![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ হিসেবে মর্মান্তিক বোকা। বোকা মানুষেরা ভালো হয়। আমিও ভালো। আমি জানি একদিন আমি থাকব না। একজন আরিফ রুমির অনুপস্থিতিতে কারো বিশেষ কিছু যাবে আসবে না। এ শহরে আগের জ্যাম লাগবে, বর্ষায় কদম ফুটবে, লোডশেডিং এর রাতে ফিনিক ফোটা জোছনা আসবে- কি অদ্ভুত প্রকৃতি আমাকে তা দেখতে দিবে না
জন্মের ছয়মাসের মাথায় বাবাটা মারা যায়।
মা আমাকে নিয়ে নতুন একটা পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলো।
নানু বাড়ির লোকজন মায়ের কথা শুনলো না, নতুন করে বিয়ের পিরিতে বসতে হয় মাকে।
আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দাদার বাড়িতে।
দাদী-ফুফু-চাচীর অনাদরে বড় হই।
একটা রাস্তার পথ শিশু যেভাবে মানুষ হয় আমি সেভাবেই দাদার বাড়িতে বড় হতে থাকি।
কোনো বেলা খেয়েছি তো ২ বেলা খাইনি।
কাজের লোকের মতো চর থাপ্পড় খেয়ে বড় হতে থাকি।
গোয়াল ঘরে গরুর সাথে ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছি।
.
সময়ের সাথে সাথে সয়ে যায় এখন আর গায়ে লাগেনা।
কোনোভাবে স্কুলটা শেষ করেছি।
এই পর্যন্ত আমার মা আমার একটা খোঁজ নেয়নি।
বড় হতে থাকি মায়ের প্রতি রাগ অভিমান বাড়তে থাকে।
নিজের পড়ার খরচ নিজে চালিয়েছি।
মনে একটা জেদ তৈরি হয় কিছু একটা করতে হবে।
.
একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরি বড় চাচার আর চাচির সে কি মাইর, তোকে না কতোবার বলেছি তুই স্কুলে যাবি না।
মা-বাবা কে তুলে গালাগাল শুরু করে, এতো অত্যাচার করে যে সাহস করে জবাব দেয়েই ফেলি।
রান্নাঘর থেকে ছোটো ফুফু সেটা শুনতে পেয়ে এক পাতিল গরম পানি শরীরে ঢেলে দেয়।
সেদিনই ই ঠিক করি পালিয়ে যাবো অনেক দূরে চলে যাবো।
রাতের অন্ধকারে নেমে পরি সব কিছুর মধ্যেও মাথায় ছিলো কিছু একটা করতে হবে।
এক বাড়িতে গরু চড়ানোর একটা কাজ জুটিয়ে নেই।
সেখানে থেকেই মেট্রিক পাশটা করে ফেলি এরপর ঢাকায় চলে আসি।
ঢাকায় এসে একটা হোটেলে হোটেল বয়ের কাজ জুটিয়ে ফেলি।
কলেজে ভর্তি হই।
.
রাতে হোটেলে কাজ আর দিনে ক্লাস করা।
ঘুম কি সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম।
সেখান থেকেই ইন্টারপাশটা করে ফেলি।
দিন দিন মায়ের প্রতি রাগটা বেড়েই চলেছে।
কিন্তু চেয়েছি জীবনে একবারের জন্য হলেও মায়ের মুখোমুখি হবো।
মায়ের চেহারা ভুলে গেছি, মায়ের চেহারা কেমন সেটাও জানিনা।
জন্মের ছয়মাসের মাথায়ই যে মা আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ইন্টারপাশ করা হলো ইচ্ছে করে না রাত জাগতে।
ইচ্ছে করে না মানুষের অনীহা নিয়ে বেঁচে থাকতে।
আচ্ছা সবার মা কি আমার মতো?
না আমার মায়ের মতো না, তাহলে মা শব্দটায় এতো মধুর হতো না।
হতে পাড়ে আমার মা এইরকম, নিজের সুখের জন্য হয়তো আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
আচ্ছা মা কি সুখে আছে? মা কোথায় আছে?
না মায়ের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে।
.
কিন্তু মা কোথায় আছে, মা দেখতে কি রকম তাও জানিনা। তবে ফুফুর কাছে শুনেছিলাম হাজারিবাগ এক এক মামা থাকে ওখান কার প্রভাবশালী।
হাজারিবাগ গিয়ে তার কথা জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে।
তার কাছে গেলে হয়তো খোঁজ পাওয়া যাবে।
চলে গেলাম সেই মামার কাছে পাওয়া গেলো।
মা চিটাগাং থাকে।
.
সেদিন সকালে খুব বৃষ্টিছিলো চিটাগাং শহরে নেমে মামার দেয়া ঠিকানা মতো চলে গেলাম।
বিশাল বড় বাড়ি।
গেটে দাঁড়ানো মাত্রই দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই?
আমি আমার মায়ের নাম বললাম ওনি আছেন?
আপনি কে?
আমি ওনার আত্মীয় দেখা করতে এসেছি।
আমাকে গেষ্ট রুমে বসতে দিলো।
কিছুক্ষন পরেই এক চশমা পড়া ভদ্র মহিলা আসলেন।
- কে বাবা আপনি ? আমার কাছে এসেছেন কেনো?
মায়ের প্রতি যতো রাগ - অভিমান ছিলো সব চোখের পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।
- একি আপনি কাঁদছেন কেনো?
আসলে দীর্ঘ ২৩ বছর পর মাকে দেখেছি তো তাই। আমি আপনার সেই ছেলে যাকে জন্মের ছয় মাসের মাথায় অন্যর হাতে তুলিয়ে দিয়েছিলেন।
.
'"৩০ মিনিট ধরে মা-ছেলে কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে "
এতোক্ষনে বাড়ির সব লোকজন এক হয়ে গেছে।
- দেখো বাবা হয়তো আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ থাকতে পারে কেনো আমি তোমার সাথে কোনোদিন দেখা করিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার নানু বাড়ির লোকজন কিংবা তোমার দাদা বাড়ির লোকজন কেউ আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে দেয়নি।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি,কিন্তু কেউ শুনেনি।
কিন্তু আমি প্রতিটা রাতে নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করেছি।
তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাকো। চোখের পানিতে জায়নামাজ ভিজিয়েছি।
বাড়ির সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো ছেলেটা কে?
- এ আমার বড় ছেলে।
.
এতোক্ষনে আমি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি।
বৃষ্টির পরিমানটা বেড়েই চলেছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ সংকেত চলছে। আমি বৃষ্টির মধ্যে হাটছি।
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসার সময় মা বলেছিলো থেকে যা।
আমি কিছু বলিনি, চুপচাপ বেড়িয়ে এসেছি।
জীবনে যেই সময়টাতে মাকে পাইনি এখন আর থেকেও লাভ কি?
শুধু শুধু মায়ায় বন্দী হতে চাই না।
আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করতাম একবারের জন্য হলেও আল্লাহ মায়ের মুখোমুখি করে দিও।
আমার সেই ইচ্ছা পূরন হয়েছে এখন আর ইচ্ছে নেই তবে চাওয়ার আছে, আল্লাহ তুমি মাকে সব সময় ভালো রেখো।
.
গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি,
ভালো একটা চাকরীও করছি।
মোহাম্মাদপুরে একটা বাসা নিয়ে একাই থাকি।
আজ একবার দাদার বাড়িতে যাবো।
চাচা-চাচি, ফুফু,দাদা-দাদীকে দেখতে।
ওনাদেরকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে..............
বৃষ্টিটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে......
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লেখা : আরিফ রুমি
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৮
সাফাত১৯৮০ বলেছেন: খুব ভাল লাগল। ঠিক যেন আমার বাস্তব কাহিনীর মত।গোবর কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবন র্নিবাহ করা ছেলেটি এখন বিসিএস ক্যাডার!!!
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:০৮
ওমেরা বলেছেন: ওমা গো কি কঠিন জীবন পার করেছে ছেলেটা ।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০১
কানিজ রিনা বলেছেন: চোখঝাপসাহয়েএল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: জীবনটা আসলেই কঠিন।