নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই লোকটি আজকের বাংলাদেশকে একাত্তরের লজ্জা বলে ডেকেছিলো

অনুপম দেবাশীষ রায়

আমি অনুপম

অনুপম দেবাশীষ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৬

উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস
গত এক সপ্তাহ ধরে আমি তিনজন আমেরিকান বাঙ্গালী ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছি। এরা আমেরিকায় জন্মানো আমেরিকান নাগরিক। এদের বাবা মা খাঁটি বাংলাদেশী। কাজেই ব্যকরণ অনুযায়ী এরা বাংলাদেশী বংশদ্ভুত। এর খুব একটা বাংলা পারে না। পারলেও একটা দুইটা শব্দ খুব ভাঙ্গা ভাঙ্গা করে বলে। চিটাইংগা বাবা মায়ের ঢাকায় বড় হওয়া সন্তান যেমন বন্ধুদের মাঝখানে ভাঙ্গা ভাঙ্গা করে একটা দুইটা চিটাইংগা কথা বলে ভাবে উঠে-তেমন।
এদের দুইজন আগামী ফেব্রুয়ারীতে বাংলার উপর পরীক্ষা দেবে। আমেরিকান হাইস্কুলে একটা করে ফরেন ল্যাংগুয়েজ শেখা বাধ্যতামূলক। সেইজন্য তারা একয়দিন স্প্যানিশ শিখে আসছে। রিসেন্টলি তারা আবিস্কার করেছে যে বাংলা একটা পরীক্ষা দিয়েও এই বিষয়ক এক্সট্রা ক্রেডিট পাওয়া যায়। তাই তারা বাংলা পরীক্ষা দিতে চায়।
কাজেই অংক বিজ্ঞান রেখে ওদের বাংলা পড়াতে বসতাম। তবে সমস্যা দেখা দিলো ত এবং ট নিয়ে। দেখা গেলো ওরা যতবার তুমি বা তোমরা লেখার চেষ্টা করছে-ওরা ত এর স্থলে ট লিখে ফেলছে। আমি ওদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে ত আর ট দুইটি আলাদা অক্ষর-আলাদা উচ্চারণ। কিন্তু ওরা বুঝতেই চায়না। ইংরেজি টি এর বাংলা উচ্চারণ করে।
আমি তাই বললাম-তোমরা তো সবাই স্প্যানিশ পড়ছো-সেখানে you কে বলে tu, তাইনা? সেই tu এর t এর যে উচ্চারণ, বাংলা ত এর সেই উচ্চারণ।
এবার তারা বুঝতে পারলো। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুতদের বাংলা শেখানো হলো স্প্যানিশের মাধ্যমে।
এদের তিনজনের মধ্যে একজন আবার খুব ভালো বাংলা পারে। সে ক্লাস ওয়ানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা এসেছে। কাজেই তার বাংলা বেশ ঝরঝরে। তাকে বাংলা নিয়ে বিশেষ সমস্যা পোহাতে হচ্ছেনা। সে আবার খুব ভালো ছাত্রী। সে স্প্যানিশেও খুব ভালো করছে।
কাজেই সে বাংলা পরীক্ষাটি দেবে কিনা এখনও নিশ্চিত নয়-না দেবার সম্ভাবনাই বেশি।
ছেলেমেয়েগুলো খুব ভালো। বাংলাদেশী বাবা মা তাদের বাঙ্গালীর বাচ্চার মতন পেলেছেন। ভদ্র সভ্য ছেলেপুলে। ওরা আজ ক্রিসমাস পালন করছে। ওদের মেরী ক্রিসমাস।

ক্রিসমাসের একটা বেশ বিখ্যাত ক্যারল বা গান হলো-লেট ইট স্নো। ক্রিসমাসের দিন বরফ পড়বে এটাই স্বাভাবিক আর এই বরফ ছাড়া ক্রিসমাস ভালোমত জমেও না। আমি বাংলাদেশী মানুষ। আমি শীত মাপি বাংলাদেশের প্যারামিটারে। এখনও আমেরিকায় বাংলাদেশের সমানও শীত পড়েনি। ডিসেম্বর মাসে মানুষ হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পরে ঘোরাঘুরি করছে।
আমি ইদানিং উবারে করে অফিসে যাই। আমি গরীব মানুষ-প্রত্যেকদিন উবারের খরচ বহন করা আমার জন্য সম্ভব নয়। শীতের মাঝে বাসে করে দুই ঘন্টা ধরে অফিসে আসতাম দেখে অফিস থেকে উবারের খরচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সেই উবারে আমার একেকদিন একেক বিচিত্র মানুষের সাথে দেখা হয়। একদিন দেখা হলো এমন একজনের সাথে যে স্বঘোষিত রিপাবলিকান। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো বাংলাদেশটা কোথায়।
আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম-আমি বললাম ভারত যদি হিন্দুদের দেশ হয় আর পাকিস্তান যদি মুসলিমদের দেশ হয়, বাংলাদেশ ঠিক মাঝামাঝি। বাংলাদেশ সবার দেশ।
সে বললো-আমি বাংলাদেশের নাম যতবার শুনেছি-ততবার শুনেছি যে সেখানে বিরাট বন্যা হচ্ছে। তোমার দেশটা সমুদ্রের অনেক কাছে-তাইনা?
আমি বললাম, হ্যাঁ। এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। এই কারণে বাংলাদেশ খুব কম সময়ের মাঝে একেবারে সমুদ্রে তলিয়ে যাবার একটা সম্ভাবনাও আছে।
লোকটা বললো-আমি আসলে এইসব থিওরিতে খুব বিশ্বাস করিনা। বিজ্ঞান এখনো কোন কনক্লুসিভ এভিডেন্স দিতে পারেনাই। এগুলো সব লিবারেল প্রোপাগান্ডা। এরকম কিছু যদি হয়েও থাকে তাহলে সেটা আমাদের করা নয়। নিজের থেকেই হচ্ছে। ওবামার হেড সায়েন্স গাই পর্যন্ত এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমি কেন জানি আজকাল আর নির্বোধ লোকদের খুব একটা কিছু বোঝাতে চাইনা। বিশেষত সে যদি আমেরিকান হয়। নির্বোধ আর নির্বোধ আমেরিকানদের মাঝে একটা বড় পার্থক্য আছে। তারা হলো নির্বোধ এবং সিটিজেন অফ দ্য গডড্যাম বেস্ট কান্ট্রি ইন দ্য গডড্যাম ওয়ার্ল্ড। এদের সাথে বাহাস করে লাভ নেই।
আমি শুধু উবার থেকে নামার আগে বললাম। নাইস প্যান্টস ম্যান! মেরি ক্রিসমাস ইন এডভান্স।
হাফপ্যান্ট পরা উবার ড্রাইভারকে বরফবিহীন মেরী ক্রিসমাস।
আমার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর চার্লস ভারহারেন আমাকে বন্ধের আগে বললেন-তুমি তোমার পড়ালেখা দিয়ে কি করবে? আমি বললাম বাংলাদেশের রাজনীতি ঠিক করে ফেলবো। ভারহারেন বললো-তুমি বাংলাদেশে যেতে যেতে আরো দশ বছর। রাজনীতি করে সফল হতে হতে আরো দশ থেকে বিশ বছর। দেশের রাজনীতি ঠিক করা পর্যন্ত তোমার দেশ থাকবে তো-নাকি ডুবে যাবে?
আমি বললাম আমি জানি না। আমি সারাজীবন আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে গালি দিয়ে কাটিয়েছি। আমি কখনও এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিই নাই।

দুনিয়া এদিক ওদিক করে দেয়া ভারহারেনকে মেরী ক্রিসমাস। সে এই ছুটিতে পৃথিবীর কোন প্রান্তে গিয়ে মানুষজনকে ফিলসফির প্রশ্ন করে বেড়াচ্ছে কে জানে।

প্রফেসর জন কটম্যান পড়াচ্ছিলেন পাবলিক অপিনিয়ন। কিভাবে পলিটিকাল থিওরি অনুযায়ী একটা দেশের সরকার খুব দূর্বল হলে দেশের মানুষের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ কমে যাবার কথা-সেই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি বললাম-আমি এই থিওরির সাথে একমত নই। বাংলাদেশের গভমেন্ট প্রচন্ড দূর্বল। অথচ বাংলাদেশের মানুষ সারাদিন গভমেন্ট নিয়ে চিল্লাপাল্লা করে। রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কোন কমতি নাই।
কটম্যান বললেন-সেইটা হতে পারে শুধু যদি তোমার দেশের অধিকাংশ মাস রেভল্যুশন সফল হয়ে থাকে-সেটা কি সত্যি।
আমি বললাম সত্যি- বাহান্ন সফল,ছেষট্টি সফল, ঊনসত্তর সফল,একাত্তর সফল,নব্বই সফল, তেরো সফল।
আমার এক সহপাঠী সাথে সাথে আমাকে প্রশ্ন করলো- এতোগুলো সফল বিপ্লব থাকলে একটা দেশের রাজনীতি এখনও এতো দূর্বল কেমন করে থাকে।
কটম্যান বললেন- রেভল্যুশন তখনই সফল হয় যখন আগের অভিজাতরা বিপ্লবের পরে আর অভিজাত থাকেনা। অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা এক শ্রেনী থেকে অন্য শ্রেনীতে বদলাম। টেল মি-রয়, তোমার দেশে কি এমন হয়েছে।
আমি বললাম না-হয়নি। কাজেই আমাদের মনে হয় আমাদের অনেকগুলো সফল বিপ্লব রয়েছে এবং সেইজন্যে আমরা আবার বিপ্লব করতে চাই। কিন্তু অলমোস্ট কোন বিপ্লবই সফল বিপ্লব নয় কারণ ক্ষমতা যাদের হাতে ছিলো-ক্ষমতা তাদের হাতেই আছে।

আমার বিফল বিপ্লবী সকল বাংগালী রক্তগরম মানুষকে মেরী ক্রিসমাস।

কিছুদিন আগে একটা কবিতা সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। নিজের লেখা কবিতা পড়লাম। সবাই বাহবা দিলো-সেটা পরের কথা। কবিতা সন্ধ্যা শেষে এক সম্মানীয় আংকেল বললেন-আমরা চেষ্টা করি আমাদের ছেলেপেলেকে বাংলাদেশী সংস্কৃতির মাঝে রাখতে। যাতে তারা এই দেশের অপসংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট না হয়।
আমার আংকেলটি জন্মগতভাবে বাংগালী। তার কাছে আমেরিকান সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতি বলে মনে হচ্ছে। তার ছেলেটি জন্মগতভাবে আমেরিকান। তার কাছে বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে বোরিং সংস্কৃতি মনে হতেই পারে। তার ছেলে আমার পিছনে বসে ছিলো। তার হাবেভাবে সেই বক্তব্যই স্পষ্ট। আমি তাকে খুব একটা দোষ দিতে পারলাম না।
আমার মনে হলো-এতো যদি দেশদরদ থাকে, তবে দেশ ছেড়ে বিদেশে আসা ক্যান?আমার আংকেলের উপর রাগ জন্মালো।
আমি আংকেলকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি জানালেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে শিবিরের ছেলেপেলে তাকে একটা বিল্ডিংয়ের তিনতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। তার এখনও বেশিক্ষণ বসে থাকতে কষ্ট হয়।
আংকেল এখন আমেরিকার নাগরিক। তিনি পরের নির্বাচনে ভোট দেবেন।

উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস
উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস
উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস
এন্ড আ হ্যাপি নিউ ইয়ার।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

"আমি ইদানিং উবারে করে অফিসে যাই। "

-উবারে'টা কি জিনিষ?

বাচ্ছাগুলো ভুল রাজনীতি ও সামান্য বাংলা শিখবে মনে হচ্ছে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৬

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: https://en.wikipedia.org/wiki/Uber_(company

না জেনে কাউকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আর কথা বাড়ালাম না। আমি কেন জানি আজকাল আর নির্বোধ লোকদের খুব একটা কিছু বোঝাতে চাইনা। বিশেষত সে যদি আমেরিকান হয়। নির্বোধ আর নির্বোধ আমেরিকানদের মাঝে একটা বড় পার্থক্য আছে। তারা হলো নির্বোধ এবং সিটিজেন অফ দ্য গডড্যাম বেস্ট কান্ট্রি ইন দ্য গডড্যাম ওয়ার্ল্ড। এদের সাথে বাহাস করে লাভ নেই। =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

ঈসা আ: এর জন্ম দিনের শূভেচ্ছা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.