নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেঁচে থাকাটা জরুরী হয়ে উঠেছে

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪

অফিসের ব্যস্ত সময় পার ক’রে রাস্তার জ্যাম ভিড়ভাট্টা ঠেলে ঘরে ফিরে বিদ্যুতের দয়াদাক্ষিণ্যে কয়েক দফায় টিভি দেখা, ভাত খাওয়া, হালকা গল্পগুজব, অনলাইনে ঘোরাঘুরি, লাইক আদানপ্রদান, আর তারপর অফলাইনে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুম। প্রায় বৈচিত্র্য-হীন এইসব কর্মময় অশেষ ব্যস্ত দিনগুলোর শেষে, গুটিসুটি, ক্ষীণজন্মা ছুটির দিনটির আগের রাতটা জেগে ইউ টরেন্টে ডাউন-লোড করা সিনেমা, পর দিন দেরি করে বিছানা থেকে ওঠা, হতবিহবল অবস্থায় কিন্তু বিজ্ঞের মত চেহারা ক’রে বাজার করা, দুপুরে একটা গড়াগড়ি আর বিকেলের দিকে কাছে-ধারের কোনো মার্কেটে গিয়ে জরুরী কেনা-কাটা। রুটিন মাফিক কর্মকাণ্ডের মিলাদে, গোলাপজলের ফোটার মত হয়ত কোনো দিন বন্ধু-দের সাথে দেখা হতে পারে, হয়ত ফ্যামিলি নিয়ে ভাল একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে কোনো সন্ধ্যা কাটানো হয়, এলোমেলো বাসাবাড়ি- দালানকোঠা-দোকানপাট আর এসবকে কেন্দ্র করে পাক খাওয়া মানুষে, বাঁক খাওয়া বাহনে বিপন্ন প্রায় কোনো মাঠে ইতস্তত হন্টন ও হতে পারে। ক্লান্তিকর অবিরল হেক্টিক দিনগুলোতে, খাবি খাওয়া এই সমস্ত ফুরসৎ বড় বিরল ঠেকে! পেশাগত কারণে দূরে স’রে যাওয়া বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা এত বেশি আয়োজনের হয়ে পড়ে যে দুর্লভ আড্ডাগুলো সুরেলা হলেও, সময়ের কারণে, ঘরে ফেরার পথে ভিড়ভাড়, চ্যাঁচামেচির দাঁতাল ইঁদুর কেটে দেয় সুর। ‘মনোরঞ্জন’ ক'রে ঘরে ফেরার পথেই যানজটের তার্পিনে সব সাদাকালো!



দিনের পর দিন ধুলা-ময়লার ভেতর এইভাবে জীবন যাপন করেও কেন যে তবু ঠিক অভ্যস্ত হতে পারি না আমরা, তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়! গা সওয়া হয়ে গেলেই ভাল হত। কিন্তু তা হয় না! প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহায় মানুষ, প্রতিদিনই আফসোস, হাহাকার করে! নিজেই গাড়ি চালান যারা, তারাও যে নিরাপদে কোথাও গাড়িটা পার্ক করে অন্যত্রে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করবেন তার সুযোগ নেই বললেই চলে (মানে পার্ক ক'রে রাখা যায়, কিন্তু গাড়িটা দূরে ফেলে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করাটা হয়ে উঠে না)। ড্রাইভারকে বসিয়ে রেখে অফিস করা যায়, জরুরী কাজ করা যায়; কখনো এক আধ বার দূরে কোথাও ঘুরতেই না হয় যাওয়া হল- কিন্তু নিয়মিত দেরি করা যায় না নিশ্চয়ই যদি বিবেক নামক একটা জিনিসের অস্তিত্ব থেকে থাকে মানব মনের কোথাও।



পাখির মত নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে ঘুরে বেড়াবার জন্য দরকার সুবিধাজনক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, বাস, প্রাপ্তিসাধ্য ট্যাক্সি অথবা অন্য কোনো যাতায়াতের মাধ্যম। রাস্তায় বাসের কমতি নেই ঠিক, কিন্তু ওঠারও যেন কোনো নিরাপদ উপায় নেই! তবু যদি ওঠার উপায় হয়ই, ঝুলে থাকা ছাড়া, কিংবা বসে থেকে ঝুলে থাকা যাত্রীদের ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখা ছাড়া কোনো গতি নাই। ট্যাক্সিও দেখা যায় রাস্তায়, ছুটে চলে চঞ্চল বেঙাচির মত, ইতস্তত দাঁড়ায়ও কখনো হুট করে, হাত দেখালে, কিন্তু যেদিকেই যেতে চাওয়া হোক না কেন, তাদের জবাব অবধারিত ভাবে হয় ‘না’। এইভাবে কাজ তো করা হয় প্রতিদিনই। ঘোরাফেরা হয় কি?



তো, এই হল আমাদের জীবন। এরকম অবস্থার কোণে যারা ঠাসা, তারা যে ঘরকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে, টেলিভিশন, ফেসবুককে ভাববে মুক্ত নীলাম্বর- এটাই তো স্বাভাবিক! অবশ্য সেখানেও টুটি চেপে ধ’রে গেলান হয় নষ্ট রাজনীতি। এটাই যেন একমাত্র সহজসাধ্য বিনোদন। হ্যাঁ, রাজনীতি নিয়ে মানুষ চিন্তা করবে, প্রত্যেকটি মানুষের রাজনৈতিক দর্শন থাকেবে। অতএব সকাল বিকাল রাজনীতি গিলতে হবে? সকালের নাস্তা করতে হবে মন্ত্রীর বিয়ের খবর পড়ে, অফিসে আলাপ হবে এমপিদের দৌরাত্ম্যর মাত্রা জেনে, উত্তেজনা বলতে রাজনৈতিক খুন, লুটতরাজ, আনন্দ বলতে কোনো আমলার দুর্নীতির খবর ফাঁস, সন্ধ্যায় পাঁচ-মিশালি বাংলা চ্যানেলগুলোতে দেখতে হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতঃপর ফেসবুকে জ্বালাময়ী রাজনৈতিক স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টে যুদ্ধ ক’রে দেশ উদ্ধার! আহ, হালকা বিষয় নিয়ে যারা কথা কয়, স্ট্যাটাস দেয়, তারা যে কেন বেঁচে থাকে?



আমরা কেন বেঁচে থাকা বন্ধ করে দিলাম?



ছুটির কথা, সখের কথা, ঘুরে বেড়ানোর কথা, পাখপাখালি কবুতরের কথা, মাছমাছালি গোল্ড-ফিসের কথা, মৎস্য ধরার কথা, হাস্য করার কথা, তাঁবুর কথা, তটের কথা, আরামের কথা, অরণ্যের কথা- চিন্তা করা, পড়তে চাওয়া ও বলতে চাওয়া মউজ-ফুর্তি বিলাসিতা নয়। এ এখন প্রয়োজন। চাহিদা। জানতে চাই কোথায় মাছ ধরতে যাওয়া যায়, কোথায় সাইকেল চালাতে যাওয়া যায়, কোথায় দৌড়ালে ফুরফুরে লাগে, কোথায় সাঁতরালে ক্লান্ত লাগে না, কোথায় তাবু টাঙিয়ে থাকা যায়, কোথায় মাচা বানিয়ে থাকতে হয়, পড়ন্ত বিকেলের সোনালী শান্ত জলে ভেসে থাকা অলস কোনো নৌকার পাটাতনে নিশ্চিন্তে এলিয়ে দেয়া যায় শরীর– বুঝতে চাই অস্তোন্মুখ সূর্যের আঁকা জলরঙের খেয়ালী চিত্রের গভীরতা। কোথায় পাই প্রবীণ বটের ঠাণ্ডা ছায়া, রোদের ঘ্রাণ ভরা ঘাসে শ্রান্ত গড়াগড়ি, হয়ত একটা সাদাসিধে দুপুর, অপস্রিয়মাণ আলোয় ম্রিয়মাণ অপার সন্ধ্যা, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে মুখর গহীন রাতের নিস্তব্ধতা? চাই পাড়ার মোড়ে মোড়ে চমৎকার সব লাইব্রেরী, প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজন অন্তত একটি থিয়েটার, দরকার হাটার জন্য কিছু ভাল ফুটপাথ, গাছ এবং উদ্যান।



এসব সুস্থতা প্রভৃতিকে চাওয়ার জন্যও দরকার গোছান মন। এবং মনগুলোকে গোছানোর জন্য দরকার ঝরঝরে তথ্য। এক্সোটিক স্টোরিজ। হয়তো অসুস্থতার চর্চা শেষ হবে সুস্থতাকে অর্জন করার, আনন্দ অবকাশকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছার মধ্য দিয়ে। হয়তো শুধু সমস্যায় হাঁটু গেড়ে পড়ে থাকলেই সমস্যা লাঘব হয় না, হয়তো সঙ্কটের Destruction'এর জন্য দরকার যথার্থ Distraction।



সেই শুদ্ধ শুভ সুন্দর Distraction কামনা করি http://www.notun-din.com এর কাছ থেকে। নতুন ক'রে শুরু করা নতুন দিনের জন্য রইল শুভ কামনা।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

আদম_ বলেছেন: এই লেখাটা ব্লগে পড়া আমার সবচে সুন্দর লেখাগুলোর মধ্য একটি।
অনেক সুচিন্তিত লেখা।
একেবারে সময়-বাস্তবতাকে-মনকে নিপুন হাতে ফালি ফালি করে কেটে বের করে আনা কাংখিত শব্দ-আরক।
খুব ভালো লাগলো।
আমরা বাচতে ভুলে গেছি এবং ভুলে আছি।
তবে আমরা বাচতে চাই, হাসতে চাই।
ভালো পোস্টে অল্প মন্তব্য পাওয়া এবং সামুর কতৃপক্ষের নেক নজর না পড়া সামুর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য, সো হতাশ হবেন না।
ধন্যবাদ।
আরো লেখা চাই।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ! :)

খুব খুশি হলাম জেনে যে লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে! ভাল থাকবেন।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:




চমৎকার ভাবনা +

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৯

সকাল হাসান বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা!

আজকে সারাদিনে পড়া লেখাগুলোর মাঝে এইটাকে বেস্ট লাগল আমার!

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪১

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: :)

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

ডি মুন বলেছেন: ছুটির কথা, সখের কথা, ঘুরে বেড়ানোর কথা, পাখপাখালি কবুতরের কথা, মাছমাছালি গোল্ড-ফিসের কথা, মৎস্য ধরার কথা, হাস্য করার কথা, তাঁবুর কথা, তটের কথা, আরামের কথা, অরণ্যের কথা- চিন্তা করা, পড়তে চাওয়া ও বলতে চাওয়া মউজ-ফুর্তি বিলাসিতা নয়। এ এখন প্রয়োজন। চাহিদা।

সুন্দর বলেছেন। ++++++++

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। :)

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

আদম_ বলেছেন: ধীরে ধীরে আপনার সবলেখাই পড়ছি।
অনুসরণে থাকলেন কিন্তু।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: লেখা পড়ার জন্য এবং কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। :)

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

জলপাই আলম বলেছেন: ++++

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩

জলপাই আলম বলেছেন: পড়ার মত লেখা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১০

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.