নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সদ্য প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের সাথে আমার ব্যক্তিগত একটি স্মৃতি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০১


ঠিক সাল মাস তারিখ আজ আর কিচ্ছু মনে নেই। স্থান, ঢাকাস্থ বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের লেভেল এইটের ফুড কোর্ট। বিকেলবেলা। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, সদ্য প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বার দাঁড়িয়ে আছেন লিফ্টের পাশে, দেয়ালে হাত রেখে। অপেক্ষা করছেন লিফ্ট আসার, নীচে নামবেন। তাঁর এক হাতে ছোট একটি শপিং ব্যাগ। পাশাপাশি দুটো লিফ্ট সেখানে। দুটোই অনবরত আসা যাওয়া করে। আমি শিল্পীর মুখোমুখি একটি চেয়ারে বসা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তিনি লিফ্টের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। লিফ্ট আসতে দেরি হচ্ছিল। হয়ে থাকে এরকম। বিভিন্ন ফ্লোরে লোকজন ওঠানামা করে, আর মার্কেটে তো বিকেলবেলা মানেই পিক আওয়ার! প্রচুর ভিড় হয় সেসময়।
যাই হোক, শিল্পী আব্দুল জব্বারকে দেখলাম দাঁড়ানো সেখানে। বার্ধক্যের কারণে বেশ দুর্বল, আর ঠিক তখন বোধহয় কিছুটা অসুস্থও ছিলেন তিনি! জানি না, তাঁর পরিবার তাঁকে ওরকম শারীরিক অবস্থায় সেদিন একা ছেড়েছিলেন কেন! ঠিক যেদিন আমি তাঁকে দেখেছিলাম, সেদিন তিনি একা চলাফেরা করার মতো সুস্থ ছিলেন না! দেয়াল না ধরে নিজে নিজে দীর্ঘসময় দাঁড়ানোর মতো সক্ষমও তিনি ছিলেন না সেসময়! নীচে বেসমেন্টে হয়তো তাঁর নিজস্ব গাড়ি থেকে থাকবে! আশেপাশে তখন অনেক মানুষ। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। কেউ একটিবার ফিরেও তাকাচ্ছে না তাঁর দিকে।
এসময় তিনি যে লিফ্টের পাশে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা না এসে, পাশের লিফ্টটা এলো। সবাই হুড়োহুড়ি করে উঠতে লাগলো ওই লিফ্টে। তিনি তখন শারীরিকভাবে এতোটাই অসুস্থ ও দুর্বল ছিলেন যে, পাশের ওই লিফ্ট পর্যন্ত ওরকম ভিড় ঠেলে যাবার মতো শারীরিক শক্তিও তাঁর তখন ছিল না। অসহায় দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়ে দেখলেন, অন্যদের লাফালাফি করে অপর লিফ্টে উঠে নিচে নেমে যাওয়া। আমাকে বেশ ব্যথিত করলো ব্যাপারটা! এতো বড় একজন সেলেব্রিটি সঙ্গীত শিল্পী দীর্ঘক্ষণ ধরে লিফ্টের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন; লিফ্টের জন্য অপেক্ষারত অন্য লোকগুলোর কি উচিৎ ছিল না, তাঁকে সম্মানের সাথে জায়গা করে দিয়ে, লিফ্টে উঠতে সাহায্য করা! ওখানে অনেকেই ছিল বয়স্ক, মধ্যবয়সী, নির্ঘাত তাদের অনেকেই চিনে থাকবেন তাঁকে। দারুণ বিস্ময়ের সাথে, পাশের একটি চেয়ারে বসে দেখলাম, একটিবার কেউ ফিরে তাকালো না পর্যন্ত শিল্পী আব্দুল জব্বারের দিকে! সবাই হুড়োহুড়ি করে যে যার মতো লিফ্টে উঠে নিচে নেমে গেল। একবার ভেবে দেখুন, অবক্ষয়ের কোন পর্যায়ে আজ আমাদের এই সমাজ এসে দাঁড়িয়েছে! শিল্পী আব্দুল জব্বার তো বড় কথা নয়, একজন নিঃসঙ্গ, অসুস্থ প্রবীণ ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে লিফ্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেয়াল ধরে তাঁর অমন ঋজু হয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে, বাইরে থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে, তিনি দুর্বল ও অসুস্থ। আশেপাশে লিফ্টের জন্য অপেক্ষারত বাকি লোকগুলোর কি উচিৎ ছিল না, তাঁকে লিফ্টে উঠতে সহযোগিতা করা! কিন্তু সেটা করা তো বহু দূরের ব্যাপার, একবারের জন্য কেউ তাঁর দিকে ফিরেও তাকাল না!
এমতাবস্থায় আমি নিজেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তাঁর কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি আন্তরিক উত্তর দিলেন। লিফ্ট ঘিরে আবার একটু একটু করে ভিড় জমতে শুরু করেছে লোকজনের। আমি একদম লিফ্টের গেটে দাঁড়ানো। তারপর এক পর্যায়ে লিফ্টের দরজা খুললে, আমি তাঁকে ভিতরে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করলাম, নিজেও লিফ্টের ভিতরে ঢুললাম।
'গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাবেন তো, তাই না?' জিজ্ঞেস করলাম আমি।
'হ্যা।' জবাবে বললেন তিনি।
আমি লেভেল ওয়ান'র সুইচ টিপে বেরিয়ে আসার সময়, সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বার আমাকে স্নেহার্দ্র কণ্ঠে, অকৃত্রিম আন্তরিকতার সাথে বলেছিলেন, 'আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন বাবা।'
আমি তখন হেসে উঠলাম। বললাম, 'আমি আপনার ছেলের বয়সী। আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন।'
তারপর লজ্জিত হাসতে হাসতে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে আসলাম।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৮

বেঙ্গল রিপন বলেছেন: খুব কাছে থেকে দেখেছি বহুবার, আমি ১৯৮০সালের কথা বলছি। আমি তখন তেজগাও পলিটেকনিক হাই স্কুলে পড়তাম।
আমাদের স্কুলের পাশে উনার এক বন্ধুর লাইব্রেরী ছিলো। মাঝেমধ্যেই দেখতাম উনি ওখানে চেয়ার পেতে বসে পান চিবুতেন।
সামহোয়্যার ইন ব্লগে উনাকে নিয়ে অনেক পোষ্ট এসেছি কিন্তু একটিও স্টিকি করা হয় নাই :(

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

অর্ক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। কোনও পোস্ট স্টিকি না হবার ব্যাপারটা আমাকেও ব্যথিত করেছে। উচিৎ ছিল। আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। শুভকামনা।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর সৃতি।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

আপনি ভাগ্যবান এবং ভাল মানুষ....

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

অর্ক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

অভি চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশ ঋনী এই মানুষের কাছে

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৫

অর্ক বলেছেন: ঠিক।

৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৬

জাহিদ অনিক বলেছেন: ভাল স্মৃতিচারণা

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৬

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.