নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতার খাতা

আশিক ফয়সাল

আশিক ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজকুমারীর রূপ দান

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪৯

রূপকথার গল্প : রাজকুমারীর রূপ দান
         লেখক :    আশিক ফয়সাল
                             
রূপনগর নামে সুন্দর একটা রাজ্য ছিলো। রাজ্যের প্রতিটি মানুষের চেহারা ছিল অপূর্ব সুন্দর । বিশেষ করে মেয়েরা এতোটাই রূপবতী ছিলো যে অন্যান্য রাজ্য থেকে রাজা, মন্ত্রী, রাজপুত্ররা আসতো সেই রাজ্যে বিয়ে করতে। আর এ নিয়ে রাজ্যের মানুষের গর্বের শেষ ছিলো না। সবাই ছিলো মহা সুখী কিন্তু ঐ রাজ্যের রাজার মনে ছিলো পাহাড় সমান দুঃখ । দুঃখ তো থাকবেই কারণ রাজার একমাত্র কন্যার চেহারা ছিলো ভীষণ কুৎসিত। লোকে রাজকুমারীকে দেখলে ভয় পেতো। রাজকুমারীর গায়ের চামড়া ছিলো কয়লার মতো কালো আর পোড়া ইটের মত খসখসে। দেশ বিদেশর বহু বদ্দি কবিরাজ আনিয়েছেন রাজা। তারা চেষ্টা করেছে রাজকুমারীকে স্বাভাবিক করার, একটু হলেও রূপ দান করার কিন্তু ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে ফিরে গিয়েছে সবাই। তবুও হাল ছাড়েননি রাজা, রাজ্য জুড়ে ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিলেন কেউ যদি রাজকুমারীর রূপ দান করতে পারে তাহলে রাজা তার সাথে রাজকুমারীর বিয়ে দেবেন এবং তাকে রাজ্য দান করবেন। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও, কেউ আর এলো না রাজকুমারীর রূপ দান করতে  ।
এদিকে রাজকুমারী ঘরে বসে রাত দিন কাঁদত। সে বেশি কষ্ট পেতো রাজার কষ্ট দেখে, শুধু তার জন্যই তার বাবার মনে এতো কষ্ট। তাই সে সিদ্ধান্ত  নিলো  পালিয়ে যাবে, তার এই কুৎসিত চেহারা আর কাওকে দেখাবে না।
একদিন সন্ধ্যায় রাজকুমারী প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে এলো। হাটতে হাটতে চলে এলো গহীন জঙ্গলে। রাত নেমে এলো তবুও থামলো না রাজকুমারী, কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে চললো জঙ্গলের আরও গহীনে। নির্জন জঙ্গলে নেমে এলো রাতের অন্ধকার। নিস্তব্ধ হয়ে এলো চারদিক। ভয়ে কাঁপতে লাগল রাজকুমারী । জড় সড় হয়ে বসলো একটা বড় গাছের নিচে। নির্জন জঙ্গলে তার কান্নার আওয়াজ ভেসে গেলো চারিপাশে। ঐ জঙ্গলের ভেতর বাস করতো এক কাপালিক। একটা ছোট কুড়ে ঘরে তন্ত্র সাধনায় মক্ত ছিল সে। নির্জন জঙ্গলে কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো তার কানে, ব্যাঘাত ঘটলো তার ধ্যানে। ক্ষুব্ধ হয়ে কুটির ছেড়ে বেরিয়ে এলো সে। খুজতে শুরু করলো সাধনা পন্ড কারিকে। খুঁজতে খুঁজতে চলে এলো রাজকুমারীর কাছে। রাতের অন্ধকারে রাজকুমারীর কুৎসিত চেহারা দেখে কাপালিক নিজেই ভয় পেলো। কিছুটা সামলে নিয়ে কাপালিক রাজকুমারীকে জিজ্ঞাসা করলো কে সে, এত রাতে এখানে কিভাবে এলো আর কাঁদছেই বা কেনো। কাপালিকের অস্বাভাবিক বেশভূষা দেখে রাজকুমারী ভীষণ ভয় পেলো এবং আরো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। রাজকুমারীর এমন ব্যবহারে কাপালিক ভীষণ রেগে গেলো এবং তাকে ধরে তার কুড়ে ঘরে  নিয়ে এলো। তান্ত্রিক রাজকুমারীর কাছ থেকে তার জঙ্গলে আসার কারণ শুনলো, আর এটাও শুনলো তাকে রূপ দান করতে পারলে রাজা তার রাজ্য দিয়ে দেবেন। কিন্তু তার কোন লোভ হলো না বরং তন্ত্র সাধনার জন্য তার যুবতী মেয়ের রক্ত ও অস্থি দরকার ছিলো  আর আজ সে তা সহজেই পেয়ে গেলো। কিন্তু সমস্যা একটা থেকেই গেলো। প্রেতাত্মাদের খুশি করার জন্য দরকার রূপবতী যুবতীর তাজা রক্ত ও অস্থি। তাই কাপালিক ঠিক করলো সে যদি রাজকুমারীকে রূপ দান করতে পারে তাহলে সে রাজ্যও পাবে এবং পরে তার তন্ত্র সাধনায় রাজকুমারীকে ব্যবহার করতে পারবে।

কাপালিক একটা ছোট্ট ধাতুর বাক্সে একটা পরীকে বন্দি করে রেখেছিলো, সে ঠিক করলো বন্দি পরীকে দিয়েই রাজকুমারীকে রূপবতী করে তুলবে। কাপালিক ধাতুর বাক্সটা নিয়ে তার সামনে রাখলো, তারপর একটা মন্ত্র পাঠ করলে বাক্সটার ঢাকনা নিজে  থেকেই খুলে গেলো,বাক্সটার মধ্যে থেকে উজ্জ্বল আলোর ফুলকি বেরিয়ে অপরূপ রূপবতী পরীতে রূপ নিলো। অসহায় পরী বেরিয়েই কাঁদতে লাগলো, কাঁদতে কাঁদতে সে মুক্তি ভিক্ষা চাইলো। কাপালিক ব্যঙ্গাত্বক সুরে হেসে বললো, মুক্তি সে পাবে কিন্তু তার আগে আরো কিছু কাজ তাকে করে দিতে হবে। পরী আর কি কাজ করতে হবে জিজ্ঞাসা করলে কাপালিক রাজকুমারীকে সুন্দরী যুবতীতে পরিনত করার হুকুম দিলো কিন্তু পরী কাপালিকের খারাপ উদ্দেশ্যের কথা জানতো তাই সে কোন খারাপ কাজে কাপালিককে সাহায্য করবে না বলে জানিয়ে দিলো। পরীর কথা শুনে কাপালিক ভীষণ রেগে গেলো এবং একটা মন্ত্র পড়ে কিছু বালি পরীর শরীরে ছুড়ে মরলো। অসহায় পরী যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল। কাপালিক পরীকে রাজি করানোর জন্য কষ্ট দিতে লাগল। অসহায় পরী নিরুপায় হয়ে কাপালিকের কথায় রাজি হলো,সে বলল শুধুমাত্র ভরা পূর্ণিমার রাতেই সে রাজকুমারীকে রূপ দান করতে পারবে। কাপালিক তাতেই রাজি হলো তারপর সেই একই মন্ত্র আবার পাঠ করলো, সাথে সাথে পরী উজ্জ্বল ফুলকিতে রূপ নিয়ে বাক্সে ঢুকে গেলো। রাজকুমারী পাশে থেকে আশ্চর্য হয়ে সব দেখলো। কাপালিক রাজকুমারীকে বললো সে তাকে রূপ দান করবে আর এজন্য রাজকুমারীকে পূর্ণিমার রাত না আসা পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। রাজকুমারী জানতো না কাপালিকের উদ্দেশ্যের কথা, তাই সে পরম আনন্দে কাপালিকের কথায় রাজি হলো। কাপালিক রাজকুমারীকে বললো সে যেন ঘর ছেড়ে বের না হয় এবং ভুলেও পরীর বাক্সের কাছে না যায়। কাপালিক আবার সাধনায় বসলো আর রাজকুমারী ঘরের এক কোনে ঘুমিয়ে পড়লো। পরের দিন সকালে কাপালিকের ডাকে রাজকুমারীর ঘুম ভেঙ্গলো। কাপালিক রাজকুমারীকে বললো সে সাধনার রসদ জোগাড় করতে জঙ্গলের গভীরে যাচ্ছে তাই তার ফিরতে দেরি হবে। আর এটাও মনে করিয়ে দিলো ভূলেও যেন রাজকুমারী কুটিরের বাইরে না যায় এবং পরীর বাক্স স্পর্শ না করে। রাজকুমারীকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে দরজার খিড়কি বন্ধ করে কাপালিক চলে গেলো। বদ্ধ ঘরে একা একা রাজকুমারীর একটুও ভালো লাগছিলো না। সে ঘরের এক কোণে বসে গত রাতের ঘটনা গুলো ভাবছিলো,কি অপূর্ব দেখতে হয় পরীরা। দেখলেই  চোখ জুড়িয়ে যায় কিন্তু কাপালিক কি নিষ্ঠুর ভাবে আটকে রেখে শাস্তি দিচ্ছে পরীটাকে। পরীর প্রতি রাজকুমারীর খুব মায়া হলো। সে যদি পরীটাকে মুক্ত করতে পারতো কিন্তু সে ক্ষমতা যে তার নেই। এসব ভাবতে ভাবতে  সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। রাজকুমারীর খুব খিদে পেলো তাই সে ঘরের ভিতরে রাখা বিভিন্ন কৌটা, বাক্স খুলে দেখছিলো খাবার কিছু খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। খুঁজতে খুঁজতে সে পশুর চামড়ার তিনটে টুকরো পেলো যার উপর সংস্কৃত ভাষায় মন্ত্র লেখা ছিলো। রাজকুমারী সংস্কৃত পড়তে পারতো। খাবার কিছু না পেয়ে সময় কাটানোর জন্য সে মন্ত্র গুলো পড়তে লাগলো, একটা মন্ত্র তার পরিচিত মনে হলো। হঠাৎ তার মনে পড়লো কাল রাতে এই মন্ত্রটা পড়েই কাপালিক বন্দি পরীকে বাক্স থেকে বার করেছিলো। তখন রাজকুমারী ভাবলো সে যদি এই মন্ত্র পাঠ করে পরীকে বার করতে পারে তাহলে সে তাকে মুক্ত করতে পারবে। রাজকুমারী দেরি না করে ধাতুর বাক্সটা নিয়ে সামনে রেখে মন্ত্রটা পাঠ করলো আর সাথে সাথে বাক্সের ঢাকনা খুলে গিয়ে একটা উজ্জ্বল আলোর ফুলকি বেরিয়ে আসলো এবং অপরূপ সুন্দরী পরীতে রূপ নিলো। হতবাক পরী কিছু বলার আগেই  রাজকুমারী পরীকে জিজ্ঞাসা করলো কাপালিক কেন তাকে এখানে এভাবে আটকে রেখেছে। পরী রাজকুমারীকে কাপালিকের তন্ত্র সাধনার উদ্দেশ্য বললো। কাপালিক কালো জাদুর সর্বময় ক্ষমতা অর্জন করতে চাই, তাই সে এই নির্জন জঙ্গলে তন্ত্র সাধনা করছে। সাধনার রসদ হিসাবে কাপালিকের দরকার রূপবতী যুবতীর রক্ত ও অস্থি আর তাই সে রাজকুমারীকে কৌশলে এখানে আটকে রেখেছে এবং তার রূপ দানের জন্য সাহায্য চাইছে। সব কথা শুনে রাজকুমারী ভয়ে আঁতকে উঠলো এবং পরীকে দ্রুত পালিয়ে যেতে বললো। পরী বললো সে চাইলেই পালিয়ে যেতে পারবে না, কাপালিক তাকে মন্ত্র দ্বারা বন্দি করে রেখেছে। রাজকুমারী বললো কাপালিকের সব মন্ত্রের দলিল এখন তার কাছে, সে যেভাবেই হোক তাকে মুক্ত করবে। রাজকুমারী তার হাতের বাকি চামড়ার খন্ডে লেখা মন্ত্রটা পাঠ করলো। হঠাৎই অবাক করে দিয়ে পরী বাক্সের উপর থেকে রাজকুমারীর পাশে এসে দাঁড়ালো । রাজকুমারী আনন্দে চিৎকার করে উঠল। নির্জন জঙ্গলে রাজকুমারী চিৎকার কাপালিকের কানে পৌছল। কাপালিক তার কাজ ফেলে দ্রুত ঘরে ফিরে এলো। হঠাৎ কাপালিকের আগমনে রাজকুমারী ও পরী ঘাবড়ে গেলো।
কাপালিক তাদেরকে একসঙ্গে দেখে রাগে গোমড়াতে লাগলো। রাজকুমারী আর পরী কাপালিকের ভয়ে কাঁপতে লাগল। কাপালিক রাজকুমারীকে জিজ্ঞাসা করলো পরী কিভাবে বাক্সের বাইরে এলো। রাজকুমারী ছিলো প্রখর বুদ্ধিমতী,সে কৌশলে কাপালিকের সময় নষ্ট করলো এবং কাপালিক কিছু  করে ওঠার আগেই তার হাতের চামড়ার টুকরোতে লেখা সেই মন্ত্রটা পাঠ করলো যে মন্ত্রটা গত রাতে কাপালিক পাঠ করে পরীকে কষ্ট দিয়েছিলো এবং নিচ থেকে এক মুঠো বালি নিয়ে কাপালিকের গায়ে ছুড়ে মরলো। কাপালিক অত্ননাদে  চিৎকার করে ছটফট করতে লাগলো। রাজকুমারী কাপালিকের মন্ত্রেই কাপালিককে বধ করলো। কাপালিক রাজকুমারীর কাছে প্রান ভিক্ষা চাইলো কিন্তু রাজকুমারী উল্টে বাক্স বন্দির মন্ত্রটা পোড়ে কাপালিককে সেই ধাতুর বাক্সে বন্দি করে দিলো। পরী আনন্দে রাজকুমারীকে জড়িয়ে ধরলো। রাজকুমারী পরীকে বললো এবার সে মুক্ত, দেশে ফিরতে তার আর কোন বাঁধা নেই। পরী বললো ফেরার আগে একটা কাজ যে তার এখনো বাকি, দু দিন পরেই ভরা পূর্ণিমা আর তাকে যে পূর্ণিমার রাত না আসা পর্যন্ত রাজকুমারীর সাথেই থাকতে হবে। বন্ধুকে এভাবে রেখে সে কি যেতে পারে। পরীর কথা শুনে রাজকুমারী তাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো। পূর্ণিমার রাত না আসা পর্যন্ত তারা দুজন একসাথেই সেই কুড়ে ঘরে থাকলো। গল্পে গল্পে দেখতে দেখতে দু দিন কেটে গেলো। পূর্ণিমার রাত এলো। পরী তার সর্ব ক্ষমতা দিয়ে রাজকুমারীকে অপূর্ব সুন্দরী করে তুললো। অপূর্ব রূপ পেলো রাজকুমারী। পরী রাজকুমারীকে বললো এবার বিদায় দাও বন্ধু। রাজকুমারী বললো বিদায় বন্ধু কিন্ত আবার কবে দেখা হবে। পরী বললো চাইলেই দেখা হবে, ভরা পূর্ণিমার রাতে তাকে মন থেকে ডাকলেই সে চলে আসবে। এবার বিদায় বন্ধু রাজকুমারী, এই বলে পরী তার দেশে ফিরে গেলো। আর রাজকুমারীও কাপালিককে বন্দি রাখা বাক্সটা হাতে নিয়ে প্রাসাদের দিকে রওনা হলো। পথিমধ্যে একটা নদীতে ছুড়ে ফেললো বাক্সটি।  রাজকুমারী প্রাসাদে ফিরলো। রাজকুমারীকে দেখে কেউ চিনতে পারলো না। এমন অপরূপ সুন্দরী যুবতী আগে কেউ কখনো দেখেনি।এমনকি তার জন্মদাতা পিতা তার কাছে জানতে চাইলো কে সে।রাজকুমারী রাজাকে সব খুলে বললো এবং প্রমাণ স্বরূপ অতিতের কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিলো। রাজা সব শুনে রাজকুমারীকে চিনতে পারলো এবং আনন্দে  তার একমাত্র কন্যাকে জড়িয়ে ধরলো। সারা রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হলো এই মহা আনন্দের খবর। রাজ্য জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। কিছুদিন পরে রাজা মহা ধুমধামে রাজকুমারীকে বিয়ে দিলো। 

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৫৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: রূপকথা হিসেবে মন্দ হয়নি। তবে এটা কি মৌলিক লেখা নাকি সংগৃহীত তা বুঝতে পারছি না যদিও লেখক হিসেবে আপনার নাম আছে...

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫

আশিক ফয়সাল বলেছেন: গল্পটি আমারি লেখা । ধন্যবাদ

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬

আশিক ফয়সাল বলেছেন: গল্পটি আমারি লেখা । ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.