নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সীরাত মাহফিল ও জনপরিসরে ইসলামের প্রতি বৈষম্য: সমাজের দ্বিমুখী মানসিকতার প্রতিচ্ছবি

০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



সম্প্রতি একদল ছাত্র একটি সীরাত মাহফিল আয়োজনের প্রস্তাব করেছিল, যেখানে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রস্তাবে প্রথমে জানানো হয় যে বাইরের বক্তা এনে কোনো প্রোগ্রাম করা যাবে না। অথচ একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে বাইরের ব্যান্ড এনে কনসার্ট আয়োজন করা হয়, যা স্বতঃসিদ্ধভাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। যখন এই বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তখন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়, “কনসার্ট অনেক বছর ধরে চলে আসছে এবং এর শিল্পীরা সর্বজনস্বীকৃত। অন্যদিকে, সীরাত মাহফিলের বক্তারা সেইভাবে সবার কাছে পরিচিত নন।” আরও বলা হয়, “ধর্মীয় প্রোগ্রাম নিয়ে অনেকেই বিরোধিতা করতে পারে এবং এতে ইস্যু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

প্রথমত, এ ধরনের যুক্তি কি সত্যিই যুক্তিসঙ্গত? কনসার্টে বাইরের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে কোনো সমস্যা না হলেও, সীরাত মাহফিলে বাইরের বক্তা আমন্ত্রণ জানাতে আপত্তি কেন? এটি কি সত্যিই বক্তাদের পরিচিতির সমস্যা, নাকি এর মূল কারণ অন্যত্র নিহিত? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের সমাজের একটি গভীর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়—ইসলামের প্রতি আমাদের জনপরিসরে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

জনপরিসরে ইসলাম: বৈষম্য ও গ্রহণযোগ্যতার সংকট

আমাদের সমাজে ইসলাম এবং তার শিক্ষাকে প্রায়শই জনপরিসরে বর্জিত বা উপেক্ষিত করা হয়। যে বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করা হয় তার মধ্যে ইসলামিক অনুষ্ঠান বা আয়োজন, মুসলিমদের জমায়েত, এমনকি ধর্মীয় পোশাকও অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই ইসলামিক পোশাক, দাড়ি, হিজাব, অথবা ইসলামিক সংস্কৃতির কোনো প্রকাশ্য দিক দেখলে বিরূপ মন্তব্য করতে দ্বিধা করেন না। ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন তা সমাজের মূলধারার জন্য উপযুক্ত নয়।

কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়, তবে মূলত এর পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক এবং সামাজিক প্রবণতা, যা সময়ের সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে। পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে, আমাদের সমাজে যে কোনো ইসলামিক অনুষ্ঠান বা আয়োজনকে অনেক সময় "উগ্রতা" বা "রক্ষণশীলতা" হিসেবে দেখা হয়। অথচ, কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে আমরা সহজেই "বিনোদন" বা "সংস্কৃতির অংশ" হিসেবে গ্রহণ করি।

বুয়েটে সীরাত মাহফিল: প্রকৃত সমস্যার উন্মোচন

বুয়েটে প্রস্তাবিত সীরাত মাহফিলের ক্ষেত্রে, প্রশাসন যে যুক্তি দেখিয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় সমাজের এই দ্বিমুখী মানসিকতা। কনসার্ট আয়োজন করতে গেলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না, কিন্তু সীরাত মাহফিলের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিরোধিতা এবং ইস্যু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। মূলত, এটি ইসলামের প্রতি সমাজের একটি গভীর ভীতির প্রকাশ। ইসলামী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং ইতিহাস নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা হলে সমাজে একটি অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, কারণ ইসলামকে জনপরিসরের জন্য "উপযুক্ত" মনে করা হয় না।

এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে। কেন ইসলামের ইতিহাস, নবী (সা.)-এর জীবন, এবং ইসলামী আদর্শ নিয়ে আলোচনা সমাজের অন্য অনুষ্ঠানের মতো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়? কেন ইসলামিক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে নানা রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হয়, অথচ অন্য ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো সহজেই আয়োজন করা যায়?

সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান

প্রকৃতপক্ষে, আমাদের সমাজের একটি বড় অংশে ইসলামিক সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের প্রতি একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়, বরং বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি বাস্তব চিত্র। ইসলামিক কোনো আলোচনা বা মাহফিলকে গ্রহণ করতে আমাদের মানসিকতায় যে সংকীর্ণতা রয়েছে তা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং এটি আমাদের সমগ্র সমাজের ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন।

এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করার জন্য প্রয়োজন, ইসলামের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং শিক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো। সমাজে ইসলামের অবদান এবং তার ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। এর পাশাপাশি, ইসলামের যে উদারনৈতিক এবং মানবিক দিক রয়েছে তা সমাজের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। সীরাত মাহফিলের মতো আয়োজনগুলো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে, যেখানে ইসলামের মহান শিক্ষা, মানবতা, এবং নৈতিকতার আলোকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়।

সমাপনী কথা

ইসলামের প্রতি এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে ধৈর্যশীল এবং কৌশলগত হতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে এবং ইতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব তৈরি করা জরুরি। সীরাত মাহফিলের মতো উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি সম্ভাবনা যে আমরা ইসলামকে সমাজে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি। জনপরিসরে ইসলামের স্থান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন সমাজের প্রতিটি বিশ্বাস এবং সংস্কৃতিকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়।

এভাবেই আমরা একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে ইসলামকে জনপরিসরের জন্য বর্জিত না করে বরং তাকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.