![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকে একটি বিশেষ সংবাদ আমার চোখে পড়েছে এবং সেটি হলো জামায়াত নেতা নিজামীর প্রধান আইনজীবী আদালতের কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আদালতের কাছে তার বয়সের বিবেচনায় শাস্তি কমানোর আবেদন জানিয়েছেন।
অনেকে হয়তো বুঝতে পারছেন না যে এটি বাংলাদেশীদের জন্য কতোটা আনন্দের ব্যাপার!
বলতে গেলে এটিই আমাদের আদর্শিক বিজয়। আমরা যখন বিচারের প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিলাম-আমরা তখনই জানতাম যে ধরে ধরে প্রত্যেকটি রাজাকারকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব নয়। বরং আমরা এই বিচারটি শুরু করেছিলাম একটি আদর্শিক বিজয়ের জন্য-এক ধরনের গ্লানিমোচনের জন্য। রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি সম্মান এবং তাদের প্রতি দায় পূরনের জন্য। দেশ এবং জাতি হিসেবে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করাও একটা বিরাট লক্ষ্য ছিলো।
এই লক্ষ্যের একটি বিরাট অংশ সূচিত হয় প্রথম কয়েকটি ফাঁসির কার্যকারিতায়। তারচেয়েও বড় আদর্শিক বিজয়টি আমরা পেতে শুরু করি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার ঘটনাগুলোতে। তৎকালীন রাজাকারেরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিতে শুরু করে সেই জায়গাতে এবং তাদের যে আদর্শকে তারা বহন করে সেই আদর্শটি যে একটি পরাজিত এবং ভুল আদর্শ-সেটি প্রমাণিত হতে থাকে। এবং নিজামীর দোষ স্বীকারের ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ এইজন্যে যে, নিজামী দীর্ঘসময় ধরে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান ছিলেন এবং সেই দলটির একটি বিরাট অংশ তাকেই দলটির মশালধারী হিসেবে চেনেন। যখন আপনি সেই দলের মশালধারী নেতাকে তার কৃতকর্মের জন্য মাফ চাওয়াতে পারবেন-তখনই আপনি সে যেই আদর্শের প্রতীক-সেই আদর্শকে সত্যিকার অর্থে দমন করা শুরু করবেন।
অনেকে বলে থাকেন যে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিৎ। আমার মতে, এই সিদ্ধান্তটি খুবই ভুল হবে। কেননা-রাজনীতিক দৃষ্টিকোন থেকে একটা দলকে নিষিদ্ধ করে কোনকালেই কোন লাভ হয়নাই। তাতে বরং সেই নির্দিষ্ট দলটি ফাকফোকর দিয়ে আরো তরতরিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। নতুন নামে নতুন ভোলে দল শুরু করে পুরোনো নেতারা পুরোনো আদর্শের চর্চা পুরোদমে চালিয়ে যেতে পারেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দল নিষিদ্ধের কোন যুক্তিই আমি দেখতে পাইনা। বরং আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিৎ কিভাবে উপর্যুপরি বারংবার জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আদর্শকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় এবং চূড়ান্ত নেতাদের দোষ স্বীকার সেই প্রক্রিয়ার একটি অত্যন্ত বড় ধাপ।
পৃথিবীর অধিকাংশ চরমপন্থী আদর্শই খুব আকর্ষণীয় হয়। তা সেটা ভালো হোক আর মন্দ। কাজেই জামাত-শিবিরের আদর্শ যে অনেকের কাছেই অনেক বেশি আকর্ষনীয় তাতে কোনই সন্দেহ নেই। তবে এটিকে দমন করার জন্যেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি আদর্শকে দমন করবার জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সফল কোন দেশ হতে পারেনা। সত্তরের দশকে এই রাষ্ট্রটি সুকৌশলে ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টি নামের একটি কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী সংগঠনকে দমন করে। রাষ্ট্রটি সংগঠনটির নেতাকে এরেস্ট করায় আন্দোলন চূড়ায় পৌছে। উত্তরে রাষ্ট্র নেতাকে ছেড়ে দেয় এবং নানা কলাকুশলে সঙ্গগঠনের নেতাকে আদর্শচ্যুত প্রমান করে। তাকে ক্রিমিনাল বানিয়ে দেয়। এর ফলে যা হয়-তা হলো, সেই সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই দলটির সঙ্গ ত্যাগ করে। যদিও দলটির আদর্শে ত্রুটি ছিলো সীমিত-নেতার পতনে সেই আদর্শেরও পতন ঘটে।
আমাদের দেশের জামায়াতের নেতাদের ফাঁসী দিয়ে যে ঝামেলাটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে-জামায়াতের পক্ষ থেকে নেতাদের জাতীয় বীরের আখ্যা দেয়া হচ্ছে এবং এই শহীদদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে দলটি আরো সংঘবদ্ধ হচ্ছে। দেশের বাইরের বিভিন্ন পত্রিকা এগুলোকে বিচারিক হত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে-কিছু মানুষ জাতিসংঘের কাছে চিঠি লিখছে-কিছু মানুষ আরো বিভিন্ন ধরনের কেশ উৎপাটন করছে। এই দোষ স্বীকারের যথাযথ সদব্যবহার হলে- অর্থাৎ সরকারের কাছ থেকে এই দোষ স্বীকারকে যদি একটি বিবৃতির মতন করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রাজাকারদের দোষ স্বীকারের ব্যাপার হিসেবে তুলে ধরা হয়-নৈতিক বিজয়ে আমরা কিছুটা আগাই। এইটার খুব একটা দরকার নাই। দরকার যেটা-সেটা হলো দেশের মানুষের কাছে এইটাকে হাইলাইট করা।
সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হতো-যদি নিজামীকে রাজসাক্ষী হিসেবে দলে টানা যেতো। তাকে এমন একটি সুবিধা দেয়া হোক যে সে যদি বাকি চিহ্নিত অপরাধীদের দোষী বলে সাক্ষী দেয়-তার শাস্তি কমিয়ে দেয়া হবে। হয়তো তাতে আমরা একটি ফাঁসির আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবো-তবে রাজাকারদের ভয়াবহভাবে আদর্শিকভাবে পরাজিত করা যাবে।
একই সাথে তার কাছ থেকে এই মর্মে বিবৃতি নেয়া যেতে পারে যে আলবদর ও জামায়াতে ইসলামী গনহত্যার কাজে জড়িত ছিলো এবং নিজে দলের সদস্য হিসেবে সে এটি স্বীকার করে। সেই প্রমানে দলগুলোর যাবতীয় দলীয় সম্পদ ক্রোক করা যেতে পারে।
আমি জানি আমার উত্তর অধিকাংশের পছন্দ হবেনা-অথবা আমিও রাজাকার চিহ্নিত হতে পারি কিন্তু তবু আমাদের মনে রাখতে হবে যে মানুষের মৃত্যুর চেয়ে আদর্শের মৃত্যু আমাদের বেশি প্রয়োজন।
যদি মৃত্যুর উত্তরে মৃত্যুর দাবি নিয়ে কেউ এসে থাকে তাকে আমি বলে দিতে চাই-এরা শুধু মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিলো না। এরা মানুষকে এমনভাবে নির্যাতন করেছে যে তাদের জীবন ভরে সেই অত্যাচারের দাগ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। এরা এমনভাবে অত্যাচার করেছে যে মানুষের মরে যেতে ভয় করেছে। কাজেই মৃত্যুর মতন সহজ সাজা দিয়ে এদের আর ছেড়ে দেয়া যায়না। এদের নিজেদের হাত দিয়ে নিজেদের আদর্শকে টিপে মারাতে হবে। সারাজীবন নাগরিকত্বহীন করে নো ম্যানস ল্যান্ডে একটি জেলখানা বানিয়ে সেখানে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার সরবরাহ দিয়ে জনমানুষের সংস্পর্শ থেকে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবার মতন যন্ত্রনা দিতে হবে। এদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটাতে হবে চূড়ান্ত অপমান আর উপহাসের মধ্য দিয়ে।
এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা সারাজীবন যন্ত্রণায় বেঁচে থাকে আর মরার সময় মরে যেতে ভয় পায়।
এরা যাতে কেউ শহীদ হতে না পারে।
©somewhere in net ltd.