নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা আমাকে ভালবেসেছিলে

০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১


এভাবে ভালবেসো না, এতো ভালবেসো না আমাকে। শুধু শুধু কষ্ট পাবে।

ঘটনাটা খুব ছোট্ট, কিন্তু উপস্থিত মুহূর্তে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল আমার মনে। এখনও মনে পড়লে ব্যথায় ভরে ওঠে মন, কষ্টের নীল শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে। এলোমেলো হয়ে যাই আমি। সেদিন আমার সেই ভুল কৃতকর্মের জন্য আমি আজও ভীষণ রকম অনুতপ্ত। সেই ঘটনার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে আমার মাঝে। হয়তো থাকবেও জীবনভর।
কয়েকবছর আগের কথা। স্থান ঢাকাস্থ বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের লেভেল এইটের ফুড কোর্টে অবস্থিত 'সল্ট এন্ড গ্রিল' রেস্টুরেন্ট (রেস্টুরেন্টটা এখন আর নেই সেখানে)। সময় আনুমানিক আটটা সাড়ে আটটা বেজে থাকবে। কাউন্টারের সামনে একাকী একটা চেয়ারে বসে কফি পান করছিলাম। আমার ঠিক সামনে একজন মেয়ে বসেছিল। দুজনের মাঝে মোটামুটি পনের-ষোল হাত দূরত্ব হবে। বসেছিলাম কফির পেয়ালা হাতে। থেকে থেকে চুমুক দিচ্ছিলাম কফিতে।
কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। এভাবে একপর্যায়ে দেখলাম মেয়েটি হা করে অপলক মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। সোজা কথা আমার সঙ্গে পরিষ্কার ফ্লার্টিং করতে লাগল ও। খুব লজ্জা ও বিরক্ত লাগছিল। ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করার জন্য একবার ডান, একবার বাম, উপরনিচ, এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হচ্ছিল না। একেবারে মুখোমুখি হওয়াতে ওর সাথে চোখে চোখ পড়েই যাচ্ছিল। কফিতে চুমুক দিতে গেলেই ওকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। উপেক্ষা করা যাচ্ছিল না কিছুতেই। দারুণ বিব্রতকর হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতিটা। একবার ভাবলাম উঠে যেয়ে অন্য কোনও চেয়ারে বসি? পরক্ষণে মনে হলো, এটা খুব নিষ্ঠুর আচরণ হয়ে যায়। এদিকে এভাবে ইশারা চলছে তো চলছেই। আমার বিরক্তির মাত্রাও বেড়ে চলল। কীযে গোলমেলে পরিস্থিতি! আমি কিছু করতে পারছি না। না পারছি উঠে চলে যেতে, না পারছি সেখানে বসে থাকতে।
এভাবে এক পর্যায়ে একেবারে অনিচ্ছাকৃতভাবে, কোনরকম কোনও পরিকল্পনা ছিল না, একদম হঠাৎ করে খুব বাজেভাবে আমি আমার বিরক্তিটা প্রকাশ করে বসি। খুব-ই খারাপ একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে আমি সেখানে আমার বিরক্তি প্রকাশ করলাম। আর ওটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম বড় একটি ভুল। তারপর দেখলাম মেয়েটি ওখানে একেবারে কেঁদে ফেললো। হাস্যজ্জ্বল, মুগ্ধ আলোকিত দুটো চোখ মুহূর্তেই লজ্জা, অপমানে টকটকে লাল, অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। মাথা নীচু করে ওভাবেই এক ছুটে বেরিয়ে গেল ও রেস্টুরেন্ট থেকে।
ঘটনাটা এটুকুই। পাঁচ-সাত মিনিট এর ব্যাপ্তি। আমার জীবনের দারুণ কষ্টের কয়েক মিনিট হয়ে রয়ে গেছে। হঠাৎ করে এমন হয়েছিল। আমি আসলে মোটেও ওরকম করতে চাইনি। অকস্মাৎ এমনটা হয়ে গেছে! বিন্দুমাত্র কোনও ধারণা ছিল না, আমি কি করছি, কি হতে পারে! এরকম কোনও ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিণত বোধহয় তখন ছিলাম না। চার-পাঁচ বছর আগের কথা। কস্মিনকালেও ভাবিনি, এতো কষ্ট পাবে মেয়েটি! আপনারা ঘটনাটা এখানে শুধু পড়ছেন কিন্তু আমার মনে পড়ছে সেদিন লজ্জা, অপমানে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির রেস্টুরেন্ট থেকে ঝরের মতো দ্রুতবেগে উঠে চলে যাওয়া! এই ঘটনার গভীরতা উপলব্ধি করা বাইরে থেকে মোটেও সহজ নয়, সেটা আমি বেশ বুঝতে পারি। আমার জীবনে না ঘটে থাকলে, আর অন্য কারও এই লেখা এখানে এভাবে পড়লে আমার কাছেও হয়তো ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ও বিস্ময়কর মনে হতো। সম্পূর্ণ অপরিচিত দুজন মানব মানবী। হঠাৎ রেস্টুরেন্টে দেখা, একজনের আরেকজনকে ভাল লাগা। আর কিছু মুহূর্তেই অপরজন যে সেই একজনের জন্য এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যে তার বিরক্তিতে তার প্রতি অভিমানে চোখ থেকে অশ্রু নেমে আসে! সেদিনের পর থেকে আমি আজও অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছি; আবার হয়তো কোনও একদিন ওর সাথে আমার দেখা হবে। আমি ব্যাপারটা মিটমাট করে নেব। আমি মেয়েটিকে জানাতে চাই, আমি জানি, আমার প্রতি ওর সেদিনের সেই ভালবাসায় কণামাত্র মন্দ কিছু ছিল না। এভালবাসা সদ্য ফোটা সতেজ, বাঙ্গময় ফুলের মতোই ভীষণ নিষ্পাপ ও বিশুদ্ধ। একে কিছুতেই ফিরিয়ে দেয়া যায় না। একে নিয়ে কোনরকম ছিনিমিনিও খেলা যায় না, এর পবিত্রতা সতত অটুট-ই থাক। এভালবাসায় তিক্ততার সামান্যতম কোনও জায়গা নেই। এর স্থান হৃদয়ের অভ্যন্তরে, ভাল লাগার গভীরতম স্থানে; যেখানে সব প্রিয় প্রসঙ্গেরা থাকে। আমি তোমার সেই পবিত্র ভালবাসা সেখানেই সযত্নে লালন করে যাব জীবনভর।
ঘটনাটা লিখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি যেখানে বসে আছি, এখানে অনেক মানুষ; শোরগোল। অথচ আমার কেমন যেন নেশাচ্ছন্ন ধোয়াধোয়া লাগছে চারপাশ। সব ফেলে আমি চলে গেছি সেদিন 'সল্ট এন্ড গ্রিল'র সেই লাল আলোর রেস্টুরেন্টে। একটা লম্বা, চতুষ্কোণ টেবিল, দুদিকে দুটো করে চারটি লাল চেয়ার। আমি একাকী বসে আছি ওর একটিতে। আমার সামনে মেয়েটি বসে আছে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, হাসছে মিটিমিটি। উহু এবার আমি আর ওরকম বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে বিরক্তি প্রকাশ করবো না। মেয়ে তুমি যতক্ষণ খুশি হাসো, যতো ইচ্ছে ইশারা কর, মন্ত্রমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাক আমার দিকে তোমার যা খুশি তাই কর। আমি জানি তুমি খুব ভাল একটি মেয়ে। আমি জানি তোমার হৃদয় সমুদ্রের মতো সুবিশাল, সুগভীর, অসীম। আমি আর তোমাকে কাঁদাব না।#

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:০২

ওমেরা বলেছেন: সে যদি সামু ব্লগ পড়ে তাহলে নিশ্চয় ফিরে আসবে ।

০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা। যাদের নিয়ে লিখেছি ও লিখবো, আমি চাই না তারা কেউই আমার জীবনে সেভাবে ফিরে আসুক। আমি শুধু চাই ওরা যেন আমার প্রতি কোনও ঘৃণা বা তিক্ততা নিয়ে না থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.