নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Ashwa Ghosh

Nothing to put forward - nothing at all.

Ashwa Ghosh

Nothing to mention specially. Tall man. According to my grandma imprudent.

Ashwa Ghosh › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিতাগাছ (চলমান)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬

ওটাও আলীর একটা টেকনিক। যার সাথে যেভাবে কথা বলা যায়; ফ্রি একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়। চেয়ারম্যান সাহেবের মতো বয়স্ক একজন দাপুটে লোককে প্রথমেই কদমবুসি করে ফেললে তার কাছ যে আন্তরিকতা পাওয়া যাবে তা অন্যভাবে আশা করা যায় না। আমি আমার অন্য দর্শনের লোক। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে কেমন যেযন সংকোচ বোধ করি। কিন্তু আলী সালাম করে ফেলায় আমারও তা করতে হলো। কেননা অন্যথায় চেয়ারম্যান সাহেবের মনে হবে আমি বিশেষ অভদ্র। পূর্ব-পরিচিতির কোনো মূল্য থাকবে না। মামার কাছেও হয়তো নালিশ জানাতে পারেন, বুঝলেন, আপনার ভাগ্নে আসলে ততটা আদব কায়দা জানা নয়।

এমন কিছু বলে ফেললে আমার সম্মান যতটা যাবে, মামার সম্মান আরো বেশি যাবে। তাই আর কিছু চিন্তা না করে সালাম করে ফেললাম। আলীর সাথে কথা বলার সময়ও ভদ্রলোক তার ভ্রু কিছুটা কুঁচকে রেখেছিলেন। আমি কদমবুসি করা মাত্র তা সরে গেলো এবং চোখেমুখে একটা প্রসন্ন ভাব ছড়িয়ে পড়লো। আমি আর দেরি না করে তার যতটুকু কাছাকাছি বসা যায় ততটা কাছাকাছি বসে তাদের কথা বার্তায় মনোযোগ দিলাম। ভদ্রলোক এখনো তার সমস্যার কথায় যান নি।

মামা আমাকে আগেই বলে দিয়েছিলেন আগ বাড়িয়ে কোনো কথা যেন না বলি কেননা চেয়ারম্যান সাহেব মামাকে নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার কথা বলেন নি। কেবল সুযোগ পেলে আমাকে একবার দেখা করতে বলেছিলেন। সেই দূর থেকে এসে তো আর এমনি এমনি কারো সাথে দেখা করতে হয় না। আর ভদ্রলোকের সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্কও ছিলো না যে কেবল আমাকে দেখার জন্যই এতদূর আসতে বলেছেন। ভদ্রলোক এটা খুব ভালোকরেই জানেন যে আমি মূল প্রফেশনের পাশাপাশি শখের গোয়েন্দাগিরি করি এবং ইতোমধ্যে কয়েকটা কেসে বেশ সাফল্যও পেয়ে গেছি। পেপার পত্রিকাতেও বেশ কয়েকবার আমাদের সাফল্যের কাহিনি ছাপা হয়েছে। তার মানে ভদ্রলোক কোনো সমস্যায় পড়েছেন নিশ্চয়ই।

কান পেতে শুনলাম আলীর সাথে তিনি তার পূর্বপুরুষের কথা বলছেন। কীভাবে তারা এই এলাকায় এলেন। আগে তাদের শেকড় কোথায় ছিলো। ইত্যাদি।

জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকালাম। আকাশ এখনো অন্ধকার। কালো কালো মেঘের খ-গুলো বাঘের তাড়া খাওয়া মোষের মতো বেগবান হয়ে উঠেছে। নির্দিষ্ট একটা দিকে পালিয়ে যাচ্ছে যেন। সময়টা আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে বুঝলাম দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো আবার ফিরতে হবে। বাসস্থানে না হোক অন্তত মামার বাসায় যেতে হবে। মামী বেশ উৎসাহের সাথে খাবারের আয়োজন করছেন। মামার বাসায় নেমেই গাও গোছল করে নিয়েছি। চা খেয়েই চলে এসেছি এখানে। পেটে যেন একটু একটু ক্ষুধাও অনুভব করছি। আমার মতো খাদ্য বেরসিক লোকও যদি পেটে ক্ষুধা অনুভব করে তাহলে আলীর মতো খাদ্যপ্রিয় লোকের কী অবস্থা অনুমান করা যায় সহজেই। কিন্তু তার মুখে কোনো চিহ্ন নেই। একমনে চেয়ারম্যান সাহেবের কথা শুনে যাচ্ছে। যেন সে টোলের ছাত্র। মাস্টার মশাই কোনো আজব গল্প বলছেন আর সেই গল্পে বুঁদ হয়ে গেছে আলী। আমি ততটা ইন্টারেস্ট না পাওয়ায় বারবার চোখ চলে যাচ্ছে জানালার ওপারে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তবে ততটা নয়। গুঁড়ি বৃষ্টি। কোন সময় আবার মুষলধারে নামে ঠিক তো নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সেরে চলে যাওয়াই ভালো। এই মুহূর্তে পালোয়ান আবার এলো। মাথা নিচু করে চেয়ারম্যান সাহেবের কানে কী যেন বলে মাদাম তুসোর জাদুঘরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য সামান্য আয়োজন করা হয়েছে। এসো খাবার ঘরে যাওয়া যাক।

আমি মৃদু প্রতিবাদ করলাম, কিন্তু মামা তো বাসায় রান্নাবান্না করে ফেলেছে। আমরা না খেলে খুব কষ্ট পাবেন। একথা বলতেই আলী আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। তার চোখের ফোলা ফোলা ভাবটা উধাউ হয়ে গেছে। বেশ চনমনে মনে হচ্ছে তাকে।

মামীর মুখটা মনে আসাতে কেমন যেন খারাপ লাগলো আমার। মামা-মামীর কোনো সন্তানাদি নেই। ভাগ্নে-ভাগ্নীদের যে আদর করেন তাতে মনে হয় নিজের সন্তান থাকলেও তাদের এরচেয়ে বেশি আদর করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আমি মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা একটা কাজ করি, আলী এখানেই খাওয়া-দাওয়া করুক। আমি মামার বাসায় খেয়ে চলে আসি। এতে কারো মনেই খারাপ লাগা জন্মাবে না।

কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব এতেও মনক্ষèুন্ন হলেন। আমি বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মেঘের দাপট এখনো সমান তালে চলছে। তবে বৃষ্টি নেই বললেই চলে। এই সুযোগটাই কাজে লাগানো দরকার। চেয়ারম্যান সাহেবের মন খারাপের চেয়ে মামা-মামীর মন খারাপের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। স্বার্থপরের মতো শোনালেও এটাই সত্য। আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে আর কোনো কথা না বলে আলীকে বললাম, তাহলে তুই এখানেই খাওয়া-দাওয়া কর; আমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চলে আসবো। একটু জোরে জোরেই কথাটা বললাম যাতে ভদ্রলোকের কানেও কথাটা যায়। তিনি তখন ভেতর বাড়ির দরজা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার কথা কানে যাওয়ায় আর অপেক্ষা করলেন না। বেরিয়ে গেলেন। আমিও আলীর উত্তরের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে এলাম। খাদ্য রসিক এবার খাওয়ার কাজ শেষ করুক। আমি আমার আত্মীয় স্বজনের কাছে যাই। নেহাৎ প্রফেশনার ট্যুর এটা নয়। আলীর জন্য হতে পারে; অন্তত আমার জন্য নয়। বহুদিন এখানে আসা হয়নি। আলীর জন্য নিরাবেগের জায়গা থাকলেও আমার সেরকম কোনো সুযোগ নেই। মামাবাড়ির আশপাশের প্রায় মাইল খানেক এলাকার প্রতিটা ইঞ্চিতে আমি একসময় ঘুরে বেড়িয়েছি। যারপরনাই অত্যাচার করেছি প্রতিবেশিদের। শহরের পাথর সর্বস্ব দালানকোঠা থেকে যখনই এখানে এসেছি মনে হয়েছে আমি মৃত ছিলাম; অকস্মাৎ আমার ভেতরে প্রাণের সঞ্চার করলো কেউ। আবার যখন ফিরে যেতে হয়েছে ভেবেছি জন্ম থেকে আবার মৃত্যুর দিকে ফিরে যাচ্ছি। সেই বয়সে ঠিক এমনভাবেই ভেবেছিলাম এটা বলা যাবে না। তবে ভাবনা কাছাকাছিই ছিলো। লেভেলের তফাৎ মাত্র।

মাথার উপরে কৃষ্ণবর্ণ মেঘের সামিয়ানা নিয়ে আমি রওনা হলাম। পথ তো খুব বেশি কিছু নয়। মাত্র ছয় কিলোমিটার। কিছুটা এদিক সেদিকও হতে পারে। বিশ্বস্ত ও পরিচিত বাইকের আওয়াজ, চাকা ও চেনের মসৃণ আওয়াজগুলো একসাথে মিলে যেন বলতে চাইছে, শুভ প্রত্যাবর্তন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.