নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফুল আরিফ

আমি একজন সাধারণ মানুষ হতে চাই।

আরিফুল আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর কত নারী নির্যাতিত হবে

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৪

প্রতি বছর ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। সেমিনার, র্যালিতে ছেয়ে যায় রাস্তাঘাট, সেমিনার কক্ষ। নারীর কল্যাণে নেয়া হয় নানান কর্মসূচি। গৃহীত হয় নানা পদক্ষেপ। তারপর মৌলবাদীদের সেসব কর্মসূচি নিয়ে লম্ফঝম্ফ। জ্বালাও, পোড়াও, মিছিল, মিটিং কতকিছু প্রতিবছর এমনতর কর্মকা- দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত। সারাবিশ্ব যে একটি ব্যাপারে এক হতে পেরেছে তা হলো 'নারীর প্রতি সহিংসতা।' উন্নত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ সর্বত্রই নারী নির্যাতিত। দেশ ভেদে হয়তো নির্যাতনের ধরন আলাদা কিন্তু মূল বিষয় একই। রাষ্ট্রযন্ত্র, সমাজযন্ত্র যাদের হাতে তারাই তাদের ক্ষমতাকে সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করে নির্যাতন করেছে, বঞ্চিত করেছে নারীকে। মানুষ শিক্ষায় এবং প্রযুক্তিতে যত উন্নত হয়েছে নির্যাতনের প্রকৃতিও তত সূক্ষ্ম হয়েছে, বুদ্ধিদীপ্ত হয়েছে। মানুষ যখন ধর্মভীরু ছিল, ধর্ম গুরুরা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রকে আইনে প্রভাবিত করত, রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মগুরুদের প্রভাব ছিল পরোক্ষ। ধর্মীয় অপব্যাখ্যা জালে তখন নারীকে আটকে নির্যাতন করা হতো। ধর্মান্ধ মানুষ ঈশ্বরের নৈকট্য পাওয়ার জন্য ধর্মগুরুদের সুচতুর চালাকি ধরতে না পেরে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রয়োগ করেছে। সতীদাহ প্রথার মতো অমানবিক জঘন্য প্রথা মানুষ পালন করেছে ধর্মগুরুদের অপব্যাখ্যার কারণেই। ওই সময়ে প্রতিটি ধর্মে আলাদা আলাদা নিয়মে মার্জিত এবং অমার্জিতভাবে নারীর প্রতি বঞ্চনা নির্যাতনের চিত্র দেখা যায়। তখনকার সময়ে মুসলমান নারীদের অপরিচিত নারীর সঙ্গে কথা বলাও নিষেধ ছিল। সব ধর্মের ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মীয় মতাদর্শে এক হতে না পারলেও নারীকে অশিক্ষা আর অন্ধকারে ঢেকে রাখার ব্যাপারে এক হতে পেরেছিল। ফলে, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা সমাজের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল যার ফলে, সাধারণ মানুষ নারীকে শৃঙ্খলিত করার মাঝে তাদের পরকালের মুক্তির সনদ খুঁজে পেত। সেবাদাসী হয়ে সেবা করার মাঝেই নারী খুঁজে ফিরত তার মুক্তি। ধর্মান্ধতার অন্ধকার যুগ অতিক্রম করে মানুষ প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার আলোকে আলোকিত হলেও নারীর ক্ষেত্রে সমাজ, রাষ্ট্র ও ঠাঁয় একই অবস্থানে রইল। পার্থক্য হলো শুধু বাহ্যিক। মূল বিষয়ে মূল নির্যাতন এবং বঞ্চনায় কোনো পার্থক্য রইল না। ধর্ম নারীকে শৃঙ্খলার শিকলে বন্দি রেখেছিল, প্রগতিশীল নামধারী সমাজ ও নারীকে উন্মুক্ত করে দিল, বেআব্রু করে দিল, পোশাকে, চাল চলনে মুক্ত করে দিল কিন্তু আত্মাকে ঠিকই বন্ধ রাখল অতি সূক্ষ্ম চালাকির জালে। খাঁচায় বন্দি পাখির ছটফটানির পরিবর্তে সুনীল আকাশে ডানা মেলে উড়তে দিয়ে আচমকা মুক্ত স্বাধীন পাখিকে বন্দি করার পৈশাচিক আনন্দে আত্মহারা পুরুষ। ধর্ম আর প্রগতিশীলতা পাশাপাশি চলতে গিয়ে একদল নারীর সমস্ত শরীর আবৃত করে নারীর দেহ-মন ঢেকে দিল অাঁধারে। অন্যদিকে প্রগিশীলতার নামে উন্মুক্ত শরীরে নারীকে সবার সম্মুখে এনে পুরুষ তাদের চোখের শ্রান্তি বিনোদনে সক্ষম হলো। পরিবার থেকে রাষ্ট্র সর্বত্রই নারীকে শৃঙ্খলিত করার সূক্ষ্ম চক্রান্তের জাল বিছানো। পরিবারে মাতৃগর্ভ থেকে বঞ্চনার সূত্রপাত ঘটে নারীর ভাগ্যে। যার ফলাফলে বর্তমানে ভ্রুণ হত্যার বিপরীতে নানা দেশে আইন করতে হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, স্কুল, কলেজ অথবা কর্মক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের সম্মুখীন হয়ে নারী প্রতিবাদী হলে সমাজ তার দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকায়, নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে হিসেবে সে পরিচিত হয় সমাজে। নিজের অপমানের কথা প্রকাশ করলে সমাজ ও তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায় না, সমাজ তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয় না বরং সমাজ তাকে দেখিয়ে তার দিকে আঙুল তুলে বলে, যে মেয়ে ভালো সে কোথাও তার লজ্জার কথা তুলে ধরে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা সমস্ত দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েও হাজারও বছরের সংস্কার নারীর অস্তিত্বে এমনভাবে বপন করে দেয়া হয়েছে যা ভেঙে সে নিজে বের হতে পারছে না এবং উদারতার নামে যে পুরুষ সমাজে তার অবস্থান তৈরি করছে আলাদাভাবে সেও মূলত সংস্কারমুক্ত হতে পারছে না। মূলত পুরুষ নারীর জন্য যুগে যুগে ততটুকুই সুযোগ সৃষ্টি করেছে যতটুকু পুরুষের সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজন। পুরুষের স্পর্শে নারী এঁটো হয়, পুরুষের কারণে নারী নষ্ট হয় কিন্তু পুুরুষ থাকে পুতপবিত্র ও তারা হয় মহামানব। আমরা যদি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখি তা হলে দেখব আজ থেকে এক দশক আগেও নারী ভাবত স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের স্পর্শ অবাঞ্ছিত। কিন্তু পুরুষ তার প্রয়োজনেই সামাজিক চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে নারীর বিশ্বাসে পরিবর্তন এনেছে। ফলে এখন শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও তার শারীরিক শুদ্ধতার ক্ষেত্রে চিন্তার পরিবর্তন এনেছে। ফলে সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরুষের ভালোবাসার বাণীর অন্তরালে যে হায়েনার হিংস্রতা লুকোনো তা বুঝতে পারে না বলেই নারীকে হতে হয় ২৬ টুকরা। তথ্য এবং প্রযুক্তির উন্নতির কারণে আজ প্রতিটি পেশায় নারী এগিয়ে আসছে। পুরুষ তার প্রয়োজনে এক সময় গৃহের অন্তরালে বন্দি করে রাখত নারীকে আবার পুরুষের প্রয়োজনেই আজ নারী গৃহের বাইরে বেরিয়ে ঘরে বাইরে সবখানে কাজের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে নিজের স্কন্ধে। বাইরের কাজের দায়িত্ব নারীর ওপর অর্পণ করলেও ঘরের কাজের দায়িত্ব একটুও কমানোর প্রয়োজন বোধ করেনি নারীর জন্য। বরং নিজে দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে নারীর জন্য বাইরের পৃথিবী উন্মুক্ত করেছে পুরুষ। আমরা গর্বের সঙ্গে বলি নারীর শিক্ষা এবং ক্ষমতায়ন আমাদের দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হয়তো পরিসংখ্যানটা ঠিক। কিন্তু একটু গভীরভাবে যদি ভেবে দেখি তাহলে দেখব নারীর ক্ষমতায়ন আর শিক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর অপমান আর মর্যাদাহানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর অসম্মান আর তাকে হেয় করার প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। যে করেই হোক এ পরিস্থিতি বদলাতে হবে। কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে। বিশ-পঁচিশ বছর আগেও দৈনিক পত্রিকার মহিলা পাতাগুলো নারী লেখকদের দীর্ঘশ্বাস আর প্রতিবাদের ভাষায় পূর্ণ ছিল। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধে নারী আর জীবনের প্রতি পদে পদে অর্জিত বঞ্চনার ভাষা তুলে ধরত। অথচ আজ যখন সমাজ এবং সময়ের পরিবর্তনে নারী এভারেস্টের চূড়ায় উড়ায় তার বিজয় নিশান। শারীরিক দিক দিয়ে পুরুষের চেয়ে দুর্বল নারী এই ধারণার সমাপ্তি ঘটিয়ে যে নারী উঁচু থেকে উঁচুতে উঠে যায় নির্বিঘ্নে তার বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরা হয় না। তাকে গল্প, কবিতা, লিখবার সুযোগ দেয়া হয় না। সাহিত্যের পাতায় হাতে গোনা কয়েকজন নারী স্থান করে নিতে সক্ষম হলেও একদা সব সোজা ভাষায় নারীরা যে কবিতা গল্পে তার হৃদয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, স্বপ্ন তুলে ধরতে পারত মহিলা পাতায় আজ তা বিলুপ্ত। অতি সন্তর্পণে, অতি সূক্ষ্মভাবে নারীর কবিতা আর গল্পকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। নারীকে পুরুষ তার রচনায় কখনো দেবী কখনো ছলনাময়ী, কখনো ব্যভিচারীরূপে প্রকাশ করে। পতিতালয়ে সুরার পাত্রে ডুবে নারীর যে দুঃখ, বঞ্চনার ইতিহাস, রচিত করে পুরুষ তা আমাদের হাসায়, কাঁদায়। কিন্তু গৃহের অন্তরালে, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায়, জীবনের ছুটে চলার যুদ্ধ ক্ষেত্রে, নারীর যুদ্ধ, নারীর বঞ্চনা, নারীর কান্না প্রত্যক্ষভাবে নিজের জীবনের পদে পদে যে নারী উপলব্ধি করে তাকে তার কথা তুলে ধরার সুযোগ না দেয়ার পেছনে কি পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার ভয় কাজ করে না? নারী মন্ত্রী হবে, এমপি হবে, প্রধানমন্ত্রী হবে শুধু বুদ্ধিজীবী অথবা লেখক হতে পারবে না এটাও এক ধরনের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। পত্রিকার মহিলা পাতাগুলো নারীর লেখার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে নারী নির্যাতনের চিত্র, নারীর মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ আরো নিখুঁতভাবে, প্রকৃতভাবে উঠে আসত।



###

মো. আরিফুল ইসলাম

মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ (লে:২ ;সেমি:১)

৪৩০/সি, শহীদ শামসুল হক হল

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ ২২০২

মোবাইল ০১৭৩৭৫১২৯১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.