নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাকে মুছে ফেলা যায় ইরেজার ঘষেই\nতোমার প্রিয়,প্রিয়তম আমি সে-ই

৪৫

কিছু হতে না পারা কেউ আমি এই জীবনের ঢেউ

৪৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই সময়

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৩

জলের যে জীবন, পাথর চিরদিন ডুবে থাকলেও সে জীবন নিতে পারে না। একাকি বয়ে যাওয়া জলের চেয়ে পাথর কেটে আসা জলস্রোতধারা; অথবা শুকনো নুড়ির চেয়ে জলে ডোবা নুড়িপাথর তুলনামূলক মুগ্ধকর। আমরা জলপাথরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ থেকে গেলাম। আমরা জলছাড়া পাথর অথবা পাথরছাড়া জল এবং জলেডোবা পাথর সবই দেখেছি। অথচ ভাবতে পারিনি সহজ সত্যটা- "নুড়ি বহুকাল জলে ডুবে থাকলেও ভেজে না।" মানে গা ভেজায়, মন ভেজাতে পারে না। এটা জলের যেমন অক্ষমতা, নুড়িরও স্বভাবজাত। ওই এক হাতে বাজে না তালির মত। সকল সম্পর্কই অনেকটা এরকম।

দীর্ঘপথ চলার পরেও পাথরের গায়ে শ্যাওলার মতো কিছু আনন্দ-বেদনার রঙিন ভোর থেকে গোধূলিই স্মৃতি-সম্বল। জল ও পাথরের স্বকীয়তা ভিন্ন ভিন্ন এবং বিপরীত। অথচ সম্মিলন অদ্ভুত মুগ্ধতার পরিচায়ক। উদ্ভিদ সার পেলে বাড়ে। ক্রমাগত সার পেতে থাকলে একসময় আর নিতে পারে না। গ্রাফ রেখায় বৃদ্ধি একসময় থেমে যায় এবং সারের তীব্রতায় খসে পড়তে থাকে ফুল ফল পাতা। মানে ডাউনওয়ার্ড মুভমেন্ট। একই রকমভাবে একই মানুষের সাথে বিবাদ-বিচ্ছেদহীন সংস্পর্শ সাময়িক অবিসংবাদিত থাকে। মানুষের সাথে মানুষের নিরন্তর সংস্পর্শে স্ট্রেটলাইন আপওয়ার্ড কার্ভটা ডাউনওয়ার্ড হতে তাই পিকপয়েন্টের পরে আর বিলম্ব করে না। জলও নুড়িকে ভেজাতে পারেনি, অতএব পৃথক উদ্দ্যশ্য, পৃথক বৈশিষ্ট্য জেনেও বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা যতটা স্বাভাবিক, বন্ধন ছিড়ে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। বিগত সময়ের জন্য কিছুকাল আক্ষেপ করে মানুষ চলে যেতে পারে যুগ থেকে যুগান্তরে।

মানুষ বৈচিত্রকামী এবং বৈচিত্রলোভীও। পাথর ও জলের মিলনে জল পাথরকে ভিজিয়ে চলে যায়। পাথর স্থির থাকে, নড়েচড়েও না। এই বৈপরীত্য এবং ব্যতিক্রমতায় আকর্ষিত হয়েই এক মানুষের অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ, জানাশোনা, হয়। এক জায়গায় থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতা খুব সহজেই এসে যায়। আমরা স্থান পরিবর্তন করি, মানুষ পরিবর্তন করি, নতুন ফ্যাশনে উল্লাসিত হই এবং বক্তৃতায় ভাষণে বলি "ওল্ড ইজ গোল্ড"। তারপর ' নিজেরাই সর্বত্র কৃতজ্ঞহীনের মতো ক্ষমতা- অর্থের প্রভাবে গোল্ডের আসন অলংকৃত করে রাখি। সবই হাততালি এবং সাময়িক জনপ্রিয়তার জন্য। এই জনপ্রিয়তা থিওরিটক্যাল মাত্র, এই জনপ্রিয়তা সস্তা। সুলভ্য জনপ্রিয়তার শর্টকাট পদ্ধতি অনুসরণে খানিক চালাকিই যথেষ্ঠ। এই জনপ্রিয়তা সাময়িক জেনেও শর্টকাটে শিখরে পৌছে দেখি আরো অনেক আগেই এই শিখর জনকোলাহল পূর্ণ। এবং এই শিখরে একশোর একজন জনপ্রিয় হারিয়ে যায়।

আত্মিক মুক্তি ও শান্তির শিখর আরো বহুদূরে। তখন শুরু থেকে শুরু করার প্রবল ইচ্ছে হয়। পূর্বের শতাধিক শর্টকাট টেকনিকের মধ্য থেকে সমন্বিত নতুন টেকনিক অনুসরণের পর সময়-শক্তি কোনটিই আর অবশিষ্ট থাকে না। তখন চিরায়ত পদ্ধতি অনুযায়ী অনুসরিত সমন্বিত টেকনিকটির নিজ নামে পেটেন্ট দাবি করি। যতদিন না কৃত্রিমতার ফাঁকিটুকু ধরা না পড়ে ততদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকি। ধরা পড়লে আবারো আলোচিত হই, এবার জনপ্রিয় হই। তবে সেটা ইন্টেলিজেন্সির জন্য নয়। এবারের তকমাটিকে ইংরেজিতে বলে "কানিং"। এজ কানিং এজ দ্য কানিং ফক্স। প্রবাদে "কয়লা"-র গায়ে কালি স্বভাবতই থাকে। তবু কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না বলে কয়লাকে অপবাদ দিয়ে ফিরে আসা যায় এবং ভুলে যাওয়া যায়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যাপী নিমজ্জিত ভুগর্ভস্থ কয়লার হীরকখন্ডে রূপান্তরের কথা। মানতেও দ্বিধা নেই যে; সকল সফল ব্যক্তিরা ব্যর্থ হতে হতেই সফল হয়েছেন। অথচ আমরা জানি, কয়লার এটিই গুণ বা বৈশিষ্ট্য এবং এই গুণটিও নিতান্তই প্রয়োজনহীন নয়।

এভাবে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে, নিজেদের এড়িয়ে যাওয়া সত্যগুলোকে অস্বীকার করেও সংগ্রামে সফলতা দাবি করি। অযোগ্য ব্যক্তিও নিজেকে যোগ্য দাবি করি। মূলতঃ আমরা জানিই না আমাদের লক্ষ্য কি? কেউ জিজ্ঞেস করলে নিউরনে প্রবল আলোড়ন হয়, আমরা সমাধানে পৌঁছতে পারি না। স্কুল কলেজে এই লক্ষ্য ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। প্রত্যুৎপন্নমতি কেউ কেউ গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট হাতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বলি বিসিএস। কিছুদিনপর হয়তো অন্যকিছু বলবো। মানে যুগের সাথে যা আপাত মানানসই। একটু ভেবে দেখলেই দেখি, সব লক্ষ্যই আপাত। মানে অমলকান্তিরা রোদ্দুর হতে পারবেনা না জেনেও রোদ্দুর হতে চায়। আমরা ফি বছর গৃহযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধ শেষে একসময়ের এইম ইন লাইফ ভুলে গিয়ে নিকটতম যোগ্য চাকরিটি বগলদাবা করে নিজেকে প্রবোধ দেই "আয়্যাম সাকসেস"।

তবে আর যাই হোক, মুখে যাই বলি না কেন, আমাদের অন্তরের গহীনে যে লক্ষ্য চির বসন্তের স্বপ্নের মতো আলো ছড়ায় এবং সকলেই এই একুশ শতকে যে একক লক্ষ্যটি ধারণ করি- সেটি 'টাকা'। তাই এ যুগে যোগী পুরুষ, সাধক, সন্ন্যাসী, বাউল, কবি, শিল্পী, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সবার উদ্দেশ্য টাকা। স্থির লক্ষ্য নেই, তাই লক্ষ্যে অটুট থাকাও অসম্ভব। তবে ক্ষমতা এবং আর্থিক লক্ষ্যের বিন্দুতে সবাই পাথরের মতো স্থির। এই জিনটি প্রকটভাবে মননশীলতা ও সৃজনশীলতা নষ্ট করে যাচ্ছে। এই জিনটি জন্ম দিচ্ছে কেবল কৃতঘ্ন ও অকৃতজ্ঞ দাম্ভিকের। তাই একসময়ের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জনপদে আর কোন সত্যেন বোস, বিদ্যাসাগর, শহীদুল্লাহ, নজরুল, শেরেবাংলা জন্মায় না, জন্মান না বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি একজন অবিসংবাদিত নেতা।

এইসব ভাবতে ভাবতে তোমার কথাও ভাবি। জল পাথরের অনেকাংশেই বিপরীত। তবুও ওই মুগ্ধতার বন্ধন, ওদের মতো, আমাদেরো ছিলো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়া আবেগ দিয়ে চলে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.