![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-র নেতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরিবারের দাবি ছিল, পরিচয়হীন কিছু লোক র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এই ‘গু’ম’-এর ঘটনা তখন দেশব্যাপী তীব্র আলোড়ন তোলে। বিএনপি এটিকে সরকারের পরিকল্পিত রাজনৈতিক নিপীড়ন হিসেবে বর্ণনা করে।
তবে ঘটনার চমক এখানেই শেষ নয়—দুই মাস পর, ১১ই মে ২০১৫ সালে, সালাউদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের একটি রাস্তায়। তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ছিল অনেকটাই দুর্বল। ভারতীয় পুলিশ তাঁকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আটক করে এবং পরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এরপর শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া। প্রায় দুই বছর তিনি সেখানেই আটক থেকে জামিনে মুক্তি পান এবং ২০১৮ সালের দিকে ধীরে ধীরে তিনি প্রকাশ্যে আসেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
তিনি কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের শিলং-এ গেলেন?
তিনি নিজে কখনোই পরিষ্কারভাবে বলেননি তাকে কিভাবে এবং কে বা কারা শিলং নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর ভাষ্য ছিল অস্পষ্ট—তিনি বলেছিলেন, “আমি জানি না কিভাবে আমি সেখানে পৌঁছলাম।”
তিনি যখন ফিরলেন, তখন কি তিনি কোনো থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন?
না, এখন পর্যন্ত তাঁর নিখোঁজ হওয়া এবং অজ্ঞাত কারণে ভারতের মাটিতে পৌঁছে যাওয়া নিয়ে তিনি বাংলাদেশের কোনো থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেননি।
তিনি কি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন অথবা গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ করেছেন?
বিস্ময়করভাবে, না। সালাউদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে ‘গু’ম’-এর ঘটনায় কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে গুম সংক্রান্ত মানবাধিকার সংস্থা বা কমিশনগুলোতেও তাঁর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা বিবৃতি নেই।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু গুরুতর প্রশ্ন সামনে আসে:
1. একজন জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদ যদি নিখোঁজ হন এবং পরে অন্য দেশের সীমানায় ‘উঠে’ আসেন, তাহলে সেটি নিয়ে রাষ্ট্রীয় তদন্ত কেন হয়নি?
2. যদি সত্যিই তাঁকে গুম করা হয়ে থাকে, তবে তিনি নিজে কেন তার জন্য কোনো বিচার বা দায়বদ্ধতার আহ্বান করেননি?
3. তিনি কি কোনো চাপে ছিলেন, নাকি ঘটনাটির পেছনে এমন কিছু ছিল যেটি তিনি গোপন রাখতে বাধ্য ছিলেন?
এ প্রশ্নগুলো শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে। গুমের ঘটনা যেখানে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের জন্ম দেয়, সেখানে একজন রাজনৈতিক নেতার গুম হয়ে ফিরে আসার পর সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থেকে যাওয়া—এটি শুধু রহস্যজনকই নয়, বরং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
©somewhere in net ltd.