নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

|| যেকারণে মা দিবস আর এইডস দিবস আসলে একই ব্যাপার ||

১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:২৭

আমার কাছের মানুষরা অনেকেই জানেন যে আমি হিলারী ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনের একজন সমর্থক সদস্য। কালকে আমাকে(এবং সম্ভবত সব সমর্থককে) হিলারী ক্লিনটন মেইল পাঠিয়েছেন যে আমরা যদি চাই তাহলে তিনি আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের মা কে ফোন করে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাবেন।
শুধু হিলারী ক্লিনটন ক্যাম্পেইন নয়-আমেরিকার যে সমস্ত করপোরেশন,কম্পানি,ব্রান্ড নিজেদের মানবিক বলে দেখাতে চায় তারাই একটা নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনে লাখ লাখ ডলার খরচ করে। বিজ্ঞাপনটা হলো-Call her.
তিন চার মিনিটের মর্মস্পর্শী বিজ্ঞাপন-তার শেষে লেখা উঠবে মা আমাদের জন্য হেনো-মা আমাদের জন্য তেনো। মা ছাড়া আমরা কিছুনা-কাজেই কল হার। একটা দিনের জন্য মাকে ফোন করো। সারাজীবন তো মায়ের ফোনে বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিয়েছো। আজ একবার নিজের থেকে তাকে ফোন করো।
আমেরিকান মা রা তাতেই আনন্দে আত্মহারা।
মাদারস ডে তাই আমেরিকান মায়েদের জন্য বিশেষ একটা দিন। তারা ফোনের পাশে ওৎ পেতে বসে থাকেন-কখন ফোন আসে,কখন ফোন আসে।
কিন্তু আমাদের কাছে? আমাদের কাছে মাদরস ডে-এর মানে কি?
অনেকের কাছে মাদারস ডে একটা শুধুই প্রহসন। বছরের একটা দিন মাকে ভালোবাসার কি আছে? মায়ের জন্য সারা বছর। মাদারস ডে শুধুই একটা গিফট কার্ড বিক্রি করার পুঁজিবাদী ফন্দি।
আমরা তো সারাদিন মায়ের সাথেই থাকি। মা আমাদের গোসল কর গোসল কর-ভাত খা ভাত খা বলে কান ঝালাপালা করেই দিচ্ছে। মাঝেমাঝে আমরাও তো মার পানির বালতিটা একটু উঁচু করে দিয়ে সাহয্য করার চেষ্টা করছি। মাকে আবার আলাদা করে ভালোবাসি বলতে হয় নাকি? আমরা যেমন করে 'মা' বলে ডাকি-তার মাঝেই তো দুনিয়ার ভালোবাসা। আমাদের আবার আলাদা করে মা দিবসের দরকার আছে নাকি?
কথা সত্য।
তবে আশংকার কথা হলো বাংলাদেশ একটা দ্রুতগতিতে উন্নয়নশীল দেশ। আর উন্নয়নের মাপকাঠিই হলো পশ্চিমা সমাজ। তার মানে দিনকে দিন আমরা পশ্চিমের মতই পাথুরে হৃদয়ের হয়ে যাচ্ছি আর দিনকে দিন আমরা মা বাবার ভালোবাসার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
এক মুহুর্তের জন্য একটু চোখ বুজে হিসেব করে দেখুন যে গত পাচ বছরে আপনি বাবা মায়ের থেকে ঠিক কতটা দূরে সরে এসেছেন। নিশ্চয়ই এখন তাদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন। নিশ্চয়ই এখন আর তাদেরকে নিজের সারাদিনের সব গল্প আগের মতন নিঃসংকোচে বলতে পারেন না। কারণটা খুব স্বাভাবিক-আমরাও বড় হচ্ছি-আমরাও 'উন্নত' হচ্ছি। অর্থাৎ পশ্চিমাদের মতন হয়ে যাচ্ছি।
আস্তে আস্তে এই যে বাবা মায়ের সাথে দূরত্ব,সেটা বাড়তে বাড়তে এমন যায়গায় যাবে যে সুযোগ পেলেই আমরা বাবা মা-কে এডিয়ে যাবো। চেষ্টা করতবো চোখাচুখি না করতে। আর বাসা থেকে বেরিয়ে নিজের ঘাটি গড়তে পারলে তো হলোই। আরো দূরত্ব বাড়ানো গেলো।
সত্য হচ্ছে যে গত পাঁচ বছরে আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে আর বাবা মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসাও ক্রমাগত একটা নিছক আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিচ্ছে। পরীক্ষার আগে আমরা বাবা মাকে সালাম করছি-কিন্তু আসলে দিন দিন আমাদের মনে তাদের দোয়ার শক্তি কমে যাচ্ছে। কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমরা একবার মাকে জানিয়ে নিচ্ছি ঠিক-কিন্তু তার উপদেশ কানে তুলছি না। ধুর! মা কি বোঝে?
এই 'মা কি বোঝে'র শক্তি অনেক। সেই শক্তির থেকেই আমরা আস্তে আস্তে প্লাস্টিক জাতি হয়ে যাচ্ছি।
ডিসেম্বরের এক তারিখ সারা বিশ্বে এইডস দিবস পালন করা হয়। এই দিনটির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের মানুষকে শিখানো যে কি কি করলে এইডস ছড়ায়। কেমন করে চললে এই মারণব্যাধির থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এইডস রোগটিকে উদযাপন করা এই দিনটির উদ্দেশ্য নয়। এইডস রোগটিকে প্রতিরোধ করা এই দিনটির উদ্দেশ্য।
কাজেই জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী আর মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশতে বিশ্বাস করা বাঙ্গালির জন্যে মা দিবসও ঠিক এইডস দিবসের মতই। এই দিনটি আসলে মায়ের প্রতি প্লাস্টিক ভালোবাসা প্রদর্শনের দিন নয়-বরং এই দিনটি হলো আমাদের জন্য একটি সতর্কবাণীর মতন। এই দিনটা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে দিনে দিনে আমাদের বাঙ্গালিদের আবেগ কেমন করে পশ্চিমা প্লাস্টিক আবেগ হয়ে যাচ্ছে আর আমাদের এই প্লাস্টিকত্বের বিরুদ্ধে দাড়ায়ে সত্যিকারের কোমল নরম বাঙালি আবেগটাকে কর্পোরেট একুশ শতকের হাত থেকে বাচায়ে রাখার প্রণোদনা দেয়।
আমি জানি এখন অনেক বাঙ্গালির কাছেই মা দিবসের গুরুত্বটি পশ্চিমাদের মা দিবসের মতন হয়ে গেছে। আমাদের সমাজের একটি অংশকেই আজ পশ্চিমা প্লাস্টিকত্ব জাপটে ধরেছে। আমাদের অনেকেই এখন শুধু মা দিবসেই মা কে জড়িয়ে ধরে-মা কে ফোন করে। কি ভয়াবহ ব্যাপার!
এখানেই আমার আশংকা-আর এখানেই আমাদের কর্তব্য।
এইডস দিবসে আমরা যেমন সবাইকে বলি। ভাই এই কাজগুলো করবা না-করলে এইডস হবে।
মা দিবসে আমাদের সবাইকে বলতে হবে-এই কাজগুলা করবা না-নাইলে মায়ের প্রতি ভালোবাসার মতন পবিত্রতম আবেগটাও একটা প্লাস্টিক আবেগ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নামক মানবিক বদ্বীপটি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অন্তরের সত্যিকারের আবেগগুলোকে সযত্নে লালন করে এসেছে। সারা দুনিয়ায় প্রত্যেকটি আবেগ যখন আজ রঞ্জিন বাক্সে মুড়ে বেঁচে দেয়া যাচ্ছে আর রঙ্গিন কার্ডে ছেপে গিফট করে দেয়া যাচ্ছে-তখন এই প্লাস্টিক কালচার থেকে সত্যিকারের আবেগগুলোকে বাচায়ে রাখার ভার আমাদেরই নিতে হবে। এই বাংলার বুকে দরকার হলে সৃষ্টি হবে অদৃশ্য সব মানবিক আবেগের সুদৃশ্য মিউজিয়াম।
মা-কে বাচিয়ে রাখতে হবে আমাদের যে-করেই হোক।
'মা' আমাদের সুন্দরতম শব্দ-সুন্দরতম আবেগ...
এই আবেগটা যেন প্লাস্টিক হয়ে না যায়...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১

এসব চলবে না..... বলেছেন: আজকের সেরা লেখাটা পড়লাম।
মা দিবস আবার কি ?
মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাইতে যাগো আলাদা দিবস লাগে তারা যে মায়েরে সারা বছর কি ভালোবাসে সেইটা বুঝতে হইলে শিক্ষিত হওয়া লাগে না।
দুনিয়া বড়ই ধান্ধাবাজ।
চমৎকার লেখার জন্য ++++++++++++++++++++++

১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ২:০৪

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.