নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনাদের সাথে আমিও আছি...

কিছু শিক্ষতে চাই

মো: হাফিজ আল আসাদ

কিছু শিক্ষতে চাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিক্সা ওয়ালারাও মানুষ…!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২১

"রিক্সা ওয়ালারাও মানুষ"

...........................................................................

আমার দেখা বাস্তব একটি চিত্র শেয়ার করছি।
একদিন বৃহঃবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে নিলাম তারপর বাসা থেকে বের হলাম এক কাজের উদ্দ্যেশে।বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তাটা ফাঁকা রিক্সা/কোন গাড়ি নেই মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে কিছু প্রাইভেট গাড়ি চড়ে মা-ছেলে স্কুলে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একটি রিক্সা পেলাম।
কাকু বলে রিক্সাটা ডাক দিলাম, যাবেন নাকি কাকু…?
হ্যাঁ যাবো।
রিক্সা চালক কাকু, রিক্সা নিয়ে এগিয়ে এলেন,আমি রিক্সায় উঠলাম যাত্রাপথ শুরু।
রিক্সা চড়ে কোথাও গেলে আমার একটা সমস্যা রিক্সা ওয়ালাদের সাথে কথায় জড়িয়ে যাওয়া।
সার্বিক তার খোঁজখবর সহ অনেক কিছু জিজ্ঞাসে করে নেওয়া একটি দায়িত্বের মত ছিল।
প্রকাশে বলে দিতাম ভাই আমার কথায় কোন বিরক্ত হচ্ছেন নাতো রিক্সা ওয়ালাটা হেঁসে বলল বিরক্ত হওয়ার কি আছে।
আপনি কথা বলছে আর আমার ভালই লাগছে।
আসলে কটুক সত্যি তা নিজেও জানি না,নাকি আমাকে সন্তুষ্ট করারা জন্যে এ কথা।
না না না ভাই.…!

রিক্সা চালাতে খুবই কষ্টের কিন্তু যাত্রির খুবই ভাল লাগে রিক্সা চড়তে যদি জায়গা সুন্দর হয়। প্রকৃতির প্রেমে সাড়া দিতে গেলে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে গেলে এই রিক্সার চড়ে আস্তে আস্তে প্রকৃতির সুন্দর্য খুবই ভাল ভাবে উপভোগ করা যায়।

আমার পথযাত্রা সময় ছিল ১৫-২০ মিনিট, ভাড়াও হবে ৩০-৪০ টাকার মত যদিও সকাল বেলা ভাড়াটা ৪০ টাকা দিতে হয়।
যেতে যেতে জ্যামে আটকে গেলাম,
বিরক্ত লাগা শুরু.…
আমার মত অনেকে জ্যামে পড়ে আটকে আছে কেউ রিক্সায় কেউ অন্য গাড়িতে।

আমার চড়ে যাওয়া রিক্সার ঠিক ডান পাশে অন্য একটি রিক্সা যাত্রী নিয়ে জ্যামে আটকে আছে,ঐ রিক্সার পেছনে জ্যামে অপেক্ষা করছে একটি প্রাইভেট গাড়ি।
গাড়িতে মাত্র একজন ভদ্র লোক ছিলেন…
দু চার মিনিট অপেক্ষা করতে না করতে ঐ গাড়ি থেকে ভদ্রলোক নেমে তার গাড়ি সামনে রিক্সা নিয়ে জ্যামের কারণে দাড়িয়ে থাকা রিক্সা চালকে তার মুখের দুই পাশে দুইটি তাপ্পর দিয়ে ফেলল তাছাড়া তো আছে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ।
রিক্সা চালক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,তার কি দোষ আমরা তো দেখলাম না সে নিজেও জানে না, সে কি দোষে মার খেয়েছে।
সবাই তাকিয়ে আছে কেউ লোকটিকে বারন করছে না লোকটি শুধু গালি দিয়ে যাচ্ছে।
কেউ যখন কিছু বলছে না দেখেই রইলাম।
কিছুক্ষন পর জ্যাম সেরে গেল,যাত্রা স্বাভাবিক হয়ে গেল।
কিন্তু ঐ চালক মন খারাপ করে রিক্সা চালাতেই আছে তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখের দু পাশে লালছে হয়ে গিয়েছে যেন মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
বাকী পথ যেতে যেতেই আমার চড়ে যাওয়া রিক্সা চালক বলতে থাকল ভাই দেখেছেন,এই অবস্থা।
কোন দোষ নেই কথা নেই শুধু শুধু এই ভাবে নির্যাতিত হতে হয় আমাদের মত রিক্সা ওয়ালাদের।
নিরবে চিন্তা করতে লাগলাম আর রিক্সা চালক "কাকু" বলেই যাছে।

রিক্সা চালক কাকুর আবেগময় কথা শুনতে শুনতে গন্তব্যে পৌঁছালাম।
পথিমধ্যে অনেক কথা বার্তা বলার কারণে একটি সম্পর্কে গড়ে উঠেছিল।
কাজ সেরে ঐ স্থান থেকে হেঁটে আসছি চিন্তা করে করে হাঁটতে আছি,আসলে কি সমস্যা লোকটি কি টাকা ওয়ালা তাই তার এতু বাহুবল নাকি রিক্সা ওয়ালার কোন দোষ ছিল…?সে তো কোন দোষ ই করল না।
বাসায় চলে আসলাম,দৃষ্যটা যত মন থেকে দূর করতে চাইছি তত বেশি মনে পড়ছে।
যেভাবেই হোক দিনটা শেষ হয়ে গেল।

সেদিন সন্ধ্যায় নিকটস্ত এক রোগিকে দেখতে সদর হাসপাতালে গেলাম পরিবারের কয়েকজনের সাথে।
হাসপাতালের গিয়ে রোগির ব্যাডের খোঁজ নিচ্ছিলাম,চারদিকে হেঁটে আমরা দেখতে যাওয়া রোগিটা খোঁজছি।
ফোনে যোগাযোগ করার পর তাদের খোঁজ পেলাম। সরকারী হাসপাতাল হওয়াতে রোগির অভাব নেই যেখানে ১০০ জনের ব্যাড আছে সেখানে ১৫০ জনের ব্যাড বসানো হয়েছে।
অনেক জ্যামজট যদিও ট্রাফিক জ্যামের মত নয়।

দেখতে যাওয়া রোগিটা দেখেই চোখ গেল নিচে পাশের একটি রোগির ব্যাডে।
দেখতে পেলাম সকালে তাপ্পর খাওয়া লোকটা পাশে গেলাম দেখি স্যালাইন চলছে,তার শষ্য পাশে বসে আছে তার মা।
তার মা'র কাছ থেকে জানতে চাইলাম সমস্যা কি …?
মা ঘটনার পূর্ণতা ব্যাখ্যা দিলেন যদিও আমি ঘটনা নিজ চোখে সব দেখেছি। তার মাঝে নিশ্চিত হলাম সকালের ঘটনাটা।
পরিবারে বর্ণনা দিতে লাগলো তার মা, ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে এক বছর হচ্ছে ঐ ছেলেটি তাদের একমাত্র ছেলে সন্তান,তার বউ গর্ভবতি আর কিছু দিন মাত্র সময় আছে বাচ্চা হবে,আমিও (মা) তেমন সুস্থ নয় ঔষুধ খেয়েই বেঁচে আছি,তার বাবাও অসুস্থ
পরিবারের একমাত্র অর্থের যোগানদাতা সে (মায়ের ছেলেটা) যে সময় যে কাজ পায় তা করে।নিয়মিত রিক্সা চালক নয়।

সব দিকে মসিবত অভাবের সংসার তার বউ একা বাসায় হাসপাতালে আসতে পারে নি অসুস্থ থাকায়,আমি মা হয়ে নিজেই চলে আসছি।
মা'য়ের মন তো আর কিছু বোঝে না। এভাবে নানা কথা বলতে বলতে বুক ফাটা কান্না দিয়ে দুই চোখ দিয়ে শ্রুতের বন্যা শুরু করে দিল,সাথে অভিশাপ দিচ্ছে আল্লাহ তুমাই বিচার দিচ্ছি,বিচারটা তুমি করিও।
এভাবে তাকে এবং তার পরিবারকে দেখে মায়া লাগা ছাড়া আর কিছু করার নেই শুধু নিজেই শান্তনা দিয়ে যাছি সব ভাল হয়ে যাবে।
প্রতিক্ষনে ঐ অর্থ,গাড়ি ওয়ালা লোকটি কথা মনে পড়ছে,তার অর্থ আছে বিদায় আজ এইসব,সে তো তার জমা অর্থ দিয়ে ভালই ফুর্তি করছে কিন্তু কষ্ট করে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা লোকটির কেনই এই অবস্থা করলো।
মনে শুধু আজো প্রশ্ন জাগে।

যাক বলছিলাম কি, আমরা যখন কাউকে প্রহার করতে যায় অন্তত একবার কি চিন্তা করতে পারি না, আমি আঘাত করার পর তার এবং তার পরিবার কোন ভাবে কষ্টে পড়বে না তো, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো…
হ্যাঁ আমরা পারি এবং পারবো এই সমস্ত ক্ষনস্থায়ী মেজাঝকে ধ্বংস করতে,
এসব হীন চরিত্র থেকে নিজেকে বিরত রাখি।

মন্তব্য পোষ্ট,
লেখকঃ-
মোঃ হাফিজ আল আসাদ।undefinedundefinedundefined

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.