নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাকে মুছে ফেলা যায় ইরেজার ঘষেই\nতোমার প্রিয়,প্রিয়তম আমি সে-ই

৪৫

কিছু হতে না পারা কেউ আমি এই জীবনের ঢেউ

৪৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেত্রচপেটাং পত্র বুমেরাং স্মৃতিকথাং

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৫৮

কত্ত! অভাব ছিলো না। নিজে বেত আনতাম। আর সেই বেত নিজের হাতে পিঠেই সরল রেখা, বক্ররেখার জন্ম দিতো। স্কাউট লিডার ছিলাম, তাই এসেম্বলি আমার জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো। তারপরেও পালানোর সাধ যতবার নিয়েছি ততবারই স্কুলের সিনিয়ররা গিয়ে পাকড়ে নিয়ে আসতো। আর তখন মনে হতো সিনিয়ররা সবাই পাকিস্তানি, আর আমরা বন বাদাড়ে পালিয়ে বেড়ানো গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। শিক্ষকের সন্তান হওয়ায় আলাদা খাতির ছিলো। তবে বেত্রপ্রসাদ সবার জন্য সমান ভাবে বন্টন করা হতো। এতে মন্ত্রী-মিনিস্টার, ছেলে-মেয়ে বিভেদ ছিলো না।

বাড়ির কাজের খাতা তো দিই নি কতদিন। আর ভাব নিয়ে বসে থাকতাম আমি না দিলে বাড়ির কাজের খাতা জমা দেবে কে? কিন্তু গৃহস্থের একদিন আমার দশদিনের সাফল্যকে এগারো নম্বর মহাবিপদ সংকেত সহ একদিন ধূলিস্যাঁত করে দিলো। প্রতিক্লাসে ফার্স্ট হওয়াটাও জরুরী ছিলো। তবে খুব একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে না পড়ায়, অনেক গাফিলতি হয়ে যেতো। আমাদের মধ্যে দুষ্টের শিরোমণি বলতে তাদের দিকেই তর্জনীর আক্রোশ ছিলো, যারা এই বয়েসেই প্রাচীন দাদী-নানীদের নাতবৌ, নাতজামাই দেখে স্বর্গ প্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্খার প্রতি যথাবিহীত শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবে বালক বয়েসেই সঠিক বেঠিক যেকোন অপশনে টিক চিহ্ণ দিতো বা বৃত্ত ভরাট করে নিতো। তবে এই টিক বা বৃত্ত ভরাট নিমেষেই পরিবর্তন যোগ্য ছিলো । এবং এই উত্তরগুলি অপ্টিক্যাল মার্ক রিডারে যাচাই হবার বদলে যার যার ব্যক্তিগত পরিণত বয়েসের নস্টালজিক ঝুলিতে ফুলস্ক্যাপ কাগজে আকা বিভিন্ন ল্যান্ডস্কেপে স্বীয় মার্কিং এ ফুলমার্ক্স নিয়ে থেকে গেছে।

আমার কখনো প্রেম চাহিয়া কারো কাছে পত্র লেখার সৌভাগ্য হয় নাই। বরং সাহিত্যের রঙ দিয়ে কতজনের নিকট পত্র বিক্রি করে ক্ষণিকের মন্দির গড়ে দিয়েছি, আর কত সাহিত্য না বোঝা বালিকাদের সাধু-চলিত-সংস্কৃত মিশ্রণ সমেত দুর্বোধ্য পত্র বিকিয়ে কতজনের সংসার ভেংগেও চুরমার করে দিয়েছি হিসেব নেই। ওসব সংস্কৃত ভাষার উৎস ছিলো বাংলা সেকেন্ড পেপারের বাহারী সংকলনগুলো। আর ক্লাসে প্রথম হবার সুবাদে নাকি একমাত্র চশমা ব্যবহারকারী হিসেবে সবাই একবাক্যে জ্ঞানী বলে স্বীকার করে নিত জানতাম না। তাই জ্ঞানী ভাবতো বলেই পত্র লেখার ভার আমার উপর দিয়ে তুহিন গান ধরতো, "আমি কেমন কররে পত্র লিখি গো ......." । আমিও ঠিক চেনা বালিকাদের অচেনা ভেবে ভেবে লিখতাম। না তা আমার সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত নয়। বরং ওইসব পত্রের যত্রতত্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ম্যাগনেফায়িং 'শর্ত প্রযোজ্য' শব্দের অনুকরণ ও অনুসরণে পত্রলেখক এই অপারগ বালকটির প্রতিভা ও চরিত্র ফাস করে দিতাম। যেমন কখন কখনো এমন লিখেছি যে, " এইটুকু লেখার পর্যায়ে তুহিন গানে গানে তার পত্র লেখার অপারগতা প্রকাশ করছে। এবং এই অপারগতা মূলতঃ গ্রাম-পোষ্টাফিসের ঠিকানার অভাবে নয় বরং তার ভয়ংকর হস্তাক্ষর জনিত আক্ষেপের কারণেই।" সেইসময় এরকম বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার চলমান বর্ণনাসহ লিখিত সেইসব পত্র যাতে ভবিষ্যত মর্যাদার জন্য হেফাজতে( হুজুরে হেফাজত নয়) থাকে তাই চিঠির নিচে, পিছনে অথবা একটা কোণায় জরির কলমে লিখে দিতাম, নবীজি বলেছেন- "জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র"। আর তাদের, মানে তুহিনের মতো শ্রেণীশত্রুদের বুঝিয়ে দিতাম; নিজের পছন্দের এক বা একাধিক বালিকাকে তোদের মতো আততায়ীর কব্জামুক্ত রাখার জন্য অস্ত্রের ঝনঝনানি বা কিঞ্চিত রক্তপাতও নিষ্প্রয়োজন। বরং অসির চেয়ে মসী বড়। আমার স্বহস্তে লিখিত পত্র অন্য কারো হাত থেকে হাতবদল হলে সেটাই কখনো কখনো বুমেরাং এর মতো সুন্দরবনের দুবলার চর ধ্বংস করে দেয়া 'আইলা'র মতো প্রচণ্ড শক্তিসমেত চপেটাঘাত হিসেবে কখনো কখনো ফিরতে দেরী করতো না। বুমেরাং হয়ে ফেরত আসা সেইসব পত্রের জন্য চুক্তি ছিলো বিফলে মূল্য ফেরত আর সবাই মিলে গণসহানুভূতি প্রদান করে 'ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অভ সাকসেস' কথাটি মনে করিয়ে দিয়ে বলতাম 'একবার না পারিলে দেখো শতবার'। তবে ইতিহাস বলে যে, একবার আইলা শক্তির চপেটাঘাত যে পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র একটি সাহিত্য-শিল্পকর্মের জন্য ফেরত আসতো সেখানে শতবার চেষ্টা করলে আরো মিনিমাম আটানব্বই বার একই ধরণের দুর্ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটার শতকরা নব্বই ভাগ সম্ভাবনার কারণে তারা স্বীকার করে নিতো টিক চিহ্ণ ভুল উত্তরে পড়েছে। অতএব যেহেতু ওপেন বুক এক্সাম, নতুন করে উত্তর খোঁজা চলতে থাকুক। তাছাড়া ওইসব পত্রের ফাঁক ফোঁকরেও সর্বাধিক অনুসৃত ভাবসম্প্রসারণের কতিপয় সংকুচিত ভাবও থাকতো। যেমন, 'দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য'। আর পাহাড়ী আলো-জল-লোডশেডিং এ বড় হওয়া স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্না সেই বালিকারা কবি কাকে দুর্জন বলেছেন, সেটা বুঝতে ভয়ানক হিমশিম খেয়ে যেতো। যেমন ধরুন মুরগীর ডিমকে যদি গুরুচণ্ডালী দোষযুক্ত কোন পত্রে লিখি যে "কুক্কুট ডিম্ব", বালিকারা কুকুরের ডিম হয় কিনা, হইলে কত বড় হবে, এগুলো বাচ্চা দিবে কিনা, হালি কত করে বিক্রি করা যাবে, ইত্যাদি পরিকল্পনা করে ভালোবাসার তাসের ঘরকে ভবিষ্যতমুখী করে আরো শক্ত ভিতসহ এক- দোচালার ঢেউটিনের ঘর ছেড়ে অট্টালিকার স্বপ্ন দেখতো আর কুক্কুটডিম্বের ব্যবসার লাভ লোকসান হিসাব করতো। আর ছেলেদের অবস্থা ছিলো এইরকম- 'কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন।' "মণিকাঞ্চন যোগ" বদলে তাই অনেকসময়ই হস্তচপেটাঘাত যোগ হতো । তবু বয়োঃসন্ধির বয়েসে সন্ধি প্রস্তাবের মাধ্যমে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়াটা বালক সমাজ নিতে পারে নি।

আমাদের সাথে গরীব, খুর সহঘোড়ারোগ ওয়ালা গরীব, মধ্যবিত্ত, বিত্তশালী, শিক্ষকের শালা-শালী ইত্যাদি বন্ধু-বন্ধুনীরাই এইসব পত্র-পত্র খেলার অংশীদার ছিলো। বিদ্যা দেবীর সাথে জয় মা কালীর যুত দোহাই এবং অযুত পড়া মনে রাখার তাবিজ, নিযুত নকল করার সময় ধরা না পড়ার রক্ষা কবচ বা মাদুলি, হুজুরের পানি পড়া, ইত্যাদিসহ যাবতীয় সরঞ্জামে সহ পড়ালেখার যুদ্ধে জয়ী হতে চেষ্টা তদবির করতো ঠিকই, কিন্তু অনেকেই ইহজীবনে গণিতে এবং ইংরেজীতে পাশের মুখ দেখেও নি। মেট্রিক ফেইল হলে কি হবে? আমার অনেক বন্ধু-বন্ধুনী এমনকি অনেক জুনিওররাও সংসার জীবনের সার্টিফিকেট নিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে। প্রতিবার গেলেই নতুন নতুন দু একটার সাথে দেখা হয়। আর কি তর্জন গর্জন!! বলে, দেখ বাবা হয়ে গেলাম! অথবা কেউ বলে, 'দাদা, এইটা তোমার ভাইস্তা'। আমি তাজ্জব হয়ে বছরখানেকের একটা অবুঝ শিশুকে দেখি, যে অত্যধিক মার্তৃস্নেহ সহ্য করতে না পেরে বাবার সাথে বাজার নামক মহাযজ্ঞের কান্ডকারখানা দেখার জন্য নিশ্চয়ই জবরদস্তি আবদার করেই এসেছে । 'এসেছে নতুন শিশু ছেড়ে দিতে হবে স্থান তারে'। স্কুলের বন্ধুরা কেউ সবজী বিক্রেতা, কেউ মুদি দোকানের গদিতে, কেউ নাপিত, কেউ আর্মি, নৌবাহিনীর সৈনিক-খেলোয়াড়-আনসার, কেউ কেউ সিংগাপুর, আরব আমিরাতের শ্রমিক, কয়েকজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, দুজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর একজন বহির্বিশ্বে মানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পড়ালেখা করছে। তবে পরীক্ষার খাতা আর হোটেলে পরোটা মোড়ানোর পাতা সময়ের ব্যবধানে ওই একই ছিলো।

জেষ্ঠ পুত্র হওয়ায় জৈষ্ঠ্য আষাঢ় বারোমাস বিভিন্ন আকৃতির এবং প্রকৃতির উদ্ভিদজাত বেত্রদন্ডের সাথে দেখা হতো নিয়মিত। পড়ালেখা বহির্ভূত কিঞ্চিত সময়ের কয়েক দণ্ড শুধুমাত্র বেত্রখন্ডের পুজো অর্চনার মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত বেতউৎপাদনকারী বৃক্ষ নামক দুঃসহ যন্ত্রণাগুলির দ্রুত স্বর্গারোহণ পর্বের কামনা অথবা শারীরিক ব্যথা সম্পর্কিত আলাপ চারিতার মাধ্যমে আরো কোমল ব্যবহারের বিনীত অনুরোধের জন্য নিজেই বরাদ্দ-ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম। তাই কোন বনলতা সেন সেই কয়েক দণ্ড সময় থেকে শুধুমাত্র দুদণ্ড সময়ব্যাপী সুশান্তির আস্থা এবং সৎ বা অসৎ যেমনই হোক সাহস বা দুঃসাহস দেখিয়ে বলার সুযোগও পায়নি - "এতোদিন কোথায় ছিলেন?"
তখনকার সময়ের সেইসব সুলিখিত পত্র সাহিত্যের মর্যাদা পাওয়ার দাবিদার ছিলো; যদিও সেগুলো ইতোমধ্যে মহাকালের পথে মহাপ্রস্থানে । সেইরকমই একপ্রস্থ সুলিখিত পত্র মাতৃহস্তে পড়ার পর কলরেডী মাইকের মাধ্যমে প্রচারণার পর স্বীয় সন্তানের। কুল-মান ডুবিয়ে পিতৃপ্রদর্শনও করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেন নি। এই তৎকালীন সাহিত্য কর্মটি আমার জীবনের অন্যতম ট্রাজেডি। আর ঠিক এমন দিনেই তুলনামূলক কঠিন মনে হওয়া হাজার হাজার ছেদা বিশিষ্ট অপ্রয়োজনীয় এই চৌবাচ্চার অঙ্কটাই আমি মিলাতে পারি নাই। পিতৃদেব একপ্রকার কটাক্ষ করেই ফেললেন- "এ ছেলে সাহিত্যিক হবে।" পিতৃদেবের ইচ্ছে ছিলো পুত্রকে চিকীৎসক হিসেবে দেখার অথচ তাকে গণিত পারতে হবে রামানুজনের মতো। অথচ কি একটা আদিম ভয়ে বাবাকে বলতে পারিনি, অত্যধিক গণিত জানা রামানুজন বত্রিশেই ভবলীলাসাঙ্গ করেন। আর 'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে'- এর প্রণেতা রবি ঠাকুর কেবল এরকম লিখেই ক্ষান্ত হননি। স্বীয় দেহে দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন আর কর্মে তো কথাই নেই। আপামর আমজনতা খররোদ্র সহ্য করে মরিয়া হয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে- পর্বতে, আনাচে কানাচে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, রুচি আছে, রুচি নাই, ফর্সা, কালো, শ্যামলা, লম্বা, রোগা, মোটাসহ ইহজগতের যাবতীয় আকৃতি এবং প্রকৃতি সম্পন্ন প্রত্যয়হীন (অবিবাহিত) মায়াবনবিহারিণীদের প্রায় প্রত্যেককেই আমার সাথে জড়িয়ে অসম্ভব পরিণয়ের গভীর প্রণয় ব্যথা, রূপকথা, উপকথা, প্রচার তো করলোই এবং প্রচণ্ড সন্দেহের চোখে দেখা আরম্ভ করলো। লাভের কথা এই যে কোন বিবাহিত রমনীদের কথা তারা ভাবেননি। তাছাড়া সে সময় ভার্জিন নামক এক ধরণের কোমল পানীয়ের বাজার কাটতি থাকায় সকলেই বাজারগরম করা খবরে বিবাহিত রমনীদের বাদ রেখে দিয়ে থাকতে পারেন। অতঃপর ওই ক্ষুদ্র পাহাড়ী গ্রামের বুনোফুলের মতো আকর্ষণীয় অথচ অতি ক্ষুদ্র বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা-টিলার সুনির্দিষ্ট স্থানে চিরকালব্যাপী ব্যক্তিগত কারফিউ জারি করায় যাপিত জীবন কিছুদিনের জন্য চিরতার রসের মত ছিলো। তখন অতি দরদী পাড়াতো মাসী, মন্দির-পুরোহিতের স্ত্রী, দূরসম্পর্কের প্যাঁচানো দিদা, সদ্য রিটায়ার্ড আংকেলরা "এক্কেরে হগ্গলে মিল্লা" আমার এংকেল(গোড়ালী)-এর ভূয়সী প্রশংসা করে পৃথিবীর একটি ধূলিকণাকেও আমার চরণস্পর্শ থেকে রেহাই না দিয়ে একেকজন একেক বালিকার নামে রসের খামে খবর ফেরী করে বেড়াতে শুরু করেন। ভাগ্যের কথা হচ্ছে ওসব রসালো খাম থেকে খেজুরীয় রসালাপ ছাড়া এইসব খবর রটাতে বৃদ্ধ,সদ্য যুবক, পড়ার নারীসমাজের আঠারো গোষ্ঠী সিদ্ধহস্ত। মানে ওইসময় মনে হয়েছে বার্নিং কোয়েশ্চেন হচ্ছে "কপোত অমুক; কপোতীটা কে? জানতে হবেই; বাই হুক অর বাই ক্রুক" । আর এই ব্যাপার শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলকে আক্রান্ত করে একইসাথে দুই তিনজন রমনীকে কিভাবেইবা কপোতীর মনোনয়ন দিয়ে দিলো ধারণা করার নিমিত্তে কিছুদিন ওইসব বন্ধুনী মহলের সাথে আলাপ করেও কুল কিনারা পাই নাই। এর মাঝে খবর রটে গেলো যেকোন সময় অন্য সবার মনোনয়ন বাতিল করে আমরা "যেকোন দুজন" 'জনপ্রিয় নজরুল সংগীত' 'মোরা একই বৃন্তে বাঁধা দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান'- এর স্বার্থকতা প্রমাণে এবং অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালীদের ভেতর সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা, চেতনা উস্কে দিয়ে, আগুনে কেরোসিন ঢেলে, ইনস এন্ড আউট সমেত অর্থাৎ অর্থ-কড়ি-গয়নাগাটির চৌর্যবৃত্তি দ্বারা প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে পলায়ন করতে পারি। তারপর আরো কতজন কতদিকে পালালো,কতজনের বিবাহ হলো, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কতবার বছরকে বছর নো নো বাউন্ডস এর আকারে কতবার কতভাবে বেড়েই চললো , কিন্তু আমাদের কারোর পলায়ন দেখার সৌভাগ্য তৎকালীন গ্রামবাসীদের হয় নি। সেইসব গ্রামবাসীদের তথা মায়ের চেয়ে দরদী আমার সেই মাসী দিদাদের অনেকেই এখন গত হয়েছেন। সে সময় যে কারো বিয়ে হয়ে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম। মানে অমুক বালিকার পাশাপাশি এই অবুঝ শিশুসুলভ বালকটিও কিঞ্চিত উদ্ধার পেতো। গতবার গিয়ে দেখি আমার বন্ধু বন্ধুনীরা বহাল তবিয়তে আছে। সঠিক সময়ে বিবাহকারীরা বৃহৎ এবং বৃদ্ধবয়েসে বিবাহকারীরা নাতিদীর্ঘ পরিবার সমেত ফেস্টিভ্যাল পালন করছে। সে হিসেবে জীবনে আদৌ কখনো হাজার হাজার রমনীকে প্রত্যাখান করে কোন মাধবীলতার সাথে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হবার সুযোগ এলে আমার এক পা থাকবে কব্বরে। আর আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমার বন্ধু বন্ধুনীদের সন্তানদের আংকেল-আন্টি ডাকবে, তাদের নাতিনাতনীদের ডাকবে ডুডস । এখন আমি অনার্স ফেরত এবং মার্স্টার্সে অভিনয়রত বেকার যুবক । সীমাহীনতার সীমা ছাড়া প্রগতিশীল রাজনৈতিক গর্ব বুকে ধারণ করে সরকারি চাকুরির সার্কুলার, পরীক্ষা উভয়ই যথা সময়ে হবার নিশ্চয়তা সমেত ফাঁস হওয়া প্রশ্নের ফাঁসিতে না ফেঁসে অযোগ্যতা বা যোগ্যতা যাই থাকুক তার স্বর্ণছাপ বরাবরের মতো রেখে যাবার আশায় আশায় মানবেতর জীবন যাপন করছি। আর পিতামাতার অন্ন নিয়মিত ধ্বংস পূর্বক প্রাচীন এথেন্স-গ্রিক-ইটালির ফিলোসোফার দের মতো ভাব নিয়ে লোহার খাটকেই নরম সোফা ভেবে গর্দানের তলায় পিলো রেখে কায়ক্লেশে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


ব্লগে, স্কুল জীবনের স্মৃতি ইত্যাদি বেশ পপুলার, অনেকেই আগ্রহ নিয়ে পড়েন।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার পুরোনো দিনের কথা।
শ্রদ্ধেয় চাদগাজী ঠিক কথাই বলেছেন। আমি নিজেও এরকম পোষ্ট খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ আলাদা স্বাদের লেখা !!

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৪

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: চমৎকার লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.