নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মা ও মাটির প্রতি মনের টান বুঝার জন্য অন্তত একবার বিদেশ ভ্রমন করুন

এপোলো

একটি বাংলা ব্লগ পেয়ে আমি খুব খুশি।আমি সকলের সাথে বাংলায় ভাব করতে পারব।

এপোলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভ্যাস মানুষের দাস (অথবা দাসী)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৫৫

অনেকগুলো কথা মনে জমে আছে, এলোমেলো। সাজাতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু উদাহরণও আছে কথার ফাঁকে গুঁজে দেয়ার জন্য। কিন্তু সাজাতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কথা সাজানো বড় ঝামেলার কাজ। এইদিক দিয়ে হিসাব করলে রাজনীতিবিদ আর মসজিদের ইমামদেরকে আলাদা করে সম্মান দিতে হয়। ওরা কথা বলেই জীবন কাটায়। ওদের বলা কথার শক্তি অনেক, ওরা মানুষকে লাইনে তুলতে পারে, বেলাইনে দৌড়াতেইও পারে।

যাহোক, আসল কথায় আসি। ভাবতেছিলাম অভ্যাস নিয়ে লিখব। লেখালেখির অভ্যাস পুরোনো। তাই লিখতে বসা। এইদিক দিয়ে আমি অভ্যাসের দাস। এই অভ্যাসের কারণে এখন মায়ের সাথে কথা বলতে গেলে কিছু কটু কথা শুনতে হয়। উনি বলেন, আমার পুরোনো অভ্যাস ঘাড়ত্যাড়ামি করা। এখনো নাকি এই স্বভাব রয়ে গেছে। কথা কিছুটা সত্য। আমার বয়সের কারণে স্বভাবে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ছোটবেলায় না বুঝে ত্যাড়ামি করতাম, এখন কিছুটা বুঝে-সুজে করি। তবে অভ্যাস আমার বদলেছে অন্য দিকে। ঘুম থেকে উঠা নিয়ে। এখন আমার ৬ টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাত-জাগাকে একটা শৈল্পিক কাজ হিসেবেই মানা হয়। রাত ৮-৯ টার দিকে "বাড়ির কাজ" শুরু করতাম, রাত ২ টার সময় খিদা লাগত। হলের পাশের দোকান থেকে ডালভাজি দিয়ে পরোটা খেয়ে এসে ঘুমানোর চেষ্টা করতাম। সকালে ৮ টার দিকের ক্লাসগুলোতে যেতে কষ্ট হত, তবে মিস যেত না। এলার্ম দিয়ে রাখতে হত যেন ঠিক ২০ মিনিট আগে ঘুম ভাঙ্গে। পাশ করার পর চাকরি নিলাম চট্টগ্রামের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার। ভাগ্য আমার এমন, ক্লাস পড়ল সব সন্ধ্যা-রাতে। সকালে ৯ টার পর ঘুম থেকে ধীরে আস্তে চাকরিতে যেতাম। গল্প আড্ডা আর চাকরি করে রাত ১০ টার পর বাসায় ফিরতাম। সকালে রাজকীয় ঘুমের স্বভাবটা আরও পাকাপোক্ত হল। বছরদুয়েক পরে আবার পড়াশুনায় ফেরত আসলাম। মাস্টার্সের ক্লাসগুলো সব সকাল ১০ টার পরে। ল্যাবের কাজের টাইমিংয়ের ব্যাপারে প্রফেসর অনেক নমনীয়। উনি সাপ্তাহিক মিটিং এ আমার কাজের হিসাব নিতেন। হিসাব ঠিক থাকলে আমি কয়টায় ল্যাবে গেছি সেটা উনার কাছে কোন ব্যাপার না, রিসার্চ আউটপুট ঠিক থাকলে, আর প্রতিদিন ল্যাবে গেলে উনার আর কিছু লাগে না। তো সেই হিসেবে আমি ৯ টার পরে ল্যাবে যেতাম, পুরোনো অভ্যাসে রাত ১ টা ২ টা পর্যন্তও কাজ করতাম। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আমার সকালের রাজকীয় ঘুমের কোন ক্ষতি না করেই এই পর্বের পড়াশুনা শেষ হয়ে গেল। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাসটা পাকাপোক্ত হল। ৯ বছর বিশাল একটা সময়, অভ্যাস বানানোর জন্য ৯ বছর লাগে না। এই ৯ বছরে আমি রাতজাগা পাখি হয়ে সকালের সূর্যোদয় দেখা থেকে বঞ্চিত হলাম।

তারপর চাকরি পেলাম একটা শত বছরের পুরোনো কোম্পানীতে। ওখানে সাতসকালে অফিসে যাওয়ার নিয়ম, আমার বস আমাকে বললেন ৭ টা অথবা ৭ঃ৩০ টা অথবা ৮ টা'র যেকোন একটা সময় ঠিক করতে। ঠিক করলাম ৭ঃ৩০ এ যাব, বিকেলে ৪ঃ০০ টার সময় বাসায় ফেরত আসব। এখন আমার কষ্ট দেখে কে! সকালে এলার্ম দিতে হচ্ছে যাতে ঘুম থেকে উঠতে পারি ঠিকমত। প্রথম দুইমাস খুব কষ্ট হল। পরে ঠিক করলাম রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে, মুভি দেখা যাবে না আর। তাড়াতাড়ি তো আর ঘুম আসে না। বিছানায় শুয়ে থাকতাম ১১ টা হলেই। ঘন্টাখানেক পরে ঘুম আসত। বছরখানেক গেল এভাবে, এলার্ম মিস করলাম একদিন।
তারপর কোন একটা কারণে অফিস টাইম ৭ টায় নিয়ে আসলাম। এখন এলার্ম দিতে হয় ৬ টার সময়, তার উপর ডে লাইট সেভিং টাইম। সূর্য উঠার আগেই আমাকে উঠতে হচ্ছে, সূর্য উঠার পরপরই আমাকে ঘর থেকে বেরোতে হচ্ছে। আহা কষ্ট। রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হয়, কাকডাকা ভোরে উঠতে হয়। বউকেও কোনরকম রাজি করালাম রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে। তাতে তার নাটক দেখার ক্ষতি হবে অনেক, তাও আমার প্রতি মায়া দেখাল। সপ্তাহের ৫ টা দিন কোনভাবে শেষ হয় না। অপেক্ষা করি শুক্রবার রাতের জন্য। সপ্তাহে দুই ছুটির দিনের সকালে একটু সময় নিয়ে ঘুমাতাম। আহ, একটু শান্তির শনি-রবি। এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন।

সপ্তাহ তিনেক আগে খেয়াল করলাম শনিবারে সকাল ৬ টার কাছাকাছি সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল। রবিবারেও একই অবস্থা। এই দুইদিন কিন্তু আমার এলার্ম অফ থাকে। দেরী করে ঘুম থেকে উঠার নিয়ম। কিন্তু হল না। আগের সপ্তাহেও একই অবস্থা। গতকাল আর আজকেও সকাল ছয়টায় ঘুম ভেঙ্গে গেছে। অভ্যাসটা কি শেষ পর্যন্ত বদলে গেল তাহলে? তাহলে কি আমি "সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি জেগে" হয়ে যাচ্ছি? তাহলে আমার ৯ বছরের অভ্যাসের কি হবে?

ব্যাপারটা ভেবে একধরনের ভাল লাগছে। আমার দাদার কথা মনে পড়ছে। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি উনি সাতসকালে ঘুম থেকে উঠতেন। তারপর নামাজ পড়ে পান্তাভাত খেতেন। সকালে উনার পান্তাভাত কখনো মিস যায়নি। আমি হয়ত উনার পথেই হাটঁছি। এখন কোন রকমে আমার বউরে ব্যাপারটা বুঝাতে পারলেই হয়। বিগত কয়েকটা সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ঘুম থেকে উঠে দুইঘন্টা অপেক্ষা করা লাগছে সকালের নাস্তা করার জন্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১২

রাজীব নুর বলেছেন: অভ্যাসকে নিজের ইচ্ছা মতো চালাতে হয়।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৬

এপোলো বলেছেন: একটু কষ্টকর, তবে অসাধ্য নয়।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১১

কনফুসিয়াস বলেছেন: আহ। আমিও যদি আপনার মত এত সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৭

এপোলো বলেছেন: ঠেকায় পড়ে অভ্যাস বদলেছে।
তবে, এখন দেখছি সাতসকালে উঠলে সারাদিনে কাজ করার অনেক সময় হাতে পাওয়া যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.