নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফুল আরিফ

আমি একজন সাধারণ মানুষ হতে চাই।

আরিফুল আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০০

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীপ্রিয় মানুষরা এখন আর নদীর সংস্পর্শে নেই। নদী তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে অৎানার দেশে। অধিকাংশ নদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় বাংলাদেশে ১২০০ নদী ছিল। এখন টিকে আছে মাত্র ৮০টি। তাও বর্ষা ছাড়া অধিকাংশ সময়েই থাকে নাব্যহীন। হেমন্ত, শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম ঋতুতে নদীর ওপর দিয়ে চলছে গাড়ির বহর। মূলত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণেই বাংলাদেশের পরিবেশগত এ বিপর্যয়কর অবস্থা। ১৯৭৭ সালে ফ্রান্স ও রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমি ফারাক্কা নিয়ে এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ অচিরেই ইলিশশূন্য হবে এবং শত বছরের মধ্যে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সম্পূর্ণ মরুভূমিতে পরিণত হবে। তখন কেউ না ভাবলেও বর্তমানে সেই রিপোর্টের হুবহু সত্যতা মিলছে। ফারাক্কা বাঁধের পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ন, চর দখল, নদী দখল, কালভার্ট, সস্নুইসগেট, অভ্যন্তরীণ বাঁধ, বেড়ি বাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ, খাল বিল নালা পুকুর ভরাট এবং ব্রিজ নদীর গতিপথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। নদী তার স্রোত ও নাব্যশক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে। খাল ও নদের ওপর বাঁধ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে হাইওয়ে। ফলে দেশের হাজার হাজার খাল চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, একদা এখানে বড় বড় খাল ছিল। এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মহাসড়ক, উঁচু ইমারত, শপিং মল, বাসস্ট্যান্ড, বাজার কিংবা অফিস আদালত। নদী, খাল, জলাশয়, বিল-ঝিল, পুকুর, দীঘি বিলুপ্তকরণে সরকার কিংবা পাবলিক কেউ পিছিয়ে নেই। সরকার, রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করেই ভৌগোলিক অবস্থার বারোটা বাজাচ্ছে আগ্রাসী শক্তি। এভাবে চলতে থাকলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কর্ণফুলীও একসময় অট্টালিকা বা প্রাসাদ ভবনে ভরে ওঠবে। গোবি, সাহারা তখন ঘরে বসেই উপভোগ করা যাবে ! মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেখানে যেমন দরকার, সেখানে তেমনই সৃষ্টি করেছেন। মরুভূমি কিংবা আরব বিশ্বে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের চলার জন্য খাল ও নদীপথ সৃষ্টি করেছেন। অথচ আল্লাহর ওপর বাটপারি করছে এদেশের সরকারগুলো। আল্লাহর সৃষ্টির ওপর মাতুব্বরি দেখিয়েছে এদেশের মানুষ। নৌপথ শান্তির নীড়। লঞ্চ, স্টিমার, স্পিড বোটে চলাফেরা যেমন আরামদায়ক, তেমনি রোমাঞ্চকর। তাছাড়া খরচও তুলনামূলক অনেক কম। সেই সুলভ ও সহজ পথের বিলোপ ঘটিয়ে দাতা সংস্থার ফর্মুলায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে ওদের গাড়ির বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে। ১৭৮৬ সালে জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী স্থলযান নির্মাণে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে। আর সেই যানবাহনের বাজার ধরার জন্য আমাদের চির ঐতিহ্যের নদীপথকে ধ্বংস করে। সস্নুইসগেট আর কালভার্ট দিয়ে গ্রাম-গঞ্জের ছোট বড় খালগুলোর প্রবহমানতাকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়। খাল না থাকলে নদী থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। জনগণ না থাকলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে না। মূল কেটে দিলে বৃক্ষের মৃত্যু অনিবার্য। তদ্রূপ খাল-বিল ছাড়া নদ-নদী টিকে থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইউএসএআইডি- পরাশক্তির এসব সংস্থা বাংলাদেশের মেরুদ- ভেঙে দিয়েছে। দুনিয়া সেরা মৌসুমী অঞ্চল বাংলাদেশ এখন মরুভূমিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বড়ই বদনসীব এ জাতির। দুর্ভাগ্য ঝেঁকে বসেছে দেশের ললাটে। আর এ জন্যই আমরাই দায়ী। সেতু, মহাসড়ক, যানবাহন খাতে বিগত চার দশক যাবত যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সে অর্থ অন্যখাতে খরচ করলে অনেক দূর এগিয়ে যেত দেশ। নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রেখে এর রক্ষণাবেক্ষণ করলে শুধু পর্যটন খাত থেকেই কোটি কোট ডলার আয় করা সম্ভব। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে শুধু স্থলপথের উন্নয়নে কাজ করছে। অথচ এর সিকিভাগও পানিপথ বা নৌপথের উন্নয়নে ব্যয় করলে দেশ জাতি রাষ্ট্র অনেক লাভবান হতো। সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। ঘটেছে নানা তেলেসমাতি কারবার। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, পদ্মা সেতুর আদৌ দরকার আছে কী? পদ্মার যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তাতে নদী তার অস্তিত্ব আর কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবে। যারা মাওয়া কিংবা আরিচা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারাই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন। ইতোমধ্যে নদীর তিন চতুর্থাংশ ভরাট হয়ে গেছে। বাকি অংশকে জোড়াতালি দিয়ে অনেক অর্থ খরচ করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। নিয়মিত ড্রেজিং করতে সরকারের বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে। ড্রেজিং বন্ধ করে দিলে পদ্মা এমননিতেই মরে যাবে। বাংলাদেশের যেখানেই সেতু বা ব্রিজ নির্মিত হয়েছে সেখানেই নদীপথ হুমকির মুখে। সেতু অঞ্চলে নদী ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে গেছে। তাই সরকার, বিদগ্ধমহল এবং পরিবেশবাদীদের বিষয়টা অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার। ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত ছিল প্রমত্ত পদ্মা নদী। সেই ব্রিজের নিচ দিয়ে এই বর্ষকালেও গরুর গাড়ি চলছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সেতু, কালভার্ট, সস্নুইসগেট, বেড়িবাঁধসহ পরিবেশের বিঘ্নকারী যে কোনো প্রকল্প বন্ধ করে দেযা উচিত। এটা দেশ ও জাতির জন্য যথার্থই মঙ্গল

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৩

পাহারাদার বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। কোন মন্তব্য নেই কেন? লেখকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.