে যে সবার থেকে হাজার গালাগাল খেয়ে সে দৌড়ে এসে তার চির নিশ্চিত শান্তির যে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে সেই মাও তাকে ঠেলে মাটিতে ফেলে তার উপর চড়াও হচ্ছে।
সে দেখবে যে তার যাওয়ার কোন যায়গা নেই। কোথাও আর তাকে কেউ ভালোবাসে। আর কোনদিন কেউ তার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনবেনা। আর কোনদিন সে সমাজে প্রথম সারির ছাত্র হতে পারবেনা। একটা পরীক্ষা দিয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না পেরে সে বাইরে থেকে যা কিছুই করুক না কেন-তার টুকু কেউ দেখবে না। পরীক্ষার আগে তার ফেসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভেট করে ঘন্টার পর ঘন্টা দরজা বন্ধ করে পড়াটাকে কেউ দেখবে না। কেউ না।তার মা-বাবাও না।
তার কোন আশ্রয় নেই। তার কোথাও শান্তি নেই।
এর চেয়ে আসিফ অনেক ভালো আছে। সে সবাইকে কলা দেখিয়ে আমাদের সবার আদিপিতার কাছে চলে গেছে। কেউ তাকে হয়তো ভালোবাসবে না,কেউ তাকে শান্তি দেবেনা। কিন্তু সে এমন এক যায়গায় চলে গেছে যেখানে সবার আশ্রয় আছে। সবার শান্তি আছে।
আসিফ তুই শান্তিতে থাক।
কেউ মনে করবেন না আমি বলছি যে আসিফের পরীক্ষা খারাপ হয়েছিলো তাই সে মরে গেছে বা তার মৃত্যুর জন্য কোনভাবে এই দেশের পরীক্ষানির্ভর মেধাযাচাই ব্যবস্থা বা ব্রেনওয়াশ করা কোচিং ব্যবসা বা হাজার হাজার নির্মম নিষ্ঠুর পাড়াপ্রতিবেশী-অভিভাবক দায়ী।
ছেলেটি স্ট্রোক করেছে। স্ট্রোকের কোন নির্দিষ্ট কারণ দেখানো যায়না।
স্ট্রোক হয় মানসিক চাপের কারণে।
আমি শুধু বলবো যে এই ছেলেটি কি পরিমাণ নিষ্ঠুর যন্ত্রণা পেয়ে মরেছে সেটা কেউ ভাবতে পারছেন?কি পরিমাণ মানসিক চাপে থাকলে একটা আঠারো বছরের ছেলের স্ট্রোক হয়-কেউ কি ভাবছে?
না কেউ ভাবছে না। এটা আমাদের কনসার্ন না। এটা জাতীয় কোন খবরও নয়। আমরা দুইদিন পরেই সব ভুলে যাবো। এরা জীবনযুদ্ধে পরাজিত। যুদ্ধে আসলে কিছু মানুষ মারা যাবেই। এদের নিয়ে কান্না করার কোন সময় আমাদের নাই। জীবন একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কিছু হতাহত হবেই।
না না না না না।
জীবন একটা যুদ্ধ না। জীবন একটা ঈশ্বরের দেয়া চমৎকার একটা ঐশ্বর্যময় উপহার। এটার হাজার হাজার বৈচিত্রময় দিক আছে।
না এটা কোন যুদ্ধ নয়।
অস্বাভাবিক সুন্দর একটা জীবনকে যুদ্ধ বানিয়ে সেই যুদ্ধে আঠারো বছরের ছেলেমেয়েদের দিয়ে পঙ্গপালের মতন দৈহিক আর আত্মিক মৃত্যুর বিনিময়ে কারো সুনাম আর অর্জনের ঝোলা ভারী করে তার রঙ্গিন লিফলেটে মিষ্টিমুখে আর ল্যাপটপ হাতে ছবি তোলার জন্য আমরা জন্মগ্রহণ করিনাই।
আস্ত একটা মানুষের জীবনের মূল্য ঘন্টাধরা পরীক্ষা দিয়ে মেপে কিছু জুয়া বিজয়ীকে মাথায় তুলে বাকি হাজার লাখ মৃতদেহের উপর উল্লাসনৃত্য করে এই সুন্দর ধরাধামকে দোজখের চেয়ে যন্ত্রণাকর বানিয়ে তোলার অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি।
ছেলেটা মরে গেছে।
গতবছর আরো অনেক ছেলে মরে গিয়েছিলো।
আরো অনেক ছেলে মরে যাবে।
হাজার হাজার মেয়ে তার অন্তরের মৃতদেহকে জাপটে লুকিয়ে রাতের বেলা বালিশে মুখ চেপে কান্না করবে। তাই শুনে সবাই বিরক্ত হবে। পড়াশুনার বালাই নাই,খালি ন্যাকাকান্না! এইজন্যেই তো কোথাও চান্স পায়নাই!
এবং আবার আমার মাথার পিছনে প্রচন্ড যন্ত্রণা হবে। আবার আমার একেকজন বন্ধুর মৃত্যুর সংবাদে আমি একটু একটু করে মরে যাবো। আমার একেকটাদিন কাটবে কোন একটা ভুলে থাকার অজুহাত খোঁজার ধান্দায়।
কারণ ভুলে থাকা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। কেউ কিছু বলবেনা,কেউ কিছু বুঝবেনা। আমরা বরং ভুলে থাকি।
অনন্ত জলিল সাহেবের কোন সিনেমা দেখার চেষ্টা করি। ইউটিউবে ফানি ভিডিওস লিখে সার্চ দেই-ক্রিকেট ফুটবলের হাইলাইটস দেখি।
ভুলে যেতে হবে যত তাড়াতাড়ি পারা যায়। নাহয় আমরাও পাগল হয়ে যাবো।
তাই সবাইকে বলছি-ভুলে যাও ভুলে যাও-যত তাড়াতাড়ি পারো।
আর কিছু করার নেই। কালকে না ফিজিক্স সেকেন্ড পেপার? ভালো করে পরীক্ষা দিতে হবে। গোল্ডেল এ প্লাস পেতে হবে। ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে-নাহলে তো জীবনটাই ব্যর্থ।
শুধু আজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে একবার প্রার্থনা করবো, কাল যেন আমার এরকম না হয়-কাল যেন আমার কাছের কোন মানুষের এরকম না হয়।
সেই একজনই হয়তো সবকিছুর পরও আমাদের ভালোবাসবেন।
আমাদের ভালোবাসার আর কেউ নেই-
আমাদের আর কোন আশ্রয় নেই।
২| ০৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
এটা এখন আমাদের দেশের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে সময়োপোযোগী লেখাটির জন্য্।
৩| ০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
শিক্ষা নিয়ে জাতিকে অকারনে চাপে রেখেছে কিছু বদ ব্যবসায়ী ও সরকারের ইডিয়টরা।
৪| ০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৪
আহমেদ জী এস বলেছেন: অনুপম দেবাশীষ রায় ,
সুন্দর লিখেছেন - জীবন একটা ঈশ্বরের দেয়া চমৎকার একটা ঐশ্বর্যময় উপহার। এটার হাজার হাজার বৈচিত্রময় দিক আছে।
তার আগে ও পরে লিখেছেন - জীবন একটা যুদ্ধ না।
"জীবন একটা যুদ্ধ না" এই কথার সাথে দ্বিমত করার আগে বলে নিতে চাই
- এই যুদ্ধে হেরে যাওয়াদের জন্যেও রয়েছে ভালোবাসা । যদি সে হার শুদ্ধতার পথে, সততার পথে হয় । হেরে যাওয়া কেউ যদি বেপথু না হয়ে আপনার বলা, চমৎকার একটা ঐশ্বর্যময় জীবনের পথ ধরে চলেন তবে তাদের জন্যেও রয়েছে ভালোবাসার কেউ না কেউ । আর কেউ যদি সমাজ-সংসারের গন্ডি থেকে ছিটকে অন্যজগতে বিচরন করে থাকেন তবে তাদের জন্যে ভালোবাসার কেউ থাকেনা । এই দলটিকে বাদ দিন আপনার লেখা থেকে । আশা করছি, আপনি তাদেরকেও এই দলে টানেন নি ।
আর জীবন যেহেতু সমাজ-সংসারের মাঝেই বহমান তাই এটা একটা যুদ্ধক্ষেত্রও বটে । কারন ঈশ্বর প্রদত্ত এই সুন্দর জীবনটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই সংসারে আপনাকে নিত্য যুদ্ধ করেই যেতে হবে । এটাই নিয়ম । তবে সে যুদ্ধ যদি সততার উপর দাঁড়িয়ে থাকে তবে ব্যর্থ হলেও ভালোবাসার লোকের অভাব হয়না , হয়নি ।
আপনার আক্ষেপ বুঝতে পারছি । আপনাদের জন্যেও ভালোবাসার আফুরান লোক এখনও আছে , এইটুকু জেনে রাখুন ।
৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫৪
রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: কোথাও চান্স না পাওয়ার এই জুজু যে কি ভয়াবহ-কি ভয়াবহ! আমি কাকে বোঝাবো!
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেলো