নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার জীবনের নিটোল মজার দুটি ঘটনা

২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৪




গতকাল বিশেষ একটা ব্লগ পড়ার পর থেকে মনটা বিষণ্ণ। দুজন নারী ব্লগারের আর্ট সংক্রান্ত চাপানউতোর আর সেই সূত্রে অনেক সহ ব্লগারের বিভিন্ন কঠোর শব্দ ও আক্রমণাত্মক, অশালীন ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহার! এতে করে দুজন শ্রদ্ধেয় নারী ব্লগারেরই সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পুরো বিষয়টাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। যাক আজকে নতুন দিন। সেসব অপ্রিয় প্রসঙ্গ ছুঁড়ে ফেলে দিলাম আবর্জনার ঝুরিতে। শুধু তাদের দুজনসহ সবার উদ্দেশ্যে শৈশবে পড়া একটি কবিতার প্রিয় দুটি লাইন বলতে চাই, 'প্রীতি ও প্রেমের বাঁধনে যবে দাঁড়াই পরস্পরে/ স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের-ই কুঁড়েঘরে।'
যা হয়েছে তা নিশ্চয়ই অনভিপ্রেত এবং তা ব্যক্তি পর্যায়েই সমাধান করা গেলে উত্তম হতো। লেখা ও আলোচনা পড়ে মনে হলো ব্লগারদ্বয় ব্যক্তিজীবনেও পরস্পরের সাথে সম্পর্ক রাখেন। সেক্ষেত্রে তারা সরাসরি বা ফোনে কথা বলে ব্যাপারটা মিটমাট করে নিতে পারতেন হয়তো; হয়তো নয়, বাইরে থেকে দুনিয়ার সবকিছুই সরলীকরণ করা যায়, কিন্তু যারা সেসব ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তারা জানেন সেসব পরিস্থিতির তীব্রতা কতো ব্যাপক।
এখানকার পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত নিঃসন্দেহে। সেই অশুভ উত্তাপকে প্রশমিত করার জন্য আমার এ নগন্য প্রয়াস। এখানে আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া নিটোল দুটি মজার অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। জানি না ঘটনা দুটি আপনাদের কতোটুকু আনন্দ দিবে, নাকি পুরোটাই শেষমেশ পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে, মানে দেখা গেল ঘটনাদুটো আপনাদের আনন্দ দেবার বদলে উল্টো বিরক্তির উদ্রেক করে বসলো। সেক্ষেত্রে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। কিন্তু ঘটনাদুটি উপস্থিত মুহূর্তে আমাকে যেমন প্রচুর আনন্দ দিয়েছিল। এখনও মনে পড়লে আনন্দ পাই। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে আজও স্মিত হেসে ফেলি নিজের মনে। খুব খুশি হবো যদি লেখাটি পড়ে সকল সহ ব্লগার বন্ধুরা নির্মল আনন্দে আমার সাথে হেসে ওঠেন।

এক.
এঘটনাটা ত্রিশ বছর আগের নয়। কারণ ত্রিশ বছর আগে আমার জন্ম হয়নি। বিশ বছর আগেরও নয়। সেসময় হাফ প্যান্ট পড়ে কাদামাটিতে ফুটবল ক্রিকেট খেলতাম আমার গ্রামের বাড়িতে। এটা খুব বেশি হলে ছয় সাত বছর আগের একটি ঘটনা। তারও কিছু আগের হতে পারে। সবকিছু অতো পুঙ্খানুপুঙ্খ আজ মনে নেই। সেসময় বনশ্রী ঢোকার মুখে যে বিশালাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিল্ডিং, সেটা কমপ্লিট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু কার্যক্রম তখনও শুরু হয়নি। সেসময় সেখানে শিক্ষার্থীদের এখনকার মতো সর্বক্ষণ এতো শোরগোল লেগে থাকতো না বরং বেশ নিরিবিলিই ছিল। সেখানকার ঘটনা। গ্রীষ্মের এক রৌদ্রজ্বল বিকেল। একটা চা'র দোকানে অলস বলেছিলাম। বৃদ্ধ দোকানি শুকনো আলোচনারত দোকানের অন্য দুজন ক্রেতার সঙ্গে। শুকনো আলোচনা মানে একেবারে অর্থহীন, নিষ্ফল আলোচনা। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি, টাকার মানের অবনমন, খালেদা হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদগার, দেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি ইত্যাদি ইত্যাদি। চা দোকানের প্রাচীন আড্ডা আর কি। এক পর্যায়ে দেখলাম কথোপকথনরত দোকানের বাকি দুই ক্রেতাদ্বয়ের উদ্দশ্যে বৃদ্ধ দোকানদার বললেন, 'আর কইয়েন না ভাই যা দিনকাল পড়ছে, ট্যাহার আর কুনো দাম নাই। মুচিগো কাছে ছিড়া স্যান্ডেল লইয়া গেলেই পাঁচ ট্যাহা, স্যান্ডেলে হাত দিলেই পাঁচ ট্যাহা। ট্যাহার আর কুনো দাম নাই!'
তার একথাগুলো শুনে উপস্থিত মুহূর্তে যে কী কষ্টে হাসি লুকিয়েছিলাম, তা বিধাতাই জানেন। নির্মল আনন্দ পেয়েছিলাম সেই সহজ সরল বৃদ্ধ চা দোকানদারের কথাগুলো শুনে। বিল পরিশোধ করে রাস্তায় মনের সুখে মুচকি হাসতে হাসতে এসেছিলাম। সেসময় অপরিচিত কেউ আমাকে ওভাবে একা একা হাসতে লক্ষ্য করে থাকলে নির্ঘাত পাগল ভেবেছিল। যেতে যেতে ভাবছিলাম, নিজে সারাদিন এক কাপ চা'য়ে এক বিন্দু পরিমাণ আদা, এক চা চামচ চিনি পাঁচ টাকায় বিনিময়ে দেদারছে বিক্রি করে চলেছেন, সেখানে তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি দেখেন না, টাকার অবনমন দেখেন না, সেখানে কোনও সমস্যা নেই। এদিকে মুচির কাছে তার দশক পেরোনো স্যান্ডেল জোড়া মেরামতের জন্য পাঁচ টাকা প্রদান তার কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর মনে হচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন মনে হচ্ছে। একাজ ঠিক-ই দুটাকায় সারতে চাচ্ছেন তিনি। হা হা হা। এখনও হাসছি আমি সেঘটনার কথা মনে করে। এমন করুণসুরে এমন সারল্যের সাথে সেখানে তিনি তার টাকার মান কমে যাওয়ার ব্যাপারে ক্ষেদ ঝেড়েছিলেন, তা আমি জীবনভর ভুলবো না। এরপর যে মুচি ভাই তার পুরনো স্যান্ডেল জোড়া মেরামত করতে যাচ্ছেন, তার কাছে অনুরোধ করবো, চাচার কাছে দু-তিন টাকার বেশি না রাখার জন্য। নইলে আবার চা'র দোকানে বসে টাকার অবনমন নিয়ে তিনি কাষ্টমারদের কাছে করুণসুরে হা হুতাশ করবেন। প্লিজ একটু ক্ষতি স্বীকার করে হলেও চাচার কাছে তার পুরনো জুতা বা চপ্পল সেলাইয়ের জন্য এবার শুধু দু-তিন টাকাই রাখবেন, পাঁচ টাকা নয়!

দুই.
ঢাকার গুলশান দুইয়ে মুভ এন্ড পিক নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে, পিংক সিটির উল্টোদিকে। এটা একটি সুইডিশ আইসক্রিম চেইন শপ। মূলত নানা রকম আইসক্রিম বিক্রি করে থাকে তারা। পাশাপাশি সীমিত পর্যায়ে অন্যান্য খাবার ও বিভিন্ন রকম জুস ও কফি পাওয়া যেত সেসময়। কয়েক বছর আগের কথা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল তখন। চারটে বেজে থাকবে। সেখানে বাইরের খোলা রুমে বসে একজনের আসার অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশে সেসময় বেশ কয়েকজন লোক একটা বড় টেবিল ঘিরে বসে ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করছিলো; বিজনেস মিটিং। যারা ছিলেন তারা সবাই কেতাদুরস্ত পোষাক পরিহিত। তারা নিঃসন্দেহে ধনাঢ্য লোকজন। বেশ অভিজাত একটি রেস্টুরেন্ট মুভ এন্ড পিক। প্রচুর বিদেশি সেখানে অহরহ আসে। যা হোক ব্যবসায়িক আলোচনা চলছে। এক পর্যায়ে দেখলাম ওখানে একজন ব্যক্তি মিটিংয়ের থেকে খানিকটা সাইডে এসে মোবাইল ফোনে কাওকে রেস্টুরেন্টে আসতে বলছিলেন। ফোনে তার কথোপকথন ছিল এরকম, 'হ্যা তুমি কতদূর? আমরা এখন আছি মবিন পিকে। হ্যা মবিন পিক। এটা গুলশান দুইয়ের মোর থেকে একটু দূরে। কাওকে বলো যে আমি মবিন পিক যাব, মবিন পিক। পিংক সিটির ঠিক অপোজিটে, হোটেল মবিন পিক। জিজ্ঞেস করলেই মানুষ দেখায় দেবে মবিন পিক। হ্যা মবিন পিক। হ্যা তাড়াতাড়ি আস। আমরা অপেক্ষা করতেছি। হোটেল মবিন পিক, হ্যা মবিন পিক।'
সেই ভদ্রলোকের মুখে বারবার রেস্টুরেন্টের নাম 'মবিন পিক মবিন পিক' শুনে উপস্থিত মুহূর্তে হাসি লুকিয়ে রাখা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার জন্য। হাজার হোক সমাজ বলে একটা কথা আছে, চাইলেই তো আর যেখানে সেখানে হো হো করে হাসা যায় না। তবে কিছুক্ষণ পর বাথরুমে যেয়ে প্রাণ খুলে হেসেছিলাম।
জানি না সেদিন যাকে মুভ এন্ড পিকে আসতে বলা হয়েছিল, তার সঠিক ঠিকানা খুঁজে পেতে কোনও বেগ পেতে হয়েছিল কিনা। বোধহয় হয়নি। 'মবিন পিক' বললেও স্থানীয়রা ঠিক-ই বুঝে যাবে ব্যক্তিটি কোথায় যেতে চাচ্ছে।
#

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলেছিল ১৮ দিন; ব্লগে ২ জন মহিলা ব্লগারের যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্রের পর্যায়ে গেছে।

২| ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:৫১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: প্রথমটিই আমার ককাছে ভাল লেগেছে এই কারনে যে, আমরা এখন এমনই "দিনকানা" হয়ে যাচ্ছি, প্রতিদিন।। বিবেক, বুদ্ধি সব বন্দকে চলে যাচ্ছে।।

৩| ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ৩:৫৪

জগতারন বলেছেন:
'মুভ'ন পিক' বললেও ঠিক ছিল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.