নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাখালীতে মহাবিপদে

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০১

মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে বি.আর.টি.সি’র একটি লাল বাসে জানালার পাশের একটি সিটে বসে আছি। রাত তখন আটটা কি সাড়ে আটটা। চারিদিকে জ্যামে ঘন হয়ে থাকা বিভিন্ন আকৃতির যানগুলো ধীর গতিতে কিন্তু অস্থিরভাবে এগোচ্ছে একটি আরেকটিকে টেক্কা দিয়ে ডানে বায়ে কেটে কে কার আগে যাবে সেই পাঁয়তারা করতে করতে। এইভাবে তির তির করে বাসটি যখন রেল ক্রসিঙের কাছে এসে পৌঁছল, যাত্রীদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা দেখা দিল। সেই দুর্জ্ঞেয় উত্তেজনা কিছুক্ষণের মধ্যেই কারণ খুঁজে পেল, যখন একটি ট্রেন সহসা অতিক্রম করবে বলে হুশিয়ারির ঘণ্টাটি আকস্মিকভাবে একনাগাড়ে বাজতে শুরু করল। গাড়িগুলোকে রেললাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বে আটকে রাখার লাল-সাদা দণ্ডটিও রাস্তার মাঝখানে ইতস্তত নেমে আসতে শুরু করল। এই শুরু হল যাত্রীদের হাউকাউ, চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, গালমন্দ! কেউ বলল, “ঐ ড্রাইভার তুই ইচ্ছা কইরা তাড়াতাড়ি পাড় হইলি না”; পাশ থেকে সাথে সাথে সমর্থন এলো, “এককেরে ইচ্ছা কইরা আটকাইল”; কেউবা হাহাকার করে উঠল “হইরে!”; আরেকজন পিছন থেকে খেঁকিয়ে উঠল, “টান দে ব্যাটা”। তো ড্রাইভার সাহেবও ‘যেমন গালি-তেমন কাজ’ করে একেবারে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ঠিক মাথার উপরে এসে ঠেকা লাল-সাদা বারটিকে এড়িয়ে উঠে গেলেন রেললাইনের ওপরে।



এইবার পড়লেন বিপদে। লাইনে তো উঠলেন, কিন্তু সামনের জ্যাম তো আর কাটে না! না পারে এগোতে, না পারে পেছাতে! এদিকে আক্ষরিক অর্থেই অশনি সংকেত দিতে দিতে ঘণ্টাটি যেন পাগল হয়ে গেল! আমিসহ বাসের বামদিকের জানালাগুলোর পাশে যারা বসেছিলেন, তাদের চোখের তারায় দ্রুত নিকটবর্তী হতে থাকা ট্রেনের এঞ্জিনের হেডলাইটের আলো হঠাৎ’ই যেন এসে ঠিকরে পড়ল। এ যেন গভীর অরণ্যে অতর্কিতে কোনও হিংস্র শ্বাপদের জ্বলন্ত চোখের সামনে পড়ে যাওয়া! বাস ইঞ্জিনে ঘোঁতঘোঁত করে এগোতে চেয়ে দুলল শুধু, কিন্তু সরতে তো আর পারে না লাইন থেকে! এতো আর ক্ষুদ্রাকারের সিএনজি ট্যাক্সি নয় যে ইঁদুরের মতো ফাঁকফোকর দিয়ে সুড়ুত করে ঢুকে পড়ে পালাবে।



এই সময় ক্রমান্বয়ে ধৈর্য হারাতে থাকা উত্তেজিত যাত্রীদের একজন আকস্মিক সিট থেকে উঠে দরজার কাছে চলে এলো। তারপরই লেগে গেল হুলস্থূল! চকিতে এক সাথে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে দরজার দিকে আসতে চেয়ে একজন আরেকজনের হাতে, পায়ে, মাথায় বেঁধে দলা পাকিয়ে গেল! দরজার হ্যান্ডল ধরে ঝুলে থাকা বাসের প্রথম আতঙ্কিত এবং সকলকে আতঙ্কিত করে তোলা অগ্রগামী সেই ভদ্রলোক বাস থেকে নামতে শুধু পা বাড়াবেন, ঠিক এই সময় যাত্রীদের নিরূদ হয়ে ওঠা যকৃৎগুলোয় পানি প্রবাহিত করে বাসটি ধাই করে এক টানে রেললাইন অতিক্রম করে নিরাপদে সরে এলো রাস্তায়।



কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ; ধীরে হাঁপাতে হাঁপাতে যার যার সিটে ফিরে গেলেন। এরপর, ঘটনার আকস্মিকতার অসাড়তা কেটে যেতে বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া কম্পিত বুকের ভয়াতুর মানুষগুলোর সব ক্ষোভ পুনরায় গিয়ে পড়ল সেই বেচারা ড্রাইভারের ওপর। ওস্তাদের করুণ কর্ণে অঝোর ধারায় বর্ষিত হল অশ্রাব্য গালি! অথচ এই গালি বর্ষণকারী মানুষগুলো বেমালুম ভুলে গেল যে তারাই পেছন থেকে গালমন্দ করে ড্রাইভারকে বাধ্য করেছিল রেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা বারটি এড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনটি অতিক্রম করতে। হেল্পার ছোকরাটা না ছিল স্টিয়ারিংয়ে, না সে ড্রাইভারকে অহেতুক তাগাদা দিয়েছিল, অথচ অশ্রাব্য গালাগাল থেকে তার কান জোড়াও রেহাই পেল না। উপরন্তু তখনো আতঙ্কের রেশ কেটে না যাওয়ায় অত্যধিক উত্তেজিত যাত্রীদের ক্রুদ্ধ, ক্ষোভ-ঘৃণায় বিকৃত মুখগুলোও বেচারার চোখ জোড়াকে সইতে হয়েছিল। তবে ড্রাইভার বা হেল্পার, তাদের কেউই কোনও প্রতিবাদ বা উচ্চবাচ্য করল না। পরে নিরাপদে ঘরে ফিরে গোসল সেরে খেয়ে দেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কেন জানি আমার সন্দেহ হলো; কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও, ড্রাইভার ব্যাটা আবার আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইচ্ছে করেই কাজটা করেনি তো?



http://www.notun-din.com/?p=7861

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২০

নীল-দর্পণ বলেছেন: যাক শেষে যে কোন বিপদ ঘটেছি! তবে এটা সত্যি আমরা বেশীই অধৈর্য্য!

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: অতিরিক্ত অধৈর্য।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: জাস্ট একটু চিন্তা করুন, এত গুলো লোক যখন একটা ড্রাইভারকে এমন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল তার মাথায় যদি একটু দুষ্ট বুদ্ধি বা একটু নিষ্ঠুরতা কাজ করত সে কি চাইলেই ঐ লাইনের উপরেই বাসটা থামাতে পারত না... যে কোন উপায়েই হউক, জ্যামের কথা বলে, নষ্ট হয়ে গেছে এগুলো বলে। তখন তার নামাটা সহজ ছিল কিন্তু বাস ভর্তি মানুষদের কি অবস্থা হত? একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন তো.........।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: সেটাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.