নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধার পেরিয়ে এক কণা আলোর খোঁজে

ছন্নছাড়া ছেলেটি

"আমি হয়তো তেমন না যেমনটা তোমরা ভাবো....!! হয়তো আমি তেমন , যাকে তোমরা বুঝতে পারো না....!!" আমার খুব সাধারন থাকার সাধ । অসাধারন হবার মত কোন গুন আমার ভেতর নেই । সমালোচকদের চোখে : আমি একটা 'অ' টাইপ ছেলে । ((অসহ্য, অসভ্য, অসামাজিক, অতিভদ্র, অস্থির, অধৈর্য্য, অনিয়ন্ত্রিত, অনাকাঙ্খিত (তাদের জীবনে), অবিশ্বাসী, অগোছালো, অতিরিক্ত ভাব, অত্যাচারী, অভিশপ্ত + ..... )) মানবিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করি । বন্ধুদের চোখে : আমি আমি বিনয়ী, ভদ্র, বিশ্বাসী, প্রকৃতিপ্রেমী, আঁতেল, মেধাবী, ফানি, দুর্ভাগা এবং রোমান্টিক :) । মনুষ্যত্বের সংজ্ঞায় নিজেকে মানুষ বলে মনে করি । এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ।

ছন্নছাড়া ছেলেটি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারুন্য- যেন এক অভিশাপ

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৩

রাজনৈতিক কোন ক্যাঁচালে I’m not ইন্তারেস্টেদ । প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে আমি কোনভাবেই কখনো জড়াইনি । সেই উঠতি বয়সে কৌতুহলবশতঃ কয়েকবার মিছিল মিটিং করেছি । তা দেখে বড় ভাই খুব ঠান্ডা গলায় হুমকি দিয়ে বলেছিল- ”আর যদি কখনো মিছিলে দেখি তবে পা ভেঙ্গে বাড়িতে ফেলে রাখবো।“ নাসার রকেট কক্ষপথের বদলে মাটিতে আছড়ে পরতে পারে, কাল সকালে মাল’সাহেব রিজাইন দিতে পারেন কিন্তু এই হুমকির অন্যথা হবেনা । কৌতুহল দমন না করে উপায় আছে !!



তারুণ্যে পা রাখবার পর প্রায় তিন বছর একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম । ‘সচেতন তারুন্যে’র স্লোগানে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়েছি কত ছাত্র/তরুনকে । সে কারনে অজস্র তরুনের সাথে মিশতে হয়েছে ।তাদের কনভিন্স করতে গিয়ে তাদের জীবনের গল্পগুলো শুনেছি । ‘স্বুস্থ আড্ডা’ ‘দেশপ্রেম’ ‘দেশজ চেতনা ধারন’ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখিয়েছি । অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি সমাজের পচণগুলো কি করে একটা প্রজন্মকে নিঃশ্বেস করে দিতে পারে ।



একটা গল্প দিয়ে শুরু করি ।গল্পটা আমাদের চেনা । আপনি বা আমি কখনো না কখনো এ গল্পের কোন চরিত্র ধারন করেছি ।



সদ্য এসএসসিতে গোল্ডেন A+ পাওয়া এক মেধাবী ছেলেকে ঘিরে আমার এ গল্প । মফস্বল শহরের শিক্ষক/স্বল্প আয়ের বাবা-মার সন্তান, তাদের গর্বের ধন । ভালো রেজাল্টে গর্বিত বাবা-মার স্বপ্নের প্রসারতা বাড়ে । ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য জেলা/বিভাগীয় শহরে ভালো কলেজে ভর্তি করান । সস্তায় কোন মেসে রাখার ব্যবস্থাও হলো । নতুন পরিবেশ,নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, পুরোনো পিছুটান-ছেলে অহর্নিশ হা-পিত্যেশ করে । অভিমানে মুখ ফুলিয়ে রাতের আকাশের তারাগুলোর কাছে সবার নামে নালিশ করে । একাকিত্ব-অসহায়ত্ব চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে । এ সময় বন্ধু হয়ে পাশে দাড়ায় রুমমেট বড় ভাই । তাকে বোঝায়, ভরসা দেয় । একসময় ধীরে ধীরে ছেলেটি মানিয়ে নিতে শেখে । একাকিত্বের মেঘ হালকা হয়, কমে যায় নালিশগুলোও । আর সেই ‘বড়ভাই’ ? রাত যত বাড়ে তার রোমিওসত্বা তত মাথাচাড়া দেয় । ভ্যাম্পায়ার যেমন রক্তের স্বাদ নিতে বেরিয়ে পড়ে, তেমনি সে ফোনে নিত্যনতুন ‘জানু-ময়না-টিয়াদের’ খোঁজে রাত জেগে ক্লান্ত হয় । প্রতিরাতে এই অসুস্থ্য বিনোদন নিতে নিতে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ে ।

একসময় ‘সঙ্গ দোষে’ হোক বা বয়সের দোষে তারও ‘ফোনে’র চাহিদা তৈরি হয় । এত সস্তা আবদার বাবা না মিটিয়ে পারেন না । ‘ময়না-টিয়া’ লাগবে ?! গৌরিসেন হয়ে ‘বড়ভাই’ এগিয়ে আসেন । অসুস্থ্য বিনোদনে মজে যেতে সময় লাগেনা। [এডভেন্চারের কেবল তো শুরু ....... :D ]



দিনে ছেলের সময় কাটেনা। বিকেলের ক্লান্তি কাটাতে ‘বড়ভাই’ তাকে তার বন্ধুদের আড্ডায় টেনে নেন । সেখানে ঠোঁটে ঠোঁটে ধোঁয়া ওড়ে আর মেয়েদের শরীরের জিওগ্রাফী নিয়ে অশ্লীল বিনোদন আদায়ের চেষ্টা । কুকুর যেভাবে হাড্ডি দেখতে পেলে জিভ দিয়ে লালা পরে-ঝুলে পরে, তেমনি এদের সামনে কোন মেয়ে পরলে তারা তাকে চোখ-মুখ দিয়ে চেটে খেতে থাকে। নোংরা ভাষায় সাপের মতো ছোবল হানে । ছেলের প্রথম প্রথম লজ্জা লাগে । কিন্তু নিয়মমাফিক সেও একসময় ধোঁয়া আর জিওগ্রাফী দুটোতেই অভ্যস্ত হতে শুরু করে । নারীর শরীরের মোহে+প্রেমের টানে প্রতিরাতে ‘টিয়া-ময়না’দের খোঁজ বাড়তে থাকে । দু’একটা ধরাও দেয় । লোকাল বাস সুপারসনিক বিমানের গতিতে চলতে গিয়ে পথচ্যুত হয়-নেমে আসে ট্রাজেডি । ছেলে হতাশায় মুষড়ে পড়ে । [ কাহিনীর টর্নিং পয়েন্ট ....]



আবারো ‘বড়ভাই’ বিপদের বন্ধু(!) হয়ে পাশে দাড়ান । এবার তিনিতাকে নেশা ধরিয়ে দেন (গান্জা/মদ/ডাইল) । ছেলের চারপাশে যেন হুট করে হাজারটা নিয়ন বাতি জলে ওঠে । ‘টিয়া-ময়না’ থেকে এই ঢের ভালো । এদিকে টাকার চাহিদা বাড়তে থাকে । প্রতিমাসে বাবার কাছে পাঠানো ব্যায়ের লিস্টে নিত্য নতুন অজুহাত যোগ হয় । বাবা সন্দেহ প্রকাশ করেন কিন্তু ছেলে ইদানিং চোখ গরম করে তাকায় । বাধ্য হয়ে তাকে গরু-ছাগলটাও বেচতে হয় । ছেলেটা তো মানুষ হোক । আর পড়াশোনা ??!!! ভুইলাই গেছিলাম । টেবিলে কয়েকটা বই-খাতা তার ছাত্রত্বের প্রমাণটুকু বহন করছে । এই ঢের-কি হবে পড়াশোনায় ??!!!!



কিন্তু এদের চাহিদার কাছে গৌরিসেনও ফেল মারে । টাকা চাই টাকা -আরো আরো । বাবার কাছে অজুহাত আর কত ?! এবার নিজে কিছু করবে বলে সন্ধ্যার পর গলির মোড়ে চাকু/ছুরি হাতে দাড়িয়ে পরে । ইনকাম মন্দ না । এই বেশ চলে যাচ্ছে । কলেজের ছাত্রনেতাদের চোখে পড়তেও সময় লাগেনা। ক্ষমতা এবং টাকা দুটোর নিশ্চয়তায় ছেলেটি সে পথে হাঁটা ধরে । পেছনে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে আসে বাবা-মার গর্ব, বুক ভরা স্বপ্ন । অন্ধকারের মোহে হারিয়ে যায় একটি উজ্জল আলোর কণা ।



হয়তো অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত হবেন । আপনারা আজ আপনার চারপাশে ‘ছেলেটি-কে’ যখন দেখেন তখন ঘৃণায় মৃখ ফিরিয়ে নেন । এই ছেলেটি সমস্যার প্রকাশ/উদাহরন মাত্র । কিন্তু সমস্যাগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলেনা । কেউ একটু গভীরে গিয়ে দেখেনা শুরুটা/শেকড়টা কোথায় । না সুশীল/কুশীল, না বাকবাকুম করা বুদ্ধিজীবীরা । সবাই ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ নিয়েই ব্যস্ত ।



খুব নীরবে একটা প্রজন্ম হারিয়ে ফেলছি আমরা । আজকের উঠতি বয়সী শহুরে তরুনদের বেশিরভাগই নেশাগ্রস্থ/মানসিক বিকারে আক্রান্ত । এমন কোন বাজে কাজ নেই যাতে তারা অভ্যস্ত নয় । এডাল্ট হবার আগেই সেক্স,ড্রিংকস,নেশার অভিজ্ঞতা তাদের হচ্ছে । এই তরুনদের নিয়ে আপনি কি আগামীর স্বপ্ন দেখেন ?!! সাধু সাধূ.. আপনি অনেক আশাবাদী মানুষ ।



ব্রোকেন ফ্যামিলির সংখ্যা বাড়ছে, একান্নবর্তি পরিবারগুলো ভেঙ্গে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তৈরি হচ্ছে । ঢাকা শহরের ফ্লাটগুলোও যেন তাদের কথা মাথায় রেখেই করা । পায়রার খোপে কি আর মুরগীর পরিবার রাখা যায় ?



ঢাকা শহরের বস্তিগুলোতে যে বাচ্চাগুলো থাকে তারা নিশ্চয়ই জজ-ব্যারিষ্টার হবেনা । তারা অপরাধীই হবে । কারন তারা জন্মের পর থেকেই সে পরিবেশে মানিয়ে নিতে শিখে ফেলেছে ।

নষ্ট হয়ে যাবার সব উপকরণই এই সমাজে হাতের নাগালে । আপনার দশটা বন্ধূর ৭টাই যদি নষ্ট হয়-তারা আপনাকে একদিন না একদিন তাদের দলে টেনে নেবে। প্রতিযোগীতা রে ভাই । সারভাইভাল ফর দা ফিটেস্ট । হা হা হা ...... :D :)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.