নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি লেখা বাবা-মাদের জন্যে

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

আসসালাম ওয়ালাইকুম আঙ্কেল এবং/অথবা আন্টি,
আপনারা সম্ভবত ভাবছেন যে আপনারা কেনো এই লেখাটা পড়ছেন। আপনারা এই লেখাটা পড়ছেন কারণ আপনার পুত্র বা কন্যাসন্তান আপনাকে টেনে ফেসবুক বা ব্লগের সামনে এসে বসিয়েছে। সে হয়তো এই মুহুর্তে আপনার থেকে লুকিয়েই এগুলোতে সময় কাটাচ্ছিলো কিন্তু তারপরেও নিজের গোপনীয়তা বিসর্জন দিয়ে সে আপনাকে এই লেখাটি পড়াতে বসিয়েছে কেননা আমার এবং তার মনে হয় যে আপনার এই লেখাটি পড়া উচিত।
আপনি অবশ্যই জানেন যে কিছুদিনের মাঝেই আপনার সন্তানটির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।যদি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিতব্য না-ও হয়ে থাকে,অর্থাৎ আপনার সন্তান এইচএসসি ২০১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী না-ও হয়ে থাকে,তার পরেও তার কোন না কোন পরীক্ষার ফলাফল অতিসত্বর প্রকাশিতব্য এবং সে সেই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত।
ভীতসন্ত্রস্ত এইজন্যে নয় যে সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে না। ভীতসন্ত্রস্ত এইজন্যে যে পরীক্ষায় কখনো ভালো ফলাফল করা যায়না। সে যখন ক্লাস এইটে ক্লাসে দশম হয়েছিলো-তাকে বলা হয়েছিলো পঞ্চম হতে। যখন নবম শ্রেণীতে পঞ্চম হয়েছিলো-তখন তাকে বলা হয়েছিলো প্রথম হতে। যখন দশম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলো-তখন তাকে বলা হয়েছিলো,এইসব টার্ম পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? পাবলিক পরীক্ষাই সব। সে টানা ভালো ফলাফল করতে করতে দেখলো যে ভালো ফলাফল করে কোন লাভ নাই কারণ ভালোর কোন শেষ নাই। একটা যান্ত্রিক ইঞ্জিন পর্যন্ত টানা দশ বছর ধরে একই মানের পারফরমেন্স দেখিয়ে যেতে পারে না-সেখানে একজন মানুষ হয়ে কিভাবে আপনার সন্তানটি বছরের পর বছর ধরে ভালো,তো ভালোই করে যাবে বলুন দেখি!
তাই সে ভয় পায়। সে ভয় পায়,যে এইবারই বুঝি তার গোত্তা খাবার সময়। সে ভয় পায়,সে-ই হয়তো নতুন ভাবীদের আড্ডার টসটসে বিষয় হয়ে পড়বে। ভাবি জানেন-ওইযে পাশের বাসার সুমন। খুব তো শুনি সারাদিন ঘরের দরজা লাগিয়ে পড়ে। জানেন,ও না ফিজিক্সে এ প্লাস মিস করেছে। এখন বলুন তো-সারাজীবন ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে কি লাভ হয়েছে? আর আমার পুচু! আমার পুচুকে তো সারাজীবন পিছনের সারির ছাত্র বলে জানতাম। সে পর্যন্ত সোনালী রূপালী পেয়েছে-ভাবী,জানেন!
এইজন্যে আপনার ছেলে-মেয়েটা ভয় পায়। আমি জানি যে আপনিও ঠিক এইজন্যেই ভয় পান। আপনার পাশের বাসার ভাবী,আপনার চৌদ্দ দ্বিগুণে আটাইশ গুষ্টির সব আত্মীয়স্বজন মুখায়ে আছে কখন আপনার সন্তানের ফলাফলটা দেবে। আর তারা সবাই নির্লজ্জের মতন ফোন করে জিজ্ঞেস করবে,ভাবী ফলাফল কি? গোল্ডেন তো? মিষ্টি কবে পাচ্ছি?
এতোকিছুর ফাকে আপনার সন্তানের শরীর ছেড়া ভয়টা তবু কেউ দেখতে পায়না। মিষ্টি খাওয়াতে পারলে ভালো। না পারলে কি হবে? যদি কোনভাবে রেজাল্ট খারাপ হয়? কি উত্তর দেবে সে? কেমন করে সবার সামনে মুখ দেখাবে? বাবা-মায়ের তাকে নিয়ে এতোদিনের এতো এতো স্বপ্ন-সব ভেস্তে দেবার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?সারাজীবন বাবা-মায়ের একটা সুখের কারণ সে হতে পারেনি-আর শেষতক সবচেয়ে বড় লজ্জার কারণ হয়ে দাড়ালো সেই সে! এর চেয়ে তো মরে যাওয়াই ভালো ছিলো।
তাকে কে বোঝাবে যে বাবা মায়ের তাকে নিয়ে কত গোপন গোপন সুখ রয়েছে। সেদিন ভাত খাবার পর নিজের থেকে থালা ধুয়ে রেখে দেয়া নিয়ে বাবা মায়ের কতোখানি সুখ। তার আগের দিন-যেদিন গ্রামের থেকে মজিদ চাচা আসলো,সেদিন নিচের থেকে তার ব্যাগবোচকা টেনে আনলো-আহারে কতো সুখ! নিজের টেবিল নিজে গুছিয়ে রেখেছে-ইশ,কি সুখ! নিজের ভাত নিজে মেখে খাচ্ছে-ইশ কি সুখ! ছেলেটা আজ প্রথম মুখ ফুটে কথা বলতে শিখেছে-ইশ! কি সুখ! মেয়েটা আজ প্রথম গুটি গুটি পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে-ইশ কি সুখ!
তাকে কে বোঝাবে যে বাবা মায়ের সাথে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক কোন দেয়ানেয়ার সম্পর্ক নয়। বাবা মা-কে কখনো রেজাল্ট দিয়ে সুখী হয়না-বাবা মা সুখী হয় তুই নিজে সুখী থাকলে। তুমি যে ভাবছো রেজাল্ট দেখে বাবা-মা সুখী ভুল ভাবছো। তোমার রেজাল্টের মাঝে তোমার বাবা মা দেখে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত। তোমার সুখী সমৃদ্ধ জীবন। তাদের নিজেদের জীবনের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছল,অনেক বেশি আনন্দের একটা জীবন। তাই দেখে তারা খুশি হন।
পৃথিবীর কোন বাবা মা-সে যে দেশের যে কালেরই হোক না কেন, সবসময় সফল সন্তানের চেয়ে সুখী সন্তান বেশি চাইবে। সমস্যা হলো এই যে,অধিকাংশ সময় সফলতা আর সুখ একে অপরের হাত ধরে আসে। কিন্তু সফলতার থেকে সুখ খুজে নেয়া এক ধরণের দুর্বলতা। সেই সুখ টেকেনা-কেননা সফলতা কারো কখনো চিরদিন থাকেনা। সুখ থাকে ছোটছোট জিনিসে। সুখ থাকে চড়ুই পাখির ঠোটে,বাগানবিলাসের ফুলে,সুখ থাকে আব্বুর বুকে,আম্মুর কোলে। সুখ কখনো সফলতায় পরিমাপের জিনিস না।
তোমার বাবা মা-কে জিজ্ঞেস করে দেখো,তুমি যদি সফলতা থেকে সুখ না খুজে অন্য কোন কিছু থেকে সুখ খুজে নিতে পারো-তাদের থেকে সুখী কেউ হবেন না। যদি তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার সৃষ্টিকর্তাকে খুজে পাও,যদি তার ভালোবাসায়,তার ভালোবাসায় নিজের সুখ খুজে পাও-তোমার আম্মুর চেয়ে খুশি কেউ হবে না। যদি তুমি সত্যিকারে তোমার যায়নামাযের উদার জমিনে তোমার পৃথিবীকে খুজে পাও তোমার আম্মুর চেয়ে গর্বিত কেউ হবেন না। তোমার আব্বু আম্মু বুঝে ফেলবেন যে ছেলে আমার বড় হয়েছে। মেয়ে আমার বড় হয়েছে। এখন আর আমাদের কোন চিন্তা নেই। তারা এখন ভয় পান কারণ তারা মনে করেন এই ছোট্ট তুচ্ছ রেজাল্ট তোমাকে ভেঙ্গে দেবে,তুবড়ে দেবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়তে না পারলে তুমি কখনো ভালো মানুষ হতে পারবে না-এমন কোন কথা নেই। তুমি দেখিয়ে দাও পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুমি বড়। তুমি আকাশের সমান বড়। দেখবে তোমার বাবা মা তোমাকে আর কিচ্ছু বলছেন না। কোন বকা দিচ্ছেন না। বিশ্বাস কর আর নাই করো-তোমাকে বকা দিতে আব্বু আম্মুর একটুও ভালো লাগে না।
কিন্তু এইসব তাকে বোঝাবে কে? আপনি বোঝাবেন! হ্যা,অবশ্যই আপনি বোঝাবেন। আপনার ছেলেটিকে মেয়েটিকে সারাদিন রেজাল্ট ভালো না হলে তার উপর কি কি দুর্দশা নেমে আসবে সেইসবের ফিরিস্তি না দিয়ে বরং তাকে বৃহত্তর জীবন দেখতে সাহায্য করুন। কারণ বিশ্বাস করুন তাকে এইসব নিয়ে ভয় দেখানোর আরো শত শত মানুষ আছে। আপনার কাছে সে আসে ভালোবাসার জন্য,মমতার জন্য,সাহায্যের জন্য। আপনি তাকে মমতা দিন,ভালোবাসা দিন। এই ছোট্ট ছেলেটা,মেয়েটার বিরুদ্ধে আজ সারা পৃথিবী দাঁড়িয়ে গেছে। সারা পৃথিবীর যাবতীয় কলুষ তাকে ধরে তুবড়ে মুচড়ে দিতে চাইছে। আপনাকে আজ তার খুব দরকার। আপনি তাকে মমতা দিন,সে আপনার জন্যে পৃথিবীকে জয় করে আনবে।
আপনি ভাবছেন,আমার সন্তানটা সবার সন্তানের মতন না। আমারটা বেশি বেয়াদব,বেশি খাপছাড়া,বেশি বজ্জাত। তার কারণ হলো আপনার সাথে আপনার সন্তানের প্রজন্ম দূরত্বটা বেশি। আর যতদিন ধরে তার মনে হবে যে আপনার সাথে তার সম্পর্কটা লেনদেনের,ততদিন ধরে এই সম্পর্ক বাড়বে বৈ কমবে না। আপনি যে তাকে বছর বছর ধরে বলে আসছেন-তোর জন্য সারাটাজীবন এই করেছি,সেই করেছি-এতো কষ্ট করেছি। এখন তোরও ভালো রেজাল্ট করে সেই ঋণ শোধ করতে হবে। সে যদি একদিন মুখের উপর উলটো বলে দেয়-আমি পৃথিবীতে এসেছি এই সিদ্ধান্ত তোমরা নিয়েছো,আমাকে জিজ্ঞেস করে তো নাওনাই। কাজেই আমি প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগ পর্যন্ত আমার দেখভাল করার দায়িত্ব এমনিতেই তোমাদের,আমার আর কোন ঋণ নেই। তোমাদের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই-তখন আপনি কি করবেন?
বিশ্বাস করুন-পৃথিবী এখন এই দিকেই যাচ্ছে। আমি বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি এবং এখানকার অধিকাংশ সন্তানেরা এই যুক্তি দেখিয়ে বাবা-মাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। আমরা বাঙালি জাতি-বাবা মা আর সন্তানের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি। প্লিজ আমাদের মার্কিনি আধমরা জীবনযাত্রার দিকে ঠেলে দেবেন না।
আপনার সন্তানের আপনার প্রতি যদি কোন ঋণ থেকে থাকে,সেই ঋণ ভালোবাসার ঋণ। সেই ঋণের শোধ দিতে নেই-সেই ঋণ বাড়াতে হয়। আরো গর্ব দিয়ে,আরো ভালোবাসা দিয়ে। আর আপনার সন্তান যদি দিনশেষে সুখি হয়-তার চেয়ে বেশি ভালো ঋণের শোধ আর কিছুতেই হতে পারেনা।
আপনি ভাবছেন হাজার হাজার আত্মীয় আর আর প্রতিবেশীদের কি উত্তর দেবেন রেজাল্ট নিয়ে। বলবেন-আমার ছেলেটা ভালো আছে। আমার মেয়েটা আত্মহত্যা করেনি। আমার সন্তানটি সুখী। এটাই তার পরীক্ষার রেজাল্ট।তাকে আমি স্কুলকলেজে পাঠিয়েছিলাম একটা ভালো মানুষ হতে। আমি সেই ভালো মানুষটাকে পেয়েছি। আমি সেই সুখী মানুষটাকে পেয়েছি। আমার আর কোন রেজাল্টের দরকার নেই। আমার সন্তানটা ভালো আছে।
নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তো,এর চেয়ে বেশি ভালো কোন রেজাল্ট কি আপনার চাইবার আছে?

অনুপম দেবাশীষ রায়,
রাজনীতিবিদ্যা(প্রথম বর্ষ)
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি,
ওয়াশিংটন ডিসি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৮

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অভিভাবকদের অদূরদর্শিতার কারনে ,আমাদের বাচ্চারা ক্লাসে প্রথম আর এ+ এর পেছনে ছুটে জীবনের মুল্যবান সময়ের অপচয় করছে ।
অথচ সাফল্যের শিখরে যারা অবস্থান করছেন তাঁরা কেউ ভাল ছাত্র বলতে যা বুঝায় তা ছিলেন না ।
চমৎকার লিখা ।
অভিভাবকদের বোধোদয় হোক ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.