নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তহীন স্বপ্নযাত্রা

অাপেল মাহমুদ

অন্তহীন সংগ্রামমুখর জীবন আমার । শৈশব-কৈশরের কষ্টকর অধ্যায় পেরিয়ে স্বপ্নযাত্রায় পাল তুলে নিরন্তর পথচলা শুরু করেছি । কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতার মহান পেশায় কিছুদিন নিয়োজিত ছিলাম । এরপর আমলার আটপেৌরে জীবনে প্রবেশ । স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালবাসি । মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় । কখনো কখনো স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারে মানুষ । অাজীবন এই বিশ্বাস লালন করেছি । একটা কিছু করার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে অামার ।জীবনটাকে নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করতে ভাল লাগে আমার ।

অাপেল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিত্যদিনের অপমানগুলো

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

শিষ্টাচার , বিনয়, ভদ্রতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এসব গুনাবলি প্রতিটি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হওয়ার কথা হলেও দিন দিন বাঙ্গালির এসবের কমতিটা লক্ষণীয় । আমাদের নিত্য পথচলায় বিব্রতকর ও অপমানজনক ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয় । ব্যক্তি জীবনের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় জীবনেও অন্যের প্রতি স্বাভাবিক শিষ্টাচার প্রদর্শনে রয়েছে আমাদের সীমাহীন দীনতা । হাজার বছরের বাঙ্গালি সংস্কৃতির নান্দনিক ও মানবিক দিকগুলো যেন ক্রমান্বয়ে অপসংস্কৃতির কানাগলিতে হারিয়ে যাচ্ছে । তুচ্ছ কারণে একে অন্যকে অসম্মান করা কিংবা কথার মারপ্যাচেঁ কাবু করতে না পারলে উন্নত সংস্কৃতির চর্চা হয় না। এরকম অসম্মানজনক অভিজ্ঞতা প্রতিটি বাঙ্গালির ভাগ্যে প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকে । রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে অফিসের বড়কর্তা পর্যন্ত প্রত্যেকের ব্যবহারের মধ্যে অন্যকে অপমান করার ব্যাপারে অদ্ভুত অন্তমিল রয়েছে । শিক্ষিত মানুষের নিকট পরিশীলিত আচরণ প্রত্যাশিত হলেও অপ্রত্যাশিতভাবে তা পাওয়া আজ সত্যিই দুষ্কর । পথ চলতে গিয়ে এরকম অগুনতি অসম্মানজনক আচরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার । একবার নিজ জেলার একটি অফিসে গিয়ে পিয়নের নিকট কিভাবে আবেদন করতে হবে জানতে চাইলে হাটতে হাটতে পিয়ন সাহেব একবার জবাব দিলেন বটে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করতেই বিরক্ত হয়ে বললেন "আপনি বাংলা বোঝেন না" ? আমার বাংলা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি প্রথমবারের মত বুঝতে পেরে বরং লজ্জিতই হলাম । বাস কাউন্টারে বসা টিকেট বিক্রেতার নিকটও দু'বার প্রশ্ন করা যায় না । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন আমার অজ্ঞতা । একদিন ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি । কাউন্টারে একমাত্র টিকেট ক্রেতা হিসেবে আমি একাই ছিলাম । প্রথম শ্রেণীর একটি টিকেট চাইতেই টিকেট বিক্রেতা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন "কখনও ট্রেনে চড়েছেন" ? তার রাগের কারণ না জেনেই বললাম "জি মাঝে মাঝে চড়ি" । তিনি বললেন "আপনি জানেন না শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ফেনী প্রথম শ্রেণীর টিকেট হয়না "। আমার অজ্ঞতা বুঝতে পেরে বললাম তাহলে চট্টগ্রামের টিকেট দেন। এবার অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বরে বললেন "সেটা বলেন" । আরেকবার বাড়ি যাওয়ার জন্য সহকর্মীসহ ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে উঠে আমাদের জন্য নির্ধারিত আসনের উপরে ব্যাগ রাখার স্থানে অন্য একটি ব্যাগ দেখে সেটা কার জিজ্ঞাসা করলাম । ব্যাগের মালিককে না পেয়ে সেটি সরিয়ে পাশে রাখলাম । কিছুক্ষণ পর একজন শ্মশ্রুমন্ডিত পৌঢ় মত লোক এসে জিজ্ঞাসা করলেন ব্যাগটি সরালো কে? আমি সরিয়ে রেখেছি বলতে না বলতেই লোকটি রুদ্র মূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেন "আপনি মিয়া বেকুব নাকি" আপনি পাগল নাকি ? আপনি জানেন মিয়া এই ব্যাগের মধ্যে কি আছে ? ভয়ে ভয়ে বললাম না চাচা আপনার ব্যাগে কি আছে আমি কি করে জানবো ?তিনি বললেন এরমধ্যে কোরআন শরীফ রয়েছে । কিছুটা ভয় পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম চাচা আমি কিছুটা বেকুব, পাগলামিও আছে কিঞ্চিত, ভুল হয়ে গিয়েছে, আপনার ব্যাগটা এখন নিয়ে যান । বিনা টিকেটের ঐ যাত্রী অবশেষে শান্ত হয়ে আমাকে নিষ্কৃতি দিলেন । রিক্সা কিংবা সিএনজি ড্রাইভার সুযোগ পেলে যাত্রীটাকে অপমান করতে ছাড়েন না । অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাত্রীর নিকট তারাও ভালো ব্যবহার কমই পান । অনেক বাস ড্রাইভার আস্তে চালানোর অপরাধে যাত্রীদের গালাগাল শুনে অপমানে জোরে বাস চালাতে গিয়ে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন । এসব ক্ষেত্রে ড্রাইভারকে সম্পূর্ণ দায়ী করা হলেও যাত্রীদের দায়ও নেহাত কম নয় । ।অফিসের ছোট থেকে বড় কর্তার কাছে ন্যায়সঙ্গত কাজে গিয়ে সেবা প্রত্যাশী মানুষের একটা বড় অংশ পত্রপাঠ অপমানিত হয়ে ফিরে যেমন আসেন, তেমনি সেবা গ্রহিতার অন্যায্য ও অযৌক্তিক আবদার না রাখার কারণে অনেক ছোট বড় কর্মকর্তা কর্মচারীকে অপমানিত ও লাঞ্চিত হতে হয় । একজন মানুষ অন্যের নিকট যে আচরণ প্রত্যাশা করেন না তিনি নিজেই আবার আরেকজনের সাথে একই আচরণ করে অন্যের আশাভঙ্গের কারণ হন । আমরা কি ক্রমান্বয়ে চরম অসহিষ্ণু জাতিতে পরিণত হচ্ছি ? রাজনীতি থেকে সামাজিক, ব্যক্তি থেকে সামষ্টিক সর্বক্ষেত্রে শিষ্টাচারের বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে আজ । এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে সভ্য,বিনয়ী ও পরিশীলিত জাতিতে পরিণত হতে পারবো কবে?







মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১১

হতাস৮৮ বলেছেন: মনের কথাটাই বলেছেন ভাই সাহেব...অসংখ্য ধন্যবাদ এই রকম লেখার জন্য... :) :) :) :)

২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩০

প্রামানিক বলেছেন: একদিন ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি । কাউন্টারে একমাত্র টিকেট ক্রেতা হিসেবে আমি একাই ছিলাম । প্রথম শ্রেণীর একটি টিকেট চাইতেই টিকেট বিক্রেতা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন "কখনও ট্রেনে চড়েছেন" ? তার রাগের কারণ না জেনেই বললাম "জি মাঝে মাঝে চড়ি" । তিনি বললেন "আপনি জানেন না শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ফেনী প্রথম শ্রেণীর টিকেট হয়না "। আমার অজ্ঞতা বুঝতে পেরে বললাম তাহলে চট্টগ্রামের টিকেট দেন। এবার অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বরে বললেন "সেটা বলেন" ।

ভাল লাগল আপনার বর্ননা। ধন্যবাদ

৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩০

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: উৎসাহ যোগানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ হতাস৮৮ ।

৪| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩২

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য ।

৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


জাতি অস্হিরতা ও পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসে ভুগছে।

৬| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩

এইস ম্যাকক্লাউড বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

একটা প্রশ্ন ছিলো।
বিনা টিকেটের ঐ যাত্রী অবশেষে শান্ত হয়ে আমাকে নিষ্কৃতি দিলেন

জনৈক মুরুব্বীর বিনা টিকিটের যাত্রী হওয়ার কাহিনীটাও যদি বলতেন, তাহলে ভালো হত।

৭| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: জাতি হিসেবে পৃথাবীতে সবচাইতে নিকৃস্ট অশিক্ষিত অভদ্র দুর্বিনীত দুর্ণীতিবাজ পরশ্রীকাতর অলস জাতি হলাম আমরা। অনেকে মাইন্ড করতে পারেন!

৮| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০৩

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ এইস ম্যাকক্লাউড । বিনা টিকেটের ঐ যাত্রী শুধু নয় অনেকেই টিকেট না কেটে সামান্য বখরা দিয়ে প্রথম শ্রেণীর এসি কম্পার্টমেন্টের যাত্রী বনে যান । যাদের দেখার কথা তারাতো সামান্য বখরাতে সন্তুষ্ট থাকে ।

৯| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১০

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ সুন্দর করে লেখার জন্য । জাতি হিসেবে আমাদের হাজার বছরের সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চারও ঐতিহ্য রয়েছে । তবে ক্রমান্বয়ে ভালো গুনগুলোর জায়গা খারাপগুলো দখল করে নিচ্ছে ।

১০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী । জাতি হিসেবে আমাদের পারস্পরিক আস্থার হার খুবই নগণ্য । ১৯৮০ খ্রি. এক সমীক্ষায় অধ্যাপিকা রাজিয়া আক্তার বানু দেখিয়েছেন বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে মাত্র ৪.৫ শতাংশ মানুষ পরস্পরকে বিশ্বাস করে ; শহরাঞ্চলে পারস্পরিক আস্থার হার মাত্র ২.৫ শতাংশ (সূত্র : অন্ধকারের উৎস হতে, ড. আকবর আলী খান )

১১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমরাতো এমন ছিলাম না ?
হিউয়েন সাং , ইবনে বতুতা আর আবুল ফজল রা যাদের অতিথি পরায়নতা , সহনশীলতা, ভদ্রতা আর সহমর্মীতার ইতিহাস লিখে গেছেন , তবে কি আমরা তারা নই ?

আফসোস !!!
চমৎকার পোস্টের জন্য আপেল মাহমুদকে ধন্যবাদ ।

১২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

অাপেল মাহমুদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য লিটন ভাইকে ধন্যবাদ । আমরা সোনালী অতীতের অসাধারণ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী বটে তবে কালক্রমে তা বিলুপ্ত হতে বসেছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.