নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাছের কাঁটা ও সুই

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১

ছোটকালে বিকেলে মাঠে তো বটেই, এমনকি গ্রীষ্মের দুপুরগুলোতে প্রখর রোদে তপ্ত পিচের রাস্তাগুলোতেও আমরা ঘুরে বেড়াতাম খালি পায়ে। এতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। বরং সেন্ডেলেই একেবারেই অভ্যস্ত ছিলাম না। মা'র চাপাচাপিতে কখনো স্যান্ডেল পরে বের হলে বেশিরভাগ সময়ই ঘরে ফিরতাম সেগুলো বাইরে হারিয়ে। হয়তো তা ফুটবলমাঠে গোল-বার হয়েছিল, অথবা মাংসচুরি খেলার মাংস, দাড়িয়াবান্ধার অতিরিক্ত দাগের অংশ। কিংবা হয়তো স্লিপারের সিঁড়িতে দোল খাবার জন্য, দোলনার রেলিঙে পা আটকে বাঁদুরের মত ঝুলে থাকার আগে কোথাও খুলে রেখেছিলাম...! ওখানেই থাকত স্যান্ডেল জোড়া, কেউ নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত। আর ঘরে ফেরার পর, হাত-পা ধুয়ে পড়তে বসলে ঘুমে যখন বুজে আসত চোখ, সেই সময় মনে পড়ত স্যান্ডেল-জোড়ার কথা এবং তা হারিয়ে ফেলার ফল স্বরূপ সম্ভাব্য মারের কথা।

এভাবে খালি পায়ে ঘোরাফেরা করতাম ব'লেই, বোধ করি, তখন পায়ের চামড়া বেশ পুরু হয়ে উঠেছিল আমাদের, যেমনটা হয় ঢোল কিংবা তবলা বাদকদের হাতের তালু ও আঙ্গুলে। তাই উত্তপ্ত দুপুরগুলোতে তপ্ত পিচ গ'লে পায়ের পাতায় লেগে গেলেও, পুড়ত না চামড়া; বা পুড়লেও কিছু এসে যেত না। বাসায় ফিরে হাতপা ধোয়ার সময় দেখতাম সেগুলো, বিচ্ছিন্নভাবে গোড়ালি ও আঙ্গুলের কাছে লেগে আছে চামড়ায়। ঘষে ঘষে তোলার চেষ্টা করতাম সেগুলো। এবং বেশিরভাগ সময় সফল হতাম না। মাঝেমাঝেই আমরা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতাম পায়ে পিচগুলোর অবস্থা নিয়ে। কেউ কেউ আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিল কেরোসিন দিয়ে ডলে দেখবার জন্য। কাজ হত। কেরোসিন প্রয়োগে আমার পায়ের গোড়ালি দুটো হয়ে উঠত লালচে হলুদ।

তবে পায়ের পাতার চামড়া যত শক্তই হোক না কেন, মাছের কাঁটা ফুটত ঠিকই, প্রায়ই। পায়ের পাতায় বেঁধা এসব যন্ত্রণাদায়ক কাঁটা নিয়ে আমি দিনের পর দিন চলতাম, প্রায় নির্বিঘ্নে। তীব্র অস্বস্তি, কখনো যন্ত্রণা সহ্য ক'রেও অস্বীকার করতাম সেগুলোর অস্তিত্ব। খেলাধুলাও চলত নিরবচ্ছিন্নভাবে।

কাঁটা নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি রকম লুকাছাপার পেছনে অবশ্য যৌক্তিক কারণ ছিল। কারণটি হচ্ছে, মা-বাবা যদি কাটার অস্তিত্ব সম্পর্কে টের পেয়ে যেত, তবে আমার পা নিয়ে তারা দুজন একাট্টা হয়ে ভয়ংকর সব কাণ্ডকারখানা শুরু ক'রে দিত। যেমন, তাদের একজন শক্ত ক'রে চেপে ধরত আমাকে, পায়ে এবং আরেকজন একটা তীক্ষ্ণ সুই আগুনে পুড়িয়ে এনে মনের সুখে খোঁচাখুঁচি শুরু করত। একসময় ঠিকই, রুদ্ধশ্বাস অপারেশন, চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শেষে তারা বের ক'রে আনত দীর্ঘদিন ধ'রে আমার পায়ের চামড়ার ভেতর, মাংসের গভীরে বসবাস করতে থাকা মাছের কাটা।

কাটা খুঁজে পাওয়া গেলে অবশ্য আমি নিজেও খুশি হতাম অনেক। কিন্তু যদি খুঁজে না পাওয়া যেত, তবে এই অত্যাচার চলতে পারত দীর্ঘকাল ধ'রে, থেমে থেমে, নিয়মিত বিরতিতে। আমার খুঁড়িয়ে হাঁটা সনাক্ত করতে পারলেই তারা শুরু করত উত্তপ্ত সুঁই নির্ভর কাটা খোজার আয়োজন, তারপর স্যান্ডেল পরার জন্য চাপাচাপি এবং অবশেষে সেগুলো হারিয়ে গেলে মারামারি।

বাচ্চাদের পায়ে কাটা বেঁধা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এলাকায় বসবাসকারীরা মাছ খেয়ে তার উচ্ছিষ্ট নিশ্চয়ই ঠিক স্থানে ফেলত না। যদিও অবশেষে বিঁধতে উন্মুখ কাটাগুলো তাদেরই বাচ্চাদের পায়ে পায়ে ফিরে আসত ঘরে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.