![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
বর্তমান কালের মানুষের মোবাইল-আসক্তি আছে, তা মানি। কিন্তু অতি সমালোচনা প্রবণ ছিদ্রান্বেষী লোকজন যখন এই অবস্থাকে পূঁজি ক'রে বর্তমান যুগের মা-বাবাদের সমালোচনা করেন, তখন আমার ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠে। তারা বলতে চায় মোবাইলের কারণে বর্তমান কালের মা-বাবারা তাদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় দ্যান না; তাদের অবহেলা, অযত্ন করেন। বসুন্ধরা সিটির ফুডকোর্টের টেবিলে শিশুকে বসিয়ে মোবাইলে নিমজ্জিত এক দম্পতির ছবি বেশ চাউর হয়েছিলো কিছুদিন আগে। বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে ফেরার পথে রিকশায় বসে মোবাইল দেখতে ব্যস্ত একজন ভদ্রমহিলার ছবি নিয়েও নিন্দার ঝড় উঠেছিলো সেইসব ছিদ্রান্বেষী অকর্মাদের মহলে।
বাংলাদেশে বর্তমানকালের মা-বাবার মত বাচ্চা-কেন্দ্রিক জীবনযাপন আর কোনো কালের মা-বাপ করেছে কিনা তা নিয়ে আমি গভীর সন্দেহ প্রকাশ করি। এযুগের শিশু-অন্তঃপ্রাণ মা-বাবাদের এই সংক্রান্ত সমালোচনা তাই ঘোরতর অন্যায় এবং ভব্যতার শেষ সীমার অগ্রহণযোগ্য অতিক্রম।
বর্তমানকালে নয়, বরং আগের-কালের বাচ্চারাই নিদারুণ উপেক্ষা, অবহেলা ও অযত্নে বড় হতো। একেক দম্পতির আট দশটা ক'রে পোলাপান হতো বলে প্রথম দুইএক সন্তানের কপালে মা-বাপের কিঞ্চিৎ আদর সোহাগ জুটলেও, পরের সন্তানেরা প্রায় অনাদরে, অযত্নে প্রকৃতির সন্তানের মতই ভাইবোনদের সাথে গড়াগড়ি করে বড় হয়ে যেতো। আমরা যদি লেখকদের শৈশব পর্যালোচনা করি, তবে এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা মিলবে।
ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখায় রবীন্দ্রনাথ তার প্রতি ঘটা অনাদর, অবহেলার কথা লিখেছেন। সে যুগে মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্যান্য বড় মানুষ এবং বাচ্চাদের মধ্যকার দূরত্ব ছিলো অনেক। বাচ্চারা বড় হতো বাড়ির চাকরদের কাছে। তাদের অনাদরে অনাহার বা স্বল্পাহারের কারণে জমিদার পুত্র রবি শীর্ণকায় ছিলেন! নীরদচন্দ্রের 'আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ' বইটিতে এর বিশদ বর্ণনা আছে।
ম্যাক্সিম গোর্কি তার আত্মজীবনী ছেলেবেলায় নিজ মা-বাবার জীবিত থাকাকালীন যে স্মৃতির বর্ণনা করেছেন, সে বর্ণনায় তাদের যে মানুষরূপ ফুটে উঠেছে তাতে আমার মনে হয়েছে তারা শিশু গোর্কির প্রতি ছিলেন বিস্ময়কর রকম রুঢ় এবং শীতল। কখনো কেঁদে উঠতে চাইলে তার মা তাকে হুমকি দিতেন। এবং পুনরায় বিয়ে করার জন্য উতলা মা কিভাবে বাচ্চা গোর্কির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন না চাইতেও বিনা অনুযোগে, গভীর অনুকম্পার সাথে তার বর্ণনা গোর্কি দিয়েছেন ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে।
ঘন ঘন বাচ্চা নেয়ার ভারে নুহ্য মা-বাবার কাছে শিশুকালই কাটাতে পারেননি লেখক আর কে নারায়ণ। তিনি মা-বাবা ভাইবোন থেকে অনেক দূরে বড় হয়েছেন নানীর কাছে প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায়। আর কে নারায়ণ তার আত্মজীবনী মাই ডেইজ বইটিতে তার বন্ধুদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন তাদের পোষা বানর আর ময়ূরের কথা। তামিল মা-বাবার ভাষায় কথা পর্যন্ত বলতে পারতেন না তিনি! ভিন্ন ভাষা ভাষী মা-বাবার সাথে দেখা হওয়ার সে অদ্ভুত পরিস্থিতির চমৎকার বর্ণনা বইটিতে আছে।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার আগে জানতেনই না যে তার মা তাকে ভালোবাসেন। ভালো খাবার রেঁধে দিতেন না বলে মা-কে কখনো বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করতেন জসিম উদ্দিন (এর জন্য অনুতপ্ত ছিলেন)। আর তার কাছে বাবা ছিলেন যেন প্রায় অপরিচিত এক ব্যক্তি (আত্মজীবনী: জীবন কথা)। মা হিসেবে চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী হলেও চার্লি এন্ড দ্যা চকলেট ফ্যাক্টরি, মিথিল্ডার লেখক রোল্ড ডালের মা এক পর্যায়ে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং স্কুলে।
সুতরাং, মোবাইল-আসক্তি আছে এমন অজুহাতে নিজেদের জীবনের অধিকাংশ সময় নিজ সন্তানের জন্য ব্যয় করা বর্তমানকালের মা-বাবাদের সমালোচনা করা একধরণের মুখস্থ, নিম্নশ্রেণীর সমালোচক তুল্য আচরণ। সন্তানে নিবিষ্ট মা-বাবার অতি মনোযোগ সন্তানের সাধারণ বিকাশে কীরূপ বিরূপ প্রভাব ফেলছে, আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিৎ বরং সেটি।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
তবে আমল টা ম্যাক্সিম গোরকির না।
এই যুগের বাপ মা ছেলে মেয়েকে সবার আগে ত্যাব কিনে দেয়।
আর বাচ্চা গুলো খুব এক্সপার্ট।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৪
আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: গোর্কির আমল তো অবশ্যই না। গোর্কির আমলের আলোচনা করেছি এটা বোঝানোর জন্য যে মোবাইলহীন অতীতের মা-বাবার চেয়ে মোবাইল সজ্জিত মা-বাবাই বরং সন্তানের প্রতি বেশি মনযোগী।
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: পোস্টে ব্যাতিক্রমি চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে।
৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫
আঁধার রাত বলেছেন: ভাল লেগেছে লেখাটা। আসলেই তো বাবার সাথে বেড়াতে যাওয়ার মাত্রই একটা স্মৃতি আছে যা আমার সব চেয়ে প্রাচীন স্মৃতি। বয়স আমার তিনের বেশী হবে না। মায়ের হাতে ভাত খেয়েছি কিনা মনে পড়ে না। বড় আপা ভাত খাওয়াতো, গোসল করাতে ঘুম ও পাড়াতো। কথা সত্য যে হালির বেশী । ছেলে মেয়ে থাকলে ছোট গুলো প্রায় প্রকৃতির সন্তান হিসাবেই বেড়ে ওঠে। তবে মায়ের দায়িত্বটা পালন করে সেক্ষেত্রে বড় বোন।
বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আবার একা হয়ে যায়। তবে আমার বড় আপা আমাকে মাছে ছোট টুকরা দিতো বলে আমার প্রায়শ মনে হত।
এখন পার ক্যাপিটা স্নেহ ভালবাসা অনেক বেড়েছে।
৬| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সহমত না জানিয়ে পারছি না। সবাই বাহ্যিক দিক দেখেই মন্তব্য বা সমালোচনা করি। আসলেই এখনকার বাচ্চারা আগের চেয়ে বেশী কেয়ার পায়...
এখানে অফ টপিকে আরেকটা কথা বলে রাখি, এখনকার ছেলেরা বা স্বামীরা বউদের প্রতি আগের ছেলে বা স্বামীদের চেয়ে বেশী কেয়ারিং হলেও সংসারে শান্তি আসছে না। অথচ আগে স্বামীরা কেয়ারিং না হলেও সংসারে সুখ থাকত...
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪১
আরাফাত শাহরিয়র বলেছেন: আগে স্বামী কেয়ারিং না হলেও সংসার সুখের থাকত- এ বিষয়ক কোনো গবেষণা-প্রাপ্ত প্রমাণ বোধহয় নাই। তবে আগে সংসার বেশি টিকে থাকত, এটা ঠিক। মহিলারা স্বাবলম্বী ছিলো না, যথেষ্ট শিক্ষিত ছিলো না, মেয়েদের পরিবারগুলো স্বার্থপর ছিলো, আর তাই যাওয়ার আর কোনো স্থান না থাকায়, ফ্যানেই না ঝুলে পড়লে নন-কেয়ারিং স্বামীর গলাতেই ঝুলে থাকত।
৭| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৪
নতুন বলেছেন: হুম আমাদের দেশের জনগন অন্যের সমালোচনা বেশি করতে পছন্দ করে।
খেয়ে দেয়ে কাজ নাইতো তাই অন্যের দোষ নিয়ে বেশি আলোচনা করে।
যেমনটা আমরাও ব্লগে করে থাকি
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩১
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সহমত। একালের বাবা-মা, বিশেষ করে মা সন্তানদের ব্যাপারে বেশ সচেতন। স্কুল থেকে আনা নেওয়া, খাওয়া দাওয়া সবকিছুতেই বাবা মা'র চোখ থাকে। সুতরাং তাদের এ দুষে দোষী করার ঠিক নয়।