![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।
ডেটলাইন ১৭ মে ১৯৭১ সোমবার
আনোয়ার কামাল
বাগেরহাটের বাসাবাটিতে হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে একাকার ছিল।
দড়াটানা নদী তীরের সমৃদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র
সেখানে ব্যবসা করতেন ভেলানাথ বসু।
২ জৈষ্ঠ্য ১৩৭৮ ১৭ মে ১৯৭১সোমবার ভোরের আকাশ লাল হয়ে উঠেছিল
যুদ্ধের ডামামা বেজে চলেছে।
দারুন অস্থিরতা, ভোলানাথ বসু পরিবারে অজানা শঙ্কা
সকাল সাতটায় ভোলানাথ বসুর স্ত্রী রান্না কাজে ব্যস্ত
বড়দের বাইরে বেরুনো নিরাপদ নয় ভেবে
পুত্র জগন্নাথকে বাবা বাজারে পাঠালেন আর তিনি বারান্দায়
চেয়ার পেতে পুত্রের ফিরে আসার অপেক্ষায়--------
এরই মধ্যে কান ফাটানো বন্দুকের পর পর তিনটি গুলির শব্দ
আর সেই সাথে ভোলানাথের আর্ত চিৎকার
‘ ভাই আমার একটা কথা-----’
কথা আর শেষ হয় না, ভোলানাথ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।
শরীরের একদলা মাংশ ছিটকে পেছনের দেয়ালে আটকে যায়
বাড়ির সবাই পাথর হয়ে যায়।
বাসাবাটির করিম মওলানার ছেলে আলী আর রাজমিস্ত্রি কুটি মোল্লা
বীর দর্পে দল বল নিয়ে হত্যাকান্ড শেষ করে চলে যায়
স্ত্রী কন্যা পুত্রদের সাথে ভোলানাথের পোষা প্রিয় একপাল কুকুর
সমানে একটানা আর্তনাদ করতে থাকে সারাটি রাত
যেন স্বজন হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারে না এ প্রাণীগুলোও।
কোনমতে বাড়ির পাশেই তার নিথর দেহকে পরিবারের সবাই মিলে
মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
ভোলানাথের মৃত্যুর পর তার পরিবার একযোগে আত্মহননের পথ খুঁজছিলেন
কিন্তু মৃত্যুবান তাদের সংগ্রহ করা হয় না।
২২ মে ১৯৭১ শুক্রবার স্থানীয় মৌলবি সাহেব তাদের ত্রাতা হয়ে এলেন
মৌলবি সাহেব ভোলানাথের সব ছেলে মেয়েদের নাম বদলে দিলেন
বড় ছেলে স্বপন- তার নাম রাখা হলো সোরাবউদ্দিন
রড় মেয়ে মঞ্জু- তার নাম রাখা হলো মমতাজ
মেজ মেয়ে মনা- তার নাম রাখা হলো আমিনা।
একে একে সবার মুসলমানি নাম রাখা হলো।
নাম রাখা শেষে বাড়িটা ‘মুসলমান বাড়ি’ কাগজে লিখে টাঙ্গিয়ে দিলো।
চল্লিশ বছর পর শহীদ ভোলানাথের সমাধির পাশে লাগানো রক্ত জবা
আজো লাল টকটক করে ফুটে আর ঝরে পড়ে বুকের ওপর
এসব অজানা শহীদদের কেউ খোঁজ রাখেনা
কেবল স্বজনরাই এসব হত্যাকারীদের বিচারের আশায়
অনন্তকাল প্রহর গুণতে থাকে।।
[ ১৯৭১ সালের ১৭ মে; বাংলা ১৩৭৮ সনের ২ জৈষ্ঠ্য সোমবার বাগেরহাটের ব্যবসায়ী ভোলানাথ বসুকে রাজাকাররা হত্যা করে।
৪০ বছর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে পারিবারিক স্মৃতিভাষ্য ১৯৭১ “অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন” নামক বই থেকে নেয়া। ]
©somewhere in net ltd.