নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

আরাফাত শাহরিয়র

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!

আরাফাত শাহরিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিটি বাসে

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:২০

বাসে, সামনের আসনে জানালার পাশে বসা এক যাত্রী হঠাৎ হেল্পারকে ডাকতে শুরু করলেন। "ঐ হেল্পার, ঐ হেল্পার"

হেল্পার শোনে না। সে দরজায় ঝুলে চ্যাঁচামেচিতে ব্যস্ত। রাস্তায় হৈ হট্টগোল। জটে থেমে থেমে, জিরজিরে ইঞ্জিনে বাস খাঁকারি দিয়ে চলে।

লোকটা আরো কয়েকবার "হেল্পার ঐ হেল্পার" বলে ডাকতে সামনের দিকের আসনের যাত্রীরা হেল্পারকে ডেকে দিল। হেল্পার বাসের ডেক থেকে নিচে দরজার সিঁড়ি থেকে উপরে উঠে আসলে, লোকটা তাকে বলে- "তোদের পিছনের যাত্রী কিন্তু মাথা নিয়া নামতে পারবে না বাস থেকে"। কথাটা দুইবার বলতে হল তাকে। ভণিতা করা কথা। সহজে বোঝে না কেউ। বুঝলাম যখন তখন তাকিয়ে দেখি পেছনের সেই যাত্রী ঘুমাচ্ছে। পাশের খোলা জানালা দিয়ে তার ঘুমে অচেতন মাথাটা কাত হয়ে বের হয়ে আছে বাইরে। সিটি বাসগুলো যেভাবে পাশাপাশি একটা আরেকটার গায়ে ঘষা দিয়ে চলে, তাতে সামনের লোকটা ভুল বলেনি। যেকোনো মুহূর্তে পাশের বাসে ধাক্কা লেগে মাথাটা নাই হয়ে যেতে পারে। তখন মাথা ছাড়াই ফিরতে হতে পারে তাকে।

হেল্পার দাঁড়িয়ে দেখল তাকে। কিছুই করল না। স্বাভাবিকভাবে, আমিই লোকটাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। বললাম, "জানালার বাইরে থেকে মাথা ভেতরে ঢোকান"। ঘুম ভেঙ্গে উঠে জানালা লাগিয়ে দিল লোকটা। আর ঘুমালেন না। খানিক বাদে আবার খুলে দিলেন জানালাটা।

সামনের আসনের যে যাত্রী ঘুমন্ত যাত্রীর মাথার অবস্থা খেয়াল করেছিলেন, তিনি নিজেই কিন্তু তাকে ডেকে তুলতে পারতেন। সাবধান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি দূরে, বাসের দরজার হাতল ধরে ঝুলে যাত্রী ধরায় মশগুল হেল্পারকে ডেকেছেন। সে শুনতে দেরী করেছে। তাও নিজে কাজটি করেননি। যেন ঘুমন্ত লোকটির সাথে তার পূর্ব শত্রুতা আছে! কথা বললে আঁতে লাগে। হেল্পারকে ডাকার সময়ও বাসস্টপে একবার থেমেছিল বাস। যা ঘটার আশংকায় হেল্পারকে ডেকে তাদের যাত্রীকে সাবধান করতে বলেছিল লোকটি, তা ঘটে যেত পারত এর মধ্যেই। অবশ্য তবু শেষ পর্যন্ত সতর্ক তিনি করতে পেরেছিলেন। দায়িত্ব না নিলেও, দায়ের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন যথেষ্টই।

বাংলাদেশিরা জাতিগত-ভাবে গায়ে পড়া রকমের অতিরিক্ত আন্তরিক- এমনটাই তো জানতাম! এ কেমন দিন এলো যে সহযাত্রীর সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব তারা আজ নিজে না নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে নিতে বলে! সেদিন রেডিওতে শুনছিলাম, এক আরজেকে এক মেয়ে টেক্সট পাঠিয়েছে- পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল মেয়েটি। পথচারীরা নাকি সাহায্য করতে এগিয়ে না এসে হেসেছে। দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখেছে! এ কোন বাংলাদেশ? এই লোকগুলো কারা?

যাক, খানিক-বাদেই বৃষ্টি শুরু হল। আমার পাশের যাত্রীর খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাট আসতে শুরু করার সাথে সাথে সামনের সেই 'দায় সচেতন দায়িত্বে অচেতন' লোকটি পেছনে ঘুরে তাকিয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়ে মরতে নেয়া যাত্রীর সাথে সহজেই কথা বললেন। বললেন, "জানালা বন্ধ করেন। পানি আসে"।

এবার নিজের গা ভিজে যাচ্ছে বলে আর প্রতিষ্ঠান বাসের কাছে যান নাই। নিজ স্বার্থ রক্ষায় অপর যাত্রীর সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব এবার নিজেই নিয়েছেন। ভাল প্রোটোকল বুঝেছে লোকে!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮

সামিয়া বলেছেন: উপলব্ধি এবং বর্ণনা চমৎকার লেগেছে, পাশাপাশি আপনি একজন ভালো মনের ছেলে বোঝা গেলো, শুভকামনা।।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৩

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার জন্যও শুভকামনা রইল।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

ধুতরার ফুল বলেছেন: আপনার পোষ্টের মুল বক্তব্যের সাথে একমত।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৬

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪১

রাতু০১ বলেছেন: সাবলীল লেখায় সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি, শুভকামনায়।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭

আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: ধন্যবাদ!

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: মানুষে মানুষে আগের সেই হৃদ্যতা আর নেই। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অবশ্য মানুষের আর কী দোষ? কারো উপকার করতে গেলে যে বাঁশ খাওয়া লাগে একমাত্র বাংলাদেশেই...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.