![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The Darkest Places in the Hell are Reserved for Those who Maintain Their Neutrality in Times of Moral Crisis. ꟷDante Alighieri
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমি অন্য কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলি। হিজড়া শব্দটির সাথে আজকাল প্রায় সবাই পরিচিত। হিজড়া বলতে সাধারণতঃ ট্রান্সসেক্সুয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে বুঝানো হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। হিজড়া শব্দের অপর অর্থ হচ্ছে ‘ট্রান্সজেন্ডার’, ট্রান্সজেন্ডার বলতে এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থাকে বুঝায় যা দৈহিক বা জেনিটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোন শ্রেণীতে পড়ে না।
গ্রাম বাংলার হাট-বাজার গুলোতে প্রতি সপ্তাহের বাজারের দিন এদের দেখা মেলে। কোন দোকানদারের কাছে কিছু চাইলে (অবশ্যই বিনামূল্যে) যদি সে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই এরা উলঙ্গ হয়ে যায়।
এবার আসি মূল আলোচনায়।
শ্রদ্ধেয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর শেষ ছবি “ঘেটুপুত্র কমলা” ছবিতে আমরা এক ঘেটুপুত্রকে দেখেছি। আসলে ঘেটুপুত্র কাকে বলা হয়?? যখন বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়, মাঠ-ঘাট-ফসলের জমি পানিতে একাকার হয়ে যায় তখন ঐসব এলাকার জমিদাররা এক ধরণের বিশেষ নৃত্য-গানের আয়োজন করতেন। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সেখানে কোন মেয়ে নাচ গান করতো না! বরং একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে সেখানে রাজার সামনে তাকে নাচানো হতো। মেয়ের সাজে এসব ছেলেদেরকেই বলা হয় ঘেটুপুত্র। আরও আশ্চর্য্যের বিষয় হলো যে এই ঘেটুপুত্রদের কাজ শুধু নাচ-গানেই সীমাবদ্ধ থাকতো না, জমিদারের বিকৃত যৌন বাসনা পূরণ করার জন্য তাদেরকে জমিদারের শয্যাসঙ্গীও হতে হতো!
তবে মজার ব্যাপার হলো এসব ঘেটুপুত্ররা কিন্তু সমকামীদের মতো কিংবা হিজড়াদের মতো জেনেটিক ত্রুটির কারণে এমন হতো না। বরং তাকার বিনিময়ে কতিপয় বিকৃত যৌনরুচির লোকদের মনোরঞ্জন করার জন্যই এরা ঘেটুপুত্র সাজতো। “ঘেটুপুত্র কমলা” ছবিতে আমরা কমলা নামের এক দরিদ্র ঘেটুপুত্রের কাহিনী দেখতে পাই।
উইকিপিডিয়া ঘেটুপুত্র সম্পর্কে বর্ণণা করেছে এভাবে, “প্রায় দেড়শ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে বর্তমান বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন গ্রামীন সঙ্গীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন সেই সঙ্গীত ধারাতে মেয়েদের পোশাক পরে কিছু সুদর্শন সুন্দর মুখের কিশোরদের নাচগান করার রীতি চালু হয়। এই কিশোরদের আঞ্চলিক ভাষাতে ঘেটু নামে ডাকা হতো। ঘেটু নামের নব এই সঙ্গীত ধারাতে গান প্রচলিত সুরে কীর্তন করা হলেও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাব বেশ লক্ষনীয় ছিল। গ্রাম্য অঞ্চলের অতি জনপ্রিয় নতুন সঙ্গীতরীতিতে নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। সমকামী বিত্তবানরা বিশেষ করে জোতদার প্রমুখ এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করে। একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। হাওর অঞ্চলের জমিদার ও বিত্তবান শৌখিন মানুষরা বর্ষাকালে জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও ঘেটুপুত্রদের নিজের কাছে রাখবেন এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হতে থাকে। সমকামী বিত্তবানদের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে।”
এবার একটু ঘুরে আসি মোঘল সাম্রাজ্য থেকে। সম্রাট হুমায়ূন যখন শের খাঁ'র বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করছিলেন তখনকার কথা। সম্রাট বাংলা মুলুক কখনো দেখেননি। শের খাঁকে পরাস্ত করে তিনি বাংলা মুলুকে কয়েকদিন বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলা মুলুকের হিজড়ারা নাকি নৃত্যগীতে বিশেষ পারদর্শী! তাদের নৃত্যগীত সাধারণ নৃত্যগীতের চেয়ে আলাদা, কতটা আলাদা তা সম্রাটেরও দেখার ইচ্ছা।
সম্রাটের ভাই আসকারি মির্জা বঙ্গ বিজয়ের পর উপহার হিসেবে সম্রাটের কাছে কয়েকজন হিজড়া চেয়েছিলেন!
সম্রাট হুমায়ূনের পতনের পর হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জা যেন তাঁকে ধরিয়ে দেয় সেজন্য শের শাহ্ কামরানকে কিছু উপহার পাঠিয়েছিলেন। এসব উপহারের মধ্যে দুজন হিজড়াও ছিল। বঙ্গদেশের হিজড়াদের মোঘল হেরেমে কদর ছিল। রাজপুরুষরা যৌন কদর্যতামুক্ত ছিলেন না।
যাহোক আলোচনা শেষ করে আনি। নিজেদের বিকৃত যৌন লালসা পূরণ করার জন্য রাজা-বাদশা-জমিদাররা হিজড়া/ঘেটুপুত্র নিয়ে নাচ গানের নামে সমকামিতায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু এসব ঘেটুপুত্রদেরকে শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের ঘেটুপুত্র কমলা ছবির কমলার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতো।
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
অমিয়েন্দ্র বলেছেন: লেখা আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...
২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:১৭
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। ভালো লিখেছেন
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
অমিয়েন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ জাহেদ ভাই। ভাল থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। লেখনীও প্রাঞ্জল, ভালো লাগলো।